কেন এবং কিভাবে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৯/০৭/২০০৯ - ৩:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাতের শরীর জুড়ে বাসন্তি আকাশ
নির্ঘুম সেলের একপাশে ফুটো ছাদ
তারও রয়েছে ছাউনি, একটি তারা
অনেক রাত
এখনও নির্ঘুম কেন
তারচাইতেও বড় প্রশ্ন
আমি এখানে কীভাবে?
ছোট্ট মেয়েটি আমার, ঘুমের মাঝেই
ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, মধ্যরাতেও
আমার স্ত্রী, আমার ছোট্ট শিশুকণ্যা,
তার মা পাশে পড়ে থাকা শূন্য বালিশে
কী খোঁজে, আমার চাইতে বেশী
আর কে জানে?
ছোট্ট মামনি আমার, কাল ভোরও কি
একই বার্তা বয়ে আনবে তোর কাছে?
তোর সবুজ ইউনিফর্ম, হাতে শিশু শিক্ষা
ভেতরে অনেক ছবি-
অ আ ক খ এর ভীড়ে
মনে পড়বে এই অমানুষ ‘বাবা’টিকে?
শ্যমলা, লক্ষ্ণী বউ আমার, তোমার
চোখের নিচে কালি, উনুনে শূণ্য হাঁড়ি,
কতোদিন শাড়িতে নেই হলুদের ছোপ,
এখন ভীষণ দুর্দিন, তাই
উনুনের ধোঁয়ায় নয়, চোখ
আপনা থেকেই রক্তপলাশ,
ঝরছে শ্রাবণ অঝোর ধারায়।
মাননীয় বিচারক, মহান হিসেবি লোক
বোমা ছুঁড়ে মানুষ মারলে শাস্তি একটাই
কিন্তু যারা বোমা ছোঁড়ায়? কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে
তাদের কাউকে আমি দেখিনি..
আহা, আমার ছেলেবেলার পুকুরপাড়,
হাতে লাটাই, আহা শ্যামলা, কী সুমধুর রাত্রি,
মুখে সোনামুগ ঘাম, আহা মা আমার, আমার
ছোট্ট মামনি, আমার মা, বাবার সমতল কবর জমিতে
কৃষ্ণচূড়া, আহা রাত্রি, কী দু:সহ নি:সঙ্গ অন্ধকার, তবু
সকাল মানেই মৃত্যু, সাধারণ মানুষের স্বস্তি, তথাকথিত
বুদ্ধিজীবীদের উল্লাস, যাদের ব্যাবসা বুদ্ধি নিয়ে।
তবু এই আগল ছেঁড়া রাত্রি, তাপিত
নিঃশ্বাস, গুমোট বাতাস, সেলের সবটা
জুড়ে পেরুনো অতীত, কতোশতো স্মৃতি
জীবন, আহা জীবন, অজস্র বর্ণমালা থেকে
নেয়া অর্থবহ জীবন গড়েছে একটি শব্দ ‘মৃত্যু’।
এবার চাঁদটাও বুঝি বাষ্পিত হলো
আবারও প্রশ্ন, কেন এবং কীভাবে?
উত্তর নেই, গল্প মানেই একঘেঁয়েমি,
কিন্তু যদি তা হয় মৃত্যুর পেছনের ইতিহাস,
যদি হয় ঘৃণ্য অতীতের সমাপন,
তবে তা রোমাঞ্চকর..
গা গুলাচ্ছে আমার, এখনই মুখ
ভাসবে তেতো জলে, ওয়াক্...
হলুদ বমিতে ভাসছে সেলের মেঝে
ঘৃণায় আবারও...
তাকিয়ে দেখি, ওই বিশ্রি তরলে
কতোগুলো শুয়োরের মুখ
যাদের কাছেই কেবল প্রশ্ন রাখা যায়
আমি এখানে কেন?
আমি এখানে কীভাবে?

আশরাফুল আলম রাসেল


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

নাজিম হিকমত'র জেলখানার চিঠির ছোঁয়া পেলাম।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

সত্যি বলতে কি, নাজিম হিকমতের কবিতাটা আমাকে লিখতে প্রেরণা যুগিয়েছে। দেশব্যাপি অসংখ্য সন্ত্রাসীর নাম শুনতাম। তারা ধরা পড়ছে আর নেপথ্যের যারা তারা নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে। তখন তুরস্ক-এর কবির প্রেক্ষাপটে নয়, আমার দেশের প্রেক্ষাপটে লেখার তুমুল ইচ্ছে হয়েছিলো। জানি, তাঁর মতো ভালো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কিন্তু অনেকদিনের একটা প্রবল ইচ্ছা পূর্ণতা পেলো হাসি

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মনে হলো, কোনো সন্ত্রাসী জেলখানায় বসে তার পাপকর্মের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

চমতকার একটা লেখা

প্রচেত্য

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

ধন্যবাদ

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

কীর্তিনাশা এর ছবি

চমৎকার কবিতা !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

আশরাফুল আলম রাসেল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!!

আমি অতিথি তোমার দেশে.....

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো।

নৈশী ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

বানান বানান বানান! মন খারাপ
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

কাজী আফসিন শিরাজী [অতিথি] এর ছবি

ভালো, তবে বেশি বড় কবিতা, পুরো কবিতা পড়ার ধৈর্য্য থাকে না, আমিও আগে বড় বড় কবিতা লিখতাম। অগ্রজ কবিরা আমার কবিতা দেখে বার বার বলতেন বেশি বড়, এসব কথা আরো সংক্ষেপে লেখা যায়।

তবে কিভাবে লিখবেন এটা একান্তই আপনার ইচ্ছা। আমি শুধু পাঠক হিসেবে আমার বক্তব্য বললাম।

হিমু এর ছবি

ভাই রাসেল, আপনি কি নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি? আপনার তো নিজের অ্যাকাউন্ট আছে, সেটি ব্যবহার করে তো লিখতে পারেন। "অতিথি লেখক" অ্যাকাউন্ট আবার কেন ব্যবহার করছেন???



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।