বাবরি-মসজিদ না রাম-মন্দির??

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০১/১০/২০১০ - ১:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভারতীয় মহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম একটা কারণ হল এই বাবরি মসজিদ অথবা রাম মন্দির।এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ফাইজাবাদ শহরের অতি প্রাচীণ শহর অযোধ্যার রামকোট পাহাড়ের ধারে অবস্থিত।মুসলমানদের দাবী এটা তাদের জায়গা।অন্যদিকে হিন্দুদের দাবি এটা তাদের অবতার রামের পূণ্যজন্মস্থান।তাই এই জায়গার একমাত্র দাবিদার তারাই।

এবার একটু ইতিহাসের দিকে চোখ বুলানো যাক।আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই মুঘল-সম্রাট বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে এইস্থানের মন্দির ভেঙ্গে একটা মসজিদ নির্মাণ করেন।১৯৪০ এর আগে এই মসজিদের নাম ছিলো ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান’।অর্থাৎ মসজিদের নামটিও রামের জন্মভূমির সাক্ষী হয়ে ছিলো।

হিন্দুদের দাবি অনুসারে, বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে আফগান থেকে এসে চিত্তরগড় এর রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংকে পরাজিত করে এবং অযোধ্যার পবিত্রভূমিতে মন্দির ভেঙ্গে এই মসজিদ নির্মাণ করান।১৯৯২ সালে যখন হিন্দুমৌলবাদীরা মসজিদটিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে তখন বেশ কিছু পাথরের শিলালিপি পাওয়া যায় যাতে ‘দেবনাগরি লিপি’ তে লেখা সংস্কৃত শ্লোক পাওয়া যায়।

জৈনদের দাবি অনুসারে, অষ্টাদশ শতাব্দিতে জৈন সন্ন্যাসীরা এখানে এই মন্দির স্থাপন করেন।তাদের মতে ষোড়শ শতাব্দিতে এখানে মূলত জ়ৈন এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ছিলো।

এইস্থানের দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবারই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।এখানে একই স্থাপনায় হিন্দু-মুসলমানেরা একইসাথে নিজনিজ প্রার্থণা করতো।কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত ঘটে ১৮৫৩ তে যখন নির্মোহী সঙ্ঘ এর একছত্র মালিকানা দাবি করে বসে।কিন্তু ১৮৫৭ এর সীপাহি বিপ্লবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্মনেয় আর মুসলমানেরা মসজিদ প্রাঙ্গনে হিন্দুদের প্রবেশে বাধা দেয়।

১৯৪৯ এর এক রাতে হিন্দুরা মসজিদের ভেতরে রাম-সীতার মূর্তি শাপন করে।আদালত নির্দেশ দেয় এই মূর্তি সরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয় নি।১৯৮৫ তে হিন্দুমৌলবাদীরা এর দখল নিতে চাইলে রাজীব গান্ধী প্রশাসনের দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এরশাদের সরকার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার গুজব রটিয়ে দাঙ্গার সূচনা করে।ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে নিরীহ অসহায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় এরশাদের পোষা গুণ্ডা আর মৌলবাদীরা।এর চাক্ষুষ সাক্ষী আমি নিজেও।ওই বয়সেই আমাকে দেখতে হয় আগুনের লেলিহান শিখা। লোকজন গোপীবাগে আমাদের বাসার পিছনের ঋষিপাড়ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।পরিবারে সবাইকে প্রাণ বাঁচিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।

১৯৯২ তে তারা আর ব্যর্থ হয় না।তারা আক্রমোন করে এই মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়।এর ফলস্বরূপ ভারতব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ লোক প্রাণ হারায়।এদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি।এই দাঙ্গার হুজুগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় মৌলবাদী মুসলমানেরা।

ভারত সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ এক তদন্ত কমিশন(Liberhan Commission) গঠন করে।কমিশন দীর্ঘ ১৬ বছর পরে ৩০ জুন,২০০৯ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর নিকট দাখিল করে।এই রিপোর্টে কয়েকজন হিন্দু সাংসদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়।এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী কল্যান সিং,সাবেক প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানী আর মুরলূ জোশীর মত High Profile নেতাদের নামও ছিল।
http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/f/f1/Babri_Masjid6.jpg
অনেক দিন ধরেই এই স্থাপনার দাবিদার নির্ধারণ নিয়ে আদালতে মামলা ঝুলছিলো।আজ বহুপ্রতিক্ষীত মামলার রায় ঘোষণা করেন এলাহাবাদ উচ্চাদালত।তারা এই রায়ের সঠিকতা নিশ্চত করার জন্য নৃতত্ত্ব বশারদের সাহায্য নেন।ভারতীয় নৃতত্ত্ব বিশারদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এই জায়গাটায় আসলে বহুপ্রাচীণ মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ।তাই তারা এই বলে ঘোষণা দেন যে আসলে ঐজায়গাটির প্রকৃত দাবিদার হিন্দুরাই।তবে শান্তি বজায় রাখার জন্য এই জায়গাটিকে তিন অংশে বিভক্ত করে এক-তৃতীয়াংশ মুসলমানদের, এক-তৃতীয়াংশ নির্মোহী সঙ্ঘ এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদেরকে দিতে বলেন।

রায়ে হয়তো সত্যেরই জয় হয়েছে।কিন্তু শান্তির উদ্দেশ্যে যে ভাগাভাগি তা হয়তো কোন নতুন অশান্তির সূচনা ঘটাতে পারে।ভারতে অনেক মন্দির-মসজিদ আছে।তাই যদি এই জায়গাটা মন্দির কিনবা মসজিদে না দিয়ে এখানে কোন হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হোত তবে বেশি ভালো হতে বলেই আমি মনে করি।

তথ্যসূত্রঃ http://en.wikipedia.org/
http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/2528025.stm
http://expressbuzz.com/
-দেবাশিস মুখার্জি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

উত্তম প্রস্তাব রেখেছেন। সরকার বিবেচনা করতে পারেন। সাধারন মানুষের প্রতিক্রিয়া কি এখন সেটাই দেখার বিষয়।

রাতঃস্মরণীয়

অতিথি লেখক এর ছবি

@অ্যাডমিন, লেখাটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে।কিন্তু সংশোধন করবো কীভাবে??
মুরলূ>>মুরলী
বশারদের>>বিশারদদের
জায়গাটায়>>জায়গাটা
-দেবাশিস মুখার্জি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অতিথি লেখক একাউন্ট থেকে এডিট করে "সংরক্ষণ" করুন। তাহলেই মনে হয় মডারেটররা সংশোধিত লেখাটি পেয়ে যাবেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

করা যায় না।

দেবাশিস মুখার্জি

কৌস্তুভ এর ছবি

আমার মনে হয়েছিল জায়গাটা কোনো ধর্মের লোকেদেরই না দিয়ে বরং যেমন আছে তেমনভাবেই আর্কিয়োলজিকাল সোসাইটি (ASI) এর হাতে তুলে দিতে পারত। তারা যেমন আর পাঁচটা প্রাচীন স্থাপত্য কি ধ্বংসস্তূপ সংরক্ষণ করে সেভাবেই এটার দেখভাল করত।

রায়ের উদ্ধৃত অংশ যেটুকু পড়েছি, বিচারকেরা ঈশ্বর, ভগবান ইত্যাদি বেশ উচ্ছ্বসিত ভাবে বলছেন মনে হল। আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মকেই সমান তৈলাক্ত করা নয়, কোনো ধর্মকেই তৈলাক্ত না করা। এই ধরণের বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মুখেও বহুবার শুনেছি, শুনে আনন্দিত হয়েছি। এই বিচারকরা ততটা প্রোগ্রেসিভ হলেন না দেখে দুঃখিত হলাম।

রায়ে বলছে, ওখানেই যে রামের জন্ম হয়েছিল তার অকাট্য প্রমাণ (মনে হল ASI এর রিপোর্টে) পাওয়া গেছে। এই 'অকাট্য প্রমাণ'টা কি, কৌতুহল হছে। আট হাজার পাতার রায় পড়লে হয়ত তাতে থাকত, কিন্তু বড্ড বড়...

রায়টা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখতে পারতেন। আর আনন্দের ব্যাপার, এবার কোনো গণ্ডগোলের খবর শুনি নি এখনও পর্যন্ত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কোনভাবেই লেখাটিকে পরিমার্জণ কিংবা পরিবর্ধণ করা যাচ্ছে না।আর পুরো রায় এখনো পড়া হয়নি।ভাবছি পড়া শেষ করে তার উপর একটা লেখা দিবো।
আর পরিমার্জিত আর পরিবর্ধিত লেখাটি পড়ার জন্য আমার ব্যক্তিগত ব্লগে গিয়ে দেখতে পারেনঃ
http://dbmukherjee.blogspot.com/2010/09/blog-post_30.html

দেবাশিস মুখার্জি

কৌস্তুভ এর ছবি

অতিথি লেখকেরা নিজেদের লেখা এডিট করতে পারেন না যতদূর জানি। আপনি পরিমার্জিত লেখাটা মডুদের ইমেল করে দিতে পারেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, সেটাই বা কীভাবে??ই-মেইল আইডিটাতো জানা চাই।

কৌস্তুভ এর ছবি

এই দেখেন - http://www.sachalayatan.com/faq/show/760#q_24560

contact@sachalayatan.com এ মেল করে ফ্যাসিস্ট মডুরামদের জ্বালাতন করতে পারেন।

নাশতারান এর ছবি

আমার কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মকেই সমান তৈলাক্ত করা নয়, কোনো ধর্মকেই তৈলাক্ত না করা।

চলুক

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিচারক গণ রায়ে সত্য কথা তুলে ধরেছেন ঠিক,কিন্তু সমস্যার ঠিক সুরাহা হবে বলে মনে হয় না।কারন বিচারের রায়ে সমাধান সূচক কিছু আছে বলে আমি এখন ও শুনিনি।জায়গা টা আর্কিয়োলজিকাল সোসাইটির হাতে তুলে দিয়ে, শত বছরের একটি সমস্যা সমাধান তারা করতে পারত। সময় শেষ হয়ে গেছে বলব না তবে, প্রশ্ন থেকে যায় আর কত দেরি হবে? আর কত রক্ত ঝরলে সমস্যার সমাধান হবে?

দুর্দান্ত এর ছবি

আমার মতে এই জায়গাটির ঐতিহাসিক মূল্য এর ধর্মীয় মূল্যের চাইতে অনেক বেশী। একে ভারতীয় প্রত্নতত্ব বিভাগের কাছে ছেড়ে দেয়া হোক।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিপাত যাক।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিপাত যাক।

সহমত।
দেবাশিস মুখার্জি

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অনন্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটির পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ"
ভারতীয় মহাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্যতম একটা কারণ হল এই বাবরি মসজিদ অথবা রাম মন্দির।এটি ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ফাইজাবাদ শহরের অতি প্রাচীণ শহর অযোধ্যার রামকোট পাহাড়ের ধারে অবস্থিত।মুসলমানদের দাবী এটা তাদের জায়গা।অন্যদিকে হিন্দুদের দাবি এটা তাদের অবতার রামের পূণ্যজন্মস্থান।তাই এই জায়গার একমাত্র দাবিদার তারাই।

এবার একটু ইতিহাসের দিকে চোখ বুলানো যাক।আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই মুঘল-সম্রাট বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে এইস্থানের মন্দির ভেঙ্গে একটা মসজিদ নির্মাণ করেন।১৯৪০ এর আগে এই মসজিদের নাম ছিলো ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান’।অর্থাৎ মসজিদের নামটিও রামের জন্মভূমির সাক্ষী হয়ে ছিলো।

হিন্দুদের দাবি অনুসারে, বাবুর ১৫২৭ খ্রিষ্টাব্দে আফগান থেকে এসে চিত্তরগড় এর রাজপুত রানা সংগ্রাম সিংকে পরাজিত করে এবং অযোধ্যার পবিত্রভূমিতে মন্দির ভেঙ্গে এই মসজিদ নির্মাণ করান।১৯৯২ সালে যখন হিন্দুমৌলবাদীরা মসজিদটিকে ভাঙ্গার চেষ্টা করে তখন বেশ কিছু পাথরের শিলালিপি পাওয়া যায় যাতে ‘দেবনাগরি লিপি’ তে লেখা সংস্কৃত শ্লোক পাওয়া যায়।

জৈনদের দাবি অনুসারে, অষ্টাদশ শতাব্দিতে জৈন সন্ন্যাসীরা এখানে এই মন্দির স্থাপন করেন।তাদের মতে ষোড়শ শতাব্দিতে এখানে মূলত জ়ৈন এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ছিলো।

এইস্থানের দাবি নিয়ে বেশ কয়েকবারই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।এখানে একই স্থাপনায় হিন্দু-মুসলমানেরা একইসাথে নিজনিজ প্রার্থণা করতো।কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত ঘটে ১৮৫৩ তে যখন নির্মোহী সঙ্ঘ এর একছত্র মালিকানা দাবি করে বসে।কিন্তু ১৮৫৭ এর সীপাহি বিপ্লবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্মনেয় আর মুসলমানেরা মসজিদ প্রাঙ্গনে হিন্দুদের প্রবেশে বাধা দেয়।

১৯৪৯ এর এক রাতে হিন্দুরা মসজিদের ভেতরে রাম-সীতার মূর্তি শাপন করে।আদালত নির্দেশ দেয় এই মূর্তি সরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন হয় নি।১৯৮৫ তে হিন্দুমৌলবাদীরা এর দখল নিতে চাইলে রাজীব গান্ধী প্রশাসনের দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এরশাদের সরকার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার গুজব রটিয়ে দাঙ্গার সূচনা করে।ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে নিরীহ অসহায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় এরশাদের পোষা গুণ্ডা আর মৌলবাদীরা।এর চাক্ষুষ সাক্ষী আমি নিজেও।ওই বয়সেই আমাকে দেখতে হয় আগুনের লেলিহান শিখা। লোকজন গোপীবাগে আমাদের বাসার পিছনের ঋষিপাড়ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।পরিবারে সবাইকে প্রাণ বাঁচিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তে তারা আর ব্যর্থ হয় না।তারা আক্রমণ করে এই মসজিদের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়।এর ফলস্বরূপ ভারতব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ লোক প্রাণ হারায়।এদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যাই বেশি।এই দাঙ্গার হুজুগে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায় মৌলবাদী মুসলমানেরা।

চিত্রঃ প্রত্নতত্ত্ব বিশারদদের বিশ্লেষণ
ভারত সরকার এই ঘটনার তদন্তের জন্য ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ এক তদন্ত কমিশন(Liberhan Commission) গঠন করে।কমিশন দীর্ঘ ১৭ বছর পরে ৩০ জুন,২০০৯ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর নিকট দাখিল করে।এই রিপোর্টে কয়েকজন হিন্দু সাংসদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়।এদের মধ্যে উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী কল্যান সিং,সাবেক প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানী আর মুরালী জোশীর মত High Profile নেতাদের নামও ছিল।যদিও পুরো রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয় নি।

অনেক দিন ধরেই এই স্থাপনার দাবিদার নির্ধারণ নিয়ে আদালতে মামলা ঝুলছিলো প্রায় ৬০ বছর ধরে।।প্রথম মামলা হয় ১৯৪৯ সালে।পরবর্তীতে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালেও দু'টি মামলা হয়েছিলো।আজ দীর্ঘ ৬০ বছর পর বহুপ্রতিক্ষীত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন এলাহাবাদ উচ্চাদালত।তারা এই রায়ের সঠিকতা নিশ্চত করার জন্য নৃতত্ত্ব বশারদের সাহায্য নেন।ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিশারদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এই জায়গাটায় আসলে বহুপ্রাচীণ মন্দিরের ধ্বংশাবশেষ।

এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চের বিচারপতিত্রয় সিবাগত উল্লাহ খান, সুধীর আগারয়াল ও ধর্মবীর শর্মা ঘোষণা দেন যে আসলে ২.৭৭ একর জায়গাটির প্রকৃত দাবিদার হিন্দুরাই।সম্রাট বাবুর মদির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণ করেননি।তিনি মন্দিরের পাশেই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।তবে শান্তি বজায় রাখার জন্য এই জায়গাটিকে তিন অংশে বিভক্ত করে এক-তৃতীয়াংশ মুসলমানদের সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড, এক-তৃতীয়াংশ নির্মোহী আখড়া এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদেরকে হিন্দু মহাসভাকে দিতে বলেন।মন্দিরের বাইরের জমি পাবে সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড।ঐজায়গা থেকে রামে-সীতার মূর্তি সড়ানো যাবে না।সীতারাসাইয়া মন্দিরের মালিক হবে নির্মোহী আখড়া।আগামী তিনমাসে এই ভাগাভাগি কার্যকর করা হবে।ততদিন পর্যন্ত ঐজমিতে স্থিতাবস্থা বিরাজ করবে।তবে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে।মামলার দুপক্ষই আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রায়ে হয়তো সত্যেরই জয় হয়েছে।কিন্তু শান্তির উদ্দেশ্যে যে ভাগাভাগি তা হয়তো কোন নতুন অশান্তির সূচনা ঘটাতে পারে।ভারতে অনেক মন্দির-মসজিদ আছে।তাই যদি এই জায়গাটা মন্দির কিংবা মসজিদে না দিয়ে এখানে কোন হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হোত তবে বেশি ভালো হতে বলেই আমি মনে করি।

তথ্যসূত্রঃ http://en.wikipedia.org/
http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/2528025.stm
http://expressbuzz.com/
http://dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Laptop&pub_no=298&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=0

দেবাশিস মুখার্জি

সাইদ এর ছবি

ভাই রায়টা কোথায় পড়া যাবে? আর ওই জায়গাটা যে রামের জন্মস্থান এটার প্রমাণ কি ওই রায়ে দেয়া আছে নাকি অন্য কোথায় পাওয়া যাবে?
ধন্যবাদ

কৌস্তুভ এর ছবি

আট হাজার পাতার রায়টা পুরো বেরোতে সময় লাগবে শুনছি। এইটা দেখতে পারেন।

প্রমাণ কিছু দেওয়া আছে কিনা সন্দেহ। শুনলাম 'এত বছর ধরে চলে আসা হিন্দুদের বিশ্বাস'-এর কথাই তুলেছেন একজন বিচারক। পড়ে দেখেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

পুরোটা এখনও আসেনি।ঐটার জন্য অপেক্ষায় আছি। আর লিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ।

দেবাশিস মুখার্জি

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

এই লেখাটা ভালো লাগলো।

আর দুটো ধর্মের দাবিদারদেরই ওখান থেকে সরিয়ে জায়গাটা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নেওয়া উচিত মনে করছি।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

ইশান এর ছবি

আমার মামা বাড়ি ভোলা হবার কারনে ঐসময়(৯২ সালে) ভোলা গেছিলাম বেশ কয়েক বার।তখন দেখসি ভোলা থেকে ছাড়া প্রতিটা লঞ্চে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভোলা ছাড়ছে একেবারে সহায় সম্বলহীন হয়ে।নারীদের অবস্থা ছিল বর্ণনাতীত খারাপ।কারণ তাদের মধে্য এক পক্ষ ছিল ইতিমধে্য নির্যাতিত আর এক পহ্মের ছিল নির্যাতিত হবার ভয়। অনেক মন্দির ভাঙা হয় অইসময়,একেবারে প্রশাষনের সামনে।সে এক অসহনীয় পরিস্থিতি ছিল সে সময়।।

যারা মসজিদ ভাঙল তারা ধার্মিক,যারা মন্দির ভাঙল তারাও ধার্মিক,কিন্তু আমরা যারা ভাঙাভাঙির মধে্য নাই তারা হলাম নাস্তিক।।খুব সম্ভব কথাটা হুমায়ুন আজাদের।

এই কথটা খুব মনে পড়ছে এই ঘটনায়।।আর আপনার সাথে একমত।।

দেবাশিস মুখার্জি [অতিথি] এর ছবি

যারা মসজিদ ভাঙল তারা ধার্মিক,যারা মন্দির ভাঙল তারাও ধার্মিক,কিন্তু আমরা যারা ভাঙাভাঙির মধে্য নাই তারা হলাম নাস্তিক।

দারুন একটা কথা তিনি বলে গেছেন।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

জায়গা কারো না। মানুষের। পৃথিবীতে যদি ধর্ম না থেকে শুধু মানুষ থাকতো !

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের বাড়ী হল নোয়াখালীতে।বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় আমি স্কুলে পড়ি। ঐ সময় দেখলাম আমার বাবা,কাকারা সবাই ঢাকা ছেড়ে বাড়ী চলে আসে। আমাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ।সারাদিন বাড়ীতে।বড়দের কে দেখতাম মেম্বার স্হানীয় লোকদের কে বাড়ী নিয়ে আসতো,হাতে টাকা গুজে দিতো |মা তাদের জন্য মুড়ির মোয়া নারিকেল থালায় করে আমাকে দিয়ে সামনের রুমে পাঠাতো।গ্রামের লোকজন এসে আমাদের পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যেতো।বাবারা রাত জেগে বাড়ী পাহারা দিতো। আর নিখিল কাকা গামছা গায়ে করুণ মুখে মেম্বার স্হানীয় লোকদের ফাই ফরমাস খাটতো।গ্রামে আমরা আর পাশের বাড়ীর নিখিল কাকারা ছিলো একমাত্র হিন্দু পরিবার।নিখিল কাকার তিন মেয়ে,কনিকা দিদি,সীমা দিদি আর আমার সাথে পড়তো উমা। তাদের কে নিয়ে কাকিমা রাতের বেলায় আমাদের বাড়ীর পেছনে বাঁশবাগানে লুকিয়ে থাকতো। কিন্তু এত কিছু করেও শেষ রহ্মা হয় না।কয়েক দিন স্নান করতে না পেরে সীমা দিদি পুকুরে স্নান করতে গেলে বাজারের কয়েকজন বখাটে সীমা দিদি কে ধরে নিয়ে যায়।কাকিমা আর দুই বোন ওদের পেছনে দৌড়ে যায়।আর নিখিল কাকা আমাদের উঠানে গড়াগড়ি দিয়ে কাদঁতে থাকে। এ দূশ্যটা আমার এখন পুরোপুরি মনে আছে। এর পরের ঘটনা খুবেই সংহ্মিপ্ত,বাবা মেম্বরের কাছে গিয়ে তার হাতে পায়ে ধরে সীমা দিদি উদ্বার করে।আমরা শহরে চলে আসি আর নিখিল কাকারা ঐ মেম্বারের কাছে নামে মাত্র দামে বাড়ী বিক্রী করে ইন্ডিয়া চলে যায়।
পরে শুনলাম মেম্বার এই কাজ করিয়েছে যাতে বাড়ী বিক্রী করে চলে যায়।

টিভিতে আমি যখন প্রথম বাবরি মসজিদের ঘটনা টা দেখি আমার মনে হয়েছিলো কালো রং এর কিছু কূৎসিত বানর লাফিয়ে লাফিয়ে মসজিদের মিনারে
উঠছে।

আমাদের গ্রামের সেই মেম্বার আর এই কালো কূৎসিত বানরদের বিচার কখোন হবে না?

আমার প্রস্তাব হলো,এখানে একটা মনুমেন্ট বানাতে হবে যেটার থিম হবে অসাম্প্রদায়িকতা।সেখানে দাঙ্গার সময় নিহত আহতদের বিস্তারিত বণর্না থাকবে।যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত এবং সুবিদাভোগীদের নাম ও ছবি থাকবে।
মানুষ যেমন ধর্ম পালন করার জন্য বিভিন্ন তীর্থ স্হানে যায় ঠিক তেমনি ধর্মের পাপ হতে মানুষের মুক্তির জন্য এই জায়গায় তীর্থ করতে আসবে।
(বিপুল)

কৌস্তুভ এর ছবি

সেটা হবার আশা কম ভাই। আমাদের দেশে এক একটা রাজনৈতিক দল চলে এক এক শ্রেণীর মানুষের ধর্মকে উসকে আর 'শুধু তাদেরই জন্য' সুযোগসুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ধর্মনিরপেক্ষদের ভোলাবার জন্য ঝুমঝুমি পাওয়া মুশকিল। তারা তাই সহজ পন্থাটাই নেয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।