অপেক্ষা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২০/০৮/২০১০ - ৪:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আয়তাকার ঘরটি আকৃতিতে নেহাত ছোটখাট নয়,কিন্তু দিনমান একধরনের থম মেরে থাকা সুনসান নীরবতা সেখানে বিরাজ করে। বয়সের সাথে যুঝতে থাকা একজন লোক,শীর্ণপ্রায়, জীর্ণ হয়ে যাওয়া ফুটোঅলা সফেদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘরটাকে পাহারা দেন ,বা বলা ভাল আগলে রাখেন। সময় সময় তিনি ক্লায়কেশে পুরনো হয়ে যাওয়া তালা খোলেন;তাকে জেরবার হতে হয়, এই বুড়ো বয়সে রদ্দিকালের তালা খোলার ক্লিশে কাজ করতে হয় তাকে নিয়মিতভাবে-একটা নির্দিষ্ট সময়ে। সেই ঘরে তিনি বসে থাকেন মিটমিট করে জ্বলতে থাকা ফ্লুরোসেন্ট বাতিতে, তার মাথার ওপর খাপছাড়াভাবে ঘুরতে থাকে তার চেয়েও বুড়িয়ে যাওয়া কালচে পাখা।

তিনি একা ঘরে বসে থাকেন অতিপ্রাকৃত নৈঃশব্দের মাঝে, মাঝে মাঝে ছারপোকারা তাকে জানান দিয়ে যায় এই ঘরে তিনি আসলে একা নন, দেয়ালে ওত পেঁতে থাকা হলুদ গৃহগোধিকাও পৌনঃপুনিক টিকটিক শব্দ করে-বলে,"বাছা, রোসো, তোমার প্রতীক্ষার পালা খুব শীঘ্রই সাঙ্গ হবে"। কিন্তু আদপে তা ঘটেনা, বা ঘটার কোন নিকট সম্ভাবনাকেও সুদূরপরাহত মনে হয়। তারপরও তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন, কখনো সখনো ঝিমুতে থাকেন ,তারপর জের কেটে গেলে দেয়ালঘড়ির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকেন, তারপর আবার ঝিমান, কিন্তু প্রতীক্ষার পালা আর ফুরোয়না।মাঝে মাঝে বিমল মিত্রের তোবড়ানো সাহেব বিবি গোলামের ওপর লেপটে থাকা ধুলোর বহর সরানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালান, আবার আলগোছে পড়ে থাকা ক্যাবকো প্রকাশনীর গুটি গুটি হরফের সঞ্চয়িতা ঠিকঠাক সাজিয়ে রাখেন। এভাবে তিনি বসে থাকেন ক্লান্তিকর সব মূহুর্তের পসরা সাজিয়ে; বেমক্কা তিনি শরতবাবুত ঢাউস সাইজের উপন্যাসসমগ্রের ওপর অপত্য স্নেহে হাত বুলিয়ে দেন, অনুমান করা যায়- তখন তার তার পোড় খাওয়া ফুসফুস থেকে নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। পাশের দোকানে তখন জম্পেশ আড্ডা জমে, ছাই হয়ে যাওয়া অগুণিত বেনসন অ্যান্ড হেজেসের কোন কোনটির ধোঁয়ার কটু গন্ধ ব্যাপন প্রক্রিয়ায় তার নাকে এসে লাগে, হল্লামাস্তি করতে থাকা তরুণদের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বিষয়ক বচসা তিনি প্রায়ই শুনতে পান, শুনতে পান মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কোন এক ডানাকাটা পরীর রসালো ফিরিস্তি। এমনকি পড়ুয়াদের অ্যাসাইনমেন্ট- ল্যাবরিপোর্ট বিষয়ক দীর্ঘ আলাপচারিতাও তার কানে আসে, তিনি শুনতে চান বা না চান সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর। অনেককিছুরই মর্ম তিনি ঠিকঠাক ঠাহর করতে পারেননা ,তার লেখাজোখা না থাকা অভিজ্ঞতা ফেল মেরে যায় নির্বিবাদে এসব হালজমানার তরুণদের কাছে। তারপরও তিনি বসে থাকেন, আশা করেন, কোন এক ভুল সময়ে কেউ ক্যাচকেচে দরজাটি ঠেলে প্রবেশ করবে, বলবে- রহমান ভাই, একটা বই নেওয়া যাবে?

আহসানউল্লাহ হলের তিনতলার বর্ষীয়ান লাইব্রেরিয়ান এভাবে কোন এক শুভ মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন,অনন্ত কাল ধরে...

অদ্রোহ।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

বাহ্, আপনার লেখার হাত তো বেশ ভালো!
কয়েকখানা মন্তব্যে আগেই সেই ছাপ দেখেছি অবশ্য হাসি
লিখুন নিয়মিত...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

নিয়মিত লিখছি কিন্তু, আশা করি পড়ছেন। মন্তব্যে প্রানীতবোধ করলাম।

অদ্রোহ।

বইখাতা এর ছবি

ভালো লাগলো......বড় অনুচ্ছেদগুলো ছোটো ছোটো ভাগে ভাগ করে দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। পরামর্শ মাথায় রইল।

অদ্রোহ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে অদ্রোহ! বেশ লিখলেন তো!! নিরাসক্ত বাস্তবতার সুন্দর উপস্থাপন।
আরো লিখুন।

চলুক
---- মনজুর এলাহী ----

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে চেনা চেনা লাগছে হাসি

অদ্রোহ।

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বী, অধমের সাথে আপনার বর্ষার বইমেলায় পরিচয় হয়; সুত্রধর সুহান।

---- মনজুর এলাহী ----

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।