পরিবর্তনের উড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৭/০৮/২০০৯ - ৭:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তখন আমার স্বপ্নে বাস, তখন আমি জোনাকির চোখ দিয়ে দেখি, নদীর আয়নাজলে খুঁজে নেই একটি সরল মুখ, তখন আমি কৈশোরে, আমি এক দূর্দান্ত কিশোর। কিন্তু যে আমি স্বপ্নে বাস করছি, ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নগুলোই আমার পর হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখতে পেলাম পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পাল্টে যাচ্ছে সবুজ চোখে দেখা অপরূপ দৃশ্যাবলি। এতাদিন আমার একটি ডানা ছিলো, সেখানে আমি মায়ের কোলে শুয়ে আকাশে ঘুড়ি হয়ে মেঘ হয়ে পাখি হয়ে উড়তাম। এখনও আমার এতোদিনের বিশ্বস্ত চোখটি আমারই আছে, তবে সব কিছু কেমন যেন অন্যরকম লাগছে, অন্যরকম।
আমার সকাল হতো পাখির ডাক শুনে, আমি শিশিরে পা ভিজিয়ে হেঁটে যেতাম ঘাসের সবুজ মাঠ, সাজিভরে ফুল তুলে নিয়ে আসতাম সবার আগে। তখন আমি ফড়িঙের সাথে খেলা করি, রোদের গন্ধ মাখি সারা শরীরে, নদীর জলে শরীর ভাসিয়ে হয়ে যাই আনন্দের হাঁস। কচুরিপনা ফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে গুঁজে দিই পাড়ের বালির ঢিবি বানিয়ে। আমি তখন পাখির পিছু নিয়ে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটি। তখন আমার হাঁটার অন্য কোনো অর্থ নেই, হাঁটার অর্থ শুধু হাঁটা, দৃশ্য অবলোকন।
তখনও, এখনও, দেখি অসংখ্য মানুষ আমার সমুখ দিয়ে হাঁটে। একটির পর একটি পা এগিয়ে যায়, আমারও একটির পর একটি পা এগিয়ে যায়। আমার পা কেনো এগিয়ে যায়, আমি জানি। মানুষের পা কেনো এগিয়ে যায়, আমি জানিনা। আমি পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডীবব্ধ পাঠ থেকে ক্রমে ক্রমে বেরিয়ে আসছি। যে-কোনো বই-ই হয়ে উঠলো আমার পাঠের বিষয়। আমার একটি চোখ ছিলো, তাকে আমি অসংখ্যভাবে তাক করাতে লাগলাম। গঙ্গাফড়িঙের মতো আমার মাথায় অসংখ্য চোখ জন্ম হতে শুরু করলো। কিভাবে এতো এতো চোখের জন্ম কারণ তখনই আমি আমার গ্রামের দিকে তাকালাম। আমি দেখতে পেলাম আমার চির চুপচাপ শান্ত মায়ার মতো গ্রামটি পাল্টে যাচ্ছে। এতোদিন আমি শুধু দেখেছি। মনে হয়েছিলো এটাই স্বাভাবিক। আমি দেখলাম কোনো কিছুই ঠিক স্বাভাবিক নয়। আমার সাথে যে ছেলেটি গতকাল দাঁড়িবান্দা খেলছে আজ সে সে-সময়টায় সিগারেট ফুঁকছে। যারা কাজ নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত থাকতো তারা আজ ঘুপড়িতে বসে তাস পেটাচ্ছে। আমার চোখে ধরা দিলো পরিবর্তন। আমি বুঝলাম আমি হয়তো শিখে যাচ্ছি পরিবর্তনের ভাষা।
মায়ের কোলে মাথা রেখে একটি আকাশে উড়া আর বেশিদিন থাকলো না। হুমায়ূন আজাদ লিখেছিলেন গ্রামে ভালো কোনো পত্রিকা পৌঁছে না, কিন্তু নিকৃষ্ট পত্রিকা ঠিকই পৌঁছে যায়। সত্যিই তাই, আমার সহজ সরল দীঘির জলে দেখা ছায়ার মতো শান্ত গ্রাম কঠিন হয়ে গেলো। আমি দথন একটি মানুষ কেনো তার পা বাড়ায়, তার অর্থ খঁজতে লাগলাম। আমি পেলাম ভাবনার অসংখ্য আকাশ, সীমাহীন।

(পাঠকরা চাইলে আরো এক পর্ব লেখা যেতে পারে) হাসি

বালক


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

নদীর জলে শরীর ভাসিয়ে হয়ে যাই আনন্দের হাঁস।

আমার পা কেনো এগিয়ে যায়, আমি জানি। মানুষের পা কেনো এগিয়ে যায়, আমি জানিনা। চলুক

নীল

বালক [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বাহ।
পাঠক চাইছে। আরো পর্ব লেখা হোক।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বালক [অতিথি] এর ছবি

আপনার মন্তব্য আরো কিছু লেখার সাহস দিলো হাসান মোরশেদ।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চারপাশ বদলে যায়, কিন্তু বদলটা কেন জানি কখনই নিজের জন্য সুখকর হয়ে ওঠে না!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুখকর না হলেও আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে!!

অনীক আন্দালিব এর ছবি

সবকিছুই তো একটা সময়ে বদলে যায়। কয়েকদিন আগেই কথায় কথায় বলছিলাম, এই গুলশান বনানী এখন কেমন ঘুশঘুশে দালানের জঙ্গল হয়ে উঠেছে, কিছুদিন আগেও এটা বন, জলা, ডোবা হয়ে ছিল!
পরের পর্ব আসুক, এই লেখাটা ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

-বালক

প্রকৃতিপ্রেমিক(অফলাইনে) এর ছবি

ভালো লাগলো। আরেক পর্ব লিখুন তাহলে। তার আগে বলুন দথন মানে কী? শেষ লাইনে লিখেছেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার পাঠ খুব নিখুঁত বোঝা গেলো। এখানে তখন হবে দথন ভুল, কম্পোজ দূর্বলতা... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার পাঠ খুব নিখুঁত বোঝা গেলো। এখানে তখন হবে দথন ভুল, কম্পোজ দূর্বলতা... হাসি

বালক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

খুব সুন্দর একটা লেখা পড়লাম। অসাধারণ...

পাঠক চাইলো... আপনে লিখতে থাকেন... আশায় রইলো পাঠক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ গুরুজন। চোখ টিপি

বালক

কাকতাড়ুয়া [অতিথি] এর ছবি

পাঠক চাইতেসে.. লেইখা ফালান জলদি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখি বস, আজকেরটা পুরান হোক। হাসি

-বালক

অম্লান অভি এর ছবি

পরবর্তী ২৪শের পাড় শেষ হোক আপনার জন্য আর আমাদের চোখ পাক নতুন খাদ্য মনের জন্য.............পাঠক আগ্রহী পাঠে বালক ( বৃদ্ধ লেখক) এর কাছে।

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

বালক [অতিথি] এর ছবি

হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

বালক [অতিথি] এর ছবি

শুভেচ্ছা রইলো।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এই পাঠকও চাইছে। লেখা চলুক! ভাল্লাগছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

বালক [অতিথি] এর ছবি

হাসি

বালক [অতিথি] এর ছবি

ঠিকাছে

সুমন সুপান্থ এর ছবি

ভালো লাগলো ...

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

বালক [অতিথি] এর ছবি

শুভেচ্ছা হাসি

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

পড়তে ভাল লাগলো।
"কম্পোজ দূর্বলতা." কাটিয়ে উঠবেন, প্রত্যাশা রইলো।

বালক [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ মন্তব্য'র জন্যে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো। চলুক, তবে!
..................................................................

ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।