স্বপ্নশীলা (১ম পর্ব)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৮/০২/২০১০ - ১০:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রন্জু ঘুমের মাঝেই এপাশ ওপাশ করলো। ঘুমের মাঝে এপাশ ওপাশ করার মানে হচ্ছে স্বপ্ন পরিবর্তন করা, স্বপ্নের ঘটনায় কোন নতুন মোড় বা নতুন কোন চরিত্র, পছন্দ অপছন্দ। রন্জু স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবু আজ যখন চারদিক গুমোট একটা ভ্যপসা গরম, বহুদিন না বৃষ্টিতে ভিজে উত্তপ্ত সূর্যের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বাতাস যখন ক্লান্ত, সে সময়ের স্বপ্নগুলোও কেমন যেন হয়। রন্জু তাল মেলাতে পারেনা। মাঝে মাঝে সে বৃষ্টির সাথে ভিজতে ভিজতে ঘাসের মাঝে লুকিয়ে যায়, কখনোবা উড়তে উড়তে ধপাস করে পড়ে একরাশ বিস্তীর্ন ঝোপে। রন্জু একদমই তাল মেলাতে পারেনা।

রন্জুর ঘরটা একদম অগোছালো হয়ে আছে। স্বপ্নের মাঝে, মাঝেই মাঝেই এ ঘরে এসে ঢোকে রন্জু, কিন্তু ঘর গোছানোটা আর হয়ে উঠেনা। শীলা পারত স্বপ্নের মাঝেই ঘর গুছিয়ে দিয়ে দিতে। রন্জু শীলার আচঁলের নিচে শুয়ে শুয়ে দেখত কিভাবে তার বিবর্ণ নিস্তেজ ঘরটায় শীলা রং মাখিয়ে দিয়ে যায়- লাল, নীল, হলুদ। রন্জু হয়তো বুঝতে পারতো শীলা এগুলো জেগে থেকেই করছে, হয়তো পারতো না। শীলা আর কোনদিনই এ ঘরটায় আসবে না।

রন্জু স্বপ্নের মাঝেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই দীর্ঘশ্বাসটা ঢাকবার জন্য একটা জমজমাট স্বপ্ন দেখা যায়। প্রাগৈতিহাসিক কোন স্বপ্ন বা মোঘল আমলের যুদ্ধ যুদ্ধ স্বপ্ন। স্বপ্নে জিতে জিতে রন্জু ভীষন ক্লান্ত এখন। কি লাভ এত স্বপ্ন দেখে, সে তো শীলাকেই হারিয়ে ফেললো।
রন্জু উঠে একটু পানি খেয়ে নিল। পানি খাওয়ার পর স্বপ্নগুলো একটু থিতিয়ে আসে, শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা যায় স্বপ্নগুলোকে নিয়ে, শীলাকে নিয়ে, এই শহরটাকে নিয়ে। একটা সময় ভাবতে ভাবতেই স্বপ্নে ডুবে যায় রন্জু, বৃষ্টির মাঝে সাতার কাটে কিছুক্ষণ, গাছের পাতায় লুকিয়ে থাকা রোদগুলোকে হাত বুলিয়ে দেয়, তারপর কিছুক্ষণ পর শরীরের চটচটে ঘামগুলো যখন পানি খাওয়ার পরিমান ছাড়িয়ে যায়, রন্জু আবার ঘোলাটে স্বপ্ন দেখা শুরু করে, ঘোলাটে এবং বিবর্ণ। ঠিক তখনই রন্জু স্বপ্ন পরিবর্তন করা শুরু করে। তবে আজকে রন্জু পানি খেয়েই ধপাস করে শুয়ে পড়লো না। ও জানে শুয়ে পড়লেই শীলা চলে আসবে ওর সামনে। শীলাকে ও কাছে চায় ন। শীলাকে কোনদিন ক্ষমা করবে না রন্জু, কোনদিন না।

শীলা কি পারতো না বিয়েটা ঠেকিয়ে দিতে? এত দুর্বল ছিল ও? হয়তোবা নতুন পাত্রটাই পছন্দ হয়ে গেল ওর। নাহলে…… নাহলে রন্জুকে বললো না কেন কিছু? গত দুদিন ধরে অসংখ্যবার শীলাকে এই প্রশ্নগুলো করেছে রন্জু। শীলা শুধু বিবর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। রন্জুর বুকটা বড় খাঁ খাঁ করে। আজ রাতেই শীলার বিয়ে হয়ে যাবার কথা, কিংবা হয়েই গেছে। একটাসময় এই দিনটা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ছিল ওদের। রন্জুর পছন্দ ছিল বিয়েটা হবে কোন পাহাড়ের চূঁড়ায়, বরফ ঘেরা কোন এক সীমানাতে। শীলা হাসতো, শীলার সবসময়ই সমুদ্র পছন্দ। কোন এক দূরতর দ্বীপ কিংবা কোন সমূদ্র সৈকতে- এই ছিল শীলার পরিকল্পনা। আজ শীলার বিয়ে হচ্ছে ওদের বাসার ছাদে। আচ্ছা, শীলার স্বপ্নগুলি কি সব গুলিয়ে যাচ্ছেনা? ও পারল মেনে নিতে? আকাশটাকে সমুদ্রভেবে ভুল করলো না তো? রন্জুর খুব ভাবতে ইচ্ছে করছে শীলা একটা বড় ভুল করেছে। শীলা যেন আসলে না বুঝেই রাজী হয়েছিল এ বিয়েতে। রন্জু একটু হাসলো- ও ইচ্ছা করলেই পারে শীলাকে তার ভুল বুঝিয়ে দিতে- স্বপ্নে। স্বপ্নে স্বপ্নে রন্জু পারে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে, স্বপ্নে রন্জু সব পারে। বাস্তবটা এত কঠিন কেন?

বাইরে খুব সুন্দর একটা বাতাস ছুটোছুটি করছে। খুব ঠান্ডা আর ভিজে, কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টিটা শীলাদের ওখানে হলে খুব ভালো হয়। শীলার খুব ইচ্ছে ছিল ওর বিয়ের দিন যাতে বৃষ্টি হয়। কিন্তু… ওর বর কি ওকে ভিজতে দেবে? রন্জুর হাত শক্ত হয়ে যায়। ওর ঠোঁট তির তির করে কাঁপতে থাকে। শীলা আরেক জনের সাথে বৃষ্টিতে ভিজছে, এটা রন্জু কল্পণাও করতে পারেনা। রন্জুর ইতস্তত ভাবনাগুলো হঠাৎ নদী তীর ছেড়ে চলে আসে, ঘাস মাড়িয়ে আগুনের দিকে ছুটে যাওয়া ইতস্তত পোকাদের মত। একটা খুন করলে কেমন হয়? একটা খুন করা কি খুব শক্ত কাজ হবে? একটা ছুড়ি নিয়ে বুকের ঠিক বামদিক টাতে সজোরে ছুরিটা দিয়ে এঁফোড় ওঁফোর করে দিতে পারলেই কেল্লাফতে। শীলার বর চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে যাবে, যে ঘুমে কোন স্বপ্ন থাকবে না, জেগে উঠা থাকবে না. শীলা থাকবে না।
(চলবে......)
অংশু-কারাভান


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

বাহ্‌, চমৎকার লাগলো তো শুরুটা! এই নামে কখনও মন্তব্যও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না, সচলে স্বাগতম হাসি

কৃ এর ছবি

চমত্কার ..অনুভূতির কি তীব্র প্রকাশ ।

নাশতারান এর ছবি

দারুণ লাগলো। এমন লেখা আরো চাই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

শাফক্বাত এর ছবি

অধীর আগ্রহে পরের পর্বের প্রতীক্ষা করছি!!
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন!

-নীরবতা

তাসনীম এর ছবি

ভালো লেগেছ আপনার লেখা...চলুক...

শীলার কথা ভুলে যাওয়াই বেটার, খুনখারাপি করার চেয়ে...রঞ্জুর জন্য সাজেশন রইল। দেখি কি করে সে হাসি

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে । প্রথম লেখাতেই এত মন্তব্য আশা করিনি । পরের পর্ব কালকে দিয়ে দেব ।
অংশু-কারাভান

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ!!! ইন্টারেস্টিং হাসি

এরপর কি হবে?

-------------------------------------------
আকাশে তোর তেমনি আছে ছুটি
অলস যেন না রয় ডানা দুটি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌গল্পের শুরুটা ভালো হয়েছে, পরের পর্ব দেন....
তবে খুনের ইচ্ছেটা মনে মনেই থাকুক। হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রেনেট এর ছবি

দারুন লাগলো...চালিয়ে যান চলুক
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো। খুন না করে কী অন্য কিছু ভাবা যায় না? ভাই রক্ত টক্ত বাদ দেন। ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য। পরের পর্বের আশায় থাকলাম।

=======
কামরুজ্জামান স্বাধীন

দীপালোক মুখার্জী  এর ছবি

দারুন দোস্ত ! তোর সপ্নের বাকি গল্প গুলো দেখতে চাই ! খুনের ইচ্ছাটা ইচ্ছাই রেখে দে !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।