অণু গল্পঃ ধার।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৪/১০/২০০৯ - ৭:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোড়ের দোকানে কামরানের জন্য অপেক্ষা করছে শামীম। অস্থির হয়ে চেয়ে আছে পথের দিকে, কামরানের দেখা নাই। এর মধ্যে তিন/চার বার মিস্ কল দেয়া হয়ে গেছে তবু কোনো সাড়া নাই। এর মধ্যে তিনটা সিগারেট শেষ করেছে। ৪র্থটা ধরানোর জন্য পকেট থেকে বের করে ঠোঁটে গুজে ম্যাচের কাঠি জ্বালাতে যাবে তখনই কামরানের দেখা। ম্যাচের কাঠিটা বাক্সে রেখে সিগারেটটা হাতের দুই আঙ্গুলের ভাজে রেখে দিল। কামরান দ্রুত পায়ে হেঁটে আসার ফলে হাঁপানোর সাথে ঘামাচ্ছেও। শামীম সরে গিয়ে বেঞ্চে কামরানের জন্য বসার জায়গা করে দিল।
"ডাকছস কেন হেইটা ক?কামরান বসে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
"আইছস ব, একটু ঠাণ্ডা হ, তারপর বলি।" বলে শামীম কামরানের দিকে তাকাল।
"সময় নাই, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে অইব, মা আমারে নিয়া কই যেন যাইবো।" বলল কামরান।
"দশ মিনিট কইয়া পাক্কা ত্রিশ মিনিট লাগাইছোস।"-ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শামীম বলল।
"কেন ডাকছস কইয়া ফেলা?" বলে রুমাল দিয়ে ঘাম মুছলো কামরান।
"নে একটা সিগারেট টান।" হাতের সিগারেটটা এগিয়ে দিয়ে শামীম বলল।
"না দোস্ত সিগারেট খাওন ছাড়ান দিছি।" হাত দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে কামরান বলল।
"তয় চা তো খাবি" বলে শামীম দুই কাপ লাল চায়ের অর্ডার দিল।
"কেন ডাকছস তাড়াতাড়ি ক'ত। কইছি না আমার আধা ঘণ্টার মধ্যে যাইতে অইবো।"
"দোস্ত জরিনারে তো বিয়া করতে চাই।" চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল।
"হ, পিড়িত যহন করছস, তয় করাতো উচিৎ।" চায়ের কাপ নিয়ে বলল।
"জরিনা কইছে নিজের পায়ের দাঁড়াইতে।" শামীম বলল।
"কেন, তুই কী অন্যের পায়ে খাড়াস? বলে কামরান চুক চুক করে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
"আরে ব্যাটা হেইটা না, টাকা কামাইতে কইছে তাড়াতাড়ি।"
"যে কোনো মাইয়াই এইটা কইবো।" তাড়াতাড়ি চা টা শেষ করে কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল।
"দোস্ত পাশ কইরা চাকরি পাইতে আরো বছর খানিকতো লাগব?" শামীম কাপটা নিয়ে দোকানদারকে দিতে দিতে বলল।
"হ, তাতো লাগবোই।" কামরান বলল।
"দোস্ত ভাইবা দেখলাম তাড়াতাড়ি টাকা কামানোর সহজ পন্থা হইল, শেয়ার কেনা বেচা।হুনছি শেয়ার দিয়া অনেকে অনেক টাকা কামাইছে"-বলে কামরানে দিকে হাসি হাসি মুখ নিয়া তাকাল।
"ভালো কথা, লাইগা পর।" মোবাইলে সময় দেখে বলল-"আমার সময় নাই যা কবি জলদি ক।"
"আরে এতো যাই যাই করছ কে?' পুরী খাবি?" বলে পুরীর অর্ডার দিতে যাবে, কামরান থামিয়ে দিল।
"হুনছি শেয়ার বেচা কেনায় নাকি ঝুঁকি থাকে?" কামরান বলল।
"আরে দোস্ত প্রেমে কী ঝুঁকি নাই, হেই বইলা কী কেউ প্রেম করে না?" একটা হাসি দিয়া শামীম কামরানের কথা উত্তর দিল।
"সেইটা তো মনের উপর দিয়া যায়, আর লোকসান অইলেতো, আম ছালা দুইটাই যায়।" কামরান বলল।
"কি কইলে বুঝলাম না?" বলে কামরানের দিকে তাকাল।
"মানি টাকাও যায়, মনের শান্তিও পালায়। তয় পেচাঁল বাদ দিয়া কেন জরুরী ডাকছস হেইটা ক, নাইলে আমি ভাগলাম"- বলে উঠতে গেল।
"আরে ব, কইতাছি।" হাত দিয়ে কামরানকে বসিয়ে বলল।
"জরিনা কইছে এক বছরের মধ্যে যেন নিজের টাকায় চলতে পারি, ওর বাইন্দা দেওয়া সময়ের মধ্যে শেয়ার কেনা-বেচা ছাড়া সম্ভব না।" বলে কামরানের দিকে করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকাল।
"তুই শেয়ার কেনা বেচা কর বা না কর, আমারে কেন ডাকছস সেটা ক, নাইলে সত্যি সত্যি ভাগলাম।" শামীমকে একটু ভয় দেখাল।
"দোস্ত শেয়ার কেনা বেচা করতে তো টাকা লাগব।?- বলে জিজ্ঞাসার চোখে তাকাল।
"মাগনাতো আর ব্যবসা করা যায় না।" কামরান বলল।
"দোস্ত জরিনারে পাওনের জন্য তোর সাহায্য দরকার।" বলে কামরানের থাইয়ের ওপর হাত রাখল।
"আরে কী কস, জরিনা আমার কথা হুনবো?" কামরান বলল।
"আরে হেইটা না, তুই আমাকে একটু সাহায্য কর।" শামীম বলল।
"দেখ সেই প্রেম শুরু করা থেইকা আজ পর্যন্ত অনেক সাহায্য করছি, আর পারুম না, মা এই নিয়া আমারে অনেক জারি দিছে।" বলল কামরান।
"কেন?" জানতে চাইল শামীম।
"হেই দিন জরিনার মা, মার কাছে আমার নামে বিচার দিছে,আমি আর কিছু করতে পারুম না। মাফও চাই দোয়াও চাই।" বলে উঠে দাঁড়াল।
"দোস্ত এইটা একটু অন্য রকম সাহায্য।" উঠে দাঁড়িয়ে কামরানের হাত ধরে শামীম বলল।
"কী ধরনের না বললে বুঝুম কেমনে? শামীমের হাত সরিয়ে বলল।
"কেমনে কই?" বলে মাথা চুলকাতে লাগল।
"ভাব না নিয়া কইয়া ফালা, আমার সময় নাই।" মোবাইলে রিং বেজে উঠল।"মা ফোন করছে,যাইতে অইব। তাড়াতাড়ি ক।"
"দোস্ত ভাবছি গ্রামীণফোনের শেয়ার কিনার মাধ্যমে শেয়ার বেচা-কেনা শরু করুম।" শামীম বলল।
"ভালো বুদ্ধি করছস।" কামরান বলল।
"দোস্ত চৌদ্দ হাজার টাকা লাগব।" বলে শামীম করুণ দৃষ্টি নিয়ে কামরানের দিকে তাকাল।
"যা বলতে চাস সোজা কইতে পারছ না,খালি প্যাচাস কেন?" কামরান বলল।
"তুই চৌদ্দ হাজার টাকা ধার দিলে কাজটা শুরু করতে পারি।" বলে কামরানের দিকে তাকাল।
"আল্লাহ্ হাফেজ" বলে কামরান সোজা হাটা শুরু করল।
শামীম দোকানের বেঞ্চে বসে কামরানের দিকে চেয়ে রইল।
=======


মন্তব্য

হলুদ-মডু এর ছবি

সন্মানিত অতিথি লেখক,

লেখা পোস্ট করার সময় টেক্সটের নিচে নিজের নাম উল্লেখ করুন।

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
অবশ্যই পরের লেখায় মাথায় রাখবো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার নিচে দিতে ভুলে গেছিলাম, সেটা বলেছি পরের লেখায় দিব।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমি ভাই অধম দলছুট। লেখার চেষ্টা করি মাত্র কিন্তু কিছুই পারি না। আপনাদের কাছ থেকে শিখার চেষ্টা করছি, আশা করি সাহায্য করবেন।

ধন্যবাদ।
দলছুট।

মূলত পাঠক এর ছবি

লেখকের নাম দেওয়া কি খুব জরুরী? স্টাইল থেকে যদি না-ই ধরতে পারেন তাইলে কেম্নে কি?

কয়েকটা ঊদ্ধৃতি দিলাম, ১ নং হলো এই গল্প আর ২ নং একটি অন্য গল্প।

১। বলে কামরানের থাইয়ের ওপর হাত রাখল।
২। সৈকতের থাইয়ে হালকা একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে দোস্ত -ডরাইলেই ডর, হান্দায় দিলে কিয়ের ডর।

১। কামরান চুক চুক করে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
২। সবাই আস্তে আস্তে চায়ের কাপে চুমু দেয়, কাপটা যেনো প্রেমিকার উষ্ণ অধর, তাই কোমল ছোঁয়া।

হে অনাম্নী লেখক, আমার অনুমান নিয়ে কিছু বলবেন কি? না মিললে গালাগাল কইরেন না হয়, কিন্তু মিলে গেলে খুব রেগে যাবেন না যেন আবার। হাসি

সাফি [অতিথি] এর ছবি

পাঠুদা,
আপনি অতিশয় দুষ্ট লোক। থাই নাহয় একটু চাপড়ালই, তাই বলে এমনে খুঁজে বের করবেন?

স্নিগ্ধা এর ছবি

ইয়ে, 'পাঠুদা' ব্যাপারটা প্রথমে ধরতে পারেন নি, এটা যে দলছুটের লেখা সেটাও না - ওনার ভাষায় আমার নাকি 'চোখে পাপ' ওঁয়া ওঁয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

স্নিগ্ধা আপু আমার মনে হয় না আপনাকে এই রকম কিছু বলেছি, আমি আপনার মন্তব্যটাকে অনেক শ্রদ্ধাসহকারেই নিয়েছিলাম এবং এখনো নিচ্ছি, যদি আপনাকে এই রকম কিছু বলে থাকি তাহলে উদ্ধৃতিসহ দিলে ক্ষমা চেয়ে নেবো, আমার মনে পড়ে না আপনাকে এমন কিছু বলেছি। তারপরও আপনারা যেহেতু সচল এবং অগ্রজ, সেহেতু ভুল ভ্রান্তির জন্য অনুতপ্ত। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নিবেন।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
দলছুট।

স্নিগ্ধা এর ছবি

দলছুট - আমার মন্তব্য অতিথি লেখক সাফি'র উদ্দেশে করা ছিলো, এখানে 'ওনার' বলতে আমি মূলত পাঠককে বুঝিয়েছি। মূলত পাঠক আমাকে বলেছেন - "আপনার চোখে পাপ" (সেটাও, বলে দিচ্ছি খুব স্পষ্ট করেই, একদমই ফাজলামি করে বলেছেন), আপনি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

সরি আপু। আমার বোঝার ভুল ছিল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
দলছুট।

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা আপনি এখনো আমার ওপর রেগে আছেন। যদি আপনার হৃদয় মূলে আঘাত দিয়ে থাকি ক্ষমা করবেন। আমি কিন্তু আপনার মন্তব্যের আগেই নাম সহ একটা মন্তব্য দিয়েছি। আপনারা সচল আর আমরা হলাম অচল, আমাদের মন্তব্য মডারেশন কিউ পার হয়ে আসতে হয়। তাই হয়তো ঝুলে আছে।

আশা করি আপনি আমাকে একজন অগ্রজ সচল হিসেবে আরো পরামর্শ ও উপদেশ দিবেন।

আপনার উপদেশ এর জন্য ইমেইল ঠিকানা দিলাম
আপনার গাইড লাইন সহ একটা মেইল আশা করছি।

আপনার বিরাগভাজন দলছুট।

মূলত পাঠক এর ছবি

না রে ভাই, রেগে থাকার প্রশ্নই নেই। বরং আপনি যে আমার রসিকতায় খেপে যান নি তাতেই আমি খুশি।

রেশনুভা এর ছবি

পরিণতি বোঝা যাচ্ছিল; তারপরও আমার কাছে ভাল্লাগছে। চালায় যান। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমার ধারনা গল্পের নামের কারণে পরিণতিটা বুঝতে সহজ হয়েছে। এর পরে নামের মধ্যেও একটা রহস্যের ভাব নিয়ে আসতে হবে।
আবারও ধন্যবাদ।

বইখাতা এর ছবি

লেখার শেষে কি একটা বড় চমক দিতে চেয়েছিলেন ? তাহলে তো গল্পটাকে আরো সময় দেয়া উচিত ছিলো মনে হয় !

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আসলে ছোট পরিসরেই চমকটা দিতে চেয়েছিলাম, নামটা যদি একটু ভিন্ন হতো, তাহলে হয়তো চকটা থাকতো।

ধন্যবাদ।

সাফি [অতিথি] এর ছবি

"আমি আসলে ছোট পরিসরেই চমকটা দিতে চেয়েছিলাম, নামটা যদি একটু ভিন্ন হতো, তাহলে হয়তো চকটা থাকতো। "

বুঝলাম না। চমকটা কি ধার চাওয়া না ধার না দেওয়া? গল্প যেভাবে এগিয়েছে তাতে ধার চাওয়ার ব্যপারটা বেশ পরিষ্কার লেগেছে, আর ধার দিতে না চাওয়াতে চমকের কিছু দেখিনা।

জরিনার মা কেন বিচার দিল সেটাও পরিষ্কার না, প্রেম করছে শামীম, ঝাড়ি কেন কামরান খাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হতে পারে আমার লেখার অক্ষমতা। তাই আপনাদের চমক বা প্রত্যাশিত মজা দিতে পারি নাই।
"জরিনার মা কেন বিচার দিল সেটাও পরিষ্কার না, প্রেম করছে শামীম, ঝাড়ি কেন কামরান খাবে?"

"সব কী লেখা যায়? কামরান এক জায়গায় বলেছে,সেই প্রথম থেকে সাহায্য করে আসছে। আর পাড়ায় কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করলে ব্যপারটা জানা জানি হয়ে যায়, মা-বাবারা পরিচিত থাকলে, কেউ যদি মিডিয়া হিসাবে কাজ করে, তাঁর কী বাবা-মার ঝাড়ি খাওয়া স্বাভাবিক না? কিছু জিনিস থাকে সাইলেন্ট সেটা বুঝে নিতে হয়।
ধার দেয়া বা নেয়াটা চমক না, মজা দেয়ার চেষ্টা করেছি তাদের কথোপকথনের মাধ্যমে, ধার চাওয়ার এপ্রোচ এর মাধ্যমে। হয়ত আমি পারি নাই, সেটা আমার সীমাবদ্ধতা।
তবে আপনার সুন্দর মতামত আমাকে অনেক সাহায্য করবে?

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
=========
দলছুট
========

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।