মানুষ, কিংবা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৬/১০/২০১০ - ১০:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ, কিংবা

যখন বিরুত বৃক্ষ হবার পথ খুঁজছে,
চাইছে আকাশ কেবল তারই ওপর উপুড় হোক-
তার কাছে সহসা উন্মোচিত হয় সকল মানুষের মানব-মুখোশ।
বিবর্তনের শিখরে দন্ডায়মান সে প্রাণির মুখ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে
আর তারা এক এক করে হয়ে ওঠে প্রতি প্রজাতির প্রতিনিধি স্বরুপ।
বিরুত আশ্চর্য হয়, তাকিয়ে দেখে আকাশও অদ্ভূত।

সে দেখে, সময়ের ব্যবধানে স্নেহ-মমতার মূর্তিময় আকর
কি করে হয়ে ওঠে জ্বলজ্যান্ত মাকড়সা আর
কি করে তাকে পরম তৃপ্তিতে কুরে-কুরে খায় তারই
স্তন্য-স্নেহ-লালিত সন্তানেরা।
নাড়ি ছিড়ে বের হয়ে এই শিশুরা প্রথমে হয়ে ওঠে কাক, অতঃপর বাজ,
এবং শেষমেষ ক্ষুর-চঞ্চু মুর্দাখেকো শকুন।

অশীতিপর বৃদ্ধার চোখে প্রতিফলিত হয় বয়সী কুকুরের লুপ্ত বিশ্বাস,
এবং অনিবার্য অসহায়ত্ব।আবার মহীরুহও কেউ কেউ,
পর্বতস্থৈর্য নিয়ে সয়ে যায় ব্জ্রনিনাদ, কাণ্ডে উত্তপ্ত কুড়াল-আঘাত।
আরো কিছু পর্দা সরে যেতে দাও-
দেখা যাবে, কিছু রক্তচোষা বাদুড় দিনে-দুপুরে ঘোড়াগুলোর চামড়া ফুটো করে চেটেপুটে খায় জীবন-তরল-
ঘোড়াগুলো কেবল নিভৃতে ঘাস খেয়ে যায়।

আবার কিছু মানুষ বদ্ধ-বিড়াল, হাড়ি উলটে দুধ আর আদর খেয়ে
উধাও একদিনের রঙধনুর দোহাইয়ে।
হাইড্রা হয়ে কেউ কেউ ফের খন্ড-বিখন্ড হলেও মরতে জানে না।
হা্তিই বা বাদ থাকে কেন? বেশিরভাগই নির্বিবাদে
হস্তিমূর্খ জীবন কাটায়।
বিরুত দেখে, রাত এলে কিভাবে নিশাচর প্রাণীগুলো ঢুকে যায় মানুষের দেহে, শুরু হয় আদান-প্রদানের অকৃত্রিম খেলা।
বিরুত জানে। আহা মানুষ।

অভিযোগ ফিরিয়ে বিরুতও তারপর আকাশের মত হয়ে যায়।
আর দেখে।

------------------------

ফারাবী
১৬।১০।‘১০
ঢাকা।

[বানান ঠিক রাখতে পারলাম না বলে দুঃখ প্রকাশ করছি, 'খন্ডেত ত' টা অভ্র কিবোর্ডে খুঁজে পাচ্ছি না, জানা থাকলে কোথায় আছে বলে দিলে ভাল হয়]


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

ৎ লিখুন এভাবে 'ত ` `' ।

আপনার লেখা পড়ে একটা মিশ্র অনুভূতি হলো। প্রচুর চিত্রকল্প আছে, আমি নিজে এমন কল্পনাবিলাসের ভক্ত বলে সেগুলো ভালো লেগেছে। কিন্তু আপনার ভাষার ব্যবহার বড় খটমট। এইটা পাঠক হিসেবে আমার মত। আপনার ভাষার ব্যবহারে আমি কোনো সাজেশন দিতে চাই না, কিন্তু কবিতার পাঠক হিসেবে মনে হয়েছে যে আরেকটু স্মুদ হলে ভালো লাগতো অনেক বেশি। আমি নিজে যেটা করি সেটা হচ্ছে বারবার পাঠ। যেখানে মনে হয় যে আটকে আটকে যাচ্ছে সেখানে অন্য কোনো শব্দ কিংবা অন্য আঙ্গিকে লাইনটাকে প্রকাশ করার চেষ্টা করি। একটা কবিতা পাঠ হতে পারে মৃদুলয়ে ছুটে চলা ট্রেনভ্রমণ, আবার হতে পারে রোলার কোস্টার ভ্রমণ। কিন্তু দুটোই কন্টিনুয়াস (এর ভালো বাংলা মনে আসছে না) হলে ভালো লাগে।

ফারুক হাসান এর ছবি

আচ্ছা, 'বিরুত' মানে কী?

ফারাবী [অতিথি] এর ছবি

ফারুক ভাই, প্রথমেই আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ কবিতাটি এত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। এই জিনিসটা আমিও লক্ষ্য করেছি, আমার ইদানিং বেশ খটোমটো শব্দ ব্যবহার করে ফেলছি, প্রায়ই এমন সব জায়গায় যেখানে তার খুব একটা প্রয়োজন নেই। ফলে প্রায়ই কাম্য মসৃণতা আসছে না। কন্টিনিউটির ব্যাপারটা বোধয় শব্দগত না, এটা ছন্দের কোন গলদ হবে বলে আমার মনে হয়। আমি কবিতার কাঠামো আর বিষয় নিয়ে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই, তাই প্রায়ই আমার কবিতাগুলো কিছুটা ছন্নছাড়া হয়ে ওঠে। এগুলোকে হয়ত একটু এডিট করলেই ঠিক হতে পারে, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার লেখা এডিটিং এর ব্যাপারে একটা অনিহা আছে, কেন জানি না। সব কিছু এক টানে লিখে ফেলার অভ্যেসটা এখন এক রকম বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

'বিরুৎ' হল ছোট প্রজাতির উদ্ভিদ, উদাহরণ এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না। আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আবারও ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

ফারুক হাসান এর ছবি

ভালো লাগলো আপনি আমার মন্তব্য গঠনমূলক হিসেবে নিয়েছেন জেনে। লেখার ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব স্টাইল পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই হয়ত। আমি শুধু বলছিলাম এডিটিংয়ের ব্যাপারটা। আপনাকে দিয়ে হবে, এজন্যই একটু আবদার আর কি হাসি । অনেক সময় আমরা কিছু কিছু শব্দের প্রেমে পড়ে যাই, হয়ত পাঠক সেই ইতিহাসটা জানেন না। তাই লেখকের উচিত শব্দটাকে আরো বেশি কাম্য করে তোলা, যেটা বারবার পাঠে সম্ভব।

কবিতার চর্চা চালিয়ে যান। আপনার জন্য একটু আবুল হাসান রেখে যাচ্ছি -

ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!
-আবুল হাসান

ফারাবী [অতিথি] এর ছবি

চর্চা চালিয়ে যাব, আমাকে দিয়ে হোক আর না হোক। সাহিত্য ছাড়া জীবনের আর অর্থ দেখি না যেহেতু। উতসাহের জন্য ধন্যবাদ (খন্ডেত ত লেখা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, একটা হরফ লিখতে এত ঝামেলা করা লাগলে ত মুশকিল!)।

আবুল হাসান অসাধারণ লাগল। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।