একটি দূর্দান্ত অভিযান

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২২/১১/২০১০ - ৯:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাশেদ ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। যে কেউ দেখলে বলবে, অতি শান্ত-সুস্থির ছেলে ঘুমানর চেষ্টা করছে। পাশে মা শুয়ে আছে। রাশেদ বোঝার চেষ্টা করছে, মা ঘুমিয়েছে কি না। দেয়াল ঘড়িতে দুপুর ৩টা বাজে। রাশেদ এর হাতে আর ১৫মিনিট সময় আছে। সে ধীরে ধীরে পাশ ফিরে মা এর মুখটা দেখল। শান্ত-নিশ্চিন্ত মুখ। আপাতত চোখ বন্ধ। যদি সে উঠতে গিয়ে এই চোখ খুলে যায়, কপালে অনেক খারাবী আছে। রাশেদ শুয়েছে দেয়াল ঘেষে।
তাকে বিছানা থেকে নামতে হলে মা কে টপকে নামতে হবে। আর এটাই সবচেয়ে কঠিন। রাশেদ ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসল। চুপ করে বসে থাকল কিছুখন, যেন অপেক্ষা করছে কিছু ঘটার। তারপর নিশ্বাস বন্ধ করে সে মা র উপর দিয়ে একটি পা মেঝেতে রাখল। হঠাৎ মা পাশ ফিরল। ভয়ে জমে গেল রাশেদ। খুবই বিপদজনক অবস্থা। তার একটি পা বিছানায় আর একটি মেঝেতে। নাহ, মা জেগে যায় নি। আটকে থাকা শ্বাস খুব সাবধানে ছেড়ে বিছানা থেকে সম্পূর্ণ নেমে এল সে। পা টিপে টিপে এগুলো দরজার দিকে। ছিটকিনি খুলে দরজার পাল্লা সরিয়ে বাহিরে ঊঁকি দিল রাশেদ। বাহিরের ঊঠোনে তীব্র রোদ খেলা করছে। চারদিক চুপচাপ।
সবাই দিবানীদ্রায় ডুবে আছে। সে ঘুরে তাকাল দেয়াল ঘড়ির দিকে। আর ১০মিনিট। ৫মিনিটের মাঝে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড় দিতে না পারলে সে পৌছুতে পারবে না।

মেইন গেইট বন্ধ রাশেদ জানে। মা বন্ধ করে রেখেছে। তাকে যেতে হবে গোয়াল ঘরের দেয়াল টপকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওপাশেই ভাঙ্গা মন্দিরটা।
প্রচুর সাপ-খোপের আড্ডা ওখানে আর দিনের বেলায়ই সুনসান থাকে জায়গাটা। রাশেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল-কি আর করা, ওটাই এক মাত্র পথ। সে দ্রুত পা চালিয়ে গেল গোয়াল ঘরের দিকে। বোটকা একটা গন্ধ পুরো ঘর জ়ুড়ে। রাশেদ সময় নস্ট না করে দেয়াল বেয়ে ঊঠতে শুরু করল। দেয়ালে উঠে ওপাশে তাকিয়ে হতাশ হল সে। অনেক নীচুতে মনে হচ্ছে ওপাশের মাটি। বাহিরের দেয়ালের গা ও বেশ মসৃণ, তাই দেয়াল বেয়ে নামাবে সে উপায় ও নেই। সময় ও নেই হাতে, লাফ দিতে হবে।
বিসমিল্লাহ বলে রাশেদ দিল লাফ। উফ, অবশেষে মুক্তি। হাটুর কিছু চামড়া উঠে গেছে, কিন্তু দুশ্চিন্তায় কালো হয়ে থাকা মুখে এই প্রথম হাসি ফুটলো। রাশেদ হাটুর দিকে তাকিয়ে ভাবলো, গন্ডারের চামড়া হলে ভাল হত। তারপর প্রাণপনে দৌড়।
................................................................................................
মাসুম ভাই বিরক্ত হয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন।আর মাত্র ২মিনিট বাকি। গাধাটা নিশ্চিত বের হতে পারে নি। দুশ্চিন্তায় ভুরু কুচকে আছে মাসুম ভাই এর। আজ বাঁচা-মরার লড়াই। যেভাবেই হক পূর্ণ শক্তিতে নামতে হবে। তিনি ঘুরে তাকালেন ছেলে দের জটলার দিকে। সবাই উন্মুখের মত তাকিয়ে আছে কলেজ রোডের দিকে। দূর থেকে নোমান টিটকিরি দিল-"কি মাসুম ভাই! সোয়া ৩টা বেজে গেল ত।"
মাসুম ভাই গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলেন-"এখনো ১মিনিট বাকী আছে।"
আবার ঘুরে তাকালেন কলেজ রোডের দিকে। নাহ, কোন খবর নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে যেই ছেলেদের কিছু বলতে যাবেন, চোখের কোণে কি জানি ধরা পড়লো মাসুম ভাই এর। ভাল মত তাকিয়ে দেখেন, ঝড়ের বেগে দৌড়ে আসছে গাধাটা। আকর্ণ হাসি হেসে, হাতের ব্যাটটা দুপাক ঘুরিয়ে, নোমান কে হেকে বললেন-"কি হে, টসে নামবে না নাকি। শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? "

তারপর ঐতিহাসিক কলেজ মাঠে সোয়া ৩টার কাঠফাটা রোদে শুরু হয়ে গেল বকুলতলা বনাম হাজীপাড়ার ১০০টাকা বাজীর ক্রিকেট ম্যাচটি।

সদস্যনাম: আজব পোলা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প-মন্দ নয়। বর্ণনাভঙ্গি সুন্দর।

---আশফাক আহমেদ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। এটা আমার প্রথম ব্লগ পোস্ট। তাই আপনার মন্তব্য উৎসাহ যোগাবে আরো কিছু লেখার।

আজব পোলা

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালোই তো। এর পরে কী হবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

খেলা শেষে বাড়ি ফিরতে হবে বেচারাকে। সেটা ও এক বিশাল কাহিনী। দেঁতো হাসি

আজব পোলা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তারুণ্যের বেহিসেবী গন্ধ মন মাতালো!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আজব পোলা [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এইখানে কেউ শেষ করে? লেখায় মাইনাচ চোখ টিপি হো হো হো

সচলায়তনে স্বাগতম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

আজব পোলা [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া। পরের বার ভাল জায়গায় শেষ করব। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মত আমিও এখানে নূতন। প্রথম পোষ্টের শুভেচ্ছা।

-মোহনা

অতিথি লেখক এর ছবি

কাব্যময়তায় স্থান শুধুমাত্র কাব্যসাহিত্যে তা মানতে আমি নারাজ কোনো এক।
তাই সাহিত্যের যে কোন মাধ্যম দিয়ে আমি নিয়ত খুজে বেড়াই আকাঙ্খার কাব্যময়তা।
এ লেখায় যা আছে তা কাহিনী।
অবশ্য েকখানে শুধুমাত্র কাহিনী দিয়ে গল্প আকা হয় তাতে দীর্ঘ পরিসর পটঠক দাবি করতেই পারে।

আপনার জন্যে শুভকামনা আর ভালোবাসা।

প্রশ্নবোধক

আজব পোলা [অতিথি] এর ছবি

এর পরের খণ্ডটুকু লিখে ফেললাম। ব্লগে দিয়েছি, জানি না কখন প্রকাশিত হবে।
আমি এখনো "যাচাই করা হয় নি" ব্লগার, তাই !!
http://wooden-rat.blogspot.com/

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

বাহ, ভালো তো !

মূলত পাঠক এর ছবি

ভেতরে যা আছে আছে, অন্তত শিরোনামে বানান ভুল না থাকলে ভালো লাগতো।

আজব পোলা [অতিথি] এর ছবি

সরি ভাইয়া। পরের বার আরো সাবধান থাকবো।

আজব পোলা

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা আমার ছোটবেলার দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা....পড়ে অনেক ভালো লাগলো...!!!

tofayel71@gmail.com

নীল-মডু এর ছবি

প্রিয় আজব পোলা,
আপনার দ্বিতীয় গল্পটি আমরা পেয়েছি। কিন্তু সচলায়তনে এক লেখকের দুটো লেখা প্রকাশিত হয়না। আপনার এই লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরে গেলে দ্বিতীয়টি প্রকাশিত হবে। ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নীল-মডু কিছু মনে না করলে একটু যোগ করি:

কিন্তু সচলায়তনে এক লেখকের দুটো লেখা প্রকাশিত হয়না।
উপরের লাইনটি এভাবে পড়তে হবে:
..সচলায়তনে প্রথম পাতায় এক লেখকের দুটো লেখা প্রকাশিত হয়না।

আজব পোলা [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ মডু-ভাইয়া।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ভালোই লাগলো পড়ে, তবে কিছুটা গতানুগতিক। লিখে যান আরো এমনি কৈশোরমাখা উত্তেজনার গল্পকথা।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জট্টিলস্ হইছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্দান্ত অভিযানের দুর্দান্ত বয়ান.........

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।