এবার তোরা মানুষ হ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৩/২০১১ - ৮:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব সম্ভব তোদেরকে উদ্দেশ্য করেই শ্রদ্ধেয় খান আতা এককালে বলেছিলেন, আবার তোরা মানুষ হ। তোরা মানুষ হসনি। আটত্রিশ বছরেও তোরা মানুষ হতে পারলি না। চেঙ্গিস খানের মত গায়ের জোরে দিকদিগন্ত ছারখার করে তোরা এবার এসেছিস বুয়েট জয় করতে। তোরা ভেবেছিলি, আসবি, দেখবি আর জয় করবি। হলে হলে চাঁদাবাজি করবি, কেউ তোদের কিচ্ছুটি বলবে না। ভিন্নমতের মানুষদের মত প্রকাশের অধিকারের মুখে ছুরি চালাবি, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। কেনো বলবে? এখানে সবাই এসেছে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হতে। সপ্তাজুড়ে ক্লাস, ল্যাব রিপোর্ট আর একগাদা প্রজেক্টের ঝামেলার মধ্যে কে তোদের নিয়ে মাথা ঘামাবে? সবাই তো যার যার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত।

তোদের ক্যালকুলাসে কী একটা গরমিল ছিল। তোরা বুঝিসনি, এই যন্ত্র অরণ্যের মাঝেও আমরা সবাই বোবা পশু হয়ে যাইনি, যে গ্রেডক্ষুধা নিবারণ হলেই আমাদের চলে যায়। তোদের দুর্ভাগ্য, এখনো আমাদের বিবেক বলে একটা বস্তুর অল্পবিস্তর অবশেষ রয়ে গেছে। তাই তোদের এই চাঁদাবাজি আর নাৎসীবাদের বিরুদ্ধে আমাদেরই কেউ একজন গৌতমদার রূপ ধরে প্রতিবাদে ঝলসে ওঠে। আমরা দু-চারটা বেকুব অবসরে ল্যাব রিপোর্টের তোয়াক্কা না করে পোস্টারে প্রতিবাদে শাণিত হয়ে উঠি। অযথাই মানববন্ধন করি, মনে ক্ষীণ আশা যে এইসব দেখে কোন এক শুভক্ষণে নিশ্চয়ই তোদের বিবেক জেগে উঠবে। আমরা জানি, ভয়ভীতি দেখিয়ে, অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনিয়ে জনতার মুখ কিছুক্ষণের জন্য হয়তো বন্ধ করা যায়, কিন্তু স্তব্ধ করা যায় না।

তোদের আর এসব শুনিয়ে লাভ কী? তোরা তো ঠিকই গৌতমদার মত বিবেকবান মানুষদের ক্যাফেতে সবার সামনে লাঞ্ছিত করবি, ভিন্নমতের মানবতার বাসা-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও করবি, বইপত্তর পুড়িয়ে, কম্পুখাতাকে দাহ করে ক্যাম্পাসে অশ্লীল বিজয় মিছিল করবি। স্যারেরা এসে পশুর হাত থেকে মানবতার অপমান কিছুক্ষণের জন্য রুখবেন, সে আর কতক্ষণ? তোরা জানিস, স্যারেরাও সব ছাপোষা মানুষ। তাদেরও পরিবার-পরিজন আছে, হারানোর ভয় আছে। স্যারেরা চলে যাওয়ামাত্রই তোরা তাই আবারও চড়াও হবি মানবতার ওপর। কেননা তোরা জানিস, সাধারণ ছাত্রদের মধ্য থেকে কেউ বাধা দিতে আসবে না। মানে মানে বুয়েট থেকে বের হতে পারলেই তো সব সীমান্ত পার। থুথু ফেলতেও তো কেউ আর এদেশে আসবে না। কী দরকার তোদের এই 'ইন্ট্যারনাল ব্যাপারে' নাক গলিয়ে? আপন ভালো তো পাগলেও বোঝে।

কেউ কেউ অবশ্য চিরকালই একটু বোকা থেকে যাবে। তারা জানে, তোদের সাথে তারা পেরে উঠবে না। তবু যতদিন অন্যায়-অনাচার চলবে, ততদিন তারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এর প্রতিবাদ করে যাবে। মার খাবে, আইসিইউ তে গিয়ে ভর্তি হবে, যন্ত্রণায় কাতরাবে। আমরা কিন্তু তাদের জন্য চোখের জল ফেলবো না। শূণ্যস্থানে নতুন কেউ এসে প্রতিবাদের মশাল হাতে দাঁড়িয়ে পড়বো। সে দলকেও তোরা ভয়ভীতি দেখাবি, আইসিইউতে ভর্তির সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করবি। এরপর আরেক দল। এরপর আরেক দল। এভাবে কজনকে তোরা হাসপাতালে পাঠাবি? কজনকে? গোটা ব্যাচ? গোটা ডিপার্টমেন্ট? না গোটা বুয়েট?

আমরা যারা আজো গুডি বয় রয়ে গেছি, মিছিলে কিংবা মানববন্ধনে যেতে আমাদের ভয় হয়, তারা হয়তো ব্লগে কিংবা ফেসবুকে তোদের অন্যায়ের ইতিহাস লিখে যাবো। যারা আরো ভীতু, তারা সামান্য স্ট্যাটাস দিয়ে এই আন্দোলনে সামিল হব। যারা আরো একটু ভীতু, তারা ভয়ে ভয়ে সেইসব অন্যায়বিরোধী স্ট্যাটাসে একটা-আধটা লাইক দিয়ে যাবো। আর যারা একেবারেও অথর্ব, তারা হ্‌দয়ের গভীরে একরাশ ঘ্‌ণা পুষে রাখবো তোদের জন্য। কে জানে, হয়তো এই বিন্দু বিন্দু ঘ্‌ণার মহাসাগরেই তোরা এককালে ডুবে মরবি। ঈশ্বর তোদের শুভবুদ্ধি দিক।

নাম প্রকাশে ভীত
বুয়েটেরই এক হতভাগা


মন্তব্য

একজন পাঠক এর ছবি

একজন অথর্বের অনেক ভালো লাগলো লেখাটা , আর কিছুই করতে না পারার লজ্জাটা বেড়ে গেলো মন খারাপ:(

অতিথি লেখক এর ছবি

বুকের ভেতর একরাশ ঘ্‌ণা রেখে দেন ওদের জন্য। সময়ই ওদের আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলবে

নাম প্রকাশে ভীত
বুয়েটেরই সেই হতভাগা

তাসনীম এর ছবি

গৌতমের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। পত্রিকায় পড়েছিলাম আর গুগল করে সামুতে এই ব্লগটা পেলাম। সোহরাওয়ার্দি হলে ১০১২ নম্বর রুমটার কথা মনে আছে, ওখানে আমিও থেকেছি এবং প্রচুর আড্ডা দিয়েছি (একবন্ধুর রুম ছিল ওটা)।

আপনি আরো বিস্তারিত লেখুন, সচলে এবং অন্য মাধ্যমে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও লিখুন। আমি ছাত্র থাকা অবস্থা অতি তুচ্ছ কারণেও ছাত্রদের বহিষ্কার হতে দেখেছি। এখন দিন পালটে গেছে, আত্মা ভালো দামে বিক্রি হয় শাসককুলের কাছে, শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর মত শিরদাঁড়ার বড় অভাব। আত্মার মার্কেট অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

আমি জানি সচলের পাঠকদের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষক আছেন, প্রশাসনের মানুষ আছেন। এগুলোর প্রচার হওয়া উচিত।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সহমত

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গোটা ঘটনাটি নিয়ে, গৌতমের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত লিখুন। নাম প্রকাশের দরকার নেই, মডারেটরদের বললে উনারা নাম অপ্রকাশিত রেখে লেখা প্রকাশ করবেন। আরো ভালো হয় একটা নিক্‌ নিয়ে লিখলে। তাহলে আপনার লেখা ফলো করা সহজ হবে।

বুয়েটের সবচে' উপরতলাতেই এখন নোংরা রাজনীতি থানা গেড়ে আছে। তাই নিচের তলাতে খাবলা-খাবলিটা তো থাকবেই। দীর্ঘদিন ধরে মেধানির্ভর ছাত্র সংগঠনগুলোকে প্রশাসন চাপতে চাপতে, আর অস্ত্রনির্ভর ছাত্র সংগঠনগুলোকে প্রশ্রয় দিতে দিতে আজকের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এটা হঠাৎ করে ঘটা কিছু না, বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনাও না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের উৎসাহ পেয়ে ভালো লাগলো। খুব শিগগিরই এ নিয়ে বিস্তারিত লেখার আশা রাখি

নাম প্রকাশে ভীত
বুয়েটেরই সেই হতভাগা

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখককে ধন্যবাদ এই বিষয়টি নজরে আনায়।

শুভবোধের জয় হবেই। মনুষ্যত্ব মারা যায়নি এখনো। বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাই।

একজন পাঠক এর ছবি

পুরো বিষয় চাঁদাবাজি কেন্দ্রিক। রুমে রুমে চাঁদাবাজি শুরু করেছে কিউবি মডেমের জন্য আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপরে। বুয়েট মার্কেটে চাঁদাবাজি তো পুরনো ঘটনা। খালি হপ্তা হিসেবে বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে দোকানদের। অ্যালামনাই এর সময় যে টাকা উঠেছে সেখানেও তারা হাত দিয়েছিল। নতুন মার্কেটের কথা আর নাই বা বললাম। এখন আবার লেগেছে স্মৃতি হলের পাশে কি এক কাজ হবে, তার টেণ্ডারবাজিতে।
২০১২, ২০১৪ এর কয়েকজন হল ছাড়া গত সপ্তাহখানেক। ক্লাসও করতে পারছে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

"রুমে রুমে চাঁদাবাজি শুরু করেছে কিউবি মডেমের জন্য আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের উপরে"

-এই কথাটা বুঝিনি, একটু খুলে বলুন। চাঁদাবাজির নতুন ফিল্ড বলে মনে হচ্ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুয়েটের অনেক ছাত্রই বর্তমান পরিস্থিতির গভীরতা বুঝতে ব্যার্থ, গৌতম দার উপর হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ।ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি সবাই নীরবে সহ্য করছে । এতদিন লীগরা নিজেরা মারামারি কাটাকাটি করেছে । এখন তারা চাচ্ছে ক্যাম্পাসের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে। এ কারনে তারা প্রথমেই তাদের কে সরিয়ে দিল যারা তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারত। শুধু তাই নয় তারা ছাত্রফ্রন্ট ও গৌতমদা'র বিরুদ্ধে উগ্র পোস্টারিং করে তাদের হামলার কথা গর্ব সহকারে প্রচার করে বেড়াচ্ছে।
আজকে আমরা বুয়েটিয়ানরা মার খাওয়ার ভয়ে চুপ । কিন্তু এই চুপ করে থাকার মধ্যে দিয়েই আসলে আমরা ওদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি । বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু আশা করে লাভ নেই তারা ছাত্রলীগের পা চাটতেই ব্যস্ত । আবার শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও নাকি নতুন তামাশা শুরু হয়েছে শুনলাম । ছাত্ররা যদি এখনই প্রতিবাদ না করে পরিস্থিতি আরো খারাপ এর দিকেই যাবে । মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নাম-না-জানা অতিথী, দয়া করে চুপ করে থাকবেন না। কয়েকজনে মিলে একটু গুছিয়ে তথ্য ও সম্ভব হলে ছবিসহ ব্যাপারগুলো লিখে ফেলুন। তারপর পোস্ট করতে থাকুন ব্লগগুলোতে, ফেসবুকে এমনসব সোশাল নেটওয়ার্কগুলোতে। অনলাইন মিডিয়ার শক্তি যথেষ্ট, তাতে আস্থা রাখুন। সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন বুয়েটকে টেনে নামানোর দল কখনোই চুপচাপ বসে থাকেনি। তাছাড়া আজ যা বুয়েটে ঘটছে আগামীকাল তা আরো দশটা জায়গায় ঘটবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

একজন পাঠক এর ছবি

http://www.somewhereinblog.net/blog/itstiks/29344051
সুযোগ হলে লেখাটি পড়ে দেখেন...।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।