কাক - [প্রথম কিস্তি]

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০৭/২০১০ - ৬:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাক
০১

আব্দুর রহমান সাহেব তীব্র বিরক্তি নিয়ে বসে আছেন। হাতে অফিসের ফাইল। ফাইলে গুরুত্বপূর্ণ হিসেব আছে। হিসেব মিলছেনা। কিন্তু মিলতেই হবে। মেলাটা জরুরি। মাল্টিন্যাশনাল একটি কোম্পানির একটি দেশের হেড হবার কিছু ঝামেলা আছে। সেই ঝামেলা এখন রহমান সাহেবের উপর দিয়ে যাচ্ছে।

হিসেবের কারনে এক রাত রহমান সাহেবের ঘুম হয়নি। যে হিসেব নিয়ে তিনি যন্ত্রনাতে আছেন, তা তার সামলানোর কথা না, অধীনস্থদের সামলানোর কথা। হিসেবের গোলমাল এর পরিমান বেশি, তাই রহমান সাহেব ফাইল বাড়িতে নিয়ে এসছেন। রাতে ঘুম না হবার কারনে মাথায় ঝিমঝিমে একটা অনুভূতি হচ্ছে। বিরক্তির কারনে তার দুই ভ্রু কুঁচকে একসাথে লেগে আছে। বিশ পাতার ফাইল রাতে খুব কম করে হলেও পঞ্চাশ বার পড়া হয়েছে। প্রতিটি ফিগার চেক, রিচেক করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

সকাল ৬টা বাজে। রহমান সাহেব বসে আছেন তাঁর স্টাডিতে। কিছুক্ষণ আগে তাঁর স্ত্রী কুমকুম এসে কফি দিয়ে গেছেন। স্বামীর ভ্রু কুঁচকে আছে দেখে তিনি আর কিছু বলেননি। স্বামীকে কফি দিয়ে তাকে হাঁটতে বেরুতে হবে। কুমকুম এর ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস।

রহমান সাহেবের স্টাডি সাউন্ডপ্রুফ। বাড়ি ডুপ্লেক্স। বাড়ির দোতলার বাইরের দিকে একটা বারান্দা এবং তার সাথেই স্টাডি। স্টাডিতে ঢুকলে বাইরের দুনিয়া পুরো আলাদা হয়ে যায়। চারদিকে শুনশান নীরবতা। নৈঃশব্দ রহমান সাহেবের খুবই পছন্দ। তার অফিসের রুমটিও সাউন্ডপ্রুফ।

রহমান সাহেব কফি শেষ করে নতুন করে ফাইল পড়া শুরু করলেন। হঠাৎ করেই তার বিরক্তি আরো বাড়লো। কোথায় যেন শোঁ শোঁ ধরনের শব্দ হচ্ছে। তার মাঝে আবার কটকট ধরনের শব্দও আছে। রহমান সাহেব খুব অবাক হলেন। স্টাডিতে কি করে শব্দ হয়? কুমকুম কি দরজা ঠিকমতো লাগাতে ভুলে গেছে? ফাইল রেখে তিনি ভেতরের দরজার লক দেখলেন। নাহ, দরজা ঠিকমতোই লাগানো আছে। কুমকুমের অবশ্য ভুল হবার কথা না। এরপর তিনি দেখলেন বারান্দার দরজা। বারান্দা তে একটা ইজি চেয়ার রাখা। এখানে রাতের বেলায় মাঝে মাঝে তিনি বসেন। রহমান সাহেব খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে তার ইজিচেয়ারের দুই হাতল-এ দুটো বড়সড় কাক বসা। বোধ হয় দাঁড় কাক।

মানুষ দেখার সাথে সাথে কাকের উড়ে যাবার কথা। এই কাক দুটোর মাঝে সেই রকম কোন ইচ্ছা দেখা যাচ্ছেনা। আচ্ছা, কাক দুটো এখানে বসে আছে কেন? দুনিয়া তে কি জায়গার অভাব? রহমান সাহেব কাকগুলোকে তাড়ানোর চেষ্টা করলেন। কিন্ত ঠিক কি কারনে কে জানে, কাক দুটো ডানা ঝাপটে আবার বসেই রইলো। বিষয়টাতে রহমান সাহেবের অবাক হবার কথা কিন্তু তিনি অবাক হলেন না। তিনি তীব্র বিরক্ত ছিলেন। সেই বিরক্তির জায়গায় হলো রাগ। রাগে তার গা জ্বলতে লাগলো। তিনি কাক গুলোকে আবারো তাড়ানোর চেষ্টা করলেন। কোন লাভ হলোনা। রহমান সাহেব রাগে মোটামুটি অন্ধ হয়ে গেলেন। স্টাডিতে তার শখের এয়ারগান থাকে। তিনি বারান্দা থেকে ছুটে গেলেন স্টাডিতে। এয়ারগান নিয়ে বেরিয়ে এলেন। কাক দুটো তখনো বসে আছে। মানুষের যাওয়া-আসা তে তাদের কোন ভাবান্তর নেই। হাত তিনেক দূর থেকে রহমান সাহেব একটা কাককে গুলি করে দিলেন।

এতো কাছ থেকে গুলি ফসকাবার কোন কারন নেই। কুচকুচে কালো রঙ এর কাক এক গুলিতেই শেষ। ঝপ করে মেঝেতে পড়লো মৃত কাক। বাকি কাকটা গিয়ে বসলো বারান্দার গ্রীলে। সাথীর মৃত্যুতে তার ভেতর কোন ভীতির সঞ্চার হয়নি। সে তীব্র দৃষ্টিতে রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো। রহমান সাহেবও তাকিয়ে রইলেন কাকের দিকে। তিনি খেয়াল করলেন গ্রীলে বসে থাকা কাকটির রঙ একেবারে কালো না। এর গলার কাছে ছোট ছোট সাদা ফুটকি আছে। কাকটি এবার গিয়ে বসলো সামনের কারেন্টের তারে। সেখান থেকেও সে রহমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো।

কাকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রহমান সাহেব তাকালেন মেঝের দিকে। পা কুকড়ে পড়ে আছে মৃত কাক। মেঝেতে অল্প রক্ত ও দেখা যাচ্ছে। মেঝে রহমান সাহেব নিজেই পরিস্কার করে ফেললেন। মরা কাক তিনি বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলেন বাইরে । নিচে কুকুর দের এখনো বাঁধা হয়নি। রাতে বাড়ির কম্পাউন্ডে এদের ছেড়ে রাখা হয়। কাকের শরীর নিচে পড়া মাত্র কুকুরদের হুটোপুটি শোনা গেল।

এখন মনে হচ্ছে রাগ একটু কমেছে। রহমান সাহেব স্টাডিতে ঢুকে গেলেন। কাকের কথা তার মনে রইলোনা। ফাইল এর সমস্যাটা বের করা জরুরি।

০২

সকাল ন'টার দিকে রহমান সাহেব ফাইল দেখা বাদ দিলেন। সমস্যা তিনি খুঁজে পাননি। সমস্যা অবশ্যই আছে। পরে আবার চেষ্টা করা যাবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার। ব্যর্থতায় তার বিরক্তি আরো বাড়লো। টেবিল থেকে উঠে রহমান সাহেব নিজের অজান্তেই গেলেন বারান্দায়। দরজা খুলে তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। বারান্দার রেলিং, বাইরে কারেন্টের তারে সারি সারি কাক বসা। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। সবাই চুপচাপ বসে একদিকে তাকিয়ে আছে। চারপাশেও কেন যেন কোন শব্দ নেই। সাউন্ডপ্রুফ এলাকা থেকে বাইরে বের হলে অনেক শব্দ পাওয়া যায়। এখন তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। যেন বারান্দাটাও সাউন্ডপ্রুফ। অন্যদিন গাড়ির হর্ন, রিক্সার টুংটাং শব্দ থাকে। আজ কিছুই নেই। হঠাৎ রহমান সাহেবের মনে হলো কাকগুলো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু অস্বস্তি বোধ করলেন রহমান সাহেব।
বারান্দা থেকে তিনি ভেতরে ঢুকে গেলেন। অস্বস্তিটাও কেটে গেল। কাকের ঘটনা তার মাথায় রইলোনা। অফিস যেতে হবে। ফাইল টার সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে। আচ্ছা, কোম্পানিতে টাকা-পয়সা নিয়ে এত সমস্যা হয় কেন? টাকা কি মানুষের হাতে পড়লেই প্রাণ পায়? স্থির থাকেনা কেন?

[চলবে]
--------
মানিক চন্দ্র দাস
manikchandradas10[অ্যাট]gmail[ডট]com


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

স্বাগতম।

ভালো সূচনা হয়েছে। তবে লেখাটা এডিট করে কিছু অপ্রয়োজনীয় গ্যাপ কমানো গেলে পড়তে আরাম হবে। যেমন ফাইল টার-কে যদি লেখেন ফাইলটার তাহলে মনে হয় পড়তে ভালো হবে। ব্যাকরণবিদরা ভালো বলতে পারবেন, আমার এরকম মনে হলো তাই বললাম।

একটা জিনিস অস্বাভাবিক মনে হল-- উনি কাকটাকে মেরে বারান্দা থেকে ফেলে দেবেন এমনটা ভাবতে পারিনি। তাছাড়া স্টাডিতে এয়ারগান থাকাটাও একটু কেমন যেন। যাই হোক, উপন্যাস যেহেতু, এরকম হতেই পারে।

পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিয়েন, নাহলে আগের পর্ব আবার পড়তে হবে। সেটা হয়তো করা হবে না, তাই লাইনও কেটে যেতে পারে।

সিরাত এর ছবি

হুমায়ূন আহমেদের স্টাইলের সাথে মিল আছে কিছুটা। মজাই লাগলো। হাসি চার দিলাম। কাহিনীর একটা সমাধা পেলে পাঁচ দিতাম, প্লটের মাঝে সাবপ্লট। ঝরঝরে ভাষা।

লেখাটা জাস্টিফাই করে দেখবেন নাকি? সুন্দর লাগবে। '

' শুরুতে লিখে শেষে '
' লিখে দিন।

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগছে বস। লিখে যান

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে
সুবীর কর

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালই লাগল। লেখায় বাবর এর সন্তান এর প্রভাব লক্ষণীয়
__________
ত্রিমাত্রিক কবি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় ত্রিমাত্রিক কবি, আপনার কমেন্টটা সুন্দর। @ প্রকৃতি প্রেমিক, আশা করছি সময় মত পরবর্তী অংশটুকু পোষ্ট করতে পারবো। সিবাত ভাই, চার দেবার জন্য আমি খুব খুশী। হুমায়ুন সাহেবের লেখার ছাপটা আমার লেখা থেকে দূর করার চেষ্টা করবো। লেখা পড়ার জন্য সব্বাইকে ধন্যবাদ।

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

দাদা খুব ভাল লেগেছে। ভাষাটা অনেক প্রাঞ্জল। পরের গুলো পড়ে দেখি।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ শান্ত। ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।