অনুবাদ: মাটিল্ডা [ ১ম পর্ব ]

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৫/২০১০ - ৮:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বইয়ের পোকা

সব বাবা-মায়েদের মধ্যেই একটা মজার ব্যাপার দেখা যায়। বাচ্চাটা এক্কেবারে মহা বদের বদ দি গ্রেট হলেও বাবা-মার ধারণা থাকে তাদের সন্তানের চেয়ে লক্ষী আর দুইটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিছু অভিভাবক আরো কয়েক ডিগ্রী বেশি। স্নেহের টানে তারা এমনই অন্ধ হয়ে যান যে তাদের পিচ্চি একটা মশা মারলেও মনে করতে থাকেন যে নিশ্চই ওর মধ্যে ভবিষ্যত আইনস্টাইন নাহয় কমপক্ষে মোহাম্মদ আলী লুকিয়ে আছে!

এমনিতে এইসবে তেমন কিছু যায় আসে না। এটাই তো পৃথিবীর নিয়ম। নিজের নিজের বাচ্চা নিয়ে বাবা-মায়েরা অতিরিক্ত গর্বিত হতেই পারেন। কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয় তখনই যখন তারা এসে আমাদের কাছে তাদের সেই চরম বদ বাচ্চার বুদ্ধির হাজার রকম বর্ণনা দিতে থাকেন। তখন মনে হয় চিৎকার করে বলি, “এই কে আছিস! এক্ষুণি একটা বালতি নিয়ে আয় ! আমার বমি আসতে বেশি বাকি নেই!”

যারা স্কুলে পড়ান তাদেরকে এইরকম বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝেই যেতে হয়। হাজার রকম গর্বিত বাবা-মা এসে তাদের কাছে তাদের বাচ্চা-কাচ্চার “বুদ্ধিদীপ্ত” সব কান্ড-কারখানার বকর বকর বয়ান করতে থাকেন। কিন্তু তাদেরও সময় আসে এসবের জবাব দেবার। কি ভাবে! বছর শেষে যখন যখন রিপোর্ট কার্ড হাতে দেবার সময় হয় তখনই। আমি যদি একজন টীচার হতাম তাহলে এই সময়টাকে একদম ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে নিতাম। অহংকারী এইসব বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের সম্বন্ধে জ্বালাময়ী একেকটা রিপোর্ট কার্ড পেতো।

“আপনার ছেলে, মোকাম্মেলের মাথা একদমই ঠনঠন খালি। আমি আশা করি আপনাদের কোন পারিবারিক ব্যবসায়ে তাকে আপনারা কাজে লাগাতে পারবেন। কারণ, স্কুল থেকে বের হবার পর সে যে কোন চাকরি পাবে না এটা নিশ্চিত!” অথবা যদি আমার একটু সাহিত্য করার মুড্ থাকে সেইদিন তাহলে লিখতাম, “একটা বেশ মজার তথ্য যে ঘাসফড়িঙের নাকি পেটের পাশে কান থাকে। তবে এই বছরে আপনার মেয়ে ভানুমতী যে পরিমাণ তথ্য ক্লাস থেকে শিখতে পেরেছে তাতে বলা যায়, ওর শরীরে কোথাও কোন কানই নেই।“

কিংবা প্রাকৃতিক ইতিহাসের পাতা থেকে জ্ঞান নিয়ে আমি হয়তো লিখতাম, “সিকাডা নামক পোকা মাটির নীচে ডিম হয়ে ছয় বছর কাটায়, তারপর উঠে এসে ছয়দিনেরও কম সময়ের জন্য সূর্যালোকে মুক্ত বাতাসে বাঁচে। আপনার ছেলে আবুল ফজল এই স্কুলে ডিম হিসাবে ছয় বছর তো কাটিয়ে গেলো কিন্তু আমরা এখনো অপেক্ষা করে আছি কবে সে ডিম ফুটে ভেতর থেকে বেরোবে।“ কোন একটা ভয়ানক ফাজিল টাইপ বাচ্চা হয়তো আমাকে দিয়ে এইরকম লিখাতো, “সৌন্দর্যের দিক দিয়ে ফারহানা আর হিমবাহের মধ্যে বেশ মিল আছে। তবে অমিল একটা জায়গাতেই – পানির ভেতরে হিমবাহের কিছু অংশ দৃষ্টির বাইরে থাকে। ফারহানার মাথার ভেতরে কোন কিছুই নেই!”

আমার মনে হয় আমার ক্লাসের বদগুলোর রিপোর্ট কার্ডে এইরকম সব মন্তব্য লিখতে আমার বেশ মজাই লাগতো। কিন্তু সে যাই হোক, এসব এখন বাদ দেই। তার চেয়ে বরং কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাই।

চলবে ...

[মূল লেখক: রোয়াল্ড ডাহল্।]

নৃ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শুরুর অপেক্ষায় আছি...

---থাবা বাবা!

নৃ [অতিথি] এর ছবি

শুরু হলো বলে ..

দ্রোহী এর ছবি

এত কষ্ট করার দরকার কী? মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তো ম্যাটিল্ডার অনুবাদ "নীতু ও তার বন্ধুরা" নামে করে ফেলেছেন।

নৃ [অতিথি] এর ছবি

জাফর ইকবাল স্যার মাটিল্ডার কাহিনী নিজের মতো করে লিখেছেন। আমি বইটার সরাসরি অনুবাদ করছি মাত্র। দুইটা অবশ্যই ভিন্ন হবে। আর এমনিতেও তো দুইজনের লেখার মধ্যে পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে হ্যাঁ, স্যারের লেখার ধারে-কাছেও আমারটা যাবে না হাসি
বইটা ভালো লাগলো তাই অনুবাদ করছি। উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ!

দ্রোহী এর ছবি

দুঃখের বিষয় কী জানেন? জাফর ইকবাল স্যারের নীতু ও তার বন্ধুরা বইটি উল্টেপাল্টে দেখেছি। বইটির কোথাও লেখা নেই যে বইটি ম্যাটিল্ডা অনুসরণ করে লেখা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করে কারো গল্প/আইডিয়া/লেখা মেরে দেয়া তো চুরি তাই না? জানি না কাজটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল করেছেন নাকি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছেন। কিন্তু বইয়ের উপরে যেহেতু লেখক হিসাবে তাঁর নাম লেখা তাই চুরির অভিযোগটা তাঁর উপর গিয়েই বর্তায়। সুদূর অতীতে তাঁকে ইমেইল করেছিলাম বিষয়টি নিয়ে সংশয় দূর করতে। কিন্তু প্রত্যুত্তর আজ অবধি মেলেনি।

একসময় বড় বড় মানুষদের খুব মহান ভাবতাম। সময়ের সাথে সাথে বড় মানুষদের কুকীর্তি দেখতে দেখতে তাদের আর মহান মনে হয় না। তাদেরকেও কেন জানি পাশের বাড়ির "আক্কাসের বাপ" মনে হয়। যে ঘুষ ও খায় আবার মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে।

স্পর্শ এর ছবি

ইয়ে মানে, শুধু উলটে পালটে দেখেছেন নাকি পড়েও দেখেছেন? ইয়ে, মানে...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নিঃসঙ্গ গ্রহচারী [অতিথি] এর ছবি

পড়ার পর মিল পেয়ে উল্টে-পাল্টে দেখেছেন কোথাও কৃতজ্ঞতা স্বীকার আছে কিনা! ইয়ে, মানে...

নৃ [অতিথি] এর ছবি

আপনার অনুভূতির সংগে একমত। আমাদের শ্রদ্ধেয় মানুষগুলোর মধ্যে নীচু মানের বৈশিষ্ট্য দেখলে খারাপই লাগে। তবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় যে তার এইরকম কাজের পেছনে নিশ্চই কোন কারণ আছে।
মাটিল্ডার মূল বইটা খুবই ভালো লাগলো। এই লেখকের অনেকগুলো বই-ই অবশ্য বেশ জনপ্রিয়।

স্পর্শ এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।

অনুবাদ দারুণ ঝরঝরে হচ্ছে! আরো বড় বড় পর্ব আকারে আসতে থাকুক। চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নৃ [অতিথি] এর ছবি

পরের পর্বগুলো আরো বড় করবার আশা করছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হাসি

বাউলিয়ানা এর ছবি

অনুবাদ খুব ঝরঝরে হয়েছে চলুক

পরের পর্ব অপেক্ষায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি
পরের পর্ব আসিতেছে ..

- নৃ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌সচলে স্বাগতম নৃ!
আপনার পরিশ্রমী অনুবাদ বাচ্চাদের পাশাপাশি বুড়োদেরও মন জয় করছে। অভিনন্দন হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

থেংকু নীড়দা দেঁতো হাসি
বুড়ো-বুড়িদের ভেতরেও তো একেকজন পিচ্চি থাকে। নইলে কি আর এখনো টম এন্ড জেরীর ভক্ত থাকি! হাসি

- নৃ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।