সীমানার বাইরে...(৩য় পর্ব)

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: রবি, ০৬/০৬/২০১০ - ১২:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ১৪।০৫।২০১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছি উপন্যাস "সীমানার বাইরে"। ব্লগে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস। আজ দিলাম এর তৃতীয় পর্ব।
।।১ম পর্ব।। ।।২য় পর্ব।।

সুস্মিতা কিছু বোঝার আগেই ঘুষিটা এসে লাগল গালে।
ব্যথায় ককিয়ে উঠলো; সাথে সাথে মুখভরা এক নোনতা স্বাদ অনুভব করলো সে।
এধরনের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন সুস্মিতার জন্...গত ১৪।০৫।২০১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছি উপন্যাস "সীমানার বাইরে"। ব্লগে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস। আজ দিলাম এর তৃতীয় পর্ব।
।।১ম পর্ব।। ।।২য় পর্ব।।

সুস্মিতা কিছু বোঝার আগেই ঘুষিটা এসে লাগল গালে।
ব্যথায় ককিয়ে উঠলো; সাথে সাথে মুখভরা এক নোনতা স্বাদ অনুভব করলো সে।
এধরনের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন সুস্মিতার জন্য।
সুস্মিতা ভাবছে কি করবে, পালানোর চেষ্টা করবে যে তাও স্মভব নয়। তিনদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না। এক ঘুষি খেয়েই মাথা ঝিম ধরে আছে।
সুস্মিতার হাতের ব্যাগটা ধরে হ্যাচকা টান দিল একজন। সুস্মিতা বাধা দিল না। জানে, দিয়ে লাভ হবে না।
যা নেবার নিক, শুধু গায়ে হাত যেন আর না দেয়। ভাবে সুস্মিতা।
ভাবনায় ছেদ পড়ে পাশ থেকে এক লাথি খেয়ে। পেট ধরে বসে পড়ে সুস্মিতা।
পেট জুড়ে তীব্র এক ব্যথা অনুভব করে সে। অব্যক্ত সে অনুভূতি।
এর মাঝেই একজন গলার চেনটা ধরে এক টান দেয়, ঘাড়ে চাবুকের মত ব্যথা অনুভব করে।
ছিনতাইকারীদের একজন সুস্মিতার তল্লাশী নেয়। ওর মুখের সাথে মুখ চেপে ধরে একজন। ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। সুস্মিতা কিছুই করতে পারে না।
আর কিছু নেই দেখে সুস্মিতাকে জাত নিয়ে গাল দেয় ওরা। শেষে ডজন খানেক লাথিগুঁতা দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়।
সুস্মিতা তখনও সজাগ। ওর কেন জানি মনে হতে থাকে ও মারা যাবে। এত কষ্ট ওর দেহের উপর দিয়ে কখনও যায়নি।
এত ব্যথার মাঝেও ওর বারবার মার্থার কথা মনে হতে থাকে। মার্থা ওকে ভীষণ ভালোবাসে, ভীষণ। ওর কিছু হলে মার্থা পাগল হয়ে যাবে।
ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর কথাও মনে পড়ে সুস্মিতার। অর্ধাহারে অনাহারে থাকা। ওদের জন্য কত কি যে করার ইচ্ছা সুস্মিতার।
হঠাৎ মা-বাবার কথাও মনে পড়ে সুস্মিতার। সুস্মিতা মারা গেলে মা হয়তো কিছুক্ষণ কাঁদবেন, তারপর তার স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যাবেন। বাবা শুনেও না শোনার ভান করবেন।
সকালের আভা তখনও পুরোপুরি ফুটে উঠেনি। তবু সুস্মিতার চোখ কুঁচকে যায়।
“মার্থা। মার্থা। ”

#### #### ####
কলেজ জায়গাটা মোটেও খারাপ না। তাও যদি আবার হয় আমেরিকান কলেজ। অবাধ স্বাধীনতা।
অঙ্কিতা এই কয়দিনে বেশ মানিয়ে নিয়েছে।খাবার নিয়ে প্রথম প্রথম সমস্যা হলেও এখন অনেকটা গেছে।
মনটাও আজ একটু ভালো। নিয়মিত কথা হচ্ছে রাজীবের সাথে।
মাঝখানে রাজীব অসুস্থ অবস্থায় কিছুদিন বাড়িতে ছিল। তাই কথা বলতে পারেনি।
ডেলটোনায় অনেক এশিয়ান বাস করে। তাই নতুন বন্ধু খঁজে নিতে অঙ্কিতার খুব একটা দেরী হয়নি।
ইদানীং নেপালীদের সাথে অঙ্কিতার খুব সখ্যতা গড়ে উঠেছে। স্বপ্নার মাধ্যমে।
স্বপ্নার মা-বাবা, মিস্টার এন্ড মিসেস আগারওয়ালকে অঙ্কিতার মামা-মামী আগে থেকেই চিনতো। স্বপ্নার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রেই। মা-বাবা নেপালী।
মেয়েটাকে দেখে, আর মনে মনে মুগ্ধ হয় অঙ্কিতা। এত সুন্দর কেউ হতে পারে, স্বপ্নাকে না দেখলে বিশ্বাস করতো না অঙ্কিতা। ঠিক পরীর মত। ও ছেলে হলে এতদিনে ঠিকই প্রোপোজ় করে বসতো।
স্বপ্নার সাথে হাঁটছে আর কথা বলছে অঙ্কিতা। দু’সপ্তাহ হল কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। একদম অন্যরকম এক অনুভূতি।
আজকে স্বপ্না কেমন জানি একটু অন্যমনস্ক। কিছু বলছে না, শুধু অঙ্কিতার কথা শুনে যাচ্ছে আর একটু পর পর মলিন এক হাসি দিচ্ছে।
অঙ্কিতা অনেকক্ষণ ধরে দ্বিধায় থাকে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না। শেষে আর না থাকতে পেরে বলে উঠে
-কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি স্বপ্না।
-মনে করার কি আছে, নিঃসঙ্কোচে বলো।
-তোমার কি কিছু হয়েছে?আজ কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক।
স্বপ্না যেন তৈরিই ছিল প্রশ্নটার জন্য।
-না, একটু শরীর খারাপ।
অঙ্কিতা স্বপ্নার কপালে হাত দিতে যায়। স্বপ্না বাধা দিতে চায়। কিন্তু পেরে উঠে না।
আসলেই গাটা একটু গরম।
-জ্বর আসছে মনে হয়।
-হয়তোবা।
করিডোরটা ক্রস করতেই দেখা হয়ে যায় স্টিফেনের সাথে।
অঙ্কিতার এখানকার একমাত্র ছেলে বন্ধু। প্রথমদিন ক্লাসে পরিচয় হয় ওদের।
স্টিফেনকে কেন জানি স্বপ্না পছন্দ করে না। হয়তোবা স্টিফেন কালো দেখে।
স্টিফেনের ক্লাস ছিল তাই অঙ্কিতাকে হাই বলেই সে চলে যায়।
ক্লাসে ঢুকতে যাবে এমন সময় পেজারটা প্রথমবারের মত বেজে উঠল। অঙ্কিতা প্রথমে বুঝতে পারেনি।
পরে তাড়াহুড়া করে ব্যাগ ঘেঁটে বের করল।
বাসা থেকে এসেছে। আর্জেন্ট যেতে হবে।
অঙ্কিতা বুঝে উঠতে পারলো না কি এমন ঘটনা এখানে ঘটতে পারে। ঢাকায় কিছু হয়নি তো?মা-বাবার?
অঙ্কিতা ফোন দেয় বাসায়, লাইন ব্যস্ত। মামা-মামী দুজনকেই চেষ্টা করে। মামার ফোনও বন্ধ; মামীর ফোনে রিং হয়, কিন্তু ওপারে কোন সাড়া শব্দ নেই।
অঙ্কিতাকে হঠাৎ করেই চাপা এক ভয় ঘিরে ধরে।
স্বপ্নারও শরীর ভালো না। ক্লাস করবে না ঠিক করে দু'জন কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে।
বাস স্ট্যান্ড কাছেই। মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ।
বাসে যেতে যেতে নানা বাজে চিন্তা মাথায় আসে অঙ্কিতার। স্বপ্না অঙ্কিতার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে শান্ত হতে বলে।
বাসার কাছে এসে দেখে, আশেপাশে পুলিশের গাড়ি। পাড়ার লোকজন সব এসে জড় হয়েছে।
অঙ্কিতার বাসার দিকে দৌড় দেয়। অঙ্কিতাদের দরজায় স্বপ্নার মা-বাবা দাঁড়ানো। অঙ্কিতা ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় স্বপ্নার মা অঙ্কিতাকে জড়িয়ে ধরেন।
পাঁচ মিনিট পর অঙ্কিতা যখন মিসেস আগারওয়াল ছেড়ে উঠে, দাঁড়ায় তখন ওর চেনা দুনিয়াটা আর আগের মত নেই।
অঙ্কিতা কি করবে ও বুঝে উঠতে পারেনা। এসময় যদি রাজীব পাশে থাকতো!!!
অঙ্কিতা ঘরে ঢোকে। ফোনের কাছে গিয়ে ফোন করে ঢাকায়। বাবা মাকে আসতে বলতে হবে।
সবকিছু ওলোটপালট।
মাকে সবকিছু বলে ফোন রেখে দেয় অঙ্কিতা। রাজীবকে কল করে।
রিং হয়, রিং হয়...
অঙ্কিতা অবাক হয় না এবার। অঙ্কিতা জানে আজও রাজীবকে সে পাবে না।

(চলবে)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সাবলীল, পরিমিত গাঁথুনি, দারুণ

___________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নৃ [অতিথি] এর ছবি

এটা পড়তে গিয়ে আগেরগুলোও পড়ে ফেললাম।
লেখার ভংগিটা খুব ভাল্লাগলো।
চলুক, পড়তে থাকবো হাসি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

একটু যেন ছন্দোহীন আর এলোমেলো মনে হচ্ছে। তারপরও, চলুক।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
খাপছাড়া যে একটু হয়েছে তা নিজেও বুঝতে পারছি। কোন excuse দেখাবো না। আসলে হয়ে গেছে এমন। চেষ্টা করবো সামনে একটু গুছিয়ে লিখতে।

palash_blog@yahoo.com

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।