আজ এক বছর

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/০২/২০১০ - ৯:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ এক বছর হয়ে গেল।

গত বছর এইদিনে আমি সারাদিন ক্লাস করে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরতেই তড়িৎবার্তায় ভাতিজি পিংকি জানালো পিলখানার ভেতর কিছু একটা হয়েছে, অনেক সেনা অফিসারদের নাকি অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আমার ফুপাতো বোন (আমার প্রায় ৪৪ বছর এর বড়) এর মেজ ছেলে তখন বিডিআর এ ছিলেন, ঠিক এক সপ্তাহ পরে তার অবসরগ্রহণ করার কথা। বয়সে আমার বড় বলে তাকে চিরকাল মামা বলে ডেকে এসেছি। সেই রবিন মামা, লেঃ কর্নেল এনশাদ ইবনে আমিন, পিলখানার ভেতরে। পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। নেহায়েতই নীরেট আমি, তখন ও বুঝতে পারিনি ঘটনা কতটা ভয়াবহ।

দুইদিন পর আম্মা ফোন করলেন। খবরে নাকি মামার নাম করে বলছে তিনি শহীদ হয়েছেন। সামনে তখন কয়েকজন বন্ধু দাঁড়ানো। খবরটা শুনে কেন জানি কোন প্রতিক্রিয়া হলনা। সত্যি বলতে কি, আসলে বিশ্বাসই তো হয়নি তখন। আমি তো নিশ্চিত যে সংবাদমাধ্যম ভুল করেছে। রবিন মামাকে কেউ কেন মারতে যাবে? যেই মানুষ বিয়েবাড়িতে গিয়ে নিজের খাওয়ার আগে সেনাবাহিনির গাড়িচালক এর খাবারের ব্যবস্থা করেন, আমার অসুস্থ বাবার হাসপাতালে বসে কফি খাবার ইচ্ছা হয়েছে বলে বাড়ি গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসেন, তার প্রতি কেন কার কোন রাগ থাকবে?

নিজের আত্নীয়দের প্রতি সবারই হয়তো একটা পক্ষপাত থাকে। সেই স্কুল-জীবন থেকে যার স্নেহ পেয়ে এসেছি, পরিবারের এর যে কারো যে কোন প্রয়োজনে যাকে এগিয়ে আসতে দেখেছি, তার প্রতি অপার ভালবাসা থাকাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যখন দেখি অগনিত সহকর্মি, ক্যাডেট কলেজের সহপাঠী, এমনকি আমাদের গাড়িচালক পর্যন্ত তাকে মনে করে কাঁদছে, তখন মনে পড়ে সেই কথা "এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন"। বড় ভাল মানুষ ছিলেন আমার রবিন মামা, লেঃ কর্নেল এনশাদ। সারা জীবন শুধু আমাদের জন্য করে গেলেন, আমাদের কিছু করার সুযোগ দিলেননা কোনদিন।

মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরছে, সব গুছিয়ে লিখতেও পারলাম না। সবার কাছে শুধু এইটুকু অনুরোধ, চলুন সেইদিনের সব শহীদদের জন্য একটু প্রার্থনা করি। পরম করুণাময় যেন তাঁদের নিজের স্নেহের ছায়াতলে টেনে নেন।

হাম্মাদ আলি


মন্তব্য

প্রবাসিনী এর ছবি

লেখাটা খুব সুন্দর আর মন ছোঁয়া। লিখতে থাকো!
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

প্রবাসিনী এর ছবি

লেখাটা খুব সুন্দর আর মন ছোঁয়া। লিখতে থাকো!
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

তিথীডোর এর ছবি

বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ এবং লেঃ কর্ণেল এনশাদ ইবনে আমিন দুজনেই ক্ষীণসুত্রে আমার আত্মীয় ছিলেন...

বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে নিহতদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি!!

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

হাম্মাদ আলি [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।

মামুন হক এর ছবি

নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত পরিবারের প্রতি রইলো আন্তরিক সমবেদনা।

হাম্মাদ আলি [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা সবাই দোয়া করছি ওনাদের জন্য। আমারও পরিচিত অনেকেই ছিলেন, বিশেষ করে তোমার এনশাদ মামাকে (তোমাদের পরিবারকে, আসলে) ভাল করেই চিনি। দেখো, আজকে আমাদের এখানেও আকাশ কাঁদছে। বিচার কবে এবং কতটুকু নিরপেক্ষ হবে জানি না কিন্তু আমরা সবসময় মনে রাখব আমাদের শ্রদ্ধায়, এটুকু বলতে পারি।

ভালো থেকো আর নিজের উপর বিশ্বাস হারাবে না, কোনোদিন!

- শরতশিশির -

হাম্মাদ আলি [অতিথি] এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। বিচার কবে হবে, আদৌ হবে কিনা জানিনা। নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেই যে এমন কাজ যারা করতে পারে, তারা নিজেরাই একদিন নিজেদের ঘৃণা করবে।

দুর্দান্ত এর ছবি

সুবিচারের অপেক্ষায় আছি।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

শহীদ দের কেউই আমার পরিচিত ছিলেন না, কিন্তু এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি। এরকম বর্বরতা কাম্য নয়, সুবিচার আশা করছি।

সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

Refayet Amin এর ছবি

মামা,
খুব ভালো লাগলো|
গত কয়েকদিন ধরেই মনটা খুব খারাপ - বছর ঘুরে চলে এলো সেই কালোদিন|
তোমার লেখা পড়ে, একটু ভালো লাগলো|
মেজভাইকে তোমরা অনেকেই খুব কাছ থেকে দেখেছ - তোমাদের সৌভাগ্য|
আল্লাহ ওনাকে শান্তিতে রাখুন, আর ভাবী ও বাচ্চাদের হেফাজত করুন|
সকলকে ধন্যবাদ, আমার ভাইয়ের জন্য ও তার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন|

---- রেফায়েত ইবনে আমিন
(শহীদ লে: ক: এন্শাদ ইবনে আমিনের চত ভাই)

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

২৬ তারিখে যখন লাশ ভেসে আসা শুরু হলো, নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি।

বহু কিছু বলা হয়েছিলো ২৫ তারিখে। লাশ গুলো আসা শুরু হতেই কথা গুলো বদলে গেলো।

বিডিয়ার বিদ্রোহ কে অনেকে ফরাসি বিপ্লব আর পিলখানাকে বাস্তিল বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন অনেকে।

কোনোকিছুতেই মন ছিলোনা। শুধু মাথায় ছিলো... খুব কাছের এক আত্মীয়কে হারিয়েছি এই দিনে। তর্ক-বিতর্কের থেকে অনেক দুরে চলে গেছেন তিনি।

অনেক কিছুই হয়তো ঘটনার আড়াল থেকে বের হবে। হয়তো কিছুই বের হবে না ম্যাঙ্গো পাব্লিকের কাছে।

তাতে এটলিস্ট আমাদের (অর্থাৎ আমাদের পরিবারের) আসলেই কিছু এসে যায় না। সুবিচারের প্রত্যাশাও নেই আর। (বিডিয়ারের বর্তমান মহাপরিচালকের বক্তব্য দ্রষ্টব্য)।

কালকে ট্রাস্ট মিলনায়তনের দোয়া মাহফিলে আমি থাকবো। আপনারাও থাকবেন আশা করি।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।