এলেমেলো ভাবনা

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৪/২০১০ - ৩:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম মার ডাকে। উঠলাম বলা ঠিক হবে না, মাথাটা তুলে একটু তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কাল রাতে clash of the titans দেখে ঘুমাতে ঘুমাতে ৫ টা বেজে গিয়েছিল। সারা গায়ে ব্যথা করছে। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। গত এক বছর ধরে সহ্য করতে করতে গা সওয়া হয়ে গেছে।
মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গেল। স্বাভাবিক। ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আছে। সুতরাং আশা করা যায় ১...সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম মার ডাকে। উঠলাম বলা ঠিক হবে না, মাথাটা তুলে একটু তাকিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কাল রাতে clash of the titans দেখে ঘুমাতে ঘুমাতে ৫ টা বেজে গিয়েছিল। সারা গায়ে ব্যথা করছে। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। গত এক বছর ধরে সহ্য করতে করতে গা সওয়া হয়ে গেছে।
মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গেল। স্বাভাবিক। ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আছে। সুতরাং আশা করা যায় ১০টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসবে।
হলোও তাই। এখনই পানির পাম্প ছাড়বে। পানি ধরতে হবে। তাড়াতাড়ি উঠে হাত মুখ ধুঁয়ে খেতে বসলাম। এরমধ্যে পানির পাম্প চালু হলো। পানি ট্যাংকে উঠবে তারপর কলে আসবে। সে মেলা দেরী। কম্পিউটারে বসলাম মেইল চেক করতে। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।
পানি ধরা শুরু করলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশ। পানি চুঁইয়ে চুঁইয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ছে।মাঝখানে একদিন স্কুলের বন্ধুদের সাথে এ নিয়ে কথা বলছিলাম। শেষে আমরা সবাই একটা বিষয়ে একমত হয়েছিলাম যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়তো হবে তবে খালি ম্যানহোলের ঢাকনাটাই পুরোপুরি ডিজিটাল উপায়ে খোলা যাবে। আর না হয় হাফ ডিজিটাল।বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন বলবেন ফুল ডিজিটাল না করতে পারি হাফ ডিজিটাল তো করছি নাকি।
১২ই এপ্রিল ছিল সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষার আগের দিন। রাতে ভীষণ মেজাজ খারাপ। এই কারণে নয় যে প্রস্তুতি খারাপ বরং প্রস্তুতি ভালই ছিল। কিন্তু দরকার ছিল রিভিশন দেবার। ভাল কথা। সারাদিন বিদ্যুৎ পানি কিছু নাই। বাসা যেন পুরো একটা গুহা। তো প্রথমে নিজেকে বুঝালাম, যে পলাশ তুমি একাই নও যে এসবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ কোটি মানুষ এর শিকার। কিন্তু এভাবে আর কতদিন সবাই কষ্ট করছে বলে নিজেকে প্রবোধ দিয়ে কষ্ট ভোগ করবো?আর করবোই বা কেন?
হাসিনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি যদি আমার পোলাপানের জন্য কিছু রেখে না যাই তো আমার পোলাপান কি আকাশ থেকে অনেককিছুর মালিক হয়ে যাবে?হতেও পারে, কারণ বাঙালির বাচ্চা হলে সম্ভব, কিন্তু বিদ্যুৎ তো উইলিয়াম গিলবার্টের বাচ্চা। ওর পক্ষে একা একা গজানো সম্ভব না।
অনেকদিন আগে প্রথম আলোতে ব্রিজ নিয়ে বিশাল এক লেখা ছাপা হয়েছিল। সে যা অবস্থা। একটা লুলা তো আর একটার ধর না। আর একটার পিলার আছে তো বাকী বডি নাই। আবার পিলার আছে, স্ল্যাব আছে,কিন্তু দুই পাড়ের সাথে কানেকশন নাই। তাও কি, এক সরকারের আমলে জায়গা নিছে, পরের আমলে পিলার হইছে তার পরের আমলে স্ল্যাব। এক্ষেত্রে অন্তত ধারাবাহিক উন্নতি চোখে পড়ে!দেখা যাক কোন সরকারের আমলে সবগুলো কাজ শেষ হয়। এরপর তো আবার ক্রেডিট নেবার পালা। “আমি উ্দ্বোধন করছি”, “আমি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করছি” মেলা কাহিনী।
প্রথম আলোর কথা মনে পড়তেই আর একটা কথা মনে পড়ে গেল। কয়েকদিন ধরে টিভিতে একটা অ্যাড দেখি। পুরো অফিসে একটা লোক কাজ করছে আর বাকী সবাই খোস গল্প করে বেড়াচ্ছে। লোকটাকে দেখে আস্তে আস্তে বাকী সবাই কাজ করা ধরলো। একজনের কারণে সবাই বদলে গেল। ধারণাটি খুবই সুন্দর।
যেদিন এমন ঘটবে সেদিন বুঝতে হবে হয় বাঙালি বোকা হয়ে গেছে না হয় ঘুষ খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে একঘেয়ে লাগছে তাই এমন করছে। একদল পিশাচের মাঝে একজন মানুষকে নিয়ে গেলে হয় মানুষটা পিশাচ হয় না হলে মানুষটাকে খেয়ে ফেলে পিশাচ দল। এক্ষেত্রেও তাই ঘটে। “হয় আমাদের মত ‘না কাজ’করে থাকো না হয় বারোটা বাজার জন্য রেডী হও।”
পানি ধরা শেষ। আবার ঘরে এসে কম্পিউটারের সামনে বসবো এমন সময় চোখে পড়লো টেলিফোনের বিলটা। বৃহস্পতিবার দেবার কথা ছিল। আজ সোমবার।
বের হলাম বাসা থেকে। সামনে খুব সংক্ষিপ্ত একটা দিন। গেলাম অগ্রণী ব্যাংকে। এই একটা জায়গা যেখানে আসলে মনে হয় দেশের সব আর্থরাইটিস রোগীদের এখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারে ক্লান্ত, ক্ষুধা জীর্ণ মানুষের দল হলে এক কথা ছিল। বিশাল ভুঁড়ি নিয়ে গদাই লস্করি চালে হেলতে দুলতে কাজ করে। কাজ করে এইতো বেশি!কয়েকজন তো আবার অসমান বর্গক্ষেত্র। আর যে কি খোশ গল্প! রুই মাছ কিনে কিভাবে তার বউ মজার কিছু _ _ _ _ রান্না করেছে তা সহকর্মীকে বোঝাতে ব্যতিব্যস্ত।
আর একটা ব্যাংক হল সোনালী ব্যাংকের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আমার মনে হয় যেদিন বাংলাদেশের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকবে সেদিনও এখানে তিন হাজার টাকার বেশি তুলতে দেবে না। বেশি লাগলে একটার পরে যেতে হবে। ব্যাংক থেকে টাকা নিলে ইদানীং ভয়ে থাকি। ব্যাংক থেকে নেয়া টাকা যে সবচেয়ে বেশি অচল। রিক্সাওয়ালাদের কাছে এর থেকে ভাল দুই টাকার নোট থাকে।
ব্যাংকের কাজ শেষে হাঁটা ধরলাম। তপ্ত রোদ। তবু রিক্সা নিব না। রিক্সা নিতেও ভয় লাগে। ভাড়া শুনে মেজাজ খারাপ হলে কখন যে কি করি সেই ভয়ে। ২২ তারিখের কথা। পান্থপথ থেকে ল্যাব এইড যাব। এক রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া জিজ্ঞাসা করলাম। ২৫ টাকা!!! আমি কিছু না বলে হাঁটা ধরেছিলাম।
হাঁটছি গ্রীণরোডে, গন্তব্য পান্থপথ। রাস্তার দুইধারে নির্মাণ কাজ চলছে। অপরিকল্পিত। মাঝখানে পেপারে পড়েছিলাম যে প্রধানমন্ত্রী নাকি কোন এক সভায় বলেছেন অপরিকল্পিত নগরায়নের জন্য রাজউক দায়ী। পড়ে এত হাসি পেয়েছিল।
কাজ শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে ৬টা বেজে গেল। বাসায় এসে দেখি বিদ্যুৎ নেই। খুব জোরে হেসে উঠলাম (ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভেবে)। নিচে নামলাম আবার। পাশের বাসায় এক ছোটভাই থাকে, আকাশ। অনেকদিনের পরিচয়।
আন্টি হাসপাতালে। অপারেশন হয়েছে, এক অযাচিত অপ্রয়োজনীয় অপারেশন। ডিজিটাল বাংলাদেশের আর এক নজির। রিপোর্টে যে মানুষটার হার্টে তিনটা ব্লক অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তার দেখে কিসের ব্লক; কিছুই নাই, রোগী পুরো সুস্থ। আকাশের কাছে গিয়ে হাসবো না সান্ত্বনা দেব বুঝে উঠতে পারলাম না। আকাশের পরীক্ষা চলছে, তার উপর আন্টি হাসপাতালে। ছেলেটার পরীক্ষা খুবই খারাপ হচ্ছে।
এর কোন প্রতিকার নেই। হবেও না আশা করি। এর অর্থ এই নয় যে আমি নৈরাশ্যবাদী। এর অর্থ এই যে আমি বাস্তববাদী। বাংলাদেশ জন্মের পরে এক প্রজন্ম তো এসব দেখতে দেখতে আর করতে করতে চলে গেল। এই প্রজন্ম যা একটু হাঁসফাঁস করতেছে তাও দেখব পরে হাঁপানিতে পরিণত হয়েছে।
আকাশের সাথে কিছুক্ষণ টেবিল টেনিস খেললাম, টিভি দেখলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে ১০ টা বেজে গেল। বাসার গেটে ঢোকার সময় দেখি পানির পাম্প চালু। আবার হেসে উঠলাম। তবে এবার জোরে নয়, আস্তে ঠোঁটের কোণে রেখে।
বাসায় ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে আবার পানি ধরতে বসলাম। আবার সেই ফোঁটায় ফোঁটায় “বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা অমূল্য সে জল।”
প্রথম লেখায় এ প্যারাটা ছিল না। আমার লেখা শেষ হয়ে গিয়েছিল ১টার মধ্যে। কিন্তু লেখা শেষে ‘সংরক্ষণ’ এ ক্লিক করতে যাব এমন সময় আবার সেই ডিজিটাল বিদ্যুৎ গেল চলে। পেয়ে গেলাম অমূল্য এক শিক্ষা কখনও ব্রাউজারে ব্লগ না লেখার। হায়রে ডিজিটাল কত খেলা যে তুই আর দেখাবি।
ঘুমাতে যাব। গান শুনছি এখন James blunt এর you’re beautiful.
কালকে অনেক কাজ। বেকার হলে যা হয় আরকি!
পলাশ রঞ্জন সান্যাল


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল্লাগছে। পরের বার ফরম্যাটিং এ মনোযোগ দিয়েন, এক প্যারায় এত কিছু না লিখে কয়েক প্যারায় লিখলে চোখের সুবিধা হত।

এলোমেলো ভাবনা একজন হাচলের নিক আর একই নামে আর একজন (সম্ভবত প্রবাসিনী নাম তার) ধারাবাহিক লিখতেন কিছুদিন আগেও। অন্য কোন শিরোনাম ব্যবহার করাই বোধহয় আপনার জন্য ভাল হবে।

নহক

অতিথি লেখক এর ছবি

ডিজিটাল বাংলাদেশের একদিন। ভাল লাগল লেখাটা, যদিও পরিস্থিতি মোটেও ভাল লাগার মত নয়।

কৌস্তুভ

রেশনুভা এর ছবি

টাইপো আছে শিরোনামে। মডুদের বলুন কষ্ট করে ঠিক করে দিতে। আর যেহেতু এই শিরোনামেই প্রবাসিনীর একটা সিরিজ চলমান, ভেবে দেখবেন কি শিরোনাম পরিবর্তনের কথা?
চলুক।
----------------------------------------------

আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি অতীব দুঃখিত যদি কারো এই নামে কোন ধারাবাহিক চলে থাকে। আমি অবশ্যই নামটা বদলে দেব। আর সবাইকে ধন্যবাদ তাদের মন্তব্যের জন্য।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্বাগতম
চলূক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ভণ্ড_মানব এর ছবি

চলমান জীবন কাহিনী, সবারই মুটামুটি একই, এভাবেই ডিজিটাল জীবন চলতে থাকে অ্যানালগ স্টাইলে।
প্যারা করে লিখলে চোখটা কিছুটা আরাম পেত। আরো লিখুন।
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...

__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...

প্রবাসিনী এর ছবি

আমার এলোমেলো ভাবনা টাইপ লেখা পড়তে বেশ ভালোই লাগে, হয় তো আমার নিজের ভাবনাগুলোও বেশ এলোমেলো বলে। আর শিরোনাম পাল্টানোর কোনই দরকার নেই কিন্তু। থাকুক না ২ টা এলোমেলো ভাবনা।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক চলুক

ক্যারি অন দোস্তো...

_________________________________________

সেরিওজা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।