বিদ্যুত সমস্যা ও আগামীর বাংলাদেশ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২০/০৮/২০১০ - ৯:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিদ্যুতের বিভ্রাট এই মূহুর্তে বাংলাদেশের জনজীবনে সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারন। শিল্প মালিক থেকে শুরু করে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী নাগরিকটি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় আছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার দুই অংকের ঘর ছুতে পারছে না বিদ্যুত সংকটের জন্যে।প্রভাব ফেলছে মাথাপিছু গড় আয়ে। উন্নয়ন প্রক্রিয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত্র। আর সেজন্যে কষে গাল দিচ্ছি আমরা প্রতিদিন সরকারকে। সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে বিদ্যুত অফিস ভাংচুর সবই সাম্প্রতিক চিত্র। কিন্তু কি কারনে এই সমস্যা এত ভয়াবহ রুপ নিয়েছে সেটা নিয়ে অনেকেই না জেনে আগডুম বাগডুম যা মনে আসে তাই বলি। যেহেতু এই খাতের সাথে জড়িত আছি অনেক বছর সেহেতু এ নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। যদিও এটা পুরোপুরি টেকনিক্যাল বিষয় তবুও চেষ্টা করব যতটা সম্ভব সরল ভাষায় সমস্যার কারন ও এর প্রেক্ষিতে বর্তমানে কি সব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে অল্প কথায় বলার।
একটা গ্রাফ দিয়ে শুরু করা যাক,
বাংলাদেশে বিগত কযেক বছরের বিদ্যুত উত্পাদন
বছর------------------------------------২০০৬--২০০৭--২০০৮---২০০৯
দৈনিক গড় উত্পাদন (মেগাওয়াট) ৩১৬৫ ৩৩১০ ৩৫৭২ ৪১৬৯
দৈনিক গড় লোড শেডিং (মেগাওয়াট) ৬০৩ ৫৫৪ ৫৩৯ ৪০৬
সবোর্চ্চ উত্পাদন (মেগাওয়াট) ------৩৭১৫ ৪১৩০ ৪০৩৭ ৪২৯৬

গ্রাফটা দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন বিদ্যুতের উত্পাদন বেশ বেড়েছে। সেটা ২০০৬ সালের তুলনায় হাজার মেগাওয়াট বেশী। গ্রাফটায় এটা ও পরিস্কার যে লোডশেডিং এর পরিমান এ সময়ের মধ্যে কমেছে। কিন্তু তারপরও কেন এত বিভ্রাট। তাহলে আরেকটা গ্রাফ আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে হয়।
দেশের বর্তমান বিদ্যুত উত্পাদন পরিস্থিতি
বর্তমান উত্পাদন ক্ষমতা (অবচয়িত) ৫১৬৬ মেগাওয়াট
বর্তমান চাহিদা ৪২০০-৫৫০০ মেগাওয়াট
বর্তমানে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উত্পাদন ৪২৯৬ মেগাওয়াট (১৮ সেপ্টেম্বর, ০৯)
বর্তমানে উত্পাদন প্রাপ্যতা ৩৮০০-৪২০০ মেগাওয়াট
সবোর্চ্চ গড় লোডশেডিং ৮৭২ মেগাওয়াট

আশা করি আপনাদের কাছে খুব পরিষ্কার কেন লোডশেডিংটা বেশী হচ্ছে। তারপরও যাদের কাছে বিষয়টা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি তাদের জন্যে বাকিটুকু।
আসুন প্রথমে একটা হিসেব করে নিই। এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উত্পাদনে খরচ পরে ১০ কোটি টাকা। অতএব বাংলাদেশ সরকার যদি তার গড় উত্পাদন বর্তমান সংকট মোকবেলা ও ক্রমবর্ধমান ভবিষৎ চাহিদা চিন্তা করে বাড়াতে চায় তাহলে আগামী পাচ বছরে প্রায় ৯০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উত্পাদনের প্রয়োজন হবে । এখন হিসাবটা দেখুন, এই পরিমান বিদ্যুত উত্পাদন করতে সরকারকে আগামী পাচ বছরে ৯০০০x১০কোটি= ৯০ হাজার কোটি টাকার যোগান দিতে হবে। বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ২.৫৭ বিলিয়ন ডলার। কোত্থেকে আসবে টাকাটা? সমস্যা গেল একটা।
সমস্যা নাম্বার দুই। ধরা যাক টাকা যোগাড় হলো। এবার তবে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর জ্বালানি কি হবে? গ্যাস? সেতো প্রায় ফুরিয়ে গেছে। তবে? ডিজেল? ফার্নেস ওয়েল? কয়লা? কোনটা? হাজার ইউনিট গ্যাস ১২০টাকা দরে ধরলেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উত্পাদন খরচ পরে ২.৩৫ টাকা। সাথে ১৫% ভ্যাট, ইনকামটেক্স এবং মিনিমাম ১০% প্রফিট যোগ করলে গ্যাসে উত্পাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মুল্য দাড়ায় ৩.১৩ টাকা। কিন্তু গ্যাস পাবেন কোথায়? সার, বিদ্যুত, সিএনজি, কলকারখানা চালানো, রান্নাবান্না ইত্যাদি করে করে মাটির নিচে যে মজুদ ছিল তাতে তো টান পড়েছে। তাহলে উপায়? হাই স্পীড ডিজেল বা ফার্নেস ওয়েলের ব্যবহার? যদি এইচএসডি বা এফ ওয়েল দিয়ে বিদ্যুত উত্পাদন করি তবে উত্পাদন মুল্য দাড়ায় যথাক্রমে ১৩ টাকা এবং ৭.৬৫ টাকা। এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো বিদ্যুতের জন্যে এত উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা রাজি আছে কিনা? ( তবে বড় বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যুত মুল্য কিছুটা কমবে।) আর কয়লা? একটা কয়লা বেইজড বিদ্যুত কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল স্থাপন করতে বেশী সময় লাগে। যে কারনে ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না বা প্রকল্প চালু হতে দেরী হওয়ায় ঋণের কিস্তি নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। তবে এর এফিসিয়েন্সি বেশী, দামও মাত্র ১.২৫ টাকা প্রতি ইউনিট পড়তে পারে।
সমস্যা নাম্বার তিন। উত্পাদন সময়কাল। ধরে নিলাম বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের খরচ বা বিদ্যুত মুল্য কোন ব্যাপার না। আমার বিদ্যুত চাই। তাহলেও কি যটপট বিদ্যুত উত্পাদন করে সাপ্লাই দেয়া সম্ভব? মোটেই না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ রকম একটা প্রকল্পের প্রোফাইল তৈরী হতে কমপক্ষে সময় লাগে তিনমাস। তারপর সেটা অনুমোদন হলে মন্ত্রীসভায় পাস হয়ে একনেক ঘুরে টেন্ডার পর্যন্ত যেতে খুব কম করে হলেও সময় লাগে ছমাস। তারপর টেন্ডার প্রক্রিয়া, গেল আরো দুমাস। ঠিকাদার নিয়োগ শেষে আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি আমদানি, খালাস, বহন, ইনস্টলেইশন ইত্যাদিতে গেল আরো ছমাস ( যদি বিদ্যুত প্রজেক্টটা ২০ মেগাওয়াট থেকে ১০০ মেগাওয়াটের মধ্যে হয়। কিন্তু যদি এর বেশী হয় ধরা যাক ১৫০ মেগাওয়াটের প্রজেক্ট হলে সময় লাগতে পারে ১২ মাস, ২০০ মেগাওয়াটের উপর প্রজেক্ট হলে সময় লাগবে ১৫ মাস, এর বড় প্রজেক্ট হলে সেটা ২৪ মাস থেকে ৪২ মাস পর্যন্ত)। কয়লা ভিত্তিক হলে যে সাইজের প্রজেক্টই হোক কম করে হলেও সময় লাগবে তিন বছর।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা যদি দ্রুত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উত্পাদন করতে চাই তাহলে প্রায় হাজার কোটি টাকা (১০০ মেগাওয়াট একসাথে ইন্সটলেইশনে গেলে সেটায় মোটামুটি ২০% কষ্ট রিকভারি চলে আসবে, প্রাইমারি ক্যালকুলেশন), প্রতি ইউনিটের মুল্য পরতে পারে ৭.৬৫ থেকে ১৩ টাকা, সময় লাগবে প্রায় ১৮ মাস। এখন সরকার যখন এরকম একটা প্রজেক্ট করতে যায় তখন তাকে অর্থসংস্থানের চিন্তা যেমন করতে হয় তেমনি আমরা কম মূল্যে বিদ্যুত চাই যে কারনে নাগরিক অসন্তোষ এড়াতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে। এখন কথা হল এগুলোর জন্যে নাগরিক প্রস্তুতি আমাদের আছে?
আসুন এবার দেখি, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরের কন্ডিশনটা কি?
২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুত খাত পুরাপুরি স্থবির ছিল। এসময়ের মধ্যে (২০০৪ সালে) সরকারি ৮০ মেগাওয়াট ইন্সটলেইশন হয়েছে তাও পিকিং পাওয়ার ষ্টেশন( সিদ্ধিরগঞ্জ)। তাও এটার টেন্ডার করে গিয়েছিল পূর্বতন আওয়ামী সরকার। তবে এসময়ের মধ্যে বেসরকারি ক্যাপটিভ খাতে বিদ্যুত আসে প্রায় হাজার মেগাওয়াট।(সরকারি উদ্যোগ না থাকায় বেসরকারি শিল্পমালিকেরা নিজেদের উত্পাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে তাহলে প্রশ্ন আসে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে বিএনপি সরকারের ২জন প্রতিমন্ত্রী কি ঘাস কাটছিলেন? ব্যাপারটা এরকমই দাড়ায়। টুকু প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মেঘনা ঘাট-২ এর ৪৫০+ মেগাওয়াট প্রকল্পের জন্যে টেন্ডার ডাকা হয় দুইবার। প্রথমবার তিনটি কোম্পানী, ২য়বার দুইটি কোম্পানী এতে সাড়া দেয়, পরে বিশ্ব ব্যাংকের আপত্তির মুখে বাতিল হয়ে যায়। সিরাজগঞ্জ ৪৯৫+ মেগাওয়াট প্রকল্পের জন্যে ডাকা টেন্ডারের একই গতি হয়। তবে কাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল। ট্রান্সমিশন লাইন হয়েছিল ৩০০ কিলোমিটার, ডিষ্ট্রিবিউশন লাইন হয়েছিল ৭৮,০৮৪ কিলোমিটার, ১৩,১২৮টি গ্রাম বিদ্যুতায়ন হয়েছিল। (তাতে হাওয়া ভবনের বিশাল খাম্বা বানিজ্য হয়।) এতে সামগ্রিক বিদ্যুত চাহিদাও বেড়ে যায়। আনোয়ারুল কবির তালুকদার সাহেব বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর বিদ্যুত মন্ত্রনালয় প্রায় স্থবির হয়ে পরে। হাওয়া ভবনের পছন্দমত ঠিকাদারদের কাজ দিতে অস্বীকার করেন তিনি। এই বিরোধের ফলশ্রুতিতে তিনি পদত্যাগ করেন বিএনপি থেকে এবং বি. চৌধুরী নতুন দল গঠন করলে তাতে যোগ দেন।
পাওয়ার জেনারেশনের এই যে স্থবিরতা সেটা কাটে মুলত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে বিদ্যুত সংকট তীব্র হয়ে উঠলে বিদ্যুত মন্ত্রনালয় কয়েক দফায় প্রায় ১৬০০ মেগাওয়াটের ভাড়া ভিত্তিক ও পিকিং পাওয়ার স্টেশন ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের টেন্ডার আহ্বান করে। (এখানে বলা দরকার পিকিং পাওয়ার ষ্টেশন কিন্তু চালানো হয় পিক আওয়ারের ডিমান্ড চেজ করতে। দিনে ১২ ঘন্টার মতো এসব ষ্টেশন চালানো হয়।) কম দামে বিদ্যুত উত্পাদনের যে ট্যাবু জেনারেশন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করছিল সেটা প্রায় ১০ টাকা মুল্যে বিদ্যুত কিনে তারা ভেঙে দেয়।
তত্বাবধায়ক সরকারের অনুমোদন করে যাওয়া এসব কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক (৭২৭.৫ মেগাওয়াট) চালু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। কিন্তু সাত বছরে চাহিদা বেড়েছে তা্রও অনেক বেশী। প্রতিদিন শিল্পাঞ্চলে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প। গ্যাসের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় গ্যাস নির্ভর কেন্দ্রগুলোর উত্পাদন কমেছে। পুরোনো কেন্দ্রগুলো সময়োর্ত্তীণ হয়ে যাওয়া কমে গেছে সেগুলোর এফিসিয়েন্সি। ফলে উত্পাদন, চাহিদা আর যোগানের যে ফাঁক সেটা ক্রমাগতই বাড়ছে। আর এই পরিস্থিতিতে এই সরকার একটা দুঃসাহসিক পরিকল্পনা নিয়েছে সংকট উত্তরনের জন্যে। উত্পাদন প্রক্রিয়ার সময় কমাতে পরিকল্পনা প্রনয়ন অনুমোদনের সময়সীমা ১২ মাস থেকে চারমাসে নামিয়ে আনতে চাইছে তারা। আর সেটা করতে গিয়ে সরকার আনসলিসিটেট পাওয়ার প্রজেক্টগুলাকে বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতার উপর অনুমোদন দিয়ে দিতে চাইছে। এতে বর্তমান সরকারপ্রধানকে ভবিষ্যতে দুনীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুকি তৈরী হচ্ছে। কিন্তু এই ঝুকির ব্যাপারটা আমলে নিতে চাইছেন না তিনি। সম্ভাব্য সংকট সমাধানের লক্ষ্যে লন্ডনে যে রোড শো সরকার করেছে তাতে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় এবং সরকারী দীর্ঘসুত্রের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেছেন প্রজেক্টের সমুদয় বিনিয়োগ তারা করবেন সেটা ঠিক আছে, একটা মেয়াদের জন্যে সে কারনে প্রজেক্ট পরিচালানা তারা করবেন(বিল্ড ওউন, অপারেট এন্ড ট্রান্সফার বেসিসে)। কম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের বক্তব্যও একই। প্রশ্ন আসতে পারে কেন সরকার আনসলিসিটেট পাওয়ার প্রজেক্ট নিয়ে ভাবছে? এর পেছনে কারনগুলো হলঃ
১। প্রজেক্টের পুরো বিনিয়োগ যোগাড় করবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী,
২। বিনিয়োগকারীদের জন্যে প্রকল্প পরিচালনার মেয়াদ হবে ১৫ থেকে ২০ বছর।
৩। তুলানামুলক বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন, কমদর প্রদানকারীকে বাচাইয়ের সুযোগ,
৩। তাদের নিয়ন্ত্রনে মেশিন থাকায় সম্ভাব্য ঘোষিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন,
৪। ইউনিট প্রতি মুল্য নির্ধারনে মুলামুলির সুযোগ,
৫। মুল্য পরিশোধে সরকারের শর্ত আরোপের সুযোগ ইত্যাদি।
আর এই ভাবনা সামনে রেখে সরকার বিনিয়োগকারী, বিশ্বব্যাংক ও দাতাগোষ্টি এবং সনিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের যোগানের চিন্তা করে তার নিম্নরুপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
বছর সরকারী খাত বেসরকারী খাত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী মোট
২০০৯-২০১০ ৪৮০মে.ওয়াট ২৭২ মে.ওয়াট ৫৩০ মে.ওয়াট রেন্টাল ১৭৮২ মে.ওয়াট
২০১১-২০১২ ৯০০ মে.ওয়াট ৪৫০ মে.ওয়াট ৮২০ মে.ওয়াট পিকিং ২১৭০ মে.ওয়াট
২০১৩-২০১৪ ৯০০ মে.ওয়াট ৪৫০ মে.ওয়াট ২৬ মে.ওয়াট কয়লা ভিত্তিক ৪০৪৫ মে.ওয়াট
মোট ৭৯৯৭ মে.ওয়াট

যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার তাহলে ২০১৫ সাল নাগাদ সামগ্রিক বিদ্যুত উত্পাদন দাড়াবে ১২০০০ মেগাওয়াট প্রায়। তারপরেও আমাদের হিসেবে নগরায়ন এবং শিল্পায়নের বতর্মান ধারা অব্যাহত থাকলে মোট ঘাটতি থাকবে প্রায় হাজার মেগাওয়াট। আমরা দেখেছি পাবনার রুপপুরে হাজার মেগাওয়াটের পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফেলেছে সরকার। ২০১৫ সাল নাগাদ সেটাও উত্পাদনে চলে এলে সাময়িক সময়ের জন্যে তখন আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাব। লোডশেডিং থেকে নাগরিকেরা পাবেন মুক্তি।
তথ্যসুত্রঃ বিদ্যুত বিভাগের বিভিন্ন প্রকাশনা।


মন্তব্য

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্য।

দুটি ওয়েবসাইটে খুব সহজে গ্রাফ/চার্ট তৈরী করে ইমেজ শেয়ার করতে পারেন।
http://www.barchart.be/xychart.jsp
http://nces.ed.gov/nceskids/createAgraph/default.aspx

হিমু এর ছবি

আপনার পরিচয় জানতে পারলে ভালো লাগতো। নাম বলতে না চাইলে জানাতে পারেন আপনি কোন পেশায় আছেন [প্রকৌশলী, সাংবাদিক, আমলা, পরামর্শক ইত্যাদি]।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার তথ্যসূত্রে আমার আস্থা নাই। আপনি নিশ্চয় অধ্যাপক ড. এস এম লুত্ফুল কবীরের সাক্ষাত্কার পড়েছিলেন। স্বল্পমেয়াদি সমাধান ছিল, কিন্তু করার মত লোক ঠিক জায়গায় নাই।

দিগন্ত এর ছবি

আমি অন্য একটা ব্লগে বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যা নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে তাই লেখাটা পেস্ট করছি।
---------------------------------------------------------------------------
শুনলাম বাংলাদেশে বিদ্যুত ঘাটতি ২০০০ মেগাওয়াটের মত। মানে, আরো ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিদ্যুত সমস্যা মেটানো যাবে। কিন্তু সত্যি কি তাই? এই বক্তব্যের মধ্যে একটা বড় ফাঁক আছে। কি রকম? ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা যায় বাংলাদেশে মাত্র ৪০% বাড়িতে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। বাকি ৬০% এর হিসাব কি করা হয় বিদ্যুত ঘাটতি হিসাবের সময়? করা হয় না। অর্থাৎ, আগামী ১০ বছর ধরে পরিকল্পনা করে বিদ্যুত আমদানী করে ও উৎপাদন বাড়িয়েও বিদ্যুত ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না, যদি বিদ্যুতের কানেকটিভিটি বাড়ানো হতে থাকে। ১০% বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়ে যদি আরো ১০% বাড়িতে বিদ্যুতের কানেকশন দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে যায়।

এই বিদ্যুত ঘাটতিতে জনগণের যখন নাভিশ্বাস ওঠে, তখন তারা আঙুল তোলে সরকারের দিকে। কিন্তু সরকারের করণীয় কি? প্রথমত, যদি হিসাব অনুযায়ী ধরে নিই দেশের ৬০% লোকের কাছে বিদ্যুত পৌঁছয় নি, তাহলে একই কারণে ধরে নেওয়া যায়, ৬০% মানুষের কাছে বিদ্যুত ঘাটতি ভোটের কোনো ইস্যু নয়। কিন্তু নতুন জায়গায় বিদ্যুতের লাইন পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে পারলে নতুন ভোটব্যাঙ্ক পাওয়া সম্ভব। কারণ যারা একেবারেই বিদ্যুত-বঞ্চিত, তারা দিনে পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুত পেলেও বেজায় খুশী হবেন। তাই সরকারের লক্ষ্যই হবে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কানেক্টিভিটিও বাড়িয়ে ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখা। অর্থাৎ, উৎপাদন বাড়লেও চাহিদাও বাড়বে, মানে ঘাটতিও অপরিবর্তিত থাকবে। এর সাথে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাৎসরিক দেড় শতাংশ নতুন জনগণ যোগ করেন তো অবস্থা খারাপ ছাড়া আর ভাল হবে না। আর শহুরে জনগণ এসিতে অভ্যস্ত হচ্ছে – তাদের মাথাপিছু বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান।

আরেকটা ব্যাপার বলতে ভুলে গিয়েছিলাম – সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বাংলাদেশে শিল্পায়নের হার অত্যন্ত কম। একমাত্র সফল শিল্প টেক্সটাইল ও গারমেন্টস দেশের রপ্তানী আয়ের ৭৫% এনে থাকে। ঘটনাচক্রে, এই শিল্পেও যথেষ্ট বিদ্যুত (অথবা সরাসরি গ্যাস) লাগে। বাংলাদেশের কোনো সরকারের পক্ষেই শিল্পকে বঞ্চিত করে বিদ্যুত ডোমেস্টিক সাপ্লাই লাইনে দেবার সাহস থাকবে না – কারণ লক্ষ লক্ষ লোকের জীবিকা এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে। অর্থাৎ, সময় গেলে, টেক্সটাইল ও গারমেন্টস শিল্প বাড়াতে গেলে আরো বিদ্যুত চাই। বিদ্যুত চাই পরিবহনেও। বাংলাদেশে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে মেট্রো রেল চালু করা দরকার। কাছাকাছি কয়েকটা শহর গড়ে তুলে তাদের মধ্যে বৈদ্যুতিক রেল যোগাযোগ দরকার। অর্থাৎ বিদ্যুত চাই। একইভাবে, কৃষিতে সেচের জলের জন্যও বিদ্যুত দরকার। তাহলে, বিদ্যুত উৎপাদন বাড়লে গৃহস্থালীর বিদ্যুত ঘাটতির উন্নতি নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত বা পাকিস্তানে মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদনের হার বাংলাদেশের প্রায় তিনগুণ – তাও সেখানেও গৃহস্থালীর কারেন্ট না থাকার সমস্যা যথেষ্টই আছে।

এবারে নজর ঘোরানো যাক উৎপাদনের দিকে। বাংলাদেশের ৮০% বিদ্যুত আসে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে – অর্থাৎ তাপবিদ্যুত। প্রমাণিত মজুদ অনুযায়ী চললে ২০১৫ সালের পরে গ্যাস উৎপাদন কমবে। সরকার বড়জোর উৎপাদন আরো কিছুবছর ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন, সমুদ্র-বক্ষে গ্যাস অনুসন্ধান করে। যদি অনেক গ্যাস পাওয়া যায় তো ঠিক আছে, না পাওয়া গেলে, বা গ্যাস বিদেশে রপ্তানী করে দিতে হলে? আবার সেই একই গ্যাসে গাড়িও চলে, ফার্টিলাইজারও তৈরী হয়। গ্যাসের ওপর দাবীও কম মানুষের নেই। কার্যত, গ্যাসই হল বাংলাদেশের একমাত্র বিদ্যুতের উৎস, যা দিনে দিনে ফুরিয়ে আসছে।

সব মিলিয়ে আদর্শ টাইম বোমা। মানুষ বাড়ছে, বিদ্যুত চাহিদা বাড়ছে। অথচ বিদ্যুতের উৎপাদনের মূল উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে আসছে। সমস্যা জটিল। টেকনলজির কোনো অভূতপূর্ব উন্নতি না হলে কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশকে বিদ্যুত অথবা গ্যাস আমদানী করতে হবে। আর বিদ্যুত আমদানী যদি ভারত থেকে করা হয় তাহলেই রাজনীতি জটিল হবে। একটা পথ হল ভারত/নেপাল/ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানী করা। সেক্ষেত্রে টিপাইমুখের মত জলবিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তিগুলো গুরুত্ব হারাবে। আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাধাও কম আসবে না। আরেকটা হল, মায়ানমার থেকে গ্যাস আমদানী করা। কিন্তু মায়ানমার থেকে গ্যাস কিনতে গেলে একরকম চিনের (বা পরে ভারতের) সাথে সরাসরি বিডের লড়াইতে নামতে হবে। অর্থাৎ সে আশাও কম। মায়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত গ্যাস পাইপলাইন হলেও গ্যাসের মূল ক্রেতা হবে ভারত। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি পেরিয়ে এই পাইপলাইন বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।

আর বাকি থাকে অপ্রচলিত বা নবায়ণযোগ্য শক্তি। একমাত্র এই সম্ভাবনাই এখনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে। সৌর-প্রযুক্তি বা বায়ুশক্তি কাজে লাগানোর যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করতে হবে। ইন্টারনেট ঘাঁটলে পাই যে যে কোনো নতুন শক্তির উৎস থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করে তা থেকে চাহিদা মেটানোর মত অবস্থায় যেতে অন্তত ৫-৮ বছর সময় লাগে। অর্থাৎ, আজ একটা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের পরিকল্পনা করলে যথেষ্ট নিউক্লিয়ার বিদ্যুত পেতে ২০১৮ সাল লেগে যাবে। নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট বসানোর ঝক্কিও কম নয়। প্ল্যান্টের আশেপাশের অঞ্চলের লোকজন আপত্তি তুলবে। তাও বিকল্প হিসাবে এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়। তাই তাড়াতাড়ির মধ্যে এটাই ভাল সমাধান বলে মনে হয়। আর সেই সাথেই শুরু হয়ে যাক সোলার, উইন্ড, বায়োম্যাস আর টাইডাল পাওয়ার নিয়ে পাইলট প্রোজেক্ট। এগুলো থেকে যথেষ্ট বিদ্যুত পেতে ১০-১২ বছর অপেক্ষা করতে হবে। যখন গ্যাস উৎপাদন কমে আসবে, তখন এগুলো ধীরে ধীরে তার স্থান দখল করে নেবে। তবে সেই সাথে বিদ্যুত আর গ্যাস আমদানীর চেষ্টাও রাখতে হবে।

সবে মিলে আগামী দশ-পনেরো বছরের মধ্যে আমি অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হতে পারে। তবে রাতারাতি উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই আমার মনে হয়। সরকারকে গালি দিলে সরকার বলবে আগের সরকারে দোষ, আগের সরকার বলবে তার আগের সরকারের দোষ। কার্যত দোষ কারো নয়। বাংলাদেশে যা রিসোর্স আছে, তা দিয়ে ১০০% লোকের কাছে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব নয় – প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থায় তো নয়ই। সব সমস্যা রাজনৈতিক নয়, তাই সব সমাধানও রাজনৈতিক ভাবে আসা সম্ভব নয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।