আমার শৈশববেলা

মৃত্তিকা এর ছবি
লিখেছেন মৃত্তিকা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১০/০৮/২০০৯ - ৯:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার শৈশববেলা

সেদিন লিখেছিলাম একটি গল্প, আমার ডায়রীর পাতা থেকে। তবে আজকে পেছনে ফেলে আসা নিজের শৈশবের কিছু ঘটনা মনে পড়ছে, তারই খানিকটুকু এখানে লিখে ফেললাম………

লেখক হুমায়ুন আহমেদের মতো আমিও বলবো, “জন্ম মুহুর্তের কথা কিছু মনে নেই আমার”। তবে ছোটবেলার খন্ড খন্ড অনেক ঘটনাই স্বর্ণালী স্মৃতি হয়ে আছে এখনও, থাকবে। সেই সব স্মৃতি মনে পড়লে নিজেই হাসি অথবা কখনও কখনও দু’ফোটা চোখের জল ফেলি….সেটি কি আনন্দ অশ্রু না বেদনার, তা আমার কাছে আজও রহস্যময়!

আমার জন্ম ঢাকার শান্তিবাগে, আমার নানাবাড়িতে। বাবা মা দুজনেই উকিল, বাবাকে প্রতি সপ্তাহেই ঢাকা-কুমিল্লা যাতায়াত করতে হতো। আর সেই সুবাদে শৈশবের শুরুটা কেটেছে এই নানাবাড়ীতে আদরে, লোকারণ্যে, মহানন্দে!

মালীবাগ মোড় হতে গলি থেকে গলি পেরিয়ে হঠাৎ একটি কাঠের দোতলা বাড়ী, যার সামনে বিশাল উঁচু এক লোহার গেইট। সেখানে ঝুলছে আরও বিশাল একটি সাদাকালো সাইনবোর্ড, বড় বড় হরফে নানানানীর নাম লেখা। এখানেই কাটে আমার দুরন্ত শৈশবের দারুন কিছু সময়! এবার গেইট এর ভিতরের কিছু বণর্না দেয়া যাক……..ঢুকেই সামনে বিশাল এক বাংলো ধাঁচের কাঠের দোতলা বাড়ী, যার এক মাথা থেকে অপর মাথা পর্যন্ত চলে গেছে ব্যালকনি। আর ব্যালকনিতে দাঁড়ালে সামনেই চৌকোণ বাগান, হেন গাছ নেই যা ওখানে লাগাননি আমার নানা। আম, জাম, কাঁঠাল, ডালিম, নারকেল, চালতা থেকে শুরু করে ইউক্যালিপ্টাস গাছ অবধি ছায়া দিতো পুরো সীমানাটিকে। বাগানের পাশেই ছিলো গ্যারাজ ঘর যার দরজায় ঝুলতো বিরাট একটি তালা। বাংলোর সামনে এবং আরেকপাশে ছিলো বেশ বড় পাকা উঠোন, যেখানে আমরা ভাই বোনেরা এবং কতিপয় পাড়ার ছেলে পিলে এক্কা-দোক্কা, গোল্লাছুট, সাত-চারা থেকে শুরু করে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, বোমবাস্টিক সবই খেলেছি। এই উঠোনকে ঘিরেও ছিলো কিছু পাকা বাড়ী, যার একটি সিঁড়ি সমেত কয়েক ধাপ উঁচুতে। সিমেন্টের সেই বাঁধাই টিকে আমরা মঞ্চ বানিয়ে খেলতাম। সংক্ষিপ্তাকারে এখানেই শেষ করি সীমানার ভিতরের বণর্নাটি নতুবা পুরো লেখাটি জুড়ে লিখলেও বোধ করি এর বর্ণনা শেষ হবে না! ঐ বাড়ীতে আমরা ছাড়াও থাকতেন আরও কতিপয় লোকজন, যারা নানাবিধ কাজ করতে এসে হয়ে গেছেন পরিবারেরই সদস্য এবং আর ফিরে যাননি। এরা ছাড়াও প্রতিদিন আনাগোনা থাকতো নানার মক্কেল, আত্মীয় আর পাড়ার লোকদের। আর তাই বাড়ীটি প্রায়শই মুখরিত থাকতো এবং আমাদের শৈশবের আনন্দ দ্বিগুন করে দিতো সেই পরিবেশ। বাড়ির মানুষগুলোর গল্প না হয় আরেকদিন করবো।

শৈশবের কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ছে আমাদের চার ভাইবোনের মজার কিছু স্মৃতি! ভুতের বাসস্থান হিসেবে আমাদের কাছে যেসব জায়গা পরিচিত ছিলো, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাগানের পাশে গ্যারাজ ঘরটি। সেটিতে আমার নানার পুরোনো নষ্ট অস্টিন গাড়িটি রাখা হতো। চালাতে দেখিনি কখনও এটিকে, জন্ম থেকে এভাবেই তালাবদ্ধ দেখে আসছি। ২/১ বছর পর পর হয়তো বের করে সারাবার ব্যর্থ চেষ্টা করা হতো…..তা মনে পড়ে। এখনও মনে পড়ে, গাড়ীর বিভিন্ন পার্টসের দিকে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বসে আছেন নানার পুরোনো বিহারী মিস্ত্রী এবং পাশেই দাঁড়িয়ে অতি উৎসাহের সাথে নানা প্রতিটির অসুবিধা বণর্না করছেন। আমরাও ভাই বোন গুলি সমানে তাদের চতুর্দিক ঘিরে লাফাচ্ছি আনন্দে! কারণ............এক, গাড়ীটি দেখতে পারছি; আর দুই, নানার কথা অনুযায়ী অতি শীঘ্রয়ী এতে চড়তেও পারবো!

যা হোক, গাড়ীটি কখনই চল্লো না। নানা বিক্রীও করলেন না। গ্যারাজে তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে রইলো। গ্যারাজ এর দরজা ছিলো কাঠের তৈরী এবং ভয়ানক ভাবে ছিলো ভাঙ্গাচোরা। রাতেরবেলা ঐ জায়গায় আমরা এক কদমও যেতাম না। কারণ, অতি পুরোনো ঐ গ্যারাজ ধুলো ময়লা জমে আর মাকড়সার জাল পেঁচিয়ে ভয়ংকর আকার ধারণ করতো! তবে দিনের বেলা অন্যান্য খেলাধুলার চেয়েও আমাদের প্রিয় কাজ ছিলো ভাইবোন সবকটা মিলে গ্যারাজের দরজার ভাঙ্গাচোরা অংশ দিয়ে জোর করে ভিতরে ঢোকা। একজন একজন করে ঢুকতাম। কারো হয়তো মাথা ঢুকেছে তো বাকিটা ঢুকছেনা, তখন তাকে ঠেলে ঠুলে, চেপে ঢুকানো হচ্ছে কিংবা কারো সবটাই ঢুকেছে, কেবল মাথাটাই বাকি! গা-হাত-পা ছিলে যেতো ঢুকতে যেয়ে। কারন কাউকে না জানিয়ে শব্দ না করে ঢুকতাম, নইলে নানা জানতে পারলে মেরে তক্তা বানাবে! ঢুকেই গা-পায়ের ব্যাথার কথা ভুলে যেতাম। কারন ততোক্ষণে আমরা অন্য জগৎ এ এসে গেছি……….আমাদের খেলা শুরু। ধুলো জড়িয়ে, জালকে পরোয়া না করে “ট্যাক্সি-ট্যাক্সি”, “বড়লোক-বড়লোক”, “ড্রাইভার-ড্রাইভার” ইত্যাদি খেলতাম। আনন্দে আমাদের চোখ চকচক করতো এই ধুসর বর্ণের ময়লা নড়বড়ে গাড়িটিতে উঠতে পেরে!

তবে ছোটবেলায় সবচেয়ে আনন্দ বোধ হয় হতো ঝড়ের সময়……সেই বৃষ্টিতে ভেজা, কাঁচা আম কুড়িয়ে খাওয়া! হয়তো চৈত্রের শেষ দিকে কোন এক দুপুরে সবাই গরমে অস্থির হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে, এর মধ্যে দেখা যেতো চারদিক আঁধার হয়ে আসছে। হু হু করে বাতাস বইছে শুকনো পাতাগুলোকে অবলীলায় উড়িয়ে দিতে দিতে। তখন শান্তিবাগের চারদিকে গাছ-গাছালিতে ঘেরা ঐ বাড়ীর উঠোনে দাঁড়িয়ে আমরা ভাই বোন অবাক হয়ে দেখতাম চারদিক কেমন অন্ধকার আর হলুদ হয়ে আসছে! বুঝতাম এখুনি ঝড় আসবে! প্রচন্ড আনন্দে শুরু হতো আমাদের প্রস্তুতি। দৌড়ে গামলা, বালতি যে যা পারি নিয়ে তৈরী থাকতাম। পরমুহুর্তে দেখতাম গাছগুলো সব দুলতে শুরু করেছে এবং প্রচন্ড বাতাসে ঠুস ঠাস শব্দে শুরু হতো আম পড়া! যে যেদিকে পারি ছুটতাম আর আম কুড়িয়ে বালতি ভরতাম। একসময় বাতাস কমে এলে আম কুড়ানো থামাতাম। শুরু হতো অঝর ধারায় ঝুম বৃষ্ষ্টি ..............দৌড়ে ছুটতে থাকতাম উঠোনে আর বাগানে, আকাশে তাকিয়ে জীভ বের করে চেখে নিতাম বৈশাখ! আমাদেরকে যদিও ঘর থেকে ডাকাডাকি করা হতো, মার-এর ভয় দেখানো হতো, তবুও ঘরে যেতাম না। অপেক্ষা করতাম শিল পড়ার! টিন শেইড এর নীচ থেকে কাঁত হয়ে হয়ে শিল কুড়িয়ে সেগুলো নিয়ে ডিপ-ফ্রীজে রেখে দিতাম। কেনো যে রাখতাম বা রেখে পরে কি করতাম তা অবশ্য আর মনে নেই…।

সেই সময় কটকটি খুবই প্রিয় ছিলো আমাদের। রাস্তা দিয়ে কটকটিওয়ালা যখন মাথায় টিনের গোল কৌটোটি নিয়ে “ক-অ-অ-ট—কো-ও-ও-টি” বলে হাঁকাতে হাঁকাতে যেতো, তখন আমাদের মাথা প্রায় খারাপ হয়ে যেতো! কয়েকদিন সারাদিন ধরে বাগানে, এখানে, সেখানে ঘুরে খুঁজে খুঁজে কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো, ভাঙ্গা বোতল জোগাড় করে লুকিয়ে রাখতাম (মাটির নীচে)। তারপর অপেক্ষার পালা আর রোজ দুপুরে কান খাড়া করে রাখা। অতপর কাঙ্খিত কটকটিওয়ালার হাঁক শোনা মাত্রই ছুটে যেয়ে ডেকে তার হাতে সব তুলে দিয়ে অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকতাম তার কৌটোটির দিকে। বিনিময়ে ছোট্ট একটুকরো কটকটি হাতে নিয়ে আনন্দে আত্তহারা হয়ে ভাবতাম, কবে যে বড় হবো, কবে যে আমার টাকা হবে, আর সে টাকা দিয়ে আমি কটকটি কিনবো, পুরো এক কৌটো! এসবই হতো বাবা মায়ের অজান্তে, নইলে পেট খারাপ হবার আসল কারণ বেরিয়ে পড়বে যে!

একবার আমরা পাড়ার কিছু ছেলেমেয়েরা সহ উঠোনে লাটিম ঘুরাচ্ছি। হঠাৎ, ঠিক করলাম দৌড়ের প্রতিযোগীতা করা যাক! যেই কথা সেই কাজ। দৌড় হবে গেইটের বাইরে রাস্তায়, যেখান থেকে লম্বা গলি চলে গেছে বেশ খানিকদূর। ১,২,৩ বলে দিলাম সবাই দৌড়! আমি আমার সর্ব শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম, এক পর্যায়ে খেয়াল হলো আমি চোখে কিছুই দেখছিনা, শুধু ঝাপ্সা ঝাপ্সা কতোগুলো চাকা দেখতে পেলাম। পরমুহুর্তে আবিষ্কার করলাম রাস্তার মাঝখানে সবার চেয়ে সামনে আমি, কিন্তু পড়ে আছি রাস্তায়, অনুভব করলাম প্রচন্ড ব্যাথায় আমার পা যেনো অবশ হয়ে আসছে। গলা ছেড়ে যে কাঁদবো সে পরিবেশও নেই। পথচারীরা তাকিয়ে আছে সব! দূরে দেখতে পেলাম, নানা দৌড়ে আসছেন আমার দিকে। নানাকে দেখেই আমার কান্না শুরু হলো! আমাকে কোলে তুলে নিয়ে নানা সরাসরি পৌঁছে গেলেন হাড়ের ডাক্তারের চেম্বারে। আমি ডাক্তার ভিষণ ভয় পাই, কিন্তু ভয় পেলে কি হবে? এখন তো আর উপায় নেই! তাই মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে পা মেলে দিলাম ডাক্তার নানার হাতে। পা পর্যবেক্ষণ করে যেই না উনি বললেন পা ভেঙ্গেছে, অমনি আতংকে আবার কান্না! যা হোক, কোন মতে আমাকে চেপে ধরে রেখে পায়ে প্লাস্টার করা হলো হাঁটু পর্যন্ত। সেই পা নিয়ে আমি খুঁড়িয়ে হেটেছি বেশ কয়েক মাস। তারপরে আর কোন দৌড়ের প্রতিযোগীতায় নামিনি ভুলেও! বিশেষত রাস্তায় তো না’ই!

দুরন্ত উচ্ছলতায় যেমন কেটেছে আমার শৈশব, তেমনি একাকী ছোট্ট কিছু গম্ভীর সময়ও ছিলো আমার। এক হাতে পিরিচে করে লবন-মরিচ মাখিয়ে, আরেক হাতে মুচি খেতে খেতে উঠোনে আর বাগানে হেঁটে বেরাতাম …..কখনও বা আনমনে গেইট ধরে ঝুলতাম আর ভাবতাম, এই যে পৃথিবীটা ঘুরছে, গ্রহ, নক্ষত্র সবই ঘুরছে এটার শুরুটা কী করে আর শেষটাই বা কোথায়? আচ্ছা, মহাকাশ জিনিশটার নাকি শেষ নেই, এটা কি করে সম্ভব! ভাবতে ভাবতে কখনও হয়তো আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পেতাম দূরে গ্যাস বেলুন উড়ে যাচ্ছে! বিজ্ঞান থেকে আমার ভাবনা তখন চলে যেতো দার্শনিকতার ভীড়ে। তাকিয়ে থাকতাম যতোক্ষণ দেখা যায়…….বিন্দু হয়ে যেতো একসময়, আমি ভাবতাম কোথায় যেয়ে থামবে ওটা? আর নেমে কোথায়ই বা পরবে? আবার কখনও দৃষ্টি কেড়ে নিতো উড়ন্ত রঙ্গিন ঘুড়ীটি………..আর তার সাথে উড়তো আমার মন, দুলতো……..নামতো….….আবার উঠতো, স্বপ্ন বিচরণ করতো সীমাহীন আকাশ জুড়ে। আর করবেই বা না কেনো? বড়দের মতো তখন তো আর সীমাটি এঁকে দেয়া হয়নি!

এমনই আরো কতো ঘটনায় ভরে আছে আমার ছোটবেলা, লিখতে গেলে শেষ করা যাবেনা। এখনও চোখ বন্ধ করলে শুনতে পাই টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দ। শুনতে পাই ছোটাছুটি করতে থাকা কয়েকটি বালক বালিকার অর্থহীন হর্ষধনি, যা স্পষ্ট হয় একবার….পরক্ষণেই আবার মিলিয়ে যায়। আমার শৈশব আমার কাছে কতো যে মধুর তা আমি লিখে বোঝাতে পারবোনা। আর এইসব স্মৃতিচারণ করতে গেলেই ভয়ানক ভাবে এবং প্রচন্ড ভাবে ইচ্ছে করে আর মাত্র একটিবারের জন্য, অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও ঐ সময়টিতে ফিরে যেতে।

মৃত্তিকা


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বালকবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন- সেই আম কুড়ানি ঝড়, কটকটওয়ালা কাছ থেকে পুরানো জিনিসের বদলে শুকনো কটকটে কটকটি, লাটিম খেলা, ভোকাট্টা ঘুড়ি ওড়ানো বিকেল। এক ঝাপটায় সব ভেসে উঠল মনের অলিন্দে।
আচ্ছা, আপনার নানাবাড়ি কি আগের মতো আছে। না, সেখানে এখন অট্টালিকা মাথা তুলেছে?
..................................................................

ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ পান্থদা।

আপনি ঠিকই ধরেছেন। পাখির খোপের মতো কয়েকটি অট্টালিকা ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে ওখানে আজ। বাস্তবতা। যাই না আর, ধরে রাখতে চাই যেমনটি আছে মনের চোখে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ইশ্... বছর দুয়েক আগে এই লেখাটা লিখতেন... তাহলে সচলের আমার ছেলেবেলা ই-বুকে এইটা দিয়া দিতো জেবতিক ভাই।
যদিও তিনি ঘোষণা দিছিলেন এইটার দ্বিতীয় খণ্ড করবেন, কিন্তু সেই ওয়াদা খেলাপ করছেন।

যা হোক... আপনার লেখা ভালো লাগলো... ধন্যবাদ...

আপনার নানাবাড়ির যে বর্ণনা দিলেন, তা মোটামুটি লোভনীয়। ঐ অঞ্চলে সম্ভবত এরকম পুরনো ধাঁচের বাড়ি আরো বেশ কিছু আছে। আমার এক বন্ধুনী একবার আমারে নিয়ে সেই এলাকায় গেছিলো একটা বাড়ি খুঁজতে। সে ছোটবেলায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো, সেই বাড়ি। ঠিকানা জানে না কিছু জানে না, খালি ছোটবেলার স্মৃতি সম্বল করে... পায় নাই... মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই নজরুল আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
হ্যা, ঐ এলাকায় পুরোনো কিছু বাড়ী ছিলো কিন্তু কাঠের বাড়ী একটিই ছিলো। সেসব কিছুই আর নেই এখন...........

অনিকেত এর ছবি

আবারো চমৎকার লেখা, মৃত্তিকা!
বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় বৃষ্টির বর্ণনাটুকু।

খুব ভাল লাগল, আরো আসুক, এবং একটু ঘন ঘন আসুক হাসি

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ অনিকেত'দা!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ফাটাফাটি!

আমি ছোটবেলায় কটকটির লোভে ঘরের যাবতীয় কাঁচের জিনিসপত্র ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলতাম! কটকটি ওয়ালার ওপরে আমার রাগও ছিলো তীব্র - ব্যাটা গাদা গাদা কাঁচ নিয়ে দিতো ছোট্ট একটা টুকরো। পরে অন্য বুদ্ধি এঁটেছিলাম, একবারে অনেকগুলো কাঁচ না দিয়ে একটা-দুইটা করে দিতাম।

আমাদের বাড়ি পার হয়ে যাবার সময় একবার নিতাম, সুধির মোদকদের বাড়ি পার বার সময় দৌড়ে গিয়ে আরেকবার নিতাম হাসি

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ লুৎফুল।

হা হা হা.......আমরাও নানান চেষ্টা করতাম বেশী কি করে পাওয়া যায়! সফল হইনি তেমন আর তাই তো কটকটি এত দুর্লভ আমাদের কাছে!

জোছনা রাতের মস্তান এর ছবি

হুম ভালো লাগল... চলুক...

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ.......

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌ছেলেবেলার স্মৃতিময় লেখাগুলো এমনিতে খুব উপাদেয় হয়, আপনার দারুন লেখনীতে আরো চমৎকার ফুটেছে স্মৃতিময় দিনগুলো।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য!

প্রজাপতি [অতিথি] এর ছবি

মৃত্তিকা আপনার লেখা ভীষন মন ছুয়ে গেল, কিছুক্ষনের জন্য আমিও আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে হারিয়ে গেলাম। কটকটির পাশাপাশি হাওয়াই মিঠাই,তিলের খাঁজাওয়ালার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতাম।

যখন ছোট ছিলাম তখন মনে হত কবে যে বড় হবো, এখন বুঝি সেই সময়টা সবচেয়ে মধুর ছিল।

মৃত্তিকা এর ছবি

আর খাবারগুলোর নাম নিয়েন না আপু!

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে! অনেকদিন আপনার কোন লেখা আসছেনা।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বিজ্ঞান থেকে আমার ভাবনা তখন চলে যেতো দার্শনিকতার ভীড়ে। তাকিয়ে থাকতাম যতোক্ষণ দেখা যায়…….বিন্দু হয়ে যেতো একসময়, আমি ভাবতাম কোথায় যেয়ে থামবে ওটা? আর নেমে কোথায়ই বা পরবে? আবার কখনও দৃষ্টি কেড়ে নিতো উড়ন্ত রঙ্গিন ঘুড়ীটি………..আর তার সাথে উড়তো আমার মন, দুলতো……..নামতো….….আবার উঠতো, স্বপ্ন বিচরণ করতো সীমাহীন আকাশ জুড়ে। আর করবেই বা না কেনো? বড়দের মতো তখন তো আর সীমাটি এঁকে দেয়া হয়নি!

এ অংশটা ভালো লাগল, এই ভাগে তোমার লেখনির জোর বেশ ভালো দেখা গেল। চলুক এমন আরো লেখা।

আর শৈশবের কথা কী বলব, এমন পাজী ছিলাম যে, দুষ্ট বালিকাও নাম পাল্টায় ফেলবে আমার দুষ্টুমির গল্প পড়লে। আর পুরানো গাড়ীর প্রতি একটা গোপন আকর্ষন আমারো ছিল :)। সে সব কথা নাহয় বাদ দেই। লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। ছোট কালে আমাদের বাসার কাজের মেয়ে কটকটি বানাতে পারত, কাজেই এত বেশী কটকটি খেতাম যে কৃমি লেগেই থাকত আমার। তবে সবচেয়ে প্রিয় ছিল হাওয়াই মিঠাই আর শন পাপড়ি। এখনও শন পাপড়ি পেলে ঝাপিয়া পড়ি। শন পাপড়ি খেতে পেলে মনে হয়, যেন এখনও ছোটই আছি দেঁতো হাসি

শুধু বাড়ীর বর্ননা আর ছবি দিয়ে একটা লেখা চাই, আর চাই আরো কিছু লেখা দুরন্তপনার গল্প নিয়ে, আশা করি এবার ১ মাস লাগবে না আবার লেখা দিতে চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ সাইফ ভাই।

ঝাকা ভর্তি গোলাপী হাওয়াই মিঠাই, ২ টাকার শন পাপ্‌ড়ির প্যাকেট আর তিলের খাজা.....এর কোনটি হাতে পেলেই তখন মনে হতো যেনো স্বর্গেও এতো সুখ নেই!

বাড়ীর ছবিগুলো হাতের কাছে নেই, থাকলে আমি এ লেখাতেই দিতাম। দেশ থেকে আনিয়ে রাখবো এর পর।

মামুন হক এর ছবি

দারুন লেখা মৃত্তিকা!
শৈশবের কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ছে আমাদের চার ভাইবোনের মজার কিছু স্মৃতি!---আমরাও চার ভাইবোন, আর মনে পড়ে কত মজার স্মৃতি!

মৃত্তিকা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ মামুন ভাই...........

ভুতুম এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে। চমৎকার লিখেছেন!

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ....
খুশি হলাম ভালো লাগলো জেনে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

ভাল লাগল...খুব চমৎকার লেখা! মনে পড়ে গেল...অনেককিছু।

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ স্বপ্নহারা!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

খুব সুন্দর লিখেছেন... ছেলেবেলার অনেক কথা মনে পড়ে গেল...

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

খুব সুন্দর লিখেছেন... ছেলেবেলার অনেক কথা মনে পড়ে গেল...

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার স্মৃতিজাগানিয়া লেখা। ভালো লাগল। নিয়মিত লিখুন। হাসি

মৃত্তিকা এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ প্রহরী।

অতিথি লেখক এর ছবি

onek in por kotkotir kotha mone porlo. Chelebelay amar khub icche korto kinto mayer bokunir bhoye kono din kethe pari ni...ekhon sejonno kosto hoy na kinto kotkotir sritita romantic ava peyeche.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।