পোড়া কপাল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৫/০৬/২০১০ - ৯:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যে ঔষধগুলো প্রেসক্রাইব করা হয়েছিলো,
সর্বসাকুল্যে তার মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ১৭২ টাকা।
'১৭২ কোটি কালো টাকা উদ্ধার করা হয়েছে
এক দেশদরদী! নেতার একাউন্ট থেকে'
এই খবরটি যখন আমারা পড়ছিলাম
চা খেতে খেতে দেশোদ্ধার করছিলাম
আর কাদের যেন পিন্ডি চটকাচ্ছিলাম
তখন বুড়ো লোকটি প্রেসক্রিপ্‌শন নিয়ে
হাত পেতে দাঁড়িয়ে গেল নাতির বয়সী
ছেলেমেয়েগুলোর সামনে...
ঔষধগুলো না হলে যে বাঁচানো যাবেনা,
একমাত্র মেয়েটিকে... ।
দুদকের তখন দোর্দন্ড প্রতাপ
তারপর অনেক বেলা গড়ালো।
কত নাটক মঞ্চস্থ হলো
দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে।

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ৮০টি নতুন গাড়ি নামছে...
কোথায় যে নামছে, সেটা রাস্তা না আর কিছু?
তা একমাত্র, বিধাতাই জানেন...
ঐ যে রিকশাওয়ালা ছেলেটি, হয়তো ১৬ পেরিয়েছে মাত্র
এস.এস.সির রেজাল্ট হাতে যে এখন স্বাপ্নিক হয়ে উঠতে পারতো
বেদম মার খেলো সেদিন।
একটা নতুন গাড়িতে একটু স্ক্র্যাচ ফেলে দিয়েছিল যে...
বেহুদা গাধা কোথাকার! ন্যূণতম সেন্সও নেই...
সে কিসে স্ক্র্যাচ ফেলেছে, কোনো আইডিয়া আছে তার??

পান্থপথে দৃষ্টিনন্দন শপিংমলে, আগুন লেগে
ওপরের কিছু অংশ পুড়ে ছাই
ভাগ্য ভালো, মলের ভেতরের মানুষগুলো
সময়মতো বের হতে পেরেছিল।
অল্পকজন অবশ্য মরেছে...
ওই যে লিফট্‌ম্যানটা...
আশ্চর্য! বের হতে পারলোনা কেন? বেকুব নাকি??
পান্থপথে যেতে আসতে এখন পথচারীরা নিঃশ্বাস ফেলে
'বিল্ডিংটার সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে'

আর পুড়েছে হলো, পুরান ঢাকায়
ঐ কেমিক্যাল গুদামের কাছে থাকা মানুষগুলো।
এতোগুলো মানুষ একসঙ্গে পুড়ে শেষ।
দুর্মুখেরা বুঝবে কি করে?
টাকার কি সাঙ্ঘাতিক দরকার ছিল বলেই না
ওখানে কেমিক্যালের গুদাম করতে দিতে হলো।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটের প্রধান বলছে-
'এর আগে এতো পোড়া রোগী একসঙ্গে দ্যাখেনি'
দেখবে কি করে?
বিল্ডিং উপড়ে যেতেই বা কে দেখেছিল?
২৫ জনের সিমেন্ট সমাধি হয়ে গেল সাথে সাথে।
তাদের পরিবারের হাতে প্রতিটি মৃতের জন্য
২০ হাজার করে টাকা ধরিয়ে দেয়া হলো।
টিভি রিপোর্টিং হলো, দেশবাসীকে তো আর অন্ধকারে রাখা যায়না।

হা ঈশ্বর, ১৬ কোটি অবাঞ্চিতের এই পোড়া দেশে
মানুষই যে সবচেয়ে কমদামী...
তা আর কতভাবে বুঝতে হবে???

শংখ


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তাজিন [অতিথি] এর ছবি

মানুষই যে সবচেয়ে কমদামী...
তা আর কতভাবে বুঝতে হবে???

ধূ্সর সপ্নগুলো [অতিথি] এর ছবি

এই দেশের এই অবস্থার জন্য আমি, আপনিই তথা আমরাই দায়ী।

বেহুদা গাধা কোথাকার! ন্যূণতম সেন্সও নেই

পান্থপথে যেতে আসতে এখন পথচারীরা নিঃশ্বাস ফেলে
'বিল্ডিংটার সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে'

আপনি বলেন ১ জন শিক্ষিত গ্রাজুয়েট এর কাছ থেকে আপনি যদি এমন ব্যাবহার পান, তার কথা বার্তায় এমন মনোভাব প্রকাশ পায় ... তাহলে আপনি তাকে শিক্ষিত বলবেন না বলবেন না ? - এই দেশে কেও শিক্ষিত হওয়ার জন্য নয়, টাকা কামানোর জন্য পড়ালেখা করে ।

ধূ্সর সপ্নগুলো

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি, গালভরা ডিগ্রী আর টাকা কামানোটাই এখানে শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য। জানিনা কবে এই দুষ্টুচক্র থেকে বের হতে পারব? আদৌ কি পারব...?????

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে দাগ কাটার মত লেখা, আপনাদের মতন চেতনাসমৃদ্ধ মানুষ আছে বলেই আমরা জানতে পারছি " মানুষই যে সবচেয়ে কমদামী "

ভাল থাকুন, আরো আরো লিখুন...

___________________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। আমাদের অক্ষমতাগুলোকে লেখায় নিয়ে আসার চেষ্টা করি। জানিনা কতটুকু পারি...

স্পর্শ এর ছবি

ভালো লিখেছেন।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অনুপম মল্লিক এর ছবি

অনেক অল্প পড়ে হয়ত বেশি মন্তব্য করে ফেলছি, যাদের লেখায় সময় ধরা পড়ে তারাই কালের বিচারে নন্দিত হয়। আমরা আবার হয়ত সেই সফেদ চুলের গ্লুকমা আক্রান্ত স্বাপ্নিক চোখ আর পাবনা কিন্তু তার মত করে সময়কে ব্যবচ্ছেদ করা পংক্তির মালাকার হয়ত সচলায়তনের সুতিকাগারে বেড়ে উঠছে।
ভাললেগেছে।

অনুপম মল্লিক এর ছবি

অনেক অল্প পড়ে হয়ত বেশি মন্তব্য করে ফেলছি, যাদের লেখায় সময় ধরা পড়ে তারাই কালের বিচারে নন্দিত হয়। আমরা আবার হয়ত সেই সফেদ চুলের চির যুবা, আর তার গ্লুকমা আক্রান্ত স্বাপ্নিক চোখ আর পাবনা কিন্তু তার মত করে সময়কে ব্যবচ্ছেদ করা পংক্তির মালাকার হয়ত সচলায়তনের সুতিকাগারে বেড়ে উঠছে।
ভাললেগেছে।

শংখ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে আপনি প্রেরণাদায়ক মানুষদের অন্তর্ভুক্ত কেউ একজন হবেন। এতোকিছু ভেবে হয়তো লিখিনি, মনের আক্ষেপগুলোই আসলে লেখায় প্রকাশ পেয়েছে...
- শংখ

কনীনিকা এর ছবি

চলুক চলুক চলুক চলুক চলুক

আগে খেয়াল করিনি এই কবিতার কবি আমার প্রিয় বান্ধবী। খেয়াল করলে প্রথমদিনই কমেন্ট করতাম। কবিতাটা পড়ে এমন তীব্র বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলাম যে কি লিখব সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। শঙ্খ (নিলিম) তোর কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো চমৎকার সব লেখা পাওয়ার আশা এবং আবদার রইলো!
------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

শংখ [অতিথি] এর ছবি

হুমমম... কিন্তু অপরিচিত হিসেবে তোদের লেখায় মন্তব্য দেয়ার প্ল্যানটা মাঠে মারা গেল দেখছি..... খাইছে তুমিও চালিয়ে যাও বন্ধু..... হাসি

নাবিলা এর ছবি

শংখ বাবাজি ভালয়ি লাগলো তোমার লেখা পোরে। অাপনি শেই রকম ভালো লিখতে শিখেছেন

নাবিলা এর ছবি

শংখ বাবাজি ভালয়ি লাগলো তোমার লেখা পোরে। অাপনি শেই রকম ভালো লিখতে শিখেছেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।