পুরোনো কাসুন্দী। কিন্তু স্বাদটা একটু অন্য। আগে অন্যদের খাওয়া শুনে স্বাদ নিয়েছি আর এবার, এবার নিজে খেয়ে স্বাদ নেওয়া এই যা। কর্পোরেট জগত। এক অদ্ভূত জায়গা। এখানে কাজের চেয়ে সাজ বেশি, মেধার চেয়ে সৌন্দর্যের কদর বেশি(৯০% ক্ষেত্রেই সত্য, মেধা+সৌন্দর্যের কদর আছে, শুধু মেধার কদর বলতে গেলে নেই)। আজ আমার প্রথম দিন। কেমন যেন আলস্য ভরা। সকালের কাঁচা ঘুমটা এখনো চোখের কোণে জানান দিচ্ছে “আমি রেডি, খালি একটু ফাঁক পেলেই হয়।” “এখন সময়টা আরো বেশি কঠিন। আপনাদেরকে নিজের যোগ্যতা দিয়ে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে হবে। যারা পারবেন তারা টিকে থাকবেন, যারা পারবেন না তারা দিন শেষে ঝরে পড়বেন।” ঘুমজড়িত চোখ দুটো আরো ছোট হয়ে গেল। ঘুম কাটানোর তাগিদে ঘাড়টাকে একটু এদিক সেদিক করলাম। আমার সাথে একই কাতারে ১০ জনের মত। সামনে এবং পিছনে আরও জনা ত্রিশেক। দেখতে সবাই একই রকম, অন্তত বাইরে থেকে। কাকেদের মাঝে আমিই এক কোকিল। নিচে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠে, সবাই ফরমাল প্যান্ট আর আমি জিন্স। “আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে, নো ম্যাটার হু ইউ আর।” মা-বাবার পীড়াপীড়িতে আসা, না হলে কে যায় চাকরি করতে। একটা মানুষের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত টাকা দরকার মাসে?১০ হাজার, ১২ হাজার? তিন বেলা খাওয়া, একবার গোসল, একবার বড়টা, ৬ বার ছোটটা আর ৮ ঘন্টা ঘুমাবার একটা জায়গা। বাকী সময় রাস্তায় অথবা লাইব্রেরিতে। কতইবা লাগতে পারে? সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত মানুষ চিন্তায় ছেদ ঘটালো। কোথায় যেন দেখেছি মনে হয়। কিন্তু কোথায় মনে করতে পারছি না। মাস্টার্সের ক্লাসে? নাকি ঢাবিতে?মনে করতে পারছি না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই গভীর মনোযোগে কথা শুনছে। আমি আবার লোকটার দিকে তাকালাম। কোথায় দেখেছি, কোথায়? মনে পড়েছে। আরে এতো… আগেও দেখেছি সুটেড বুটেড অবস্থায়, তখন অবশ্য ভদ্রলোক কোচিং এর টিচার ছিলেন। ভদ্রলোক মনে হয় না আমাকে চিনতে পেরেছেন। মনোযোগী হই কথা শোনায়। কিছুক্ষণ শোনার পর হাসি এসে গেল। ধরে রাখতে পারলাম না, হেসেই দিলাম। “হেই ইউ স্ট্যান্ড আপ। হোয়াই আর ইউ লাফিং?? এম আই টেলিং আ জোক ওভার হেয়ার?” আমি দাঁড়ালাম। রুমের সবগুলো চোখ এখন আমার দিকে। একটু পর সেটা মুখ থেকে নেমে নিচে জিন্সের দিকে গেল। ভদ্রলোকও তাকালেন। “হোয়াই আর ইউ ওয়েরিং আ জিন্স?এটা একটা প্রতিষ্ঠান, এখানে থাকতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট ড্রেস কোড মেনে চলতে হবে।” আমার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমুনি আসছে। আমি হেসে বললাম, “রাশেদ ভাই, ভালো আছেন?” ভদ্রলোক একটু হকচকিয়ে গেলেন। “ডু আই নো ইউ?যাই হোক আমাকে চিনলেও কিছু যায় আসে না, আমাকে চেনা আপনার জিন্স পরিধানের জন্য কোন এক্সকিউজ হতে পারে না।” আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম," কুসুমের সাথে স্টোররুমে ধরা খাবার সময়ও তো আপনাকে অফিসিয়াল ড্রেসে দেখেছিলাম, না?" ……………………………………………. সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল, বের হয়ে দেখি গুঁড়িগুঁড়ি ঝরছে। পাশের মোড়ের ছাদখোলা ওভারব্রিজের ঠিক মাঝে গিয়ে দাঁড়ালাম। আজ বৃষ্টি দেখবো, বৃষ্টি শেষে আকাশ দেখবো, ‘মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ’। পলাশ রঞ্জন সান্যাল
মন্তব্য
চমৎকার গল্প
ধন্যবাদ, লীলেনদা।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
ভালো হইসে ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ধন্যবাদ, অনিন্দ্যদা।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
গল্পের শেষ নিয়ে কয়েকটা কথা আছে, যেগুলা এখানে লিখে কীবোর্ডের কালি খরচ করার দরকার নাই। সামনাসামনি যা বলছিলাম তাই মনে রাইখো; তবে শেষপর্যন্ত এইটা কিন্তু তোমার-ই লেখা।
'উদ্যম ভালো লেগেছে, তাই ৫ তারা'
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
দেখা হইলে বিস্তারিত বইলেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
বিষয়বস্তু ভালো, বয়ানে আরেকটু তীক্ষ্ণতা আনা গেলে আঘাতটা জোরাল হইত। লিখতে থাকো।
ওটাই চেষ্টা করছি। আমি নিজেও জানি আমার ভাষা খুবই দুর্বল। সেটা উন্নয়নের চেষ্টায় আছি।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
খুব ভালো।
বানান
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
চেষ্টা করছি আরো ভালো করবার।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন