একজন সচল মানুষ

মৃত্তিকা এর ছবি
লিখেছেন মৃত্তিকা [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২১/০৮/২০০৯ - ৩:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে ঘুম ভেঙ্গে চোখ খুলতেই জানালা দিয়ে ঢোকা উজ্জ্বল আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে আবারো একটু আরাম খুঁজলাম। মনে পড়লো আজ এই আবাসিক এলাকার বাৎসরিক পিকনিক! মাথা ঘুরে গেলো ঘড়ির কাঁটার দিকে, দেখি বেলা এগারোটা বাজে। উঠে পড়লাম। নতুন বাসা, নতুন পরিবেশ, চেনা জানা হোক।

জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি, মিষ্টি রোদে ছেয়ে আছে পুরো জায়গাটা। শীতের শুরু, সবুজ পাতাগুলো তখনও ঝরে যায়নি। দেখতে দেখতে চোখ পড়লো পার্কিং এ রাখা মেরুন মিনিভ্যানটির উপর। গাড়িটি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। কারণ এটিতে চালকের আসনটি নেই। তাহলে চালায় কী করে? খুবই অদ্ভূত!

আমরা উঠেছি ইউনিভার্সিটি অফ ডেলাওয়ারের ক্যাম্পাস এর কাছেই একটি গ্র্যাজুয়েট হাউজিং এ। বেশ সুন্দর চারপাশ, মাঝে মাঝেই সবুজ গাছপালা, ঘাস আর খোলা প্রান্তর। আমরা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিচে নামলাম। বাসার নিচেই ছোটখাটো আয়োজন। লোক আসছে যাচ্ছে। টেবিল ভর্তি হরেক রকম খাবার সাজানো। টেবিলকে ঘিরে সবাই যে যার মতো রয়েছে। কেউ দলবদ্ধ হয়ে গল্প করছে, কারও উচ্চ স্বরে হাসি শোনা যাচ্ছে আবার কেউ বা খেতে ব্যস্ত! কয়েকটি সোনালী চুলের বালক বালিকারা কল কল করে কথা বলছে আর দৌড়োচ্ছে। আমরা দুজন এইদেশীয় কায়দায় হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইলাম, কারও চোখে চোখ পড়লেই মিষ্টি হেসে “হাই” বলছি। দু’একজনের সাথে পরিচয়ও হতে লাগল। কথার ফাঁকেই হঠাৎ চোখ পড়লো আবাসিক বিল্ডিং এর কর্ণারের বাসাটির দিকে যেখানে মিনিভ্যানটি রাখা। দেখলাম হুইল চেয়ারে করে একজন লোক এগিয়ে আসছেন। পরনে গাঢ় নীল সোয়েটার। হুইল চেয়ারটি একদম যেনো ছোট্ট একটি গাড়ি! চলছে, ঘুরছে, থামছে সবই সুইচ টিপে। কাছাকাছি আসতেই ভালো ভাবে দেখলাম তাকে। বয়স প্রায় চল্লিশ হবে হবে। মুখটি গম্ভীর। অন্যান্যদের মাঝে এসে হুইল চেয়ারটি থামালেন তিনি, লক করলেন তারপর বসে রইলেন।

আমি এবার চোখ সরিয়ে নিলাম, তাকিয়ে থাকলে আবার কি মনে করেন! আজ সুন্দর শীতের সকাল, ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া, ওম ওম রোদ…..ভীষন ভালো লাগার মতো একটি দিন। স্বামী তখন কথা বলছিলো এক ভারতীয় ছাত্রের সাথে। খানিকক্ষণ আলাপন শোনার পর আবারও আমার চোখ ঘুরে গেলো ওই নীল সোয়েটার পরা লোকটির দিকে। দেখলাম ঠিক আগের জায়গাটিতেই সে বসে আছে তখনও। চুপচাপ। একা। হঠাৎ মনে হলো, এই লোকটি কি আজকের শীতের সকালটি উপভোগ করছেন? অবহেলিত মনে হলো তাকে, কষ্ট হতে লাগ্লো আমার ভেতরে। জানতে ইচ্ছে হলো, সে কে? কি করে এখানে? স্বামীর ডাকে মুখ ফেরালাম, “কি? বোর লাগছে?” আমি বললাম, “না। দেখো ঐ লোকটির কি কষ্ট একা থাকার, না? আচ্ছা উনি কি এখানকার ছাত্র নাকি?” ও বল্লো, “চলো পরিচিত হয়ে আসা যাক”।

আমরা এগিয়ে গেলাম লোকটির দিকে। সে তখন আবারও একা। স্বামী তার নিজের পরিচয় দি্যে, আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। লোকটি তার ডান হাতটি কাঁপা কাঁপা ভাবে বেশ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে উঠিয়ে আমার সাথে করমর্দন করে হাসি মুখে বল্লেন, “হাই, আই এম নীল”। কথোপকথনে জানতে পারলাম, উনি পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে, এখানে এসেছেন পোস্ট ডক্টরেট করতে। আমি বিস্মিত হলাম! যে লোকটিকে আমি প্রায় অবহেলিত ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম তিনি একজন সফল এবং সচল ব্যক্তি! কষ্ট দূর হয়ে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। কথা হচ্ছিলো কি বিষয়ে উনি কাজ করছেন। জানা গেলো উনি বায়োমেকানিক্সের উপরে গবেষণা করছেন। জীবিত শরীরের কোষ, হাড় এবং তাদের গতিময়তা নিয়ে গবেষণা। শরীরের জীবিত কোষ গুলির নির্মাণশৈলী জেনে নিয়ে সেগুলোতে যান্ত্রিক মূলসূত্র এবং পদার্থবিদ্যার সূত্র প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়। এর সাহায্যে যেমন সম্ভব হয়েছে কৃত্রিম অংগ সংযোজন। শুধু চিকিথসাক্ষেত্রেই নয়, এই বায়োমেকানিক্স ও বায়োটেকনলজী খেলাধুলাতেও ব্যাবহারিত হয় মাংসপেশীর সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগবিধি জানতে। এসব আলাপের পর জানা গেলো তার নিজের কিছু কথা। সে একজন ডিসএবল(পঙ্গু)। স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হন খুব অল্প বয়সেই। পদযুগলের শক্তি খুবই কম, হাঁটতে পারেননা। হাত দুটির একটি দুর্বল, অন্য হাতটিই মোটামুটি সাহায্য করছে তাকে। এখানে একাই থাকেন।

আমি সত্যি অবাক হলাম! পুলকিত হলাম! এই লোকটিকে প্রায় অসাড় করে ফেলা রোগও অবহেলিত করতে পারেনি। থামিয়ে রাখতে পারেনি তার ইচ্ছা শক্তিকে, তার বুদ্ধিমত্তাকে, তার এগিয়ে চলা কে! যে রোগে সে আক্রান্ত, আজ ঠিক সেই রোগের চিকিথসা নিজেই আবিষ্কারের পথে সে! এই বিশাল বিশাল সবকিছুর দেশেটিতে, কৃত্রিম হাসির লোকারণ্যে, কেউ কাউকে করূণা ভিক্ষা দেয় না ঠিকই। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রম করে এরা আবিষ্কার করে প্রযুক্তি, পৌঁছে দেয় তাদের কাছে যারা নিজেদের অবহেলিত পঙ্গুত্বের খেতাবের বাউন্ডারি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়, তৈরী করতে পারে নিজস্ব একটা পরিচিতি এবং অহংবোধ।

মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, কই আমাদের দেশে তো এতো পঙ্গু রাস্তায় দেখা যায় না, যতোটা এখানে দেখছি? বড় রাস্তা, বাজার, আধুনিক বিপণিকেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্তোরা সবখানেই চলাফেরা করছে তারা। দিনে কি’বা রাতের আঁধারে হুইলচেয়ারের বাতি জ্বেলে সেরে যাচ্ছে দৈনিক কর্মকান্ড। তবে কি আমাদের দেশে ডিসএবল নেই? পরে এর উত্তর নিজেই পেয়েছি। ডিজেবল বা পঙ্গু আমাদের দেশেও প্রচুর আছেন কিন্তু তারা ঘর থেকে বের হননা তাই তাদের দেখা যায় না। তারা নিজেদেরকে অক্ষম মেনে নেন আর বাকিরা তাদেরকে মেনে নেন বোঝা স্বরূপ। শরীরের সাথে সাথে তাদের মনটাও তখন পঙ্গু হয়ে দাঁড়ায়। আবার যারা আমরা পঙ্গু নই তারাও সবাই খুব একটা সচল তাও মনে হলোনা আমার। না হলে কেন শ্রমজীবিদের প্রতি মুহূর্তের পেশীর টানকে আমরা লাঘব করতে পারিনি একটু এখনও? কেন এখনও মানুষের ভার তিন চাকায় করে টেনে নিয়ে যায় মানুষ?

আমার ভাবনা ভাঙ্গিয়ে দিলো নীল তার কন্ঠস্বর দিয়ে। “ইট ওয়াজ ভেরী নাইস মিটিং ইউ গাইজ!” বিদায় নিয়ে নীল তার ছোট্ট গাড়িটি ঘোরালো, সুইচ টিপে উলটো পথে রওনা দিলো। আমি তাকিয়ে রইলাম। হুইলচেয়ারটি যেয়ে থামলো সেই মেরুন মিনিভ্যানটির পেছনে। সেখানেও কিছু একটা চাপ দিতেই পেছন থেকে দরজা খুলে গেলো গাড়ির। নীল ভিতরে ঢুকে পড়লো। চেয়ারটি সহ চলে গেলো চালকের আসনের খালি জায়গাটিতে, তারপর গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে গেলো পার্কিং লট থেকে। এবার বুঝতে পারলাম, গাড়িটি নীলের।

মৃত্তিকা


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

চলুক
খুব ভালো লাগল মৃত্তিকা তোমার লেখাটা, এখানে সুযোগ আছে, সরকারের পয়সা আছে বলেই এরা সচল। বছরে এদের পেছনে বের হয়ে যায় সরকারের মোটা অংকের টাকা। যখন থেকে তারা ডিজেবল, তখন থেকে তাদের প্রায় সবকিছুর দায়িত্ব সরকারের। এমনকি যে চেয়ারে করে ঘুরে, তার দাম ও রক্ষনাবেক্ষনও সরকারের। তাছাড়া বিনাপ্রশ্নে মেডিকেয়ার পায় আজইবনের জন্যে। তবে তাদের মানসিক জোরের প্রসংশা করতেই হবে। আমাদের দেশে সুযোগ দেওয়া হলে আমরাও পারবো।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

আপনার কথা পুরোপুরি সমর্থন করে আরও একটি কথা যোগ করতে চাই ভাইয়া। কোন দেশই শুরু থেকে সম্পদশালী ছিলোনা। শিক্ষা, পরিশ্রম, প্রযুক্তি তারপর অর্থ। আবার অর্থ, প্রযুক্তি, পরিশ্রম, উন্নতি….. এই চক্রের মাধ্যমেই তো এগিয়ে চলা। আমার মনে হয়, অর্থাভাবের সাথে সাথে সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে আমাদের। তাই আমরা একটি ধাপে এসে আটকা পরে থাকি লম্বা সময়।

আমি শুধু পঙ্গুত্বের কথা বলছিনা, এই সমাজ এবং আমরা যারা সুস্থ তাদের অচল অবস্থার কথাও বলতে চাইছি। যেমন ধরুন, বছর বছর নিত্য নতুন মডেলের গাড়ি আমদানী হয় আমাদের দেশে, তখন এই অর্থাভাবের দেশে কেন জানি অভাব থাকেনা। কিন্তু রিক্সার চেহারা/ধরণ আজও পরিবর্তিত হলোনা, যুগ যুগ ধরে রয়ে গেছে অমানবিক এক বাহন। অর্থাভাব হয় পুর্ণাংগ গবেষণাগার নির্মাণে তা পরিসরে এবং নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারেও, হোক তা ছোট আকারেরই।
আমার এই লেখাটি এটুকু বোঝাতে যে, আমরাও সেই উন্নতির চক্র শুরু করতে পারি, ইচ্ছেগুলোকে জাগ্রত করলেই।

শামীম এর ছবি

কোন দেশই শুরু থেকে সম্পদশালী ছিলোনা। শিক্ষা, পরিশ্রম, প্রযুক্তি তারপর অর্থ। আবার অর্থ, প্রযুক্তি, পরিশ্রম, উন্নতি….. এই চক্রের মাধ্যমেই তো এগিয়ে চলা।

এর সাথে অন্য দেশের সম্পদ শোষণ ও লুটপাট কথাটা যুক্ত করতে হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিজের প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে।

মাত্র খোমাখাতায় সদ্য আমেরিকা যাওয়া ফুফাতো ভাইয়ের পিকনিকের ছবি দেখে এসে এই লেখার শিরোনাম দেখে ভাবলাম ওরই লেখা নাকি! সেদিক দিয়ে একটু নিরাশ হলেও হাসি লেখাটা চমৎকার লেগেছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

মাত্র খোমাখাতায় সদ্য আমেরিকা যাওয়া ফুফাতো ভাইয়ের পিকনিকের ছবি দেখে এসে এই লেখার শিরোনাম দেখে ভাবলাম ওরই লেখা নাকি!

চোখ টিপি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মৃত্তিকা এর ছবি

সাইফ ভাই, ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গেছি গত মন্তব্যে!
তাই জানিয়ে গেলাম অশেষ ধন্যবাদ! ভালো থাকুন।

_প্রজাপতি এর ছবি

আপনার লেখাটা খুব চমৎকার লাগলো মৃত্তিকা, এখানকার এ ব্যাপারটা আমারও খুব ভাল লাগে, শারিরীকভাবে দূর্বল হলেও কারো জীবন থেমে থাকে না, অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের মত বাঁচতে পারে। আমাদের দেশে এর সিকিভাগ চোখে পরে না, সেরকম সুযোগ সুবিধা না থাকায়।

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রজাপতি আপু।
আমিও নিজ দেশে অতিসত্বর সেই সুদিন দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দারুণ একটা জায়গায় আলো ফেলার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেশে মনে হয় যারা শারীরিক ভাবে সামান্যতমও অসমর্থ্য, তাঁদেরকে আমরা আরও বেশি করে শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই অসমর্থ্য করে ফেলি আমাদের ব্যবহার, কথা-বার্তা, দৃষ্টিভঙ্গি আর অবহেলাময় চাহনী দিয়ে। অথচ এঁরা সুযোগ পেলেই হয়তো আমাদের মতো অথর্ব সামর্থ্যবানের চেয়েও অনেকগুণ বেশি কিছু করে দেখাতে পারেন।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মৃত্তিকা এর ছবি

"অথচ এঁরা সুযোগ পেলেই হয়তো আমাদের মতো অথর্ব সামর্থ্যবানের চেয়েও অনেকগুণ বেশি কিছু করে দেখাতে পারেন। "

ধন্যবাদ ধূগোদা।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ।

তুলিরেখা এর ছবি

চমৎকার লেখা। বিষয়বস্তুও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ঝকঝকে লেখনী তুলে নিয়ে আসুক এমন আরো ঝরঝরে লেখা।
নীলের কথা লিখে মনে পড়িয়ে দিলেন স্টিফেন হকিং কে। মোটর নিউরন ডিজিসে তরুণ বয়সেই আক্রান্ত হন তিনি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি আজ পৃথিবীবিখ্যাত জ্যোতি:পদার্থবিদ, লোকোত্তর প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটিকে শারীরিক সীমাবদ্ধতা আটকাতে পারেনি, চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, স্বর হারিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু গণিত হারান নি, মহাবিশ্বের রহস্যের কিছু কিছু এমন জট খুলেছেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে থেকে গেলেন চিরকালের জন্য,আগামী সময় তাকে স্মরণ করবে বারে বারে বিনম্র শ্রদ্ধায়।
ভালো থাকবেন। আপনাদের জন্য শুভেচ্ছা।
----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ তুলি আপু।
স্টিফেন হকিং অসামান্য একজন ব্যক্তি, পরম শ্রদ্ধেয়! তাঁর কথা সে মুহূর্তে আমারও মনে পড়েছিলো।
নীলের মত শক্ত মনের মানুষেরা সাধারণ হয়েও অসাধারণ। তাইতো মনে দাগ কেটেছিলো সেদিন। আর এঁদের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে কেমন যেন একটু লজ্জা হয় আমার, এখনও। হয়তো সুস্থ হয়েও আমি আমার দেশকে বা মানুষকে কি দিচ্ছি এই প্রশ্ন উঠে আসে প্রতিবার, সেকারণেই।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

আমি ব্যক্তিজীবনে কয়েকজনকে জানি যারা শারীরিক প্রতিবন্ধি কিন্তু বেশ ভালোই কাজ করে যাচ্ছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। একজনকে চিনি, যিনি সরকারী এক কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার।

আবার এমন দুয়েকজনকেও দেখেছি, যারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আকস্মিক প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং দুঃখজনক হলেও চাকুরী থেকে ছাটাই হয়েছেন সন্তোষজনক পারফর্মেন্স করতে ব্যর্থ হওয়ার দরূন।

এমনকি দেশের কোনো এস্টাবলিশমেন্ট- ই এদের কথা মাথায় রেখে করা হয়নি। তারা বের হবে কীভাবে ঘর থেকে, কীভাবেই বা কর্মক্ষেত্রে পৌছাবে আর আমরাই বা এটা কীভাবে আশা করি তাঁদের থেকে?

আপনাকে ধন্যবাদ, এমন একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ নজরুল ইসলাম।

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ সিমন!
প্রথমেই শ্রদ্ধা জানাই আপনার পরিচিত সেইজনকে যিনি ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন। আর বাকি দুজনের অবস্থার জন্য আবারও লজ্জা পাচ্ছি, দুঃখ নয়।

উদ্ধৃতি,
"এমনকি দেশের কোনো এস্টাবলিশমেন্ট- ই এদের কথা মাথায় রেখে করা হয়নি। " -কথা সত্য এবং সে কথা বলতেই এই লেখাটি।

অনিকেত এর ছবি

চলুক

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ অনিকেত'দা।

মূলত পাঠক এর ছবি

মৃত্তিকা,
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা, লেখার ধরন ও বিষয় উভয় দিক থেকেই। আমাদের দেশ গরীব বলেই হয়তো, ডিসেবল'দের চলাফেরার জন্য সর্বত্র রাস্তা বানানো থাকে না, সব বাড়িঘরে হুইলচেয়ার নিয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু মানুষের মানসিকতা তো অর্থনির্ভর নয়, সেখানেও আমরা এঁদের দূরে সরিয়ে রাখি। আমার এক বন্ধুর সন্তান অটিস্টিক, বড়ো হয়ে সারা জীবন তাকে এই তাচ্ছিল্য সইতে হবে সমাজের, এই আশঙ্কায় বন্ধু ও তার স্ত্রী দেশ ছেড়ে পাড়ি দেবার কথা প্রতিনিয়ত ভাবে। দেখে মন খারাপ হয়ে যায়, কিন্তু জানি ওদের আশঙ্কা অমূলক নয়।

আপনার বানান প্রায় নির্ভুল, দু-এক জায়গায় টাইপো আছে মনে হলো, এখানে লিখে দিচ্ছি যাতে চাইলে ঠিক করে নিতে পারেন।
অংগ: অঙ্গ
চিকিথসাক্ষেত্রেই: চিকিৎসাক্ষেত্রেই
ব্যাবহারিত: ব্যবহারিত
করূণা: করুণা
রেস্তোরা: রেস্তোরাঁ

আরো লিখুন।

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মূলো'দা আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

বানান ভুলের জন্য আমি দুঃখিত..........সংশোধনকৃত শব্দগুলো খেয়াল থাকবে।
ভালো থাকুন।

শামীম এর ছবি

গত ইত্যাদিতে (বিটিভিতে হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান) এমন একজনকে দেখিয়েছিল। অত্যন্ত গরীব ঘরের ঐ মেয়ের দুই হাত নাই, পা দিয়েই সুঁইয়ে সুতা পরিয়ে চমৎকার সব নকশা সেলাই করছিলো ... পা দুটিই ওঁর হাতের বিকল্প।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

একজন মানুষের মানসিক দৃঢ়তাই সবচেয়ে বড়।
ধন্যবাদ মৃত্তিকা।
খুবই ভালো লেখা।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

মৃত্তিকা এর ছবি

উদ্ধৃতিঃ
"একজন মানুষের মানসিক দৃঢ়তাই সবচেয়ে বড়।"--আসলেই তাই।

অনেক ধন্যবাদ ফিরোজ ভাই।

সমুদ্র এর ছবি

মানসিকতা, দৃঢতা, আর মনের জোরে আমাদের দেশেও (যেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল) কিন্তু অনেকেই দেখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে জয় করতে হয় এইসব শারীরিক বা মানসিক বাধাকে। যেমন বললেন শামীম ভাই, গত ইত্যাদিতে দেখানো মেয়েটি- দুই হাত না থাকাতেও তার ভিক্ষা করার ইচ্ছে হয়নি কখনো, পা দিয়ে কাজ করে চালিয়ে নিয়ে গেছে পুরো সংসার!
ইতালিতে পড়ার সময় আমাদের একটা কোর্সে একজন অন্ধ পি এইচ ডি স্টুডেন্টের দেখা পেয়েছিলাম, সবসময় তার সাথে একজন থাকতেন - ক্লাসে নিয়ে আসা, শেষে নিয়ে যাওয়া, লেকচার এর সময় সাহায্য করা - এসবের জন্য। পরে কে যেন বলেছিলো এইটা সরকারের ব্যবস্থা করা।
ভদ্রলোককে যতবার দেখতাম ততবারই মনে হতো - আহা, এইরকম বন্দোবস্ত থাকলে আমাদের দেশের কতগুলা মানুষ পড়াশোনা করতে পারতো।

"Life happens while we are busy planning it"

মৃত্তিকা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সমুদ্র।

হুম, এই ব্যবস্থাপণা খুবই শক্তিশালী একটি ব্যপার। এটি দুর্বল দেশকে যেমন করতে পারে সবল আবার সবল দেশকে করতে পারে দুর্বল। তবে আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনীতি ধীর পথে যে উন্নতির পথে এগোচ্ছে তাতে আমরা আশা রাখতে পারি অদূর ভবিষ্যতের একটি সুব্যবস্থাপণার।

মামুন হক এর ছবি

খুব দরকারী লেখা মৃত্তিকা। ভালো লাগল, এভাবেই আমাদের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরী করে নিতে হবে। একদিন হয়তো আমাদের দেশের প্রতিবন্ধীদের আর ঘরে লুকিয়ে থাকতে হবেনা।
ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখাটির জন্য।

মৃত্তিকা এর ছবি

ধন্যবাদ মামুন ভাই মন্তব্যের জন্যে।
ভালো থাকুন।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লিখা ভাল্লাগছে। আরো লিখা দেখার আশায় থাকলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মৃত্তিকা এর ছবি

উৎসাহ দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ লাগল লেখাটা। বিষয়বস্তু, লেখার ধরন, সবই। আশা করব, একদিন আমাদের দেশেও প্রতিবন্ধীরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করবে। এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে সরকারকে যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি পরিবারগুলোকেও অনেক বেশি সাপোর্টিভ হতে হবে।

আরো লিখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ প্রহরী!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অতিথি সচল হবার অভিনন্দন রইল

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সাইফ ভাই!

মুস্তাফিজ এর ছবি

মানসিক দৃঢ়তা আর পারিপার্শ্বিক সহযোগিতা দুটোই এস বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

...........................
Every Picture Tells a Story

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
ঠিক বলেছেন আপনি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।