সর্ষেফুল

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: শুক্র, ২১/০৮/২০০৯ - ৩:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ট্রেনে ফিরছিলাম নিজ শহরে। এক ভাইয়ার বাসায় গিয়েছিলাম। অনেক ঘোরাঘুরি, অনেক আড্ডা। ট্রেনে/বাসে উঠলেই আমার দু’চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। সঙ্গে যোগ হল ক্লান্তি। দিলাম ঘুম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। ট্রেন দেখি দাঁড়ানো। মনে মনে কষে একটা গালি দিলাম। এইসব প্রথম বিশ্বের দেশে তো এটা সহ্য করা যায় না। সহযাত্রী আবিদ ভাই দেখলাম একটু বিব্রত। আজ সকালেই উনি এই দেশের রেল ব্যবস্থার সময়জ্ঞান নিয়ে সেইরকম ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন বলে। উনার দিকে তাকিয়ে একটা ভেটকি হাসি দিলাম।

অনাকাঙ্ক্ষিত এই দেরীর মাশুল দেয়া লাগল কিছু পরেই। যে স্টেশনে চেঞ্জ করার কথা সেখানে নেমে দেখি প্লাটফর্ম আছে, আমাদের ট্রেন নাই। বেশি না; ৫ মিনিট দেরী করে ফেলেছিলাম আমরা। আবিদ ভাইয়ের মুখে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। ভাবখানা যেন, “দেখছ, কি চমৎকার সময়জ্ঞান”।

২৫ মিনিটের অপেক্ষা। ধূমপান নামক একটি বিশ্বস্ত, বিশ্রী বদভ্যাস থাকার কারণে ধূমপায়ীদের এলাকায় গিয়ে বিড়ি ধরালাম। বিশ্বস্ত বললাম এই কারণে যে কিছু কিছু অনেক কাছের মানুষ মানসিকভাবে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে চলে গেলেও উনারে আমি সহস্রবার চেষ্টা করেও ভাগাতে পারিনি। আমার আন্তরিকতা নিয়ে বিতর্কটা আজ এখানে নয়। এরমধ্যেই দেখি আবিদ ভাই কফি নিয়ে এসছেন। কফি পানের সাথে সাথে চলল টুকটাক আলাপ। অযাচিতভাবেই চলে এল ক্রিকেট। ছক্কা মারার মতন করেই ধুমসে চাপা পিটানোর এক পর্যায়ে চোখে সর্ষেফুল দেখলাম। নাহ, কোন দুর্ধর্ষ পেসারের বাউন্সার নয় বরং এক দুর্ধর্ষ হলদে অপরূপার আবির্ভাব দৃষ্টি সীমায়। তাঁর পোষাকের রঙ হলুদ আর তার নিচে চামড়ার রঙ হলুদাভ ফর্সা। কোনমতে ডাক করে এ যাত্রায় বাঁচা। মনে ক্ষীণ আশা; সামনের ট্রেন যাত্রাটা যেন ঘুমাতে না হয়।

মাঝে মাঝে এই গরীবের ডাক উপরে যিনি আছেন তিনি শোনেন মনে হয়। একই কামরায় উঠলাম আমরা চারজন। ও বলতে ভুলে গেছি; উনার সাথে এক সখীও ছিলেন। তাঁরা বসলেন কামরার শুরুতেই; বিপরীত দরজার দিকে মুখ করে। আমি বসলাম তিন সারি পরে; তাঁর দিকে মুখ করে। তিনি বসেছিলেন মাঝে যাতায়াত করার পথের পাশে। আর আমি বসলাম জানালার পাশে। দুই সীটের মাথা হেলান দেয়ার জায়গার ফাঁকা দিয়ে চমৎকার একটি সরলরেখা কল্পনা করে নেয়া যায়; এক প্রান্তে আমি আর ঐ প্রান্তে সে। আবিদ ভাই কোথায় বসলেন দেখিনি। সময় আছে না কী?

বয়স আমার লাফায় লাফায় কমে গেল। কার্যকলাপে মনে হল বছর দশেক আগে ফিরে গেছি। চোঁরাচাহনি; মুচকি হাসি। আর তাঁর বয়সটাই ওরকম ছিল; বড়জোড় ২/৩ বছর বেশি। সাড়া পেলাম। নিঃশব্দ দুষ্টুমি ছাপিয়ে গেল ট্রেন চলার শব্দকে। অনেক আনন্দের ৫০ মিনিট কেঁটে গেল। স্টেশনে পৌঁছানোর আগে আগেই সে আমাকে এই জীবনে আরো একবারের মতন একা করে দিয়ে অন্য কামরায় চলে গেলেন। রেখে গেলেন ৫০টা মিনিট। পুনরায় রক্তাক্ত হল হৃদয়। পেছন ফিরে তাঁকিয়ে দেখি আবিদ ভাই টুথ পাউডারের বিজ্ঞাপনের সেই মফিজের মতন হাসছেন, আমার দিকে তাঁকিয়ে।

স্টেশনে নেমেই দ্রুত পায়ে বের হয়ে আসলাম। পেলাম আবার তাঁরে। সামনের সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে সাইকেল বের করছেন। হাই-হ্যালো দেয়ার এই সুযোগ ছাড়া উচিৎ হবে না। পরক্ষণেই ডানে তাঁকিয়ে একটু যেন দমে গেলাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয় রুটের বাস। এক মিনিট পরই ছেড়ে যাবে। পরের বাস আবার আধা ঘন্টা পরে। এই ভাবতে ভাবতেই আবার পলক ফেলে তাঁকাতেই দেখি তিনি সোজা আমার দিকেই হেঁটে আসছেন। এতটার জন্য প্রস্তুতি ছিল না। হাজার হলেও টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত বাঙালী। হৃদপিন্ডটা মনে হল বুকের খাঁচা ছেড়ে বেরিয়েই যাবে। পা দু’টোও যেন বিদ্রোহ করছে আমার ভার আর না বইবার। কী একটা অবস্থা!

এই অবস্থা থেকে আজ অবধি মুক্তি পাইনি। চলছে, চলবে; সারাটা জনমভর। কারণ এখন যে তাঁকে প্রায়শই দেখি। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় আমার হৃদপিন্ড এখনো কম্পিত হয়। ঘন হয়ে যখন সে আসে আমার কাছে পা দু’টো কি একটুও কেঁপে ওঠে না আমার? কী একটা অবস্থা বলেন তো…

আমার স্বপ্নগুলো আজো সর্ষেফুলেই ভরা থাকে। কী এক মায়াবী ঘ্রাণ তার। অনুভব করা যায়; ছোঁয়া যায় না।

/
রেশনুভা
md.rezwanul.huq at gmail.com


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পুনরায় রক্তাক্ত হল হৃদয়।
তা তো হবেই, যেভাবে আনন্দের ৫০ মিনিট কেঁটে গেছে আপনার!

শেষের দিকে এসে বোঝা গেলোনা, আপনার দিকে হেঁটে আসার পর কী হলো? ডানে বাঁয়ে কেটে চলে গেল নাকি সোজা আপনাকে চাপা দিয়ে গেল?

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই দুঃখিত বানান ভুলের জন্য। চন্দ্রবিন্দু নিয়ে সবসময় টেনশনে থাকি। শেষটা ইচ্ছা করেই এরকম ...

/
রেশনুভা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা.. মজা করেছিলাম মাত্র হাসি

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ধরা খাইসিলেন? চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

বলমু না ... লইজ্জা লাগে... দেঁতো হাসি

সমুদ্র এর ছবি

তাঁর হাতের ছোঁয়ায় আমার হৃদপিন্ড এখনো কম্পিত হয়।

ছোঁয়াটা লাগলো কখন?! বাস্তবে না স্বপ্নে?!
শেষেরটুকু খোলাসা করলেন না যে দেঁতো হাসি

"Life happens while we are busy planning it"

অতিথি লেখক এর ছবি

বাস্তবে লাগলে কি আর গল্প লেখনের সময় থাকত নাকি? ... মন খারাপ

শাহান এর ছবি

চমৎকার! শেষ হইয়াও হইল না শেষ ......

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। উনাকে চিনছ তো? ... দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার।

জুহের, ঢাকা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।