গ্যাস সম্পদ, মতদ্বৈততা এবং আমাদের অপেক্ষার প্রহর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৮/০৭/২০০৯ - ৬:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবাশ্ব জ্বালানির বিকল্পের উপর সচলায়তনে একাধিক লেখা (জ্বিনের বাদশা, হিমু এবং দিগন্ত)এবং বুয়েটের অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলামের দৈনিক প্রথম আলোতে (৭ জুলাই) লেখা একটি কলামের প্রেক্ষিতেই আমার এই লেখার অবতারনা। অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলামের লেখা আমি খুবই মনযোগ দিয়ে পড়ি এবং উপভোগ করি। জীবাশ্ব জ্বালানির বিকল্প খৌঁজার সাথে সাথে এটাও ঠিক যে আমাদের বর্তমান সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য জীবাশ্ব জ্বালানির বিকল্প খুব একটা নাই। এবং জীবাশ্ব জ্বালানির নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার এই মুহুর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ন।
তা এই মুহুর্তে জীবাশ্ব জ্বালানির নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কারের অবস্থাটা একটু বুঝতে চেষ্টা করি। আমার আলোচনা শুধুমাত্র সমুদ্রসীমার গ্যাস সম্পদেই সীমাবদ্ধ থাকবে। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে এই মুহুর্তে স্থলভাগে পিএসসির মাধ্যমে হাইড্রোকার্বন অন্বেষণের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। পেট্রোবাংলার আবেদনের প্রেক্ষিতে সমুদ্রে হাইড্রোকার্বন অন্বেষণের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয় ২০০৭ সালের জুলাই মাসে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের প্রথম দিকে তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিং প্রক্রিয়া শুরু করা হয় এবং ২৮ টা গভীর এবং অগভীর সমুদ্রের ব্লক ইজারার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয় (৮ টা অগভীর এবং ২০ টা গভীর সমুদ্রে)।
সমুদ্রসীমা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। সমুদ্রতীর থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (‘নমা’)পর্যন্ত সমুদ্রসীমাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের এক্স্লুসিভ ইকোনোমিক জোন (‘এইজো’) এবং এই অঞ্চলের সকল সম্পদের (জীবিত বা মৃত) মালিক বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে আরও ১৫০ মাইল বা তার অধিক অঞ্চল ‘কন্টিনেন্টাল শেলফ’ হিসাবে দাবী করতে পারে। ভারত এবং মায়ানমার আগেই তাদের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করেছে এবং ব্লক ইজারার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তেল এবং গ্যাস কোম্পানীকে (“আই,ও,সি”) ব্লক ইজারা দিয়ে দিয়েছে। এবং অবধারিত ভাবেই আমাদের নির্ধরিত সমুদ্রসীমা ভিতরে তাদের কিছু অঞ্চল ঢুকে গেছে।
তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএ ফিরে আসার আগে আমাদের এই দুই প্রতিবেশীর সমুদ্রসীমায় তাদের জীবাশ্ব জ্বালানির নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কারের অবস্থাটা একটু বুঝতে চেষ্টা করি। ভারতের রিলায়ান্স আমাদের সীমানার অদুরেই ২০০৭ সালে একটা গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে যার সম্ভাব্য মজুদ ৫+ ট্রিলিওন কিউবিক ফিট (টি,সি,এফ)। মায়ানমারে দাইয়ু, গ্যাস অথরিটি ইন্ডিয়া এবং মায়ানমার সরকারের যৌথ উদ্যোগ যে গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছে তার সম্ভাব্য মজুদের পরিমান প্রায় ৬ টি,সি,এফ। টি,সি,এফ ব্যাপারটার ব্যাপকতাটা একটু আলোচনা করা যাক। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বছরে গ্যাস উৎপাদন প্রায় ৬৯৩ বিলিওন কিউবিক ফিট (বি,সি,এফ) বা ০*৬৯৩ টি,সি,এফের মত। তার মানে দাড়াচ্ছে ৬ টি,সি,এফ দিয়ে বর্তমান উৎপাদন হিসাবের ভিত্তিতে ৮ বছরের বেশী সময় ধরে পুরো বাংলাদেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এই দুটি আবিষ্কার বিশেষজ্ঞদের এই মতকে আরও শক্ত করে যে এই অঞ্চলে গ্যাস আবিষ্কারের সম্ভাবনা খুব বেশী। আরেকটা গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট - সাঙ্গুর (বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রে অবস্থিত গ্যাস ক্ষেত্র) অভিজ্ঞতা বলে এই অঞ্চলের গ্যাসের মান খুব ভাল।
ফিরে যাই তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএ। এই তৃ্তীয় রাউন্ডের মডেল প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাকের (‘পিএসসি’) কয়েকটি ব্যাপার আলোচনা করা দরকার। প্রথমত মডেল পিএসসি এই প্রথম বারের মত ওয়েবসাইটে দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়ত এবারের পিএসসিতে গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে আবার করপোরেট ইনকাম ট্যাক্সও বসানো হয়েছে। এবং তৃ্তীয়ত, দ্বিতীয় রাউন্ড বিডিংএর মডেল পিএসসির অনুরূপে এলএনজি করে গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএ আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি, কারন আই,ও,সির ‘বড় বড় খেলোয়াররা’ অংশগ্রহন করেনি। কারন হিসাবে দেখানো হচ্ছে সমুদ্রসীমা ওভারল্যাপের বিষয়টিকে – যা ভারত এবং মায়ানমার আই,ও,সিদের জানিয়েছিল। যদিও আরও বিষয় আছে – কারন খুব কম আই,ও,সিই ভালভাবে বিড করেছে – এমনকি ওভারল্যাপ-মুক্ত ব্লক গুলিতেও। এখন এই সমুদ্রসীমা ওভারল্যাপের বিষয়টার মিমাংসা নিশ্চই খুব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এবং যতদিন পর্যন্ত মিমাংসা না হবে – আমরা সম্ভবত এই সমুদ্রসীমা ওভারল্যাপের স্থানে অনুসন্ধন করতে পারব না। এই ব্যাপারটা আন্তর্জাতিক।

এখন আসি আভ্যন্তরীণ মুল মতদ্বৈততার বিষয়টিতে। তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএর মডেল পিএসসি যখন প্রকাশ করা হয় তখন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অন্যান্য বিষয়ের সাথে ‘গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখার’ প্রতিবাদ করে। তাদের এই প্রতিবাদ আরও জোরালো হয় এই কারনে যে তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএর সময় বিদ্যূত ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক মঃ তামিম। অধ্যাপক তামিম ১৯৯৬-২০০০ সময়ে বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রপ্তানির পক্ষে ছিলেন। তিনি জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব ছাড়ার পর এক লেখাতে উনার তখনকার অবস্থানের পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখাতে চেষ্টা করেছেন। এখন আমরা দেখতে পারছি যে অধ্যাপক তামিম এবং পেট্রোবাংলার জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছে ‘গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখার’ ব্যাপারটা ঠিক আছে। অপরদিকে অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলামের, সমমনা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এদের মধ্যে কিন্তু কোন রিকনসিলিয়েশন হচ্ছেনা এবং দুই পক্ষই এক্সট্রিম অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিংএ দুইটি আই,ও,সি সফল ভাবে বিড করেছে (টাল্লো ও কনোকো ফিলিপস)। তাদের সাথে পিএসসি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে এ বছর পিএসসি স্বাক্ষর করে আই,ও,সিরা যদি খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে এবং গ্যাস অনুসন্ধানে সফল হয় তারপরেও মেইন গ্রীডে গ্যাস দিতে ৬/৭ বছর লাগবে।

এদিকে অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলামের এবং সমমনা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা শক্ত দাবী করছে এই তৃ্তীয় রাউন্ড বিডিং ক্যানসেল করে নতুন ভাবে বিডিং শুরু করার। সরকার যদি তা করে (নিশ্চই সফল বিডারদের ক্ষতিপুরন দিতে হবে) তবে জীবাশ্ব জ্বালানির নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কারের ব্যাপারটা আরো পিছিয়ে যাবে, ইনভেস্টারদের ভুল বার্তা দেওয়া হবে।
আবার যদি পিএসসি স্বাক্ষর করে তবে অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলামের, সমমনা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের পয়েন্টাকে ইগনোর করা হবে এবং যা ইসু হিসাবে চলে আসতে পারে।

আমাদের মতদ্বৈততার রিকনসিলিয়েশন হবে না – আমরা সুযোগ হারাতেই থাকব আর অপেক্ষার প্রহর গুনব। প্রতিবেশীরা এগিয়ে যাবে।

ইচ্ছে আছে আরো ‘গভীরে’ গিয়ে কিছু লিখার – বাংলা টাইপিং বাধা হয়ে না দাড়ালে।

সুমন০১


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

ব্যাপারটা এভাবে দেখা যেতে পারে। দবিরের বিয়ে হয়নি। দবির বিয়ে করতে ইচ্ছুক। দবিরের এক চাচা বললেন, বিয়ে দেয়া হবে, তবে দবিরের বউকে সপ্তাহে দুই রাতে চাচার ঘরে গিয়ে সময় কাটাতে হবে ঘন্টা দুয়েক। দবিরের এক মামা দাবি করলেন, এভাবে বিয়ে হতে পারে না। বিয়ে করলে বউ দবিরের হবে, সে কারো ঘরে রাতদুপুরে যাবে না।

ওদিকে কবির দবিরের বাড়ির বৈঠকখানা ব্যবহার করে বিয়ে করে ফেলেছে। সে এগিয়ে যাচ্ছে। রোজ রাতে তার ঘরে খাটের খচখচ আওয়াজ শোনে দবির।

এখন দবিরের বিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে এই তর্কে। দবিরকে বেছে নিতে হবে সে কি ভাগের বউ চায় না নিজের বউ চায় হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ফারুক হাসান এর ছবি

অতিথিদের এই সুযোগ আছে কিনা আমি ঠিক জানি না, তবে সবাইকে আবারো অনুরোধ জানাচ্ছি, পরবর্তী বিস্তারিত লেখা শক্তি সম্পর্কিত ইবইয়ে জুড়ে দেবার জন্য। নইলে পরে রেফারেন্স হিসেবে লিংক দিতে গেলেও বিস্তর খোঁজাখুঁজি করতে হবে। কীভাবে ইবইতে জুড়ে দেয়া যায় সেটা স্টিকি পোষ্টে বলা আছে।

হিমু এর ছবি

সুমন ভাই, সচলায়তনে আরো অনেক সুমন আছেন। প্রায়শই গোলমাল লেগে যায়। যদি কিছু মনে না করেন, আপনার নিকটিতে সামান্য পরিবর্তন করতে পারেন। সংখ্যার পরিবর্তে সম্পূর্ণ নাম, বা অন্য কোন প্রিফিক্স-সাফিক্স ...। আশা করি এই অনুরোধে আক্রান্ত বোধ করবেন না। ধন্যবাদ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

সুমন সবুজের কাছে এর ছবি

ধন্যবাদ। নিকটিতে পরিবরতন করব।
মন্তবয়ে জ্নয় ধন্যবাদ। চমৎ্কার এনালজী। কখনো বয়বহার করব। (খাটের শব্দ হ্য়ত বাদ দিতে হবে।)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

চমৎ্কার এনালজী। কখনো বয়বহার করব। (খাটের শব্দ হ্য়ত বাদ দিতে হবে।)
ভাই, কী আর বলবো। দুর্দান্ত হাসি পাইছে আপনার এই কথায়। এই হলো আমাদের হিমু! গড়াগড়ি দিয়া হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুমন সবুজের কাছে  এর ছবি

মন্তবয়ে জ্নয় ধন্যবাদ। হিমু সাহেব অনেক দিন পর দবির, সগির ও সালেহার কথা মনে করিয়ে দিল।

দুর্দান্ত এর ছবি

সালেহা?

ফারুক হাসান এর ছবি

এবং তৃ্তীয়ত, দ্বিতীয় রাউন্ড বিডিংএর মডেল পিএসসির অনুরূপে এলএনজি করে গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

এইখানে আমার একটা কথা আছে। এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্ল্যান্ট এবং এর সাপ্লাই চেইন নিয়েই গত কয়েকবছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এলএনজি খাতে নাক গলাবার অবকাশ বোধহয় আমাদের নেই। এলএনজি মূলত আন্তমহাদেশীয় গ্যাস পরিবহনের সুবিধার জন্যই তৈরি করা হয়। দূরত্ব ভূমিতে ২০০০ মাইল কিংবা সমুদ্রে ৭০০ মাইলের বেশি হলেই কেবল এলএনজি রপ্তানি থেকে খরচ উঠে আসতে পারে। অবশ্য তার জন্য যে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রিতে পরিবহনক্ষম জাহাজের প্রয়োজন হয় সেটা তৈরিরও প্রযুক্তি আমাদের নেই। জাপান কোরিয়ার মত দেশগুলোই সেগুলো তৈরি করে। সেরকম একটা জাহাজ কিনতে ১৫০-২০০ মিলিয়ন ডলার লাগে। আজকে অর্ডার দিলে নিদেনপক্ষে পাঁচবছরের আগে কোনো জাহাজ পাওয়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে এক দশক লাগবে এলএনজি সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে। তাছাড়া এভাবে গ্যাস রপ্তানির জন্য যে সাপ্লাই চেইন অবকাঠামো দরকার তা তৈরিতে নিদেনপক্ষে কয়েক বিলিয়ন ইউএস ডলার লাগে, যেটা আমাদের পক্ষে যোগান দেয়া অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, এই খাত থেকে মুনাফা তখনই আসে যখন আপনার গ্যাসের base-load যোগান দেয়ার মত গ্যাসের খনি থাকবে। base-load বলতে বোঝাচ্ছি বছরে এক মিলিয়ন টন বা তার বেশি এলএনজি তৈরির জন্য যে গ্যাস প্রয়োজন তার অনবরত যোগান দেবার সামর্থ্য। মাত্র ৮-১০ টিসিএফ সম্পন্ন গ্যাসখনি দিয়ে তা সম্ভব নয়। কাতারে দেখেছি তাদের এলএনজি প্লান্টে গ্যাস আসে পৃথিবীর বৃহত্তম সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে যেখানে মজুদ আছে ৯১০ টিসিএফ গ্যাস।

এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, বিশাল খরচের কারণেই এক একটি এলএনজি রপ্তানিচুক্তি নিদেনপক্ষে ২০-২৫ বছরের হয়। সেইপরিমাণ গ্যাস রপ্তানি করার মত গ্যাসই আমাদের নেই!

তবে peak shavingপ্ল্যান্ট করা যায়, যেটা রপ্তানির জন্য নয়, বরং কেবল স্থানীয়ভাবে গ্যাস পরিবহনের সুবিধার জন্যই। আমাদের বোধহয় সেটারও প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের নিকট ভবিষ্যতে আবিস্কারযোগ্য কোনো গ্যাসক্ষেত্রই কক্সবাজার থেকে ৭০০ মাইলের দূরে হবে না, হলে সেটার ভাগ আমরা পাবো কিনা তাও বলা যায় না।

যেখানে ২০ বছর পর আমাদের নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্ট আর সার কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস দেবার মত গ্যাসই আমাদের থাকবে না, সেখানে এলএনজি তো দূরস্থান, পাইপলাইনে গ্যাস রপ্তানি করার মত বিলাসিতাই বা আমাদের কতটুকু পোষাবে? আমাদের পরিকল্পনা যারা করেন তারা এইসব ভাবেন কি?

***
ভাবছি সুযোগ হলে এলএনজি অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা পোষ্ট দেব।

হিমু এর ছবি

তুমি হচ্ছো সেই দুষ্টু জনতার কাতারে, যারা দেশে নজমুলুদাকে ম্যাগলেভ করতে দেয়নি। দেশের উন্নয়নের শত্রু তুমি দেঁতো হাসি



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

ফারুক হাসান এর ছবি

দুষ্টুতো, একটু দুষ্টামি না করলে হয় বলেন?

নজমুলুদা বড় ভালো লোক, কিন্তু পুংডা জনগণ জানলো না যে তারা কি হারালো!

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

হিসাবগুলোর ধন্যবাদ।

যেখানে ২০ বছর পর আমাদের নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্ট আর সার কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত গ্যাস দেবার মত গ্যাসই আমাদের থাকবে না,

যতদূর জানি রপ্তানীর প্ররোচনা দেবার জন্য গ্যাসের মজুদ বেশী করে দেখান হয়েছিল প্রথম দিকে। বর্তমানে আমাদের গ্যাস মজুতের প্রকৃত এবং গ্রহনযোগ্য হিসাব কি আমাদের আছে? কারোজানা তথাকলে জানাবেন দয়া করে।

শক্তিখাতে আঞ্চলিক সহযোগীতা নিয়ে কারো কোন মতামত থাকলে জানতে আগ্রহী। ২০০৩ সালে সিপিডি (সেকেপ্স) বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান আর বার্মার জ্বালানী বিশেষজ্ঞদের একটা আলোচনার আয়োজন করেছিল। সেখানে অনেকেই সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এবিষয়ে বিশেষজ্ঞ সচলদের মতামত জানতে আগ্রহী।

ফারুক হাসান এর ছবি

BP স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ অফ ওয়ার্ল্ড এনার্জি ২০০৯ কে যদি বিশ্বাস করেন তাহলে ২০০৮ এর শেষে বাংলাদেশে প্রুভেন গ্যাস রিজার্ভ মাত্র ১৩.১ টিসিএফ, যা বিশ্বের মাত্র 0.২ ভাগ।

রিয়াজ উদ্দীন এর ছবি

ধন্যবাদ এই ডেটা সোর্সের জন্য। এই গ্যাস লইয়া এত ফালাফালি! যাক আর কইলাম না। কোথায় কি আছে না জাইনা গ্যাস রপ্তানি নিয়া এত বিতর্ক করছি আমরা!

দুর্দান্ত এর ছবি

বিপির হিসাবে মনে হয় আই ও সি দের বর্তমান ৩,৫ টিসিএফ (লিন্ক, ৫১ পাতা) ও গত ফেব্রুয়ারিতে টোটালের আবিস্কৃত ৬ টিসিএফ বাদ গেছে।

এর পরেও অবশ্য আমাদের রিজার্ভ বড় লিগে খেলার জন্য যথেষ্ঠ নয়।

সুমন সবুজের কাছে [অতিথি] এর ছবি

দুর্দান্ত ভাই, প্রথমে টোটালের ৬ টিসিএফ ডিস্কভারীর খবরটা দেখে অবাক হ্লাম – কারন টোটালের ডিস্কভারীটা ভায়াবল কিনা এটাই ঠিক নাই। লিংকের রিপোর্টটাতে আমার ব্লগে উল্লেখিত মায়ান্মারের ৬ টিসিএফ ডিস্কভারীটার কথা বালা হয়েছে।

দুর্দান্ত এর ছবি

তাদের এ১ ব্লক আর আমাদের ব্লক ১৮, এবং এই ৬ টিসি এফের রাখাইন ফিল্ডের পারস্পরিক অবস্থান লক্ষ করুন। তারপর বলুন আপনার কি মনে হয়।

সুমন সবুজের কাছে [অতিথি] এর ছবি

মার্চ ০৯ পর্যন্ত ১১.৭৫ টিসিএফ (সূত্র দেয়া যাচ্ছে না।)

সুমন সবুজের কাছে এর ছবি

ধন্য়বাদ। যতই বিতর্ক থাক, আমার মনে হয় পিএসসি গুলোতে দেশের স্বাথর্ দেখা হয়েছে। এলএনজির বিষ্য়টা ইছে করে রাখা হয়েছে যাতে করে শুধু মাত্র ভায়াবল পরিমান গ্য়আস পেলেই রপ্তনীর চিন্তআ করা যাবে।

দুর্দান্ত এর ছবি

পূর্নসহমত। এল এন জির জন্য যে গ্যাস, টাকা ও বাজারের দরকার তার কোনটাই আমাদের আপাতত নেই।

---
কাতারে দেখেছি তাদের এলএনজি প্লান্টে গ্যাস আসে পৃথিবীর বৃহত্তম সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে যেখানে মজুদ আছে ৯১০ টিসিএফ গ্যাস।

ভাল হল আপনি নর্থ ডোমের কথা তুল্লেন। সত্তরের দশকে এই ক্ষেত্রটির আকার নিয়ে কেই কিছু জানতো না। তখন কাতার মাত্র দৈনিক ৮০০ -৯০০ MMcf/dকরেই উত্তোলন করতো। কাতারের দিকের গ্যাসটা তোলা হত মরতে বসা দুখান ক্ষেত্রকে গ্যস ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে চালু রাখার জন্য, তাই এখানে ভাল বিনীয়োগ হল, ক্রমে প্রমানিত রিজার্ভের পরিমান বাড়ল ও বেড়েই চলল। সমুদ্রের ওপারে ইরানও প্রায় একই সময়ে সাউথ পার্স নামের একটা ক্ষেত্র আবিস্কার করল, কিন্তু বিনীয়োগের অভাবে সেটা বেশীদুর এগুলো না। কিন্তু দশক ঘুরলে দেখা গেল যে সাউথ পার্স আর নর্থ ডোম আসলে একটিই ক্ষেত্র।
---

পুর্বভারত, পশ্চিম মিয়ানমার আর সাঙ্গুর ক্ষেত্রে এমন হলে আমি অবাক হব না। আর তাই এল এন জি কে আমি সম্ভাবনার ফর্দ থেকে বাদ দিই না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।