ফিরে দেখা মৃত্যু । পবন সিং

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৬/২০০৯ - ৪:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনুবাদ-- নীল

_____________________________________________
যে স্থানটিতে আমি মৃত্যুর শীতল স্পর্শ পেয়েছিলাম, সে সিমেন্ট ঢাকা জায়গায় আমার মৃতদেহ উপুড় হয়ে পড়েছিল, সেটি প্রায় চব্বিশ ঘণ্টার মাঝেই স্বাভাবিকতা ফিরে পেয়েছে। এখন আমি মৃত্যু নিয়ে কিছু বলার আগে আমার স্মৃতিতে ঝিলিক দিয়ে চলা কয়েকটি দৃশ্য নিয়ে কথা বলতে চাই। আসলে আমি এ দৃশ্যগুলো বর্ণনা করতে চাই। আর নিয়তি আসলে আমার ‘মৃত্যুর স্থান’ কে হঠাৎ করে উলেখযোগ্য স্থানরূপে চিহ্নিত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এবং একটা সাধারণ ডায়রি থানায় নথিভুক্ত হবার পরও পোস্ট মর্টেম সম্পন্ন হবার পর ঐ স্থানটি স্বাভাবিকতা ফিরে পেয়েছিল।
প্রিয় পাঠক, আপনারা আমার এ গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়লেও এর মাঝে আনন্দদায়ক কিছু খুঁজে পাবেন না। কিন্তু আমি যেহেতু গতকাল মারা যাবার বিষয়ে নিজের অনুভূতি বর্ণনা করার জন্য ফিরে এসেছি, সুতরাং আমি বলতে পারি মৃত্যু মৃত্যুই। গতকাল মারা গেছি বলে এটি কোন বিশেষ ঘটনার মর্যাদা পেতে পারে না। যখন আমি ছাদের উপর থেকে নিচে পড়ছিলাম, তখন আমার সারা জীবনের সব দৃশ্য একের পর এক ভীষণ গতিতে চোখের সামনে ছুটে গিয়েছিল।
আমি গল্প বলার কোন গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করতে চাই না, কারণ আমার মৃত্যুটা তো আমার নিয়মিত জীবন যাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই ‘একদা এক সময়ে’ এভাবে আমি গল্পটা বলব না, আমি বাড়তি কোন কথা ও বলব না, আমি কেবল ওতটাই বলব, যতটা না বললে আমার জীবন ইতিহাসের গল্পটা আকৃতি পাবে না।
আমি আসলে মৃত্যুবরণ করছিলাম অনেকদিন আগে থেকেই। আমার মৃত্যু প্রক্রিয়া শুরুর দিনটির সঠিক তারিখ ও সময় উলেখ করা সম্ভব নয় যেহেতু সেই দিনটিকে অনুসরণ করেছে আরো অসংখ্য অন্ধকার দিন, তারপর মাস এমনকি সেই ধারাবাহিকতায় একাধিক বছর পর্যন্ত।
প্রথম ঘটনা ঘটার আট বছর পর আমার মাকে আমি সেটা বলেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল তের বছর। তার মানে জীবনের স্বাভাবিক স্রোত থেকে ভিন্ন খাতে আমি প্রবাহিত হয়েছিলাম মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। আমার মাথা ভর্তি নোংরা চিন্তাগুলো, যেগুলো আমার সম্ভাবনাময় কল্পনা প্রবণ মনকে ধ্বংস করেছিল, সেগুলো ঐ ছোট্ট বয়সে গড়ে উঠতে শুরু করেছিল এবং এসব নোংরামি আমি লালন করেছি মৃত্যু অবধি। অথচ পাঁচ থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত আমি ভোগ করেছি এক ভয়াবহ দৈত্যের কবলে বন্দী থাকার যন্ত্রণা, যে যন্ত্রণার আমি কোন নাম জানি না।
শৈশব এবং তার অদ্ভুত গঠন প্রণালী আমাকে দান করেছিল এক অপরিপক্ক বিকৃতি। আমি মানব শরীরের নিষিদ্ধ অংশগুলোর প্রতি ঐটুকু বয়সে অনুভব করতাম এক দুর্নিবার আকর্ষণ, যার ফলে আমি পরিণত হয়েছিলাম অতি ক্রিয়াশীল কৌতুহলের শিকাররূপে। আচ্ছা, পাঁচ বছর কি যৌণ নিপীড়নের উপযুক্ত সময়, বিশেষতঃ সেই নিপীড়ন যদি হয় অপ্রতিরোধ্য? নৈতিকতার ক্ষীণ সীমারেখা আর অসহায় পবিত্রতার মিশ্রণের সময় ছিল সেটা।
কিন্তু সেই নৈতিকতা একটা পাঁচ বছর বয়সীর কাছে কতটুকু বলিষ্ঠতা আশা করতে পারে, যে বাচ্চা তখনও জানত না, পিঁপড়া মেরে ফেলাটা পাপ কিনা! কিন্তু যৌন নিপীড়ন ও পিঁপড়া হত্যা এ দুটো আমার ক্ষেত্রে এক সূত্রে গাঁথা কোন ব্যাপার নয়। আমার মৃত্যুটা একই সাথে গভীর অন্ধকারে সোজা পতন ও অসম্ভব আলোতে উদ্ভাসিত হবার সম্ভাবনা। কিন্তু আমি তো সাধারণ মানুষ, যে কি না দুর্ঘটনাজনিত কিংবা আত্মহত্যামূলক মৃত্যুর চেয়ে বরং স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিই মোহগ্রস্থ ছিলাম।
আমি শক্ত মেঝেতে আছড়ে পড়ার আগে ফিরে গিয়েছিলাম অতীতের এক দৃশ্যে, যেখানে আমার মা আমাকে স্নান করাচ্ছিলেন। তখন আমার বয়স ছিল পুরো পাঁচ বছর। সেটা ছিল ঠাণ্ডা জলে দ্রুত গতির স্নান।
মা মগে করে জল ঢালছিলেন, বালতি থেকে মগে করে জল তুলছিলেন এবং বালতিতে জল পড়ছিল ছেড়ে দেয়া ট্যাপ থেকে। আমার মাথা বেয়ে নামা জলের স্রোতের জন্য আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। শ্বাস নিতে গিয়ে আমার মুখ থেকে তাই বিভিন্ন উদ্ভট শব্দ বের হচ্ছিল। হঠাৎই মুখ ফসকে এমন এক শব্দ বের হয়েছিল যার একটা ভীষণ নোংরা পার্থিব অর্থ রয়েছে। আমার ভেতরে জমে থাকা স্বীকারোক্তি ও পাপ এভাবে গমজ সন্তানের মত একত্রে বেরিয়ে এসেছিল।
আমার মা আমাকে শব্দটা দ্বিতীয়বার করতে বলেছিলেন, সম্ভবত নিজে নিশ্চিত হবার জন্যই। আমি সেই শব্দটা আবারো করতেই তিনি কষে এক চড় লাগিয়ে দেন। কিন্তু আমার দোষটা কোথায়? আমি জানি লাম্পট্য লাম্পট্যই, এর অন্য কোন নাম নেই। তবে একটা পাঁচ বছরের ছেলে কি তার একুশ বছর বয়সী মামাতো ভাইকে যৌনতার ব্যাপারে প্রলুব্ধ করার জ্ঞান রাখে, বিশেষতঃ যদি সেটা হয় মুখ পথে! এক সময় আমার স্নান শেষ হয় এবং আমা গা মুছিয়ে দেয়া হয়। গা মোছার সাথে সাথে জলের ফোঁটা, লজ্জা, গানি এসব কি মুছে গিয়েছিল? সেই পাঁচ বছর বয়সে ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারিনি, আর এর পরবর্তী দিনগুলোতে আমি ঐ ব্যাপারটার পরোয়া করিনি।
দ্বিতীয় যে দৃশ্যটি আমার চোখে ভাসছে সেটি দুজন মায়ের দৃশ্য। যারা দুজন পুত্র সন্তানের জননী। যাদের পুত্ররা যৌন অনুভূতির স্বাভাবিক পরিতৃপ্তি লাভের মতা থেকে বঞ্চিত ছিল। সাথে সাথে যেখানে জড়িত ছিল দুটো পরিবারের আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক। এছাড়াও একজন গতানুগতিক মা ও রণশীল গৃহীনি, যাকে যৌথ পরিবারে সামলে সংসার করতে হয়, তিনি কি করে, তার পুত্রের উপর বয়ে চলা যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উচ্চবাচ্য করবেন? উপরন্তু আমার ঐ একুশ বছর বয়সী মামাতো ভাইয়ের মা আমার মাকে বিশেষভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যেন এ ঘটনা আর কেউ না জানে। পারিবারিক সম্মান রার বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এরপর থেকে মা শুধু আমার পেছনেই লেগে থাকতেন। অবশ্য এখন এসব ভাবার সময় নয়, কারণ এখন আমি মৃত।
আমার জন্য যৌনতা ছিল এমন এক গোপন জ্ঞান, যা অন্যদের জন্য এক নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত অজানা থাকে। এবং সেটা কেবল পরিতৃপ্তি পেতে পারে বিপরীত লিঙ্গে অথচ তথাকথিত অনৈতিক সম্পর্কের ফলে পেয়েছিলাম এক রহস্যময় আনন্দের রোমাঞ্চকর জগতের সন্ধান। আর শাসন কি কখনো অপরিচ্ছন্ন মানসিকতাকে ধুয়ে দিতে পারে? যে কারণে প্রতি রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর আমি স্বেচ্ছায় এক নিষিদ্ধ কামরায় চলে যেতাম। ওখানে আমার এক চাচা আমার অপোয় থাকতেন, যার বয়স এবং অভিজ্ঞতা আমাকে পরিচালনা করত এবং যিনি ছিলেন আমার প্রতি অবিবেচক। যেদিন আমি মারা গিয়েছিলাম, সেদিন আমার বয়স ছিল সতেরো বছর আট মাস আড়াই দিন। তার মানে আমি ঐ ধারাবাহিক অনৈতিক জীবন স্বেচ্ছায় যাপন করেছি পাঁচ বছর, দুই মাস, আড়াই দিন পর্যন্ত। সেই জীবনে আমি ধারাবাহিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হতাম, বিন্যস্থ হতাম, উপুড় হতাম এবং শেষ পর্যন্ত স্বাদ পেতাম এক বয়ঃসন্ধিজনিত উষ্ণতার। আমি এ সমস্ত কলাকৌশলের প্রশিণ খুব ভালভাবেই পেয়েছিলাম।
তৃতীয় যে চিত্রটি আমার চোখে ভাসছে সেটি আমার বেশ প্রিয়। তখন আমার বয়স ছিল বারো বছর। একই বাথরুমে আমি আমার এক কাজিনের সাথে স্নান করতে ঢুকেছিলাম। আমরা দুষ্টুমী করে একে অন্যের গায়ে জল ছুঁড়ছিলাম। আমাদের মায়েরা আমাদেরকে চিৎকার করতে বারণ করছিলেন এবং তাড়াতাড়ি বের হবার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। আমার কাজিন হঠাৎ আমার কোমরের দিকে একটু বেশি পরিমাণ জল ছুঁড়তেই জলের ভারে আমার কোমরে জড়ানো টাওয়াল একটু নিচে সরে গিয়েছিল। তারপর... তারপর সেই একই ধারাবাহিতা শেষ পর্যন্ত আমি শরীরে লেগে থাকা জল, অশ্র“বিন্দু... মুছে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম।
আমার আরো কিছু বলা আছে। আমার বয়স সতেরো হবার পরের ঘটনা সেটা। আসলে সেটা মাত্র গতকালের ঘটনা। প্রথম প্রথম সব কিছুর জন্য আমার মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করত। কিন্তু এক সময় সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল এবং আমার মধ্যে একটা ভুল ঘটনা অনুসরণ করে আরো অনেক ঘটনা ঘটানোর প্রবণতা বিস্তৃতি লাভ করেছিল। যাই হোক, এখনও সেই গরম গ্রীস্মের দুপুরের ভার আমার সবগুলো ইন্দ্রিয়ের উপর চেপে আছে। সারা পরিবার তখন ঘামছিল। কেউ কেউ পুরনো পত্রিকা দিয়ে নিজেদের বাতাস করছিল। একটা নির্দিষ্ট অসম্পূর্ণতার বোধ তখন আমার মাঝে জীবন্ত হচ্ছিল।
এক অর্ধ তৃপ্ত তৃষ্ণা, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অরুচি, এক আধে-অন্ধকার বারান্দা, অর্ধ-সমাপ্ত কথোপকথন, এক দৃঢ় সংকল্প হৃদয় এবং দুজন কিশোরের একই কর্মফলের দিকে যাত্রা সবকিছু মিলে নির্দিষ্ট করেছিল আমার শেষ পরিণতি।
কুনাল, মানে আমার বন্ধু আমার সাথে একটা সিনেমা দেখার জন্য আমাদের বাসায় এসেছিল। হঠাৎ করে লোডশেডিং শুরু হয়ে যাওয়াতে আমাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং আমরা দুজন আমার বেড রুমে শুয়ে গল্প করতে শুরু করে দিই। গরমের কারণে আমরা আমাদের শার্ট খুলে রেখেছিলাম। দুটো উদোম শরীর পাশাপাশি শুয়েছিল। মাথার উপরে ছাদে সিলিং ফ্যানটা ছিল অম ও স্থির, কিন্তু আমাদের মাঝে এক অদম্য কামনা জেগে উঠেছিল। একজনের নিঃশ্বাসের তাপে অন্যজন উত্তপ্ত হচ্ছিলাম এবং ধীরে ধীরে আমরা বাস্তবতার বোধ হারাচ্ছিলাম। গ্রীস্মের অসহ্য গরম প্রায় অন্ধ দৃষ্টি সব মিলিয়ে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
আমরা একে অন্যের স্পর্শের অতীত শেকড় উপড়ে নিতে তৈরি হচ্ছিলাম এবং একে অন্যের মাঝে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম দরজার ওপাশে উমা (কাজের বুয়া) দাঁড়িয়ে আছে। বেচারি অবশ্য বেশিণ দাঁড়ায়নি, খুব বেশি হলে মাত্র দুই মিনিট। হঠাৎ যেন ওর সাথে পুরো পৃথিবীটা দাঁড়িয়ে পড়েছিল। উমা এরপর আস্তে আস্তে ফিরে গেল, আর আমরাও আমাদের বাস্তবতার খোলসে ফিরলাম। কুনাল সাথে সাথে উঠে কাপড় পরে বেরিয়ে গেল। আমি তার ভাঙা-চোরা সত্ত্বার ফিরে যাওয়াটা শূন্য দৃষ্টিতে দেখছিলাম। উমা কি দেখেছে সেটা পুরো পরিবারকে জানাতে একটুও দেরী করেনি। উমা খুব সতর্কতার সাথে তার শব্দ বাছাই করে ঘটনাটা প্রকাশ করেছিল এবং তার ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান সত্ত্বার কাছে যা অশীল বলে মনে হয়েছিল, তাতে সে একটু বেশি ঘৃণার ছোঁয়া দিয়েছিল।
সুতরাং আমার উত্তরণ ঘটেছিল এক অস্পৃশ্য জীবে। সবকিছু পেছনে সরে গিয়েছিল এবং আমি একা হয়ে পড়েছিলাম। রাগ, দুর্নামের ভীতি, আতঙ্ক সব আমার পরিবারের সদস্যদের ছিপি আটকানো কণ্ঠনালীর ভেতর গর্জন করছিল। একটা গতানুগতিক, নিয়মিত, স্বাভাবিক, প্রশ্নহীন, ইতররতি প্রবণতাকে কি করে বিলুপ্ত করা যায়? দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আমি আমার বাবাকে ধন্যবাদ জানাই। এবং আমার ‘পুরুষত্ব’কে প্রতিশোধ গ্রহণের ল্যবস্তুতে পরিণত করার কৃতিত্ব ছিল আমার মায়ের।
মূল্যবান এবং জীবন পরিবর্তনকারী পরামর্শের জন্য আমাদের পারিবারিক ডাক্তার, ডাঃ বোসকে ধন্যবাদ জানাই। তার আলোকিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া আমার পুরুষত্বের ঘাটতি মূলক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতাম না। এবং সর্বশেষ ধন্যবাদ জানাই উমাকে, যার সৎ স্বীকারোক্তি আমার পুরুষত্ব ও মনুষ্যত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ‘নারীর’ জন্য ‘পুরুষ’ রূপে নিজেকে গড়ে তোলার একঘেয়ে প্রচেষ্টা থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে।
সবশেষ দৃশ্যে আমার মায়ের অরতি, বাবার সন্দেহ জনক ও উমার স্বস্তির হাসি আমি দেখেছি। তাদের অর্থহীন হাসি উদ্বিগ্ন মুখের ভূগোলকে পাল্টে দিয়েছিল। আর তারা হাসবে না কেন? যদিও এ হাসি অদৃশ্য, কেবল আমার মত অদৃশ্য আত্মারাই সেটা দেখতে পায়।
আর এক বিকৃতি সন্তানের স্মৃতি সংরণ করার চেয়ে বরং গতানুগতিক জীবন যাপন করা এবং মধ্যবিত্ত মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখাই তাদের জন্য বেশি লাভজনক। সমকামী পুত্র সম্পর্কে কোন প্রশ্নের উত্তর না দেয়ার সুযোগ পেলে তারা বেঁচে যান। তবু সমকামী পুত্র এবং অতি কামুক মা-বাবা, যেন চাঁদ ও চাঁদের কলঙ্ক।
আমি চাঁদ কিংবা তার কলঙ্ক কিছু হয়েই বাঁচতে চাইনি। তাই হঠাৎ সময়ের এক ফাঁক গলে আমি ছাদের উপর থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলাম। মাথার খুলি ফাটার সাথে সাথে এক বিশাল শূন্যতার জগতের দরজা খুলে গিয়েছিল। যেন এক ইতররতি প্রবণ কারখানা থেকে সময়ের চিমনি বেয়ে এক নোংরা সমকামী ধোঁয়া বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল।

[পবন সিং দিলী ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর ছয়বার চাকুরি পাল্টান। এরপর হায়দ্রাবাদে একটা যোগাযোগমূলক কাজে নিয়োগ পেয়েছেন। তার লক্ষ্য আসলে তার ভাষায় ‘বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো ও তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহিত্য রচনা।’ ‘Death is Flash Back’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প, আমি যার ভাষান্তর করেছি ‘ফিরে দেখা মৃত্যু’ শিরোনামে। গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে ভারতের বিখ্যাত 'Little Magazine’ পত্রিকায় সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৬ সংখ্যা।
৩-৫ বছরের শিশুদের মাঝে প্রথম যৌনতার ছোঁয়া আসে। এ সময় ভুল ও বিকৃত সংস্পর্শ তার জীবনের স্বাভাবিক স্রোতকে ধ্বংস করতে পারে। এটি একটি বৈজ্ঞানিক সত্য, যাকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে এ অনূদিত গল্পটির কাহিনী। এ গল্পের নায়ক এমনই এক ভুল সংস্পর্শের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে। গল্পটির অনুবাদে আমি ভাব-অনুবাদের রীতিকে প্রাধান্য দিয়েছি এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মূল গল্পের আবহ বজায় রাখার।
পবন সিং সম্পর্কে ‘‘Little Magazine’ আর কোন তথ্য প্রকাশ করেনি বলে আমিও বিশেষ কোন তথ্য দিতে পারছি না। তবে আগ্রহী পাঠকরা এ পত্রিকার সাথে যোগাযোগের জন্য এ ঠিকানায় click করতে পারেন
w.w.w littlemag.com।

{ইউনিকোডে পরিবর্তনের কারণে হয়তো অনেক শব্দ পরির্বতন হতে পারে}


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়লাম।

স্পর্শ এর ছবি

দীর্ঘ্য গল্প অনুবাদ করার ধৈর্যের প্রশংসা করছি।
সুন্দর কিছু গল্প অনুবাদ করেন। এই গল্পটা সুন্দর না। বিষয় বৈচিত্র আনার চেষ্টা আছে। তবে লেখক কে সফল বলা যাচ্ছেনা।
মাহবুব লীলেন এর 'আগামীকাল যা ঘটে গেছে' এই নামের একটা গল্প আছে। সেটার বিষয় এরকম না হলেও। সেখানেও নিজের মৃত্য বর্ণনার একটা ব্যাপার ছিলো। অসাধারণ গল্প। সেরকম গল্প বিদেশি সাহিত্যেও নিশ্চই আছে। সেরকম কিছু সিলেক্ট করেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নীল [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ স্পর্শ।
চেষ্টা করবো- ক্ষমতাও থাকতে হবে।

পুতুল [অতিথি] এর ছবি

গল্পটি খুব ভাল লাগল। গল্পের বিষয় বস্তু নিয়ে ভারতীয় ছবি দেখেছিলাম সম্ভববত "মনজুন ওইঠিং" আর "দ্যা ফায়ার"। সাহিত্যে এমন বিষয় এখনো চোখে পরেনি। "গড অব স্মল থিংক" আরুদ্ধ্যুতি রায় একটু টাচ করেছিলেন বিষয়টি। তবে বাংলা ভাষায় এখনো পড়িনি। আমার পড়ার দৌড় খুব লম্বা নয়।

শুনতে পড়নে বা লিখতে যতই খারাপ শোনাযাক এমন ব্যাপার বাস্তব জীবনে ঘটে। সেখানে বাবা মা চাইলেও ছোট শিশুদের রক্ষা করতে পারেন না। এবং এই সব যৌন নিপিরকরা আত্মীযৈর ভেতরেই পড়ে। কাজে তাদের সম্পর্কে এসব কথা বলে পারিবারিক শান্তি নষ্ট করা ছাড়া আর বারতি মিলে লোকের নিন্দা। কাজেই কেউ মুখ খুলে না।

সমাজটা এখনো এমন যে এসব শিশুদের (ধর্শিত বালক) দিতে তাকিয়ে মুখটিপে হাসবে।

গল্পটা আমার কাছে ভাল লেগেছে। এই ধরনের গল্প বাংলায় আরো অনুবাদ হওয়া উচিৎ।

আপনার অনুবাদের হাত বেশ ভাল। আপনি অনুবাদ করতে থাকুন।

নীল [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক ভালো মন্তব্য করেছেন আপনি। আসলে আপনি যেটা ধরেছেন সেই জন্যেই অনুবাদ করার চেষ্টা।

স্পর্শ এর ছবি

আমার আগের মন্তব্যে আসলে যেটা বলতে চেয়েছি, এখন পড়ে দেখছি সেটা ঠিক বোঝাতে পারিনি। আসলে আমার যাস্ট গল্পটা ভালো লাগেনি। এই বিষয়েও নিশ্চই ভালো গল্প আছে। কিন্তু পবন সিং এর এই গল্পটা 'গল্প' হিসেবে সফল মনে হয়নি। সে কারণেই বললাম।

অনুবাদকর্ম চলতে থাকুক।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

জি.এম.তানিম এর ছবি

ভাল লেগেছে।

বেশ কিছু জায়গাতে 'ক্ষ' বর্ণটি আসে নি।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নীল [অতিথি] এর ছবি

ক্ষ যে আসেনি তার কারণ হলো কনভার্ট করে লেখাটি দেয়া হয়েছে। আমি বোঝতে পেরেছিলাম কনর্ভাট করলে এরকম কিছু হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ওরে... এতো বড় আর জটিল গল্প... অনুবাদ ভালো হয়েছে... চালায় যান
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নীল [অতিথি] এর ছবি

বস সবি আপনের মেহেরবাণী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।