ঘোড়া কর ভগবান

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৬/১১/২০১০ - ১১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৯ এর এপ্রিলের মাঝামাঝি স্বস্ত্রীক কোলকাতা গেলাম, ঘুরতে। সেখানেই জ্যোতিদার মাধ্যমে পরিচয় হলো আনন্দদার সাথে। আনন্দ গোপাল সেনগুপ্ত, ৯১ বছরের এক টগবগে তরুন। সেই অগ্নিযুগের বিপ্লবী, ৪২এর বিপ্লবে জেল খেটেছেন, তার পর শেয়ার বাজারের ব্রোকার, আর কতো কি করেছেন... সে এক রূপকথার মতো গল্প।

বাবা ছিলেন নাম করা কবিরাজ, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক। সেই সময়ের সব রথী-মহারথীদের নিত্ত আনাগোনা তাদের বাড়ী! বললেন মহাত্মা গান্ধীর কোলে চড়ে কতো দুষ্টুমী করেছি, তখন কী আর জানতাম তিনি কে!!!! সেই তাঁদের আশীর্বাদেই কি না জানি না, তবে পায়ের ধুলোর শক্তি তো দেখাই যাচ্ছে। টানা চল্লিশ বছর ধরে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা সমকাল চালালেন, এখন অবসর জীবন কাটছে আস্তাবলে।

হ্যাঁ আস্তাবল, তাঁর বাড়ীর নাম। ৪৩এ জেল থেকে বেড়িয়ে ঘটনা চক্রেই পরিচয় ঘোড়ার সাথে। তার পর প্রেম। রেসের মাঠে তাদের দাপট তাঁর হৃদয় কেড়ে নিল। সেই তার ঘোড়া প্রেম, সেখান থেকেই বাড়ির নাম আস্তাবল।

কোলকাতায় চারদিকে তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মানুষ রাস্তায় পড়ে থাকে মড়ে, কেউ খোঁজ নেয়ার নেই। কিন্তু আস্তাবলের ঘোড়ার নাদি যদি এক আউন্স কম আসে, ডাক্তার বদ্যি চলে আসে... অথচ মানুষের কোন দাম নেই। সেসব দেখে লিখে ফেললেন "ঘোড়া কর ভগবান", তখন তার নামই হয়ে গিয়েছিল ঘোরার কবি...

কবিতাটা সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না!

ঘোড়া কর ভাগবান
আনন্দ গোপাল সেনগুপ্ত

মানব জীবন খোঁড়া করে প্রভু,
ঘোড়া কর ভগবান,
বেতো ঘোড়া নয়---ছ্যাকড়া টানিয়া
আবার যাইবে প্রাণ।

রেসকোর্সের ঈপ্সিত ঘোড়া
করে মোরে ছেড়ে দিও
তোমা চেয়ে বেশী ভক্ত জুটিবে
শনিবারে দেখে নিও।

প্রতি শনিবারে মোর লাগি’ হবে
উদ্দাম জনরোল,
গ্রীবাটি বাঁকায়ে নূতন ঢঙেতে
শুনিব সে কলরোল।

এমনি তো কেউ ফিরে নাহি চাহে
কুঁচকায় নাকো চোখ,
রজত-শায়ক ছুঁড়িবে তখন
খালি করে নির্মোক।

আমার পূজারী পাই নাকো খুঁজে
আশে পাশে খুসীমত,
রেস-ঘোড়া হলে, আমারে জপিয়া
মরে যাবে লোক কত

সপ্তাহ ধরি ফিস ফিস করি
হবে কত কানাকানি,
ডুয়েল লড়িয়া আমারই জন্য
ফাটাইবে মাথা জানি।

মোর কথা কত রাখিবে গোপনে
শুনিতে না পায় মাছি,
আমার সহিসে রাজার দুলালও---
করিবে আমড়া-গাছি।

মোর ‘ফ্যানসি’তে হবে গৃহছাড়া
সেইতো আমার দাম,
তুমি যে গো কেন বুঝিয়া বোঝ না
কেন বিধি হও বাম ?

বাইশ বছর মানব জীবন
কাটায়ে দেকিনু প্রভু,
কিছু নেই এতে শুকনো ছিবড়ে
রস পাই নাই কভু।

টানাটানি আর ধকলেতে হায়
ধুক ধুক করে প্রাণ,
মানব জীবন খোঁড়া করে প্রভু
ঘোড়া কর ভগবান।

--- থাবা বাবা!


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

অনেকগুলো বানান ভুল আছে, তার মধ্যে "রবিন্দ্রনাথ" পীড়া দিলো। বানান ভুলের ব্যাপারটা বাদ দিলে বেশ উপভোগ্য ছড়া। আপনার মৌলিক লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

বানানের ব্যাপারে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। ওখানে আমার কিঞ্চিত দূর্বলতা আছে। আর অভ্রে হাত সরগর হলেও কী-বোর্ড চালনায় হাত পিছলে যায়। চেষ্টা করছি আয়ত্বে আনার! তবে বানানের সমালোচনা অব্যাহত থাকলে মনে হয় দ্রুতই আয়ত্বে চলে আসবে!

--- থাবা বাবা!

কৌস্তুভ এর ছবি

কবিতাটা ভাল লাগল। আপনি ওনার সান্নিধ্য পেয়েছেন, ঈর্ষণীয় ব্যাপার। আচ্ছা, এখন তো রেসের অত জৌলুস নেই, এখনকার দিন হলে ঘোড়ার বদলে কী হতে চাইতেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

এ প্রশ্নটা আমারও ছিল। কিন্তু জিজ্ঞেস করলেই 'তোরা বাঙ্গালরা আর মানুষ হলি না' গালি খাবার ভয়ে আর করা হয় নি। দেখি এবার গিয়ে, যদি সাহস করে প্রশ্নটা করে ফেলা যায়।

--- থাবা বাবা!

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। আপনার বলার ভঙ্গিটি চমৎকার। তবে অসংখ্য বানান ভুল - এ বিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকবেন বলে আশা করি।

ফানুস এর ছবি

ভালো লেগেছে রাজীব ভাই । কোলকাতা বা পূবে'র ভ্রমনের ছবি নিয়ে একটা ছবি পোস্ট করা যেতে পারে ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।