স্বপ্ন ক্লিষ্ট

মৃত্তিকা এর ছবি
লিখেছেন মৃত্তিকা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/১০/২০০৯ - ৪:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জানালায় হেলান দিয়ে গুন গুন করে ওঠে অনন্ত,
-জীবন পাত্র উচ্ছরিয়া মাধুরী করেছো দান। তুমি জানো নাই, তুমি জানো নাই.......

-গান বা কবিতা............কোনটাই কিন্তু হচ্ছেনা!
আলতো হেসে মাথা নাড়তে থাকে অপলা, ঝুন ঝুন শব্দে নেচে ওঠে ঝুমকো জোড়া।

-সে জানি! মনের ভাবনাটুকু অক্ষর আর শব্দ দিয়ে সাজাচ্ছিলাম মাত্র।

-“তাই বুঝি?” অপলা হাত বাড়িয়ে এলোমেলো করে দেয় অনন্তের কোঁকড়ানো চুলগু্লো।

“তবে যে খুব চলে যাও রোজ রোজ? বলো তো, আমি তোমার গান শুনবো, নাকি লোকেদের কথা বিশ্বাস করবো?” -অভিমানী অপলা সুধায়।
নিরুত্তর অনন্ত শুধু মায়াভরা দৃষ্টি দেয় কিন্তু তাতে অপলার মেঘ সরে না! চঞ্চল বধূ তার, গাল ফুলিয়ে জানালার শিকে আঙ্গুল চালিয়ে আঁকিবুকি করতে করতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে থাকে কেবল।

আকস্মিক মেঘের প্রবল গর্জনে দুজনের দৃষ্টি চলে যায় জানালার ওপারে। ধূসর রঙ্গা মেঘেদের ঘনঘটায় আকাশে রূপালী তীর্যক আলোকরেখাগুলোর যে কাটাকুটি খেলা চলতে থাকে, তাই চেয়ে দেখতে থাকে তারা.......................নিশ্চুপ, নিষ্পলক, কিছুক্ষণ।

এদিকে ঘরময় অন্ধকার, জানালার ওপারে একটু পরেই শুরু হয় ঝম ঝম, তারপর রিম ঝিম……নূতন বৃষ্টিতে গাছ গুলো ধুয়ে মুছে চক চকে সবুজ হয়ে উঠতে থাকে। প্রবল বাতাসে বৃষ্টির ছাঁট এবার বাঁকা হয়ে এসে গায়ে পড়ে, আর অপলা খিল খিল হাসিতে ভেংগে পড়তে থাকে! সেই সাথে জানালার পর্দাগুলোও বাতাসে নড়ে চড়ে আছড়ে পড়তে থাকে দেয়ালে।

অপলার পরণে গাঢ় নীলাম্বরী, পিঠময় সুগন্ধি ভেজা চুল। নির্ঘুম চোখে গতরাতের কাজল। জানালার শিক ধরে দুলে উঠলো অপলা, সেই সাথে ঘরের নীরবতা ভংগ করে টুংটাং শব্দে বেজে উঠলো হাতের সবুজ চুড়িগুলোও। চোখের কোণ দিয়ে ডানপাশ দেখে নিলো সে, অনন্ত চেয়ে আছে। অভিমান দৌড়ে পালালো..................

-এবার বলো, আমি যা দেখি তুমি তা দেখো?
-হুম, দেখি। মৃদু হেসে উত্তর দেয় অনন্ত।

-আমি দেখছি একটা মেয়ে লাল জামা গায়ে, আপন মনে খেলছে। বলো তো কোথায়?
-খুব সোজা! এই যে, এই ঘরে!

-ধুরো অনন্ত! এরকম করলে খেলবোনা। আমি কি লাল জামা পড়েছি নাকি?
-আচ্ছা, বলছি দাঁড়াও।
-হেরে গেলে যেতে দেবোনা কিন্তু আজ আর কোথাও তোমাকে! বেঁধে রাখবো! অপলা গভীর কালো চোখ দুটো বড় বড় করে পাকিয়ে জানান দেয় তা।

অনন্ত জানালার বাইরে চারপাশ দেখে, খুঁজতে থাকে মেয়েটাকে। অপলা ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে মিটি মিটি।
-ঐ তো, ঐ ছাদে। বাব্বাহ! এতো দূরের জিনিস দেখলে কি করে?
অপলার হাসিমুখ নিভে গেলো। “এটাও বের করে ফেললে? ধুরো!”

অনন্ত শব্দ করে একচোট হেসে নিয়ে দৃষ্টি রাখে অপলার স্নিগ্ধ মুখায়বে, সে দৃষ্টি স্থির হয় নির্ঘুম, ক্লান্ত, আর্দ্র দুচোখে। ধীর কন্ঠে বলে যায় সে,

-আর আমি দেখি, একটা বিশাআআআল সমুদ্র………যার পানি নীলাভ সবুজ। তার তীর ঘেসে সাদা বালির কিনারা চলে গেছে অনেক, অনেক, অনেক দূর।

সেই তীরে রয়েছে একটা ঘন সবুজ বন, যার মাঝে ছোট্ট সবুজ এক টিলা। আর সেই টিলার বুকে দেখা যায় ছোট্ট একটি বাড়ি, যার জানালায় রোজ বসে একটি পাখি, বসে বসে উড়ন্ত পাখিদের দেখছে।
সমুদ্রের ওপারে বিশাআআআল নীল আকাশের উপরে সাদা সাদা ভেলা মেঘ। আর সেই ভেলা মেঘের আড়ালে উড়ে যায় আরেকটি পাখি। বলো তো পাখিটিকে দেখতে পাও?

শুনতে শুনতে অপলা নির্বাক চোখে চেয়ে ছিলো অনেকক্ষণ সেই দূরের মেয়েটির পানে, যার আঁজলায় সঞ্চিত ফুলগুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ততোক্ষণে। আরও, আরও অনেকক্ষণ পরে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে ওঠে ওর, টুপ করে ঝরে পড়ে গাল বেয়ে উষ্ম অশ্রুবিন্দু। জানালা ছেড়ে দাঁড়ায় সে। আকাশ দেখে। সে আকাশ নীল নয়, তাতে নেই কোন মেঘ। পাশে তাকিয়ে দেখে- নাহ, কেউ নেই! কোথায় গেলো অনন্ত? কেন চলে যায় ও বার বার?

বড্ড রাগ হতে থাকে অপলার! আরও বেশি কান্না পায় এবার! জানালার শিকে আঘাত করে ও। জোরে, আরও জোরে........... ঝন ঝন শব্দ তুলে চুড়িগুলো ভেঙ্গে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে, সে আওয়াজ ছাঁপিয়ে যায় অপলার কান্নার আওয়াজ। ঘরময় সবুজ কাঁচের টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ে.......। অশ্রুধারা প্রবল হয়ে অপলার চোখ দুটোতে রাজ্যের কালি মাখিয়ে দিয়ে যায় আজও, আবারও।


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দুর্দান্ত লাগল, বড়ই অভিমানী দেখি অপলা। এই দুনিয়ায় এমন অভিমানী মানুষের জন্যে দু:খ কষ্ট ছাড়া আর কিছু নাই। তাকে ভার্ষন ১.০ থেকে তাড়াতাড়ি আপগ্রেড করে ভার্ষন ২.০ বানাও, নাহলে কিন্তু বাস্তবতার মুখোমুখি হলে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের খাতায়।

সাথে একটা ছবি হলে আরো ভালো লাগত

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

থ্যাংকু...

সাইফ তাহসিন এর ছবি

তোমার ক্যাটেগরি কিন্তু উসকানি মূলক, গল্প হিসাবে দিলেই পারতে, তোমার ক্যাটেগরী দেখে অফেন্ডেড ফিল করতে পারেন কেউ কেউ। খান কতক ১ ভোটও খাইতে পারো এর জন্যে। যাক সুন্দর হয়েছে লেখাটা। চলুক !!

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

কি যে বলেন ভাইয়া! আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি এই লেখা আমারই মতন অতিরিক্ত প্যাতপ্যাতে রোমান্টিক মানুষদের জন্য যারা বিচ্ছিরি রকমের কল্পণাপ্রবণ। বুঝলেন? হাসি

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হো হো হো প্যাতপ্যাতের কিছু তো দেখি নাই তোমার মাঝে ইয়ে, মানে... , তবে কল্পনাবিহীন মানুষের সাথে যন্ত্রের কোন পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

তুলিরেখা এর ছবি

অনন্ত ও তার সাথী। ভারী সুন্দর লাগলো। যারা অনন্তকে ভালোবাসে তারা বুঝি চিরকালই এমন অন্তহীন অশ্রুতে ভেজে।
ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মৃত্তিকা এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগছে তুলি আপু! অনেক ধন্যবাদ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখাটা। রোমান্টিক বা প্যাতপ্যাতে কিনা জানি না, কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে গেলো লেখাটা ভীষণ ভাবে। এরকম কিছু ভাবনা আছে ভেতরে, সেগুলো আপনার মতো দক্ষতায় শব্দ আর বাক্যের সার্থক রূপ দিতে পারলে হয়তো এরকমই কিছু একটা দাঁড়াতে পারতো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মৃত্তিকা এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা নেই, গল্পের সাথে মিল রেখে গান পাঠালাম তাই একটা হাসি

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গান তো শুনতে পারি না। মন খারাপ

আপনি কি এটা পড়েছেন? চামে চামে নিজের লেখার পাবলিসিটিও বলতে পারেন। কিন্তু আপনারটার মতো এতো ব্যক্ত বোধহয় হয়নি। যাইহোক, ওখানেও কয়েকটা গান আছে লেখাটার সাথে মিল রেখে। শুনতে পাবেন আশাকরি। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মৃত্তিকা এর ছবি

পাবলিসিটির কিছু নাই ধূগোদা, এখুনি যেয়ে পড়ে এবং শুনে আসছি।

আর গানটা নীচের মন্তব্যে লিংকে দিয়ে দিয়েছি, কষ্ট করে ওখান থেকে একটু শুনুন হাসি

মৃত্তিকা এর ছবি

দুঃখিত, ইস্নিপ্সের গানটা শোনা যাবেনা বোধ হয়! ইয়ে, মানে... তাই লিংক দিয়ে দিলাম

http://www.esnips.com/doc/8ef7e445-0d74-4749-b8e9-b5aec35cb51d/05-.-Jete-Dao-Gelo-Jara--Indrani,-Indranil

অতিথি লেখক এর ছবি

মৃত্তিকা মেম,
সমাপ্তিতে লিখেছেন:- ---------আজও, আবারও। কিন্তু অনন্ত কোত্তেকে আসে? কোথায় যায়? আর, কেনই বা চলে যায় তার কিন্তু হদিস পাওয়া পাঠকের পক্ষে দুষ্কর। তথাপি ভাল লাগল। চালিয়ে যান!
এস হোসাইন

-------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

মৃত্তিকা এর ছবি

গল্পের নামটি দেখুন। তাতে হয়তো বুঝতে সুবিধা হবে কিছুটা।
অনন্ত এই পৃথিবীতে আর নেই, তবু অপলা তারই উপস্থিতিতে বিভোর- দিনে কিবা রাতে, আর তাই রাতগুলো তাকে কাজল পরিয়ে দিয়েছিলো।

ধন্যবাদ হোসাইন।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা প্যাতপ্যাতে হইসে নাকি জানি না- তবে রোমান্টিক হইসে...
ইয়ে, অনন্তগুলা আসলে চইলেই যায়- অপলার মত বেকুব গুলাই তার জন্যে বসে থাকে... এইটা নিয়ম।

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

মৃত্তিকা এর ছবি

উহু, এ চলে যাওয়া সে চলে যাওয়া নয়!
গল্প রোমান্টিক লাগলে কিছুটা সার্থক হয়েছি.... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

শুধু কী অনন্তরা যায়? মাঝে মাঝে অপলারাও যায়, তখন অনন্তরা দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনে, উদ্ভ্রান্ত পথ চলে। যে এই পথ চলাকে সংক্ষিপ্ত করতে পারে সেই সুখী হয়।
ভালো লাগল গল্পটা।

ধন্যবাদ।
দলছুট।

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ দলছুট....

অনিকেত এর ছবি

ভাল লাগল মৃত্তিকা---!!

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ অনিকেত'দা...

নির্জন স্বাক্ষর এর ছবি

খুব ভালো লাগলো। দারুন লিখেছেন। চলুক

----------------------------------------------------------------------------

ডানা ভাঙ্গা একলা কাক, পথ শেষে থাক...একলাটি থাক

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সাক্ষর!

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ ভাল লাগলো

শুনতে শুনতে অপলা নির্বাক চোখে চেয়ে ছিলো অনেকক্ষণ সেই দূরের মেয়েটির পানে, যার আঁজলায় সঞ্চিত ফুলগুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে ততোক্ষণে। আরও, আরও অনেকক্ষণ পরে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে ওঠে ওর, টুপ করে ঝরে পড়ে গাল বেয়ে উষ্ম অশ্রুবিন্দু। জানালা ছেড়ে দাঁড়ায় সে। আকাশ দেখে। সে আকাশ নীল নয়, তাতে নেই কোন মেঘ। পাশে তাকিয়ে দেখে- নাহ, কেউ নেই! কোথায় গেলো অনন্ত? কেন চলে যায় ও বার বার?

খুব উপভোগ করলাম

জলপুত্র তথাস্থু,

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে....

রেশনুভা এর ছবি

আমি এতই গাধা সুন্দর কথাও সুন্দর করে বলতে পারি না ... হাসি
খুব সুন্দর।

মৃত্তিকা এর ছবি

খুব ভুল একটি কথা! আপনার লেখাগুলো সুন্দর, আর সুন্দর গতিতেই আগাচ্ছে।
ধন্যবাদ।

জি.এম.তানিম এর ছবি

ভালো লিখেছেন।

রোমান্টিকতা ছাড়া মানবজীবনের কী অর্থ?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

মৃত্তিকা এর ছবি

অর্থই নাই!
থ্যাংকু তানিম........

মামুন হক এর ছবি

মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা। খুব ভালো লাগলো!

মৃত্তিকা এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে, ধন্যবাদ!

খেকশিয়াল এর ছবি

ভাল লাগলো বেশ

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মৃত্তিকা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ খেকশিয়াল হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।