আজি হতে অর্ধশতবর্ষ পরে?!

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৪/০৮/২০১০ - ৩:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবিগুরুর "আজি হতে শতবর্ষ পরে" কবিতার মত আমারো মাঝে মাঝে মনে হয় কি হবে আজ থেকে পঞ্চাশ বা একশ বছর পরে আমাদের দেশের অবস্থা। দেশের বর্তমানে যে অবস্থা দাড়িয়েছে তাতে ভয়ই লাগে। তারপরেও আমি দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নবাজ মানুষ। আমি যে কত কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখি তার ইয়ত্তা নেই। আমার কল্পনারও আলাদা একটা জগত আছে। তবে আমার কাছে স্বপ্ন আর কল্পনার মধ্যে একটি পার্থক্য আছে। আমার কাছে স্বপ্ন মানে হচ্ছে যা বাস্তবে সম্ভব আর কল্পনা হচ্ছে যা কখনোই সম্ভব না।
নিজের দেশকে নিয়ে আমার চিন্তাভাবনাকে আমি স্বপ্নই বলবো কেননা আমি মনে করি সেগুলো বাস্তবে অবশ্যই সম্ভব, শুধুমাত্র চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতনতা আর সঠিক পদক্ষেপ।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোথায় গিয়ে দাড়াবে সেটা নিয়ে আমার স্বপ্ন নিয়েই আজকের লেখা। দেখুনতো আপনার সাথে মিলে যায় কিনা?

প্রথমেই বলতে চাই পানিসম্পদ নিয়ে (পানিসম্পদ প্রকৌশলী হিসেবে এই সেক্টরের প্রতি আমার পক্ষপাত)। আমি মনে করি ৫০ বছর পরে আমরা এই ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবেই নিজেদের স্বকীয়তা আর নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে পারবো। এটার পেছনে আমার বেশ ভালো একটা যুক্তি আছে। বাংলাদেশের বিশেষ করে বুয়েটের অনেকেই এই বিষয়ে পড়াশুনা করছে এখন এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশের বাইরেও অনেক ছাত্রছাত্রী এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। তাদের যদি চার ভাগের এক ভাগও দেশে ফিরে এই সেক্টরে কাজ করা শুরু করে তাহলেই দেশের অবস্থা পাল্টে যাবে। আমার নিজেরই দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে পুরোদমে। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ভারতের সাথে অনেকগুলো আন্তসীমান্ত নদী নিয়ে চুক্তি হয়ে যাবে। আমরা মৃতপ্রায় নদীগুলোকে ড্রেজিং করে সেগুলোকে তার হারানো নাব্যতা ফিরিয়ে দিবো। বেশিরভাগ কলকারখানা ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়ে যাবে, যে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানায় ইটিপি (Effluent Treatment Plant) তৈরি করার ফলে নদীদূষনও কমে যাবে। দূষন কমে গেলে আর নদীর প্রবাহ যদি ঠিক থাকে তাহলে নদীগুলো পানির কোয়ালিটি আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে।
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের মত আরো কয়েকটি মাস্টার প্ল্যান বড় বড় কয়েকটা শহরে বাস্তবায়িত হয়ে যাবে এর মধ্যে যার ফলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিও অনেক কমে যাবে। তাছাড়া শহর রক্ষা বাঁধগুলো বন্যার পানিকে শহরে ঢুকতে বাধা দিবে কেননা আমরা ততদিনে বাঁধগুলোকে যথেষ্ট মজবুতভাবে তৈরি করে ফেলবো। এছাড়া চীন, ভারত আর নেপালের সাথে যৌথ নদীব্যবস্থাপনার কারণে বন্যানিয়ন্ত্রণ করতে পারবো অনেক সফলভাবে।
ভারতের সাথে চুক্তির ফলে বড় বড় নদীগুলোতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা অনেকাংশে কমে যাবে।
নদীদূষন কমে গেলে আর নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হলে ওয়াসা নদীর পানিকে ট্রিটমেন্ট করে প্রয়োজনীয় পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবে, ভূগর্ভস্থ পানির উপরে চাপ কমে যাবে। এর ফলে মাটির নীচের পানির লেভেল আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকবে।

এরপরেই আসে বিদুৎ খাত। ৫০ বছর অনেক সময়। এর মধ্যে বিদুৎ খাতেও আমরা অনেক সক্ষমতা অর্জন করবো। এর মধ্যে অন্তত দুইটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়ে যাবে যা আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে মেটাতে পারবে। এছাড়া বায়ুবিদুৎ, সৌরবিদুৎতো আছেই। কেননা এই সময়ের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে কিভাবে কম খরচে বিদুৎ উৎপাদন করা যায় তা আবিষ্কার হয়ে যাবে। ভারত আর নেপালের সাথে চুক্তি করার ফলে নেপালে উৎপাদিত পানিবিদুৎ আমাদের দেশেও আনা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে মনে হয়।

যোগাযোগ খাত আরেকটা সমস্যাবহুল খাত আমাদের দেশে। বর্তমানে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এই খাতে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি আমরা এঅবস্থা কাটিয়ে উঠবো আগামী পঞ্চাশ বছরে। এখনি এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা কিভাবে এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রাস্তার অপ্রতুলতা, গাড়ির সংখ্যাধিক্য, পুরোনো গাড়ি আর চালকদের শিক্ষার অভাব। এছাড়া সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবও সমানভাবে দায়ী। আমি স্বপ্ন দেখি ৫০ বছরের মধ্যে আমরা বেশিরভাগ পুরোনো গাড়ির হাত থেকে মুক্তি পাবো। অনেকগুলো ফ্লাইওভার তৈরি হয়ে যাবে এতদিনে। গাড়ির সংখ্যাও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। প্রাইভেট কারের বদলে পাবলিক বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাংলাদেশে পাতাল ট্রেন ইকোনমিক্যালি ফিজিবল না বিধায় মাটির উপরেই স্কাই ট্রেনের মত ট্রেন হবে যেটা বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
সড়ক ব্যবস্থাপনাও ততদিনে অনেক ভালো হয়ে যাবে। মহাসড়কগুলোতে ইতোমধ্যেই ডিভাইডার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে। শহরের রাস্তাগুলোতেও লেন সিস্টেম সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে ফলে যানজট কমে যাবে অনেক। চালকদেরও সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্যে কঠিন শাস্তির বিধান করে আইন করা হবে। শুধু আইন করাই না সেটা যাতে কঠোরভাবে মানা হয় সেটাও মনিটর করার ব্যবস্থা করা হবে এসময়ের মধ্যে।

কৃষিখাতেও আগামী ৫০ বছরে অনেক সফলতা অর্জনের স্বপ্ন দেখি আমি। ইতোমধ্যেই আমরা পাটের জিনোম আবিষ্কার করে ফেলেছি যা পাট শিল্পকে পুনর্জীবিত করবে। আমরা আবার বাইরে পাট এবং পাটজাতীয় পণ্য রপ্তানি করতে পারবো। এছাড়াও আমি মনে করি আগামী ৫০ বছরে আরো কয়েকটি শস্যের জিনোম বের করতে পারবো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যেই উচ্চফলনশীল এবং বন্যাসহনশীল ধানের জাত আবিষ্কার করেছে যা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে সাহায্য করবে।

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমার এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব। তবে যদি এর পুরোটা নাও হয় কাছাকাছি হলেও আমি সন্তুষ্ট থাকবো। মৌসুমি ভৌমিকের স্বপ্ন নিয়ে এই গানটা আমার বেশ পছন্দের, আপনারাও শুনুন আর বেশি করে স্বপ্ন দেখুন। কেননা স্বপ্ন না দেখলে আসলে কিছুই সম্ভব না। অবশ্য শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না সেটা বাস্তবায়নেও সচেষ্ট হতে হবে তবেই না স্বপ্ন দেখার সার্থকতা।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

পাগল মন


মন্তব্য

কাকন [অতিথি] এর ছবি

এমন হলে খুব ভাল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। মনে হয় কল্পনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

কল্পনা না আমার কাছে এটা স্বপ্ন এবং এমনটা হওয়াও খুবই সম্ভব।
বাস্তবতা যত কঠিনই হোক না কেন স্বপ্নতো দেখতেই হবে আর স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও চেষ্টা করে যেতে হবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে।

পাগল মন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভারতের সাথে চুক্তির ফলে বড় বড় নদীগুলোতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা অনেকাংশে কমে যাবে।
আমার ধারণা শুধু ভারত নয়, চীনও তাদের সব নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে যার ফলে কোন চুক্তি দিয়েই নিরবচ্ছিন্ন পানি পাওয়া নিশ্চিত করা যাবে না। ম্যাথেমেটিক্যাল মডেল দিয়ে ভবিষ্যত প্রেডিক্ট করতে সমপরিমান সময়ের পুরনো-উপাত্ত দরকার হবে। তাতে তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু দেখি না। আপনি এ বিষয়ের মানুষ যেহেতু তাই আমার ধারণা ভুল হলেই খুশি হবো। কল্পনা দিয়ে প্রেডিকশন করলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

অতিথি লেখক এর ছবি

যদিও বর্তমানে যে প্রবনতা ইন্জিনিয়ারদের তাতে বাঁধ দেয়াটাই স্বাভাবিক তবে এটার সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাবের কথা বিবেচনা করলে হয়তো ৫০ বছরের মধ্যে বাঁধ দেয়ার প্রবনতাটা কমে যাবে কেননা এতে যে শুধু ভাটি অঞ্চলের ক্ষতি হয় তা না উজানেও এর প্রভাব পরে। আর এখন যেকোন বাঁধ তৈরি করতেই অনেক এক্সটেনসিভ এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট করতে হয় যেটা বেশ ব্যয়বহুল। তাই আশা করতে পারি চীন- ভারত গণহারে বাঁধ তৈরি করবে না। আর মডেলিংটা আমার কাছে চরম ধাপ্পাবাজির একটা জিনিস মনে হয় (যদিও আমাকে সেটা প্রায়ই করতে হয়), এটা অনেক সময়েই মডেলারের উপরে নির্ভর করে কত বছরের ইনপুট ডাটা দিতে হবে। ঠিকমত ক্যালিব্রেট করতে পারলে অনেক সময় কম ডাটা দিয়েও কাজ করা যায়। আমি তেমন বিশেষজ্ঞ না এ ব্যাপারে। জাহিদ স্যার (সচল জাহিদ) আরো ভালো বলতে পারবে।

পাগল মন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার লেখাটা একই সময়ে আরেকটা ব্লগেও দেখলাম। আমার মনে হয় একসাথে অন্য ব্লগে না দিয়ে শুধু সচলায়তনে দেয়াই ভালো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।