শৈশব

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/১১/২০১০ - ৯:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার জন্ম, আর বেড়ে ওঠার কিছুটা সুদূর ভাটি অঞ্চলে। আমাদের গ্রামের গঠনটি বেশ মজার। বছরে ছয়টা মাস পানিবেষ্টিত থাকতে হয়, তাই পানির উপস্থিতিকে জীবনের আর কয়টা স্বাভাবিক অনুষঙ্গের মতই মেনে নিয়েছে গ্রামবাসী। দুইপাশে পানির দৌরাত্ম্যকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে প্রস্থে যতটা সম্ভব সরু হয়ে, লম্বায় যতটা পেরেছে বিস্তৃত হয়ে পুষিয়ে দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে গ্রামটিকে দেখলে বেশ উদ্ভট মনে হবে, নীচের মাঠ থেকে গ্রামের বসত ভিটা প্রায় বিশ ফুট উঁচুতে উঠে গেছে। আর গ্রামের ধানক্ষেত আর মাঠকে কেউ ধানক্ষেত বা মাঠ বলেনা, সবাই বলে হাওর। কিন্তু বর্ষায় দেখা যায় পানির লেভেল সেই উদ্ভট উচ্চতাকে ও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সরু ভূখণ্ডের দুইদিক দিয়ে খাবলা তুলে নিয়ে প্রতিবছর প্রস্থে আরো কমিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এই হারেই যদি চলত, তাহলে কবেই গ্রামটি সরলরেখায় পরিণত হত। হয়নি কারণ, সবাই নিজের সামর্থ্য অনুসারে বাড়ির দুইপাশে বাঁশের তৈরী অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে নেয়।

আমাদের গ্রাম রচনা লেখার উদ্দেশ্য ছিলনা, কিন্তু ওই যে ছোটবেলা থেকে “আমাদের গ্রাম”, “গরু” আর “আমার জীবনের লক্ষ্য” এই কয়টা রচনা মুখস্ত করে অভ্যাস হয়ে গেছে খারাপ। যাই হোক, লেখায়(রচনা?) ফিরে আসা যাক। আমাদের বাড়িটার একপাশে একটা পুকুর ছিল, তার পাশে কীসব গাছ-গাছালিতে ভরা ঝোঁপ। সেই পুকুরের পাশেই ছিল আমাদের রান্নাঘর। আর সেই রান্নাঘরের বর্ধিত অংশই ছিল আমাদের বাসস্থান, অন্যপাশে মূল ভিটায় থাকতো জ্যাঠারা, কাকারা আর অন্য সবাই। একেতো গ্রামের পিচ্চি, তারওপর আমাদের ঘরের পাশেই সেই ভীতি জাগানিয়া ঝোঁপ। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই শুরু হত ক্রিকেট সুন্দরীদের (ঝিঁঝিঁ পোকার কথা বলছি, চিয়ার লিডারদের কথা না) সশব্দ লম্ফঝম্ফ। আর বর্ষায় যোগ দিত ব্যাঙ আর কত নাম না জানা ডারউইনের সৃষ্টি। সে এক অদ্ভুতুড়ে কলতান।

অবশ্য পুরোটা বিভূতিভূষণের সাহিত্য অনুযায়ী ছিলনা, কিছু উটকো ঝামেলা ও ছিল। নৌপথে চলাচল করা অনেক সহজ, তাই ওই সময়টায় ডাকাতি বেড়ে যেত অনেক। গ্রামের লোকেরা তাই নিজ দায়ে আর নিজ পয়সায় একজন “চৌকিদার দ্য শেরিফ” নিয়োগ করত। তার কাজ ছিল নৌকায় করে গ্রামের চারপাশ চক্কর দেয়া, আর কিছুক্ষণ পর পর বুলন্দ আওয়াজে “খবরদার হুশিয়ার” হাঁক ছাড়া। এমনিতেই পোকাদের আওয়াজে ভয়ে চুপসে থাকতাম, আর থেমে থেমে এই হাঁক শুনে ভিতরটা একেবারে চমকে উঠতো। গভীর রাতে ভয়ে জেগে উঠলে, মা আশ্বস্ত করত চৌকিদারের কথা বলে। আহা, আমার মা টা কত সাহসী ছিল!

গ্রামে ছিলাম বয়স পাঁচ হওয়া পর্যন্ত, তারপর ট্যুরিস্টদের মত যাওয়া হয়েছে কয়েকবার। এত শৈশবের স্মৃতিকে ঠিক বিশ্বাস করা চলে কিনা জানিনা। তবু সেই অদ্ভূত চমক, বিস্ময় আর ভয়ের মিশ্রণের অনুভূতিটা কখনো ফিরে এলে ঠিক আগের মতই শিহরিত হই।

সজল
১৭/১১/২০১০


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সরাসরি ফেইল
মিয়া গ্রামের রচনা লিখছেন গ্রামের নাম ছাড়া?

০২

ভাঁটির কোন গ্রাম? নামটা কন তো দেখি ওইদিকে গেছি কি না হিসাব মিলাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ইশ! অল্পের জন্য পাশ হইলনা। গ্রাম সুনামগঞ্জের শাল্লার হবিবপুর। গেছেন কিনা জানাবেন। হাসি

সজল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গ্রামের নামটা বলে দিতেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম বলা উচিত ছিল। লীনেন ভাইএর মন্তব্যের জবাবে দেখেন বলে দিয়েছি হাসি

সজল

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার গ্রাম রচনা ভাল লাগল। তবে মানেবই-অনুসারী নয় যেহেতু, নম্বর কত পাবেন বলতে পারছি না। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পাশ মার্ক দ্যান, তাতেই বান্দা খুশি।

সজল

কৌস্তুভ এর ছবি

আমি তো মন ভরেই নম্বর দিচ্ছি, কিন্তু ইছকুলে কি মাধ্যমিকে এরকম লিখলে স্যার-দিদিমণিরা কেমন নম্বর দিবেন সেটা ঠাহর করতে পারতেছি না... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাগ্যিস, সময়মত মাধ্যমিক পাশ দিছি চোখ টিপি

সজল

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

নাম সহ আরেকটু বলতেন, ভালো লাগতো হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম বলতে ভুলে গেছিলাম হাসি । সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার হবিবপুর গ্রাম। এই গ্রাম নিয়ে বড় করে কিছু লেখার ইচ্ছা আছে সামনে।

সজল

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

রচনাটারে তেত্যিরিশ দিতে কষ্ট হয় নাই, ভালাই। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মুই পাশ করছি! থ্যাংকু দেঁতো হাসি

সজল

নোবেল [অতিথি] এর ছবি

ভাটীর কথা শুনে ভেতরে ঢুকে দেখি সজল মিয়া ;-)। তা হঠাত কইরা চ্যাপেল হিল থেইক্কা হবিবপুর--কাহিনী কী ?
রচনা ভালোইসে । লেটার দেওন যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।