অন্দরমহলের ভাবনাবলি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/১২/২০০৯ - ৫:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক’দিন ধরে বড় লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বিষয় পাচ্ছি না। যতবার ভাবি, এটা নিয়ে লিখব, সেটা নিয়ে লিখব, মনের অন্দরমহল থেকে কেউ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, “আর কত লিখবে নিজের জীবন নিয়ে? নিজের জীবনের প্রায় সব অভিজ্ঞতা তো….” তখনই আমি অজানা শঙ্কায় থামিয়ে দিই তাকে। ভাবতে ভয় লাগে প্রায় ১ বছরের মাঝে আমার প্রায় সব অভিজ্ঞতা, ছোট ছোট নস্টালজিয়া শেষ হয়ে গেছে। অথবা প্রায় শেষের পথে। কি নিয়ে লিখিনি? বর্ষণ, শৈশব, বাবা, স্কুল, ছবি আঁকা, প্রিয়বিয়োগ সবকিছু নিয়েই। মাঝেমাঝে কিছু দর্শন এসে ভিড় করেছে কলমের সামনে, তাদেরও তুলে দিয়েছি অক্ষরে সাজিয়ে। এখন আর কিছু খুঁজে পাই না, ভেবে পাই না।যখন লিখি, তখন সত্যিটাই লিখি; তবুও আজকাল কেন যেন মনে হয়, আমার লেখাগুলো আমার ব্যররথতার চরম নিদর্শন। তখন হাতের তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে রাখা কলমটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অভিমান করে, তার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের জন্য। আমি তার মান ভাঙাই, কিন্তু তার পরেও ক্ষণে ক্ষণে সন্দেহটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মনের অন্দরমহল পুনরায় ফিসফিসিয়ে ওঠে, “আর কত লিখবে? অভিজ্ঞতা তো প্রায়…..”

মাঝে মাঝে মনে হয়, এই লেখালেখিটা আমার কম্ম নয়। লেখার জন্য যে মূল উপাদানগুলো দরকার, তা নেই আমার। কোন বিরাট অপ্রাপ্তি বা বেদনা আমায় বারবার কম্পিত করে তোলে না, আমায় আবেগতাড়িত করে তোলে না। তাই বলে আমি আবেগী নই, এটা ভাবলেও ভুল হয়ে যায়। আমার অনুভূতিগুলো অদ্ভুত। কারো কারো সামান্য অবহেলায় কষ্ট পাই, আবার কারও কারও আমার প্রতি প্রত্যক্ষ তুচ্ছতায়ও কষ্ট পাই। লিখতে গেলে কাকে বড় করে দেখব! এটা তো স্রেফ প্রিয়তা-অপ্রিয়তার বোধ। যাকে বেশি ভালবাসি, তার সামান্য অবহেলা ছুরির তীক্ষ্ণ ফলার মত বারবার আঘাতে আঘাতে আমাকে পরাজিত করতে থাকে; আর যাকে দেখি সাধারণরূপে, তার দিনের পর দিন দিয়ে যাওয়া তুচ্ছতা আমার ওপর বৃষ্টি হয়ে ঝরে, খানিকটা সিক্ত করে, আবার রোদে উষ্ণ করে নেয়। অথচ লেখা তো নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য। কিন্তু, কিন্তু আমার দিবারাত্রির কথাগুলোয় প্রতিটি মূহুর্তের শব্দমালা তো শুধু আমার মনমন্দিরে বাস করা এক কিশোরীর জন্য উৎসারিত। এই কিশোরীটি আমার পরম আত্মজন। আমার চোখেই তার উপস্থিতি বিদ্যমান। অনুভূতিগুলো বোঝার সর্বোচ্চ ক্ষমতাটা স্রেফ তারই অন্তর্গত। এই একজনকে কেন্দ্র করে লেখা কিছু কি কোন সফল লেখনী হতে পারে! তাও এমন একজন, যার কি না কোন অস্তিত্ব নেই, কোন রূপ নেই। আঁধারে যার অন্তর কেঁপে ওঠে না, মোমের আলোয় যার চোখের তারা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে না, দেয়ালে ছায়াবিহীন সেই অস্তিত্বহীন কিশোরীর জন্য কোন লেখনী কি আদৌ কোন সার্থকতা বহন করে! তবুও ঈশ্বরের প্রতি প্রদেয় যুক্তি মেনে সেই অস্তিত্বহীন কিশোরীটির জন্য লিখে যাই। আর যা-ই হোক, এই পরম আত্মজনের জন্য তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কিছু প্রহর মসৃণ কাগজের ওপর চালিয়ে নিতে পারলে, দুটো মোমের প্রাণসংহার করতে পারলে বা কিছু রাত্রি নির্ঘুম কাটালে যদি তার প্রাণটা স্থির হয়ে থাকে, তবে তা-ই হোক। এই কিশোরীর ওপরই তো নির্ভর করে আমার বেঁচে থাকা, সত্তা দুটো হতে পারে, কিন্তু প্রাণ তো একসূত্রে বাঁধা। সুতোর বাঁধন কেটে গেলে হয়ত সেই কিশোরীটির সামান্য কিছু অস্তিত্ব রয়ে যাবে, কিন্তু এই দেহজ অস্তিত্ব, এর বিনাশ হবে ক্ষণকালের মাঝে। তখন এই দেহজ অস্তিত্ব রূপ লাভ করবে হয়ত সেই অস্তিত্বহীনা কিশোরীর ন্যায়, ছায়াবিহীন। এমনি করে, দেহজ অস্তিত্বগুলো ধ্বংস হতে থাকবে একের পর এক, আর তার মানবিক অস্তিত্বটি ক্রমে ক্রমে স্থান লাভ করবে হয়ত, অথবা হয়ত না।

auto

ক্রমশ উপলব্ধি করছি, অন্দরমহলের সেই কিশোরীটি কোন আঘাতে জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হচ্ছে। লেখার তাড়না জাগায়, অথচ, প্রেরণা দেয়না একটুও। আমায় ছেড়ে চলে যাবার সংকল্প করছে বুঝি, চাইছে, আমি যেন অবিরত লিখে যাই তার জন্য, সে থাকুক আর না থাকুক। অথচ, আমার সামান্যতম বিধিপ্রদত্ত ক্ষমতা নেই, যা দিয়ে আমি সেই কিশোরীটির জন্য লিখে যাব, তার অস্তিত্বহীনতাকে ক্রমশ ঘুচিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অস্তিত্ব দেব তাকে, শব্দের মাঝে, বর্ণের মাঝে। না, সেটা হয়ত হয়ে গেছে, সম্পন্ন হয়েছে তার পৃথক অস্তিত্ব দানের প্রক্রিয়া। এখন সময় তাকে অনুভূতি দেবার। যা কি না একান্ত আমারই কর্তব্য, তার এতে কিছু করার নেই। অনুভূতি, আমার এই জীর্ণ অনুভূতি দিয়ে তো তাকে গড়ে তোলা যাবে না! একইরূপ দুটো অস্তিত্বের ধ্বংস যে অনিবার্য!

~প্যাঁচালি~

সচলায়তনের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশিদিনের নয়। চোখের অবস্থা খুব ভাল নয় বটে, তবুও সচলায়তনের লেখাগুলোতে প্রতিদিনকার জীবনকথা থাকে বলে নিত্যই একবার এসে ঘুরে যাই। আড়াল থেকে পড়া হয়, মনে মনে মন্তব্য করা হয়। তবে কাগজের ওপর কলম ঘষবার যে অভ্যেসটা আমার গত প্রায় ১ বছর ধরে গড়ে উঠেছে, এই অল্প সময়ের অভ্যেসটা কি সচলের উপযুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে বরাবরই সন্দেহগ্রস্ত। সাহসে কুলোয় না। এতটুকুন পিচ্চি আমি! কি ভেবে আজকে হুট করে একটা দিয়ে দিলাম। দেখি, কি হয়! লেখালেখির সাথে আড়ি দিয়েছি ১ মাস হল। আর ১মাস বাকি। কিন্তু টেবিলের এক কোণে পড়ে থাকা ক্যাপখোলা কলম, অথবা বাবার পকেটে রাখা কলমের দিকে বারবার চোখ আটকে যায়। মনকে প্রবোধ দিই, লেখার বিষয় নেই মাথায়, পারব না। তো, সেটা নিয়েই...

বানান ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

~ছবিটা বেরিয়েছে ফেবার ক্যাস্টেলের 2B পেন্সিল দিয়ে। এই পিচ্চির অত্যাচার সহ্য করেই।~


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।

সচলায়তনের নীতিমালা আর নতুন অতিথিদের জন্যে জ্ঞাতব্য কিছু বিষয় মনোযোগ দিয়ে পড়ে দেখার অনুরোধ করছি।

আগামী লেখাগুলোর শেষে দয়া করে নিজের নিবন্ধিত নিকটি উল্লেখ করে দেবেন।

অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগে পূর্বপ্রকাশিত লেখা সচলায়তনে প্রকাশিত হয় না। আপনার কাছ থেকে পরবর্তীতে আনকোরা নতুন লেখার আশায় থাকবেন সচলের পাঠকেরা। ধন্যবাদ।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আমি যদ্দুর জানি, এই লেখাটা কমিউনিটি কোন ব্লগে আমি প্রকাশ করিনি। নিয়ম মেনেই,

" সচলায়তনে প্রকাশিত লেখাগুলি ৭২ ঘন্টার জন্যে অনন্য থাকতে হবে, এবং অন্য কোন কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশিত হতে পারবে না। মুদ্রিত মাধ্যম বা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশের ক্ষেত্রে এ নিয়মটি প্রযোজ্য নয়।
"
আমার ব্যক্তিগত ব্লগসাইটে প্রকাশ হয়েছে বটে। নিবন্ধিত নিক উল্লেখ করবার কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। মনেই ছিল না! দুঃখিত।

-মেঘবালিকা

হিমু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

অবস্থা দেখছি ব্যাপক খারাপ! ঐ সাইটে এই লেখাটা, আর রৌদ্রদুপুর নামক নিকটার অপকর্ম দেখে যারপরনাই শংকিত!! মনে হচ্ছে, পার্সোনাল ব্লগসাইটেরও কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে! http://shahrinainblog.blogspot.com/
কপিজনিত কুকর্মের জন্য আমি দায়ী নই বটে, তবে ক্ষমাপ্রার্থী হতে হচ্ছে! নতুন লেখা দেবার প্রত্যাশা রইল। ধন্যবাদ!

হিমু এর ছবি

সাইট প্রশাসকদের ঘটনাটা অবহিত করুন, এবং ওখান থেকে লেখাটা সরিয়ে দিতে অনুরোধ করুন। দেখুন তারা কী ব্যবস্থা নেয়।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমমম। সুপরামর্শ। দেখছি কি করা যায়।

প্রবাসিনী এর ছবি

হুমম
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

অতিথি লেখক এর ছবি

কি বলি! ধন্যবাদ! হাসি

-মেঘবালিকা

রাফি এর ছবি

সচলে স্বাগতম।
পোস্টটা ভাল লাগল। আপনার লেখার হাত বেশ ভালো।
নিয়মিত লিখুন।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে! অনেক ধন্যবাদ!! হাসি

-মেঘবালিকা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।