নেতার পলায়ন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৮/০৩/২০১১ - ১০:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আবাসিক হলের পেছন দিকের পুকুরটায় লুকিয়ে আছে রাশেদ। পুকুরটার চারপাশ ঝোপে ঢাকা। কচুরিপানায় ভরে গেছে প্রায়। হলের এই পেছন দিকটা বেশ অন্ধকার। হলের ভেতর ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে, শব্দ পাচ্ছে সে। নিশ্চয় প্রত্যেকটি রুম সার্চ করা হচ্ছে রাশেদের খোঁজে। হুট করে পায়ের শব্দ পেল রাশেদ। এই দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয়ে সিটিয়ে গেল রাশেদ। বুঝতে পারছে, পুকুরের পাড়ে এসে দাড়িয়েছে। পাথর হয়ে গেল রাশেদ, মোবাইলের আলো ফেলে হচ্ছে পুকুরে।

"শালাকে তোরা চোখের আড়ালে যেতে দিলি কেন?" - নাইমুলের বিরক্ত গলা। নাইমুল ইউনিভার্সিটির এক অন্যতম ছাত্রনেতা। তিন বছর আগেও কেউ চিনত না, কিন্তু এখন তার নামে টিচার রাও কাঁপে।

"কোন ফাকে সটকে গেল টের পাই নাই , বস" - হাসিবের গলা। পিটিয়ে ভর্তা বানানোর কথাটা সত্যি মনে হয়, যখন হাসিবের মার খাওয়া কাউকে দেখে। এক মাস আগেই প্রতিপক্ষ দলের এক কর্মীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সে।

নাইমুল আরো কিছু বলল, শুনতে পেল না রাশেদ। আবার কিছুক্ষন চুপচাপ। নড়তে সাহস পাচ্ছে না রাশেদ। ধীরে ধীরে মাথাটা একটু উঁচু করল। চলে গেছে। বেশ ঠাণ্ডা লাগছে এখন। দূরে মিছিল, হইচই আর বাজি পোড়ানোর হচ্ছে। হুট করে হেসে ফেলল রাশেদ। তার এখন চরম দুঃসময়, হাসা ঠিক হচ্ছে না। তবু হাসি পেল কিছুদিন আগের এক ঘটনা মনে পড়ে যাওয়াতে। রাশেদের এক পছন্দের মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলল এক ছেলেকে। সাথে থাকা এক জুনিয়র কিছুটা টিটকারী দেয়ার মত বলে বসল, "বস, মধু অন্যজন খেয়ে নিচ্ছে, আর আপনি শুধু দেখেই গেলেন?"
রাশেদ চোখ গরম করে তাকাতেই জুনিয়র চুপ হয়ে গিয়েছিল। বিকেলে সেই ছেলেকে হলের গেটে দেখে, রাশেদ চার্জ করে ছিল। কিছু চড় দিয়ে, এই পুকুরে গলা ডুবিয়ে থাকতে বলেছিল। পরে রাত নয়টায় বেচারা ছাড়া পায়।
সেই রাশেদ এখন নিজেই এখানে লুকিয়ে আছে। হলের কমন রুম থেকে পালিয়ে সরাসরি এখানে এসেছে সে। জানত প্রথমেই রুম গুলোতে সার্চ হবে। পড়নে আছে রুমে পরার গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট। রাতের খাওয়া হয়নি। বেশ খিদে লেগেছে এখন। প্রায় ২ ঘণ্টা হতে চলল তার লুকিয়ে থাকার। মিছিলের শব্দ আর শোনা যাচ্ছে না।

এতটা নির্মম কি নাইমুল হবে? নিজেদের চিন্তা-ভাবনা, মতের অনেক অমিল থাকলেও, সে আর নাইমুল এক সাথেই ছিল তিনটা বছর। টেন্ডার-চাঁদাবাজি এই সব কিছুতেই দুজনের ভালো বোঝাপড়া। রাশেদ ঝোঁকের মাঝে বলে দিয়েছে কথাগুলো, নাইমুল সিরিয়াস হয়ে যাবে, কল্পনাই করতে পারেনি রাশেদ।

নিজের মাঝে কোন দুর্বলতা নেই রাশেদের। শুধু তার চুল ছাড়া। নিজের এই চুলের জন্য নিয়মিত খরচ করে রাশেদ। সবাই জানে ওর এই দুর্বলতার কথা। কিছুদিন আগেই ঢাকার এক অভিজাত সেলুন থেকে হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিয়ে এসেছে সে এক হাজার টাকা খরচ করে। ময়লা পানিতে ভিজে না জানি কি অবস্থা চুলের।
অনেক হয়েছে, বিরক্ত রাশেদ। সে এখন ফুরিয়ে যায়নি। নাইমুল চাইলেই যা ইচ্ছে করতে পারবে না। রাশেদ ভাবল, কোন এক জুনিয়রের রুমে কাটিয়ে দেবে আজ রাত। একবার সার্চ করিয়েছে নাইমুল, আর করবে না। রাতটা কেটে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সকালেই সব ম্যানেজ করে ফেলতে পারবে রাশেদ।
ধীরে ধীরে পাড়ের দিকে এগিয়ে গেল সে। হামাগুড়ি দিয়ে উঠছে। দেখে নিল চারপাশ। কেউ নেই। দৌড় দিল হলের দেয়ালের দিকে, চেষ্টা করছে কোন শব্দ না করার। দেয়ালের একটা অংশ ভাঙ্গা। ওটাই এই পেছন দিকে আসার পথ। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল। নাহ, কেউ নেই। নাইমুলের তাণ্ডবের পর সব ফাঁকা হয়ে গেছে।
রাশেদ আর দেরি করল না। সোজা হলের গেইট দিয়ে ঢুকে পড়ল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল। দোতলায় এসেই জমে গেল রাশেদ। রেলিংয়ের ধারে এক চেয়ার নিয়ে বসে আছে নাইমুল। মিছিলে যায়নি, ওর জন্যই অপেক্ষা করছে হলে। নাইমুল ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ঠোঁটের কোণে নিষ্ঠুর হাসি। রাশেদ ঘুরে দৌড় দিতে আগেই, কেউ একজন শক্ত করে জাপ্টে ধরল ওকে।

১৯/০৩/২০১১, সকাল বেলা। হলের কমনরুমে প্রচণ্ড ভীড়। একটু পরেই খেলা শুরু হয়ে যাবে। রাশেদ ও নাইমুল পাশাপাশি বসে আছে।
নাইমুল হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, "আজকে বাজি লাগবি না?"
রাশেদ নির্বিকারভাবে টিভির দিকে তাকিয়ে রইল, যেন প্রশ্নটা শুনতে পায়নি। ইংল্যান্ডের সাথে খেলায় বাংলাদেশের ৮ উইকেট আউট হয়ে যাবার পর, প্রচন্ড রাগে উত্তেজিত হয়ে বলেছিল, "বন্ধ কর টিভি, এই সব ***মারা খেলা দেখতে হবে না। এই খেলা বিডি জিতলে আমি ন্যাড়া হয়ে যাব।" কেউ কিছু বলেনি, শুধু নাইমুল বলেছিল, "বাজি ধরলি?" রাশেদ মাথা নেড়েছিল। আজ বাজি ধরবে না রাশেদ, জানে সাকিব-তামিমদের উপর কোন ভরসা নাই।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বেশ বেশ! চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

-আজব পোলা

দুর্যোধন  এর ছবি

দারুন দারুন !!!

উরন্ত ঘোড়া এর ছবি

আমিতো ভয়ে অস্থির, ভাবলাম এইবার ধোলাই;

অতিথি লেখক এর ছবি

ছাত্রনেতার ধোলাই এর গল্প লিখে নিজের ধোলাই খাওয়ার ভয় আছে। তাই শুধু মাথার চুলের উপর দিয়ে সমাপ্তি টেনেছি। দেঁতো হাসি

-আজব পোলা

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক

অমিত আহমেদ এর ছবি

দারুণ লাগলো।

লেখকের মন্তব্যেও জাঝা চলুক

ছাত্রনেতার ধোলাই এর গল্প লিখে নিজের ধোলাই খাওয়ার ভয় আছে। তাই শুধু মাথার চুলের উপর দিয়ে সমাপ্তি টেনেছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্দান্ত । অপ্রত্যাশিত সমাপ্তি ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো হইছে...

আইভী এর ছবি

ভাল লিখেছ! চলুক

আইভী এর ছবি

ভাল লিখেছ! চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।