আরতি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৪/২০১০ - ৭:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[মুক্ত বিহঙ্গ]

Aroti 3


সমাজের কিছু অসৎ প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতের পুতুল দুই বখাটে যুবক এক পহেলা বৈশাখে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। আরতি নামের যেই মেয়েটি একদা তাদের পাশবিকতার শিকার হয়েছিল, সেই আরতি কে তারা ভালোবাসায় বাঁচিয়ে রাখতে চায়। আরতি শুধু বন্দনার নাম নয়, সুন্দর ভবিষ্যতের আশা দেখায় যে প্রেরণা, সেই প্রেরণার নাম আরতি।” – এমন-ই এক ঘটনা কে কেন্দ্র করে একটি ছোট নাটক ‘আরতি’, যার দ্বিতীয় সফল মঞ্চায়ন হলো গত ২৪-এ এপ্রিল, ২০১০-এ কানাডার এডমন্টন শহরে ‘বাংলাদেশ-কানাডা এসোসিয়েশন অফ এডমন্টন’ এর বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। নাটকটি লিখেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-এর ‘কম্পাস নাট্য সম্প্রদায়’-এর জার্জীস আহমেদ, যাঁর রচিত আরেকটি নাটক ‘জমছে খেলা সারাবেলা’ আমরা দুইবার মঞ্চস্থ করেছি এই এডমন্টন শহরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। আমার আজকের এই লেখাটি ‘আরতি’-র দ্বিতীয় মঞ্চায়নের উপর ভিত্তি করে।

শুরুতেই এই নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেই। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘আরতি’ কানাডায় প্রথম প্রদর্শিত হয় ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এট ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা’-র একটি অনুষ্ঠানে যার নির্দেশনায় ছিলেন ‘কম্পাস নাট্য সম্প্রদায়’-এর একজন সদস্য ড. মোর্শেদুর রহমান রিপন। দুই চরিত্রের এই নাটকে রিপন ভাইয়ের সাথে আমার অভিনয় করবার সু্যোগ হয়েছিলো। নেপথ্য বর্ণনা এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম (সচল জাহিদ)। এই নাটকটির স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে একটিমাত্র ছবি-ই আছে।

AROTI December 2009

এডমন্টন-এ ‘আরতি’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন [বাম থেকেঃ মোর্শেদুর রহমান রিপন এবং এই অধম লেখক]

এবার আসি দ্বিতীয় মঞ্চায়নের কথায়। ড. মোর্শেদুর রহমান রিপন সম্প্রতি বাংলাদেশে যাবার আগে এই নাটকটি নির্দেশনার দায়িত্ব ড. রাফাত আলমকে দিয়ে যান এবং তাঁর চরিত্রটি করবার জন্য জাহিদুল ইসলাম কে প্রস্তাব দেন। সবার পড়াশুনা/চাকরির ব্যস্ততার কারনে আমরা শুধু উইক-এন্ডে খুব কম সময়-ই পেয়েছিলাম নাটকটির রিহার্সেল করবার জন্য। যাই হোক, এবার আসি নাটকটির কাহিনীতে।

সহজ গ্রামীণ জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে আর্থ-সামাজিক দূর্বৃত্তায়নে। সাধারণ চোখে তার হিসাব মেলেনা। শুধু মূখ্য হয়ে ওঠে ঘটনা। ঘটনার নেপথ্য এক শেকল অজানা থেকে যায় সবার কাছে। এর নাম রাজনীতি, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র। আরতি এক বন্দনার নাম, এক সরল গ্রাম্য মেয়ে। জীবনের সরলতা নষ্ট করে যে রাজনীতি, তার বিরুদ্ধে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম। মানুষ জিতে যাবে কোন একদিন; কোন এক পহেলা বোশেখে।” – এমন আবেগময় নেপথ্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয় নাটকটি।

নাটকের শুরুতে দুইজন বখাটে যুবক পহেলা বৈশাখে মদ্যপানের জন্য একটা নির্জন জায়গার খোঁজে বের হয়। চরিত্র দুইটি যুবক-১ এবং যুবক-২; যাদের মধ্যে যুবক-১ দলনেতা শ্রেণীর আর যুবক-২ তার সহকারী। যুবক-২ মদ্যপানের জন্য অত্যন্ত উদগ্রীব থাকায় বারবার মদের জন্য তাগাদা দেয়। অবশেষে একটা নির্জন জায়গা দেখে দুইজন বসে এবং কিছু কথাবার্তার পর যখন যুবক-১ গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে, তখন মদের লাল রঙ দেখে অতীতের একটা ঘটনা মনে পড়ে যায় যুবক-২ এর।

দ্যাখ, দ্যাখ মদের ধারা কেমন আরতির রক্তের মতো মনে হইতাছে।

এই কথা শুনে যুবক-১ এর-ও সেই ঘটনা মনে পড়ে যায়, কিন্তু না বোঝার ভান করে এবং বেশি মদ দেয়ার লোভ দেখিয়ে তার সহকারীর মুখ বন্ধ রাখতে বলে। কিন্তু যুবক-২ তার কথায় কান না দিয়ে আরতির কথা বলতে থাকে, যাকে সে অতীতে ভালোবেসেছিলো। কিন্তু কখনোই ভালো লাগার সেই কথা বলা হয়ে ওঠেনি।

“আরতি দেখতে খুব সুন্দর আছিলো। অগো প্রতিমার মতোন …..”

“কি যেন পুজার দিন, প্রতিমার পাশে বসা আরেক প্রতিমা আরতিরে আমরা ফুসলায়া নিয়া যাই সেই পোড়াবাড়িতে….”

“সেদিন সেই প্রতিমার বুকের রক্তে ভিজা লাল হয়া গেছিল আমার জামা। আর তুই…… একবার না, দুইবার না, তিনবার না ……. সাত সাতবার আরতিরে ……”

এই পর্যায়ে যুবক-১ তার সহকারীর গলা চেপে ধরে এবং যুবক-২ মরে যাবার ভান করে। পরে মদের প্রলোভনে আবার উঠে দাঁড়ায় এবং দুইজন মিলে মদ পান করতে থাকে। যুবক-১ তার সহকারীকে সান্তনা দিতে থাকে -

“তাইলে নো ভাবাভাবি। মনে কর আমরা এ সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এ সমাজের কোন ঝামেলা আমাগো নাগাল পায় না।”

“এইসব ভাইবা কোন লাভ নাই। ধর আমরা আরতির রক্ত খাইতাছি। আমরা এই সমাজের রক্ত খাইতাছি। হা হা হা।”

মাতলামির এক পর্যায়ে যুবক-১ তাদের জীবনের চরম সত্য কথা গুলো বলে দেয় এভাবে- “তুই আরতিরে করলি খুন আর আমি করলাম নষ্ট। তারপর থেইকা আমরা দুইজন কুত্তা হয়া গেছি। হা হা হা …. আমাগো জীবন নিয়া কোন চিন্তা নাই। সোন্দর সমাজের স্বপ্ন নাই। হা হা হা ……… আমরা ৫২ বুঝিনা, ৭১ বুঝিনা, ৯০ বুঝিনা, আমরা খালি বুঝি contact … হা হা হা ……. আমরা দেশ বুঝিনা, সমাজ বুঝিনা। আমরা খালি বুঝি অমুক ভাই, তমুক ভাই। হা হা হা …… আমাগো মাথায় কোন মগজ নাই। আমরা ডাস্টবিন। আমাগো ব্যবহার করুন। হা হা হা …… আমগো মেরুদন্ড নাই। আমরা অমেরুদন্ডী। হা হা হা …….”

এমন মুহুর্তে যুবক-২ মদ না পেয়ে রেগে যায় এবং মদের বোতল কেড়ে নিয়ে সেটা দিয়ে যুবক-১ এর মাথায় আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। অতিরিক্ত মদ্যপানের এক পর্যায়ে বমি করে ফেলার পর যুবক-২ তার নিজের স্বরূপ বুঝতে পারে। এই সময় যুবক-১ পানি চাইলে সে প্রচন্ড কষ্ট, ঘৃণা এবং শ্লেষ মিশানো ভাষায় বলতে থাকে –

“চোপ। পানি চাইবিনা। তুই আমার কাছ থিকা পানি চাইবিনা। এইখানে বইসা আজ আমি তোর মইরা যাওয়া দেখমু। কারণ তুই আমারে মারছস। দিনের পর দিন তুই আমারে বিষ খাওয়াইছস, বিষ। এইডা (মদ) কি জানোস? মানুষ হয়া মানুষের পরিচয় ভুইলা থাকনের ওষুধ। আমি আমারে ভুইলা গেছি। আমি ভালবাসতে ভুইলা গেছি। বাঁচতে ভুইলা গেছি।”

“ক্যান হইতে পারতো না ঐ পোড়া বাড়ি ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধা আর ৭৩ এর গণবাহিনীর ক্যাম্প? আর আমরা দুইজন মাতাল না হয়া হইতে পারতাম না দুই আজন্ম মুক্তিযোদ্ধা? তুই আরতিরে সাত সাতবার ভালবাসতে পারতিস না। আর আমি ভালবাসারে খুন না কইরা অন্তত একটা শ্রেণীশত্রুর রক্তে পবিত্র হইতে পারতাম। একটা মিথ্যারে ধ্বংস কইরা একটা সত্যরে দাড় করাইতে পারতাম। ভদ্রলোকের বাচ্চারা তাগো জীবনডারে সভ্যতার সাথে কত সোন্দর কইরা সাজাইছে…. আর আমরা মদ গিলি। এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আধপেট ভাত খায়া কামে যায়। আর আমাগো কোন নতুন দিন আসে না। আমাগো কোন নববর্ষ নাই। এ দেশের মানুষের কোন নতুন দিন নাই।”

যুবক-২ এর কথাগুলো শুনে যুবক-১ যেন নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করে। সে বলতে থাকে-

“আমারে তুই ক্ষমা কর। বিশ্বাস কর, তুই যখন চিৎকার করতেছিলি, ঝাপসা চোখে তোরে আমার আরতির মতো মনে হইতেছিল। আরতি য্যান আমার সামনে চিৎকার কইরা ধিক্কার দিতাছে। বিশ্বাস কর, সোন্দর কইরা বাঁচার সাধ আমারো আছিল।”

নিজেদের ভুল উপলব্ধি করে তারা আবার নতুন করে সুন্দর জীবন শুরু করবার স্বপ্ন দেখে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় অতীতের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তারা এবার সুন্দর করে বাঁচবে। তারা এখন থেকে ভালোবাসার পুজা করবে, মানবতার পুজা করবে। এমন সময় তারা দুইজন ঝাপসা চোখে দেখতে পায় আরতি যেন তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তারা শুনতে পায় আরতির করুণ আকুতি-

“আমার বাঁচতে বড় সাধ হয়গো ……….”

এমন সময় নেপথ্যে এই আবেগময় কথাগুলির মাধ্যমে শেষ হয় ছোট্ট এই নাটকটিঃ

“ভোরের লাল আভায় দেখ আরতি। ঘাসের শিশির ছুঁয়ে দেখ আরতি। কাশবন, গোধুলি বিকেল, ঘাসফড়িং …….. সবখানে আরতি। জীবনের মায়াময় মুহুর্তগুলোয় আরতির নিশ্বাস। এসো, আমরা আরতিকে ভালবাসায় বাঁচিয়ে রাখি।”

যদিও মঞ্চ নাটক ভিডিও-তে দেখে নাটকটির মূল স্বাদ পাওয়া যায় না, তবুও 'সচলায়তন'-এর বন্ধুদের জন্য ভিডিও টি শেয়ার করলাম। ভিডিও টি ধারণ করবার জন্য ইঞ্জিনিয়ার জাফর অমিদ কে আন্তরিক কৃ্তজ্ঞতা জানাই। ইউ টিউবে দুই খন্ডে নাটকটির ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।

নাটকের ১ম অংশঃ

নাটকের ২য় অংশঃ

Aroti 5

এই ছবিতে নাটকের পুরো দলঃ [বাম থেকে] ড. রাফাত আলম (নির্দেশক এবং নেপথ্য বর্ণনা), নুসরাত আইরীন (নেপথ্য বর্ণনা), এই অধম লেখক (যুবক-২ চরিত্রে), রিফাত জাহান মিতু (আরতি চরিত্রে), জাহিদুল ইসলাম (যুবক-১ চরিত্রে), পারভীন আক্তার (পোষাক এবং রূপসজ্জা), নাছিব আহমেদ আদনান (আলোক ব্যবস্থাপণা), এবং সিরাজুম মুনির রুমি (আবহ সংগীত পরিচালনা)

আমার এই ক্ষুদ্র অভিনয় জীবনে যে কয়েকটা চরিত্রে অভিনয় করেছি, তার কোনটাকেই হৃদয় দিয়ে অনুভব করিনি। শুধু অভিনয়ের প্রয়োজনে কিছু সময়ের জন্য নিজের মধ্যে সেই চরিত্রগুলোকে লালন করেছি। কিন্তু কোন অজানা কারণে ‘আরতি’ নাটকের যুবক-২ চরিত্রটিতে অভিনয় করবার সময় আমি বারবার নিজেকে হারিয়ে ফেলি। নাটক শেষ হয়ে যাবার পরেও সবসময় আরতি নামের মেয়েটার জন্য আমার মন প্রচন্ড খারাপ থাকে। মনে হয়, আরতি শুধু এই নাটকের কোন কাল্পনিক চরিত্র নয়, সে আমার খুব চেনা, খুব আপন কেউ একজন।

[নাটক শেষে মঞ্চ থেকে নামবার পর দর্শকদের অনেক মন্তব্য শুনেছি। তার মধ্যে এক সচল (স্বাধীন)-এর মন্তব্য হল- এটা ‘সচলায়তন’ পরিবারের নাটক। কারণ এই নাটকে অভিনয় করা তিনজন-ই (যুবক-১: সচল জাহিদ, যুবক-২: মুক্ত বিহঙ্গ, আরতিঃ রিফাত জাহান মিতু) ‘সচলায়তন’-এর নিয়মিত লেখক]


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাতে এত ডায়ালগ না দিলে ভাল লাগতো, ভিডিও দেখেই সবাই বুঝতে পারবে।

মিতু
রিফাত জাহান মিতু

miturifat@gmail.com

অতিথি লেখক এর ছবি

মিতু,

লিখবার সময় এই কথাটা আমার-ও মনে হয়েছিলো চিন্তিত

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

অগ্নিবীণা এর ছবি

ভিডিও এবং লেখা দুটিই ভাল লাগেছে! দেশের আনাচে কানাচে এমনি কতো আরতি যে ধুঁকে ধুঁকে মরছে! আমরা দেখেও তা না দেখার ভাণ করি! এ ব্যাপারগুলো সাহিত্যে নাটকে যত বেশি উঠে আসবে, সচেতনতার হার ততটা না হলেও কিছু বাড়বে বলে আশান্বিত হওয়া যায় বৈকী!

অতিথি লেখক এর ছবি

অগ্নিবীণা,

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

কাকুল কায়েশ এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে নাটকটা। চমৎকার অভিনয়! তবে জাহিদের গেট-আপ নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয় - অসাধারণ। হাততালি
দ্বিতীয় অংশের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটারও প্রশংসা করছি, দৃশ্যের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ন ছিল।
নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি

কাকুল কায়েশ,

অনেক-অনেক ধন্যবাদ আপনাকে হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

সচল জাহিদ এর ছবি

নাটকটি নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করি।

১. নাটকের বিষয়ে যাদেরকে গুরু মানি তাদের দুইজনই এই নাটকের নির্দেশক। সেই সাথে এই চরিত্রটি রিপন ভাই সবসময় করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। সুতরাং আমি যখন সেটি করতে গেলাম স্বভাবতই আমার মধ্যে রিপন ভাইকে অনুকরণ করার প্রবনতা চলে আসল। আমি কিছুতেই নাটকের চরিত্রটিতে ঢুকতে পারছিলামনা বরং বার বার রিপন নামক অভিনেতার অভিনয়ে ঢুকে যাচ্ছিলাম। রিপন ভাই বাংলাদেশে যাবার পরে ফোনে একদিন বললাম সেই কথা, ভাইয়া বল তুমি পারবা, আরেকটু চরিত্রটিকে নিয়ে ভাব। একই কথা ছিল রাফাত ভাইয়ের। অবশেষে আমি চরিত্রটিতে ঢুকলাম একেবারে মঞ্চস্থ হবার সময়ে।

২. এই নাটকটি মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের কিন্তু এই চরিত্রটিতে মিশে যাবার জন্য পুরো এক মাস দাড়ি রেখে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে নিজেকে বদ সাজাবার চেষ্টা করেছি, সফলতা দেখে ভাল লাগছে। সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম পহেলা বৈশাখের দিনে, ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি ব্যাক্তি জাহিদের সাথে মানায়না সেটা চরম সত্য কিন্তু সেই দাড়ি নিয়েই পহেলা বৈশাখ পালন করতে হয়েছে, পাশে বৈশাখী শাড়ি পড়া মিতু আর ফ্রেঞ্চ কাটের বদ জাহিদকে (!!) বড্ড বেমানান লাগছিল।

৩. আমার দুই বছর আট মাসের ছেলে নির্ঝর বিভিন্ন সময়ে নাটকের রিহার্সেল দেখে কিছু ডায়ালগ তার মুখস্থ যা সে মাঝে মাঝেই ঝাড়ে, যেমনঃ

'চাচ্চু বলছে, একবার না দুইবার না , তিনবার না ... চুপ' এই পর্যায়ে তার দুষ্টামি হাসি একসাথে মজার ও বিব্রতকর(!!)

গতকাল সে বলতেছে,

'চাচ্চু বলছে চল এইহানে বহি , ওয়হু ...গন্ধ খাচ্চর পোলাপান '

'বাবা বলছে লাগালাগি বাদ দে তোরে আইজ বেশি দিমু ...'

৪. সবচেয়ে চিন্তিত ছিলাম বাপ মা দুইজনই মঞ্চে উঠতেছে পোলা কার কাছে থাকবে ? অবশেষে ছেলেকে একগাদা চকলেট দিয়ে তার দুই প্রিয় আন্টির কাছে হলের দোতালার একটি রুমে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে জানালা দিয়ে মঞ্চ দেখা যায়, আমাদেরকে দেখে ছেলে সেখান থেকে হাত নাড়ছিল। মিতুর শেষ দৃশ্যে তাকিয়ে থাকার কথা ছিল দর্শকদের মাথা বরাবর, সে তাকিয়ে ছিল ছেলের দিকে !!!

নিজের করা সব নাটককেই সন্তান বলে মনে হয় কিন্তু এই নাটকটি করে মনে হয়েছে এটি ববির সন্তান হয়েই থাক, দ্বিতীয় অংশে ওর অভিনয় দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি, এক কথায় অসাধারণ। আর মিতুর শেষ দৃশ্যে আগমন আর পুরো নাটকে না থেকে একটি মাত্র দৃশ্যে এসে নাটকের থিমের সাথে মিশে যাওয়া এক কথায় চমৎকার লেগেছে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

সচল জাহিদ,

অসাধারণ সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

স্বাধীন এর ছবি

তোমাদের এই প্রচেষ্টা চালু থাকুক সব সময় এই কামনা করি। দেশ হতে এত দূরে থেকেও আমাদের সন্তানেরা/আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতির ছোঁয়া কিছুটা হলেও পাই সকলের এই সম্মিলিত চেষ্টার ফলে। সবাইকে সাধুবাদ জানাই তাঁদের শ্রম ও সময়ের জন্য। নাটকের ব্যাপারে আর নতুন করে কিছু বললাম না। এক কথায় অসাধারণ।

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বাধীন,

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ হাসি

- মুক্ত বিহঙ্গ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।