বিক্রি বাটা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ৩১/১২/২০১০ - ৭:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

।।শামীম।।
ফুটপাথের এক কোনায় পাশের পাগলটার গা বাঁচিয়ে সাবধানে বসলাম। মোটা এক ধরনের কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা গা থেকে ক্যামন বিটকেলে গন্ধ। আজকাল আর শান্তিতে কোথাও বসার উপায় নাই! পিছনের থামের মত দেখতে বিল্ডিংটার এদিকে বিকালে রাজ্যের মানুষজনের ভিড়, তাই পেছনের বাগানের পাশ দিয়ে যাওয়া ফুটপাথে জিরানোর চেষ্টা করি একটু। দুপুরের খাবারটা এখনো কেমন ভুটভাট করছে পেটের ভেতর। একটু ঝিমিয়ে নিই, একটু পরেইতো আবার হিসাব নিয়ে বসতে হবে!

পিঠের ব্যাগ থেকে আস্তে করে মোটা খাতাটা বের করি। খুব সাবধানে রাখছি আজকাল এই জিনিস, কেউ দেখে ফেললেই সর্বনাশ! এই নিয়ে উনাশিবারের মতো হিসাবটা দেখলাম, কোথাও ভুল ভ্রান্তি থেকে গেলে পরে শোধরানোর উপায় থাকবেনা, বিরাট ঠকা খেয়ে যাব। পায়ের আঙ্গুল গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করলাম সব হিসাব ঠিক আছে কিনা! বেশ ডুমশো ধরনের, ফোলা ফোলা আঙ্গুল। দেখতে তো ভালোই। দুইটা বুড়ো আঙ্গুল। পায়ের আঙ্গুলের কাজ তেমন বেশী না। না থাকলেও মানুষ তেমন চিন্তা করেনা। দামটা আর একটু কমিয়ে ধরবো কিনা বুঝতেছিনা। দুইটা আঙ্গুল মিলিয়ে ১০০০টাকার বেশী হবেনা মনে হয়। বাকি গুলা মিলিয়ে সেট হিসাব করলাম। দুই সেট। নিজের বুদ্ধিতে নিজেই খুশী হলাম। সেট এর আইডিয়াটা এই মাত্র মাথায় আসলো। পুরো পায়ের আঙ্গুলের সেট হিসাব করলে কেমন হয়!

যাক সে পরে দেখা যাবে। হাঁটুর বাটি দুইটা পাইকার বলছে খুব দামি। তাহলে দাম ধরি ৫০হাজার টাকা করে। এইবার মনটা ভালো হয়ে গেলো। দুইটা বাটি ১লাখ। কি করব এতো টাকা দিয়ে? গোড়ালি থেকে উপরের অংশ, বাটি বাদ দিলে তেমন দামি না, আজকাল নাকি ওই জায়গায় স্টিল দিয়ে তৈরি জিনিস ও ফিট হয়ে যায়। কি দুনিয়া পড়ছে, মানুষের আর দাম রইলো না। স্টিল ফিস্টিল দিয়ে মানুষ বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে রাস্তায়! তলপেটের কাছে এসে মন আবার ফুরফুর করে উঠলো, দুইটা কিডনি। ২৫লাখ করে ৫০লাখ! ওরে! শেরাটনের খানা আমি খামুই! দুই পায়ের ফাকের জিনিসটা কেউ কিনবো কিনা পাইকার বলে নাই। ইচ্ছা করতেছিলো ওর কাছেই বেচি জিনিসটা।
আর দামি জিনিস বলতে নাকি হার্ট! ওইটার নাকি অনেক দাম, পাইকার বেটা কি জানে কি জানি। আমার মনে হয়ে শরীরের ভিতর আরো অনেক যন্ত্রপাতি আছে! এইযে ওইদিন টেম্পুর ধাক্কা খেয়ে যখন রাস্তার পাশে পড়ে গেলাম, চোখ দিয়ে কি পরিমান পানি বের হলো! শরীরের ভেতর কোন পাম্প না থাকলে পানি সাপ্লাই দিলো কে? তারপর ধরেন বাতাস টানলে পরে শরীরে গিয়ে জমা হয়, জিনিসটা শরীরে কোথায় থাকে, ওইটা কি দরকারি কোন যন্ত্র না? তারপর ধরেন এইযে দুপুরে খেলাম, জিনিটা কোথায় গিয়া জমলো, আবার বিকাল হইলেই পেটটা খালি খালি লাগে। তারমানে শরীরে ভিতর আরো ব্যপার স্যাপার আছে। আমি জানিনা, পাইকার বেটা নিশ্চয় জানে।

পাইকার বলছে একটা হার্টের দামই নাকি ৫০লাখ। সব বিক্রি করে দিব একদিন! মাথার চুল বা পায়ের নখ, সবই নাকি দামি! এই সব লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার জিনিস পত্র নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে আজ কাল ভয় লাগে। ভাগ্যিস আর কেউ এইসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।


মন্তব্য

শামীম এর ছবি

ডিসক্লেইমার: নামের মিল থাকলেও এটা আমার পোস্ট নয়।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্দ লাগেনি। হাসি

আমার মনে হয়ে শরীরের ভিতর আরো অনেক যন্ত্রপাতি আছে!

আমি যতটা বুঝি তাতে শরীরের এসব যন্ত্রপাতি বড়জোর মরণোত্তর দানযোগ্য, কিন্তু মোটেই বিক্রয়যোগ্য নহে! এজন্যেই জীবনের দাম থাকুক চাই না-থাকুক, এসব যন্ত্রপাতির ম্যালা দাম।

আর দামি জিনিস বলতে নাকি হার্ট! ওইটার নাকি অনেক দাম

হার্টের কাজ তো শুধু রক্ত পাম্প করা নয়, এটা ভালোবাসার যন্ত্রও। ভালোবাসার জিনিস বলে কথা, একটু তো দাম পড়বেই চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।