এক শচীনভক্তের খোলা চিঠি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৪/২০১১ - ৮:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় শচীন,

আমাদের ড্রইংরুমের শোকেসের কাঁচটায় আপনার একটা স্টীকার লাগিয়েছিলাম ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়ার সময়। ১৬-১৭ বছর পরে স্টীকারটা এখন পুরনো হয়ে গেছে, কিন্তু পুরনো হয়ে যাননি আপনি। ছোটবেলা থেকে পেপার কাটিং জমানো শখ আমার- পুরনো কাগজগুলোর বেশিরভাগ জুড়েই আপনার ছবি আর খবর। আমার কাছে পৃথিবীতে দুই ধরণের ব্যাটসম্যান আছে — এক, পৃথিবীর শুদ্ধতম ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার; দুই, বাকি সবাই।

আপনার ব্যাটিং আর রেকর্ড নিয়ে তো আর কিছু বলার নেই,ওগুলো সবারই জানা। আর পরিসংখ্যান তো কেবলই কিছু সংখ্যা, আপনাকে প্রকাশ করার সাধ্য কোথায় তাদের! আপনার ব্যাটিং তো শুধু চার-ছয় ছিল না, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল- আপনার আনন্দদানকারী ব্যাটিং। অনেক সময়ই পরিসংখ্যান বিরক্তিকর ক্রিকেটারদের ‘গ্রেট’ বানিয়ে দেয়। কিন্তু আপনার ব্যাটিং এর চেয়ে বড় বিনোদন যদি কিছু থেকে থাকে, তবে এর সাথে আমার খুব কমই পরিচয় হয়েছে। হাজার হাজার রান, রেকর্ডের পর রেকর্ড- কিন্তু আমি আপনাকে মনে রাখব আমার শৈশব-কৈশোরের বিনোদন সরবরাহকারী হিসেবেই।

কেউ কেউ বলে, আপনি নাকি ম্যাচ জেতাতে পারেন না। যারা বলে, তারা কোনদিন শচীন হওয়ার যোগ্যতা রাখে না, পারবে না আরো কয় জনমেও। এরা ভুলে যায়, ২০০৩ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৫ বলে ৯৮ রানের কথা, ১৯৯৮-এ চেন্নাই টেস্টে অষ্ট্রেলিয়ার সাথে অপরাজিত ১৫৫ রান,২০০৮-এ ইংল্যান্ডের সাথে ৪র্থ ইনিংসে ৩৮৭ রান চেজের সময় অপরাজিত ১০৩ রানের কথা, ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ওয়ানডেতে অপরাজিত ২০০ রানের কথা, ১৯৯৮-এ অষ্ট্রেলিয়ার সাথে শারজাতে পর পর দুই ম্যাচে ১৪৩ আর ১৩৪ এর কথা, ঢাকায় ১৪১ রান, সাথে ৪ উইকেটের কথা। এরা মনে রাখে চেন্নাইয়ের ১৩৬ বা হায়দ্রাবাদের ১৭৫ এর কথা। টেষ্টে ১৩ বার আর ওয়ানডেতে ৬০ বার ম্যান অফ দি ম্যাচ দেখলেও যে কারো বোঝা উচিত, আপনি কতগুলো ম্যাচ জিতিয়েছেন। আপনার ৫১ টেষ্ট সেঞ্চুরীর ২০ জয়,২০ ড্র্‌,১১ পরাজয়।ওয়ানডের ৪৮ সেঞ্চুরীর ৩২ জয়, ১৩ পরাজয়। লারাকেও ৩টি ডাবল সেঞ্চুরী আর ৮বার ম্যাচে দুইশর বেশি রান করার পরেও পরাজিত দলে থাকতে হয়েছে।আপনাকে ২১ বছর ধরে দলের ব্যাটিং একাই কাঁধে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে। যেকোন সময়ের যেকোন বিশ্ব একাদশ গড়লে, এমন কোন অধিনায়ক নেই যে, তিনি বলবেন, আপনার দল বেশি জয় পায় না বলে আপনাকে দলে রাখবেন না, এজন্য তো আপনি না-দায়ী দলের অন্যরা, যারা আপনার কাছাকাছি অবদানও রাখতে পারেনি।

আমাদের প্রজন্মটা খুব বেশি সৌভাগ্যবান, আপনার ব্যাটিং সেই ছোটবেলা থেকে দেখতে পেরেছি বলে। আমরা ব্র্যাডম্যান-রিচার্ডসকে দেখিনি, লোকের মুখে শুনেছি। তবে তাঁরা যদি আপনার মত খেলে থাকেন, তবে অবশ্যই তাঁরা ভাল খেলোয়াড় ছিলেন।

আপনাকে এবার একটু বিরক্ত করি। জানি, এই তুলনায় আপনিও বিব্রত হবেন, তবুও বলি- ব্র্যাডম্যানের সেই সময়টায় এত প্রযুক্তি ছিল না যে, ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা দুদিনেই ধরে ফেলবে। তিনি ২০ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫২ টেষ্ট খেলেছেন আর আপনি ২১ বছরে ১৭৭ টেষ্ট,৪৫৩ ওয়ানডে। তাঁর অতিমানবীয় ৯৯.৯৪ গড় অবশ্যই নমস্য, কিন্তু এখনকার এই ব্যস্ত শিডিউল, প্রতিটি বলের নিখুঁত টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের যুগে তাঁর এই গড় থাকত না বলেই বোধ করি। তাঁর ১০০ গড় হওয়ার ম্যাচ যখন সবাই দেখছিল,তিনি হয়ত চাপ সইতে না পেরেই প্রয়োজনীয় চারটি রান করতে পারেননি। আর বছরের পর বছর ধরে আপনার সাথে ছিল শতকোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ।যেখানে ব্র্যাডম্যানের ৬৯৯৬ রানের ৫০২৮ রানই এসেছে কেবল ইংল্যান্ডের সাথে, সেখানে আপনাকে খেলতে হয়েছে নানা দেশের ভিন্ন ভিন্ন পিচে, পড়তে হয়েছে নানারকম বোলিং-এর মুখোমুখি।

সময়ের সাথে সাথে আপনার টুপিতে একটির পর একটি পালক যুক্ত হয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার এখনো বদলায়নি- সাফল্যকে সহজভাবে নেয়ার ক্ষমতা। আপনার হাজারো কীর্তির মধ্যে সবচে বড় তো আসলে এটাই। শুধু ব্যাটিং নয়, ভদ্রতা-বিনয় শিখতেও আপনার কাছে যাওয়া উচিত একটা-দুটা সেঞ্চুরী করে ধরাকে সরা জ্ঞান করা ক্রিকেটারদের। ব্র্যাডম্যান-রিচার্ডস-লারাকে বোলাররা ভয় পেত। আপনাকে যত না ভয়, তারচেয়েও বেশি শ্রদ্ধা। এটা বোধ হয়, শুধু ভাল ব্যাটিং করলেই পাওয়া যায় না। এখনো আপনি ‘ওয়াক’ করার মত সৌজন্য দেখান। প্রতিবছর ২০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে সাহায্য করেন। বাবাকে কথা দিয়েছিলেন বলে আপনি অ্যালকোহল প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের ২০ কোটি রূপি দূরে ঠেলে দেন। মানুষটা আপনি বলেই নিজের মনের কাছেই বেশি দায়বদ্ধ।

আপনি ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের একজন। অথচ আপনার কাছে সবচে অমূল্য সম্পদ- আপনার গুরু রমাকান্ত আচরেকারের দেওয়া ১৩টি এক রূপীর কয়েন- নেটে সারাদিন আউট না হলে আপনি উপহার পেতেন একটি করে। অথচ ঘটতে পারত একেবারে উলটো। এত অল্পবয়সে এত খ্যাতি, এত প্রাচুর্য যে পায়, তার মাথা ঠিক থাকে না, থাকার কথাও না। কিন্তু অন্য অনেক ব্যাপারের মত এখানেও আপনি ভিন্ন। আপনাকে ঘিরে কোন স্ক্যান্ডাল নেই, ম্যাচ পাতানোর বিষবাষ্প আপনাকে ধূমায়িত করতে পারেনি। আপনার জীবনের গল্প একেবারেই পরিবারকেন্দ্রিক।

আজ থেকে অনেক বছর পরে আপনাকে ঘিরে থাকা নাতি-নাতনিদের যখন আপনার গৌরবের গল্প বলতে বসবেন, তখন একটি রাতের স্মৃতিচারণ আপনাকে একদম অন্যরকম করে তুলবে, হয়তো নিয়ে যাবে এক ঘোরের মধ্যে- সেই রাত, একুশ বছরের ক্যারিয়ারের একমাত্র অতৃপ্তি ঘুচানোর রাত,আপনার জীবনের সবচে গর্বের রাত, মুম্বাইয়ে নিজের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খাওয়ার রাত...

শচীন,আপনার হাতে বিশ্বকাপ দেখার জন্য অনেকদিন স্বপ্ন দেখেছি...

আপনাকে ভালবাসতাম, ভালবেসে যাব...

ইতি,

আপনার গুণমুগ্ধ

প্রিয়ম

৪-৪-১১

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

ভালো লেগেছে লেখাটা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আশাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে...

Faisal Hasan এর ছবি

আমাদের অতি প্রিয় পিএমওর পোস্টে আরেকবার 'লাইক' দিতে পেরে নিজেকে ধন্য অনুভব করছি। আশা করি এই সুযোগ বারবার পাব হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

শচীন তেন্ডুলকার খেলোয়াড় হিসেবে অনেক অনেক বড়, মানুষ হিসেবে তিনি তার চাইতেও বড়।

কেউ কেউ বলে, আপনি নাকি ম্যাচ জেতাতে পারেন না।

ওয়ানডেতে শচীনের অসাধারন কিছু ম্যাচ বের করে আনা ইনিংস আছে, দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং দিয়েও অনেক ম্যাচ বের করে এনেছেন শচীন। ম্যাচ না জেতানোর কথা বলার সম্ভবতঃ একটাই কারণ- টেস্ট ক্রিকেট শচীনের পূর্ণ রুপ দেখেনি কখনো। দুর্ভাগ্যই বোধহয়। এখানে দেখুন, উইজডেনের বিচারে টেস্ট ক্রিকেটে সেরা ১০০ ইনিংসের মাঝে শচীনের কোন ইনিংস নেই। এই জায়গায় লারা এগিয়ে। সেরা ১৫টি ইনিংসের মাঝে ৩টিই তার।

... যাক, এইসব পরিসংখ্যানে শচীনকে বাঁধার কোন মানে নেই। শচীন এক-অদ্বিতীয়- নমস্য।

অদ্রোহ এর ছবি

একটা সময় পর্যন্ত শচীন-লারার নাম একসাথেই উচ্চারিত হত, তার খানিক বাদে আসল পন্টিং এর নাম। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে লিটল মাস্টার নিজেকে অনতিক্রম্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছেন। ব্র্যাডম্যানের খেলা কখনও দেখিনি, তাই তাকে নিয়ে মন্তব্যের স্পর্ধা দেখাবনা। তবে আমার কাছে শচীনের তুলনা শচীনই।

আর সচলায়তনে স্বাগতম বদ্দা দেঁতো হাসি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

শচীনের তুলনা শচীনই...

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ...

অতিথি লেখক এর ছবি

ঈশ্বর, স্বর্গে দেদারছে খেয়ে পরে বিরক্ত, তাই তিনি মনোস্থির করলেন ক্রিকেট খেলবেন। অতঃপর তিনি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলেন- 'শচীন তেন্ডুলকার' হয়ে।

শচীন....পূজনীয়। ছোটকালে, অ্যান্টি-ভারত মনোভাবের কারণে তাঁকে পছন্দ করতাম না। কিন্তু শচীন এমন একজন, যে ব্যাটিং মহিমায় ঘোর শত্রুকেও জয় করে নিতে পারে।

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্বকাপ প্রাপ্তি শচীনের সাফল্যে পূর্ণতা এনে দিলো, আনন্দের হলো তার বিদায়ের মুহুর্তটি। শচীনভক্তদের জন্য এরচে' আনন্দ আর কী হতে পারে!

আয়নামতি

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ ব্যাক্তিত্ববান একজন উচুঁ মনের মানুষ, সত্যিই নমস্য,ধন্য আমাদের প্রজন্ম যারা এরকম একজন মানুষের অতি মানবীয় খেলা দেখে বড় হবার সুযোগ পেয়েছে ... হাসি

-অর্ফিয়াস

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

ভালো লাগল।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কিছু বন্ধু ছিলো তারাও নাজেনেই বলত শচীন ম্যাচ জেতাতে পারে না কিংবা সে সেঞ্চুরি করলে ভারত হারে। পরে আমি যখন ক্রিকইনফো থেকে তার পরিসঙ্খ্যান বের করে দেখালাম তারপর থেকে সবচুপ। আসলে অনেকে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব থেকেও মনে হয় এমন উচ্চবাচ্য করে শুধু। শচীন এমন একজন ক্রিকেটার যার বিষয়ে যতকিছুই বলা হোকনা কেনো, কম হয়ে যায়। টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রভাব একটু কম হলেও দেখতে হবে যে পুরো ভারতই দেশের বাইরের মাটিতে কেমন আনকোরা খেলে। সেখানে আমি শুধু শচীনকেই দেখেছি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একা লড়তে। যদিও পরবর্তীতে লক্ষণ সহ আরো কিছু ভালো ব্যাটসম্যান পেয়েছে ভারত টেস্টে। তাছাড়া ওপেনিং থেকে এমন পারফরম্যান্স আর কয়জন ক্রিকেটার এর আছে?

সত্যি কথা বলতে কি, আমার ক্রিকেট বিষয়ক যত ভালো লাগা, তার সবটুকুই শচীন আর ওয়াসিম থেকে শুরু। একজন ব্যাটিং এ, আর একজন বোলিং এ। দলহিসেবে এই দুইটিমকে কখনই সাপোর্ট করিনা কিন্তু এইদুইজনের খেলা তন্ময় হয়ে উপভোগ করি। ওয়াসিম আগেই গেছে। শচীনও যাবার পথে। আমার ক্রিকেট ভবিষ্যত শেষপ্রায় ওঁয়া ওঁয়া

অতীত

মর্ম এর ছবি

ব্যাটিং এ তামিম আছে, আর বোলিং এ মাশরাফি... বাংলাদেশের খেলা ছাড়া নির্ভেজাল আনন্দ আর পাই না! আর যাঁরাই খেলুক, চাই বা না চাই, মন ঠিকই ভাল লাগা মন্দ লাগার নিক্তি নিয়ে হিসাব কষতে বসে!!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

মর্ম এর ছবি

১। শচীন আসলেই শচীন। তাঁকে মহোত্তর প্রমাণ করার জন্য স্যার ডন বা লারার সাথে তুলনা করতে হবে কেন?! তাঁরা এক একজন একে একভাবে সেরা! ক্রিকেটে এমনিতেই একটা দিন আরেকটা দিন থেকে আলাদা, আর আমরা দিব্যি 'সর্বকালের' হিসাব খুলতে বসে যাই!

২। লেখা ভাল লেগেছে। হাসি

৩। কেন জানি না, ফাইনালের পর কাপ নিয়ে মাঠ ঘোরার ছবি দেখার সময় কেবল মনে হচ্ছিল- "শচিনের আজ ওয়ানডে থেকে অবসর নেয়া উচিত। একজন চ্যাম্পিয়নের বিদায় এরকম চ্যাম্পিয়নের মত না হলে ঠিক মানায় না আর এমন সুযোগ আর আসবে না!" স্টীভ ওয়াহ-র বিদায়টা এখনো চোখে লেগে আছে।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

আমার ধারণা শচীন এখন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছেন। তা ছাড়া তাঁকে এখনই বিদায় বলতে মন চাইছেও না। আমি অবশ্য লারারই ভক্ত ছিলাম বেশি, মাঝে কিছুদিন পন্টিংয়ের, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে টেন্ডুলকারও চলে গেলে ব্যাটসম্যান বলতে আর কেউ থাকল কোথায়?

সাইদ এর ছবি

টেস্ট ক্রিকেটে দ্রাবিড় টেন্ডুল্কার থেকে ভাল ব্যাটসম্যান। আর বোলিং সহায়ক উইকেটে টেস্টে টেন্ডুল্কার থেকে দ্রাবিড়-এর পারফোর্ম্যান্স ভাল। আর গত ৭-৮ বছরে ভারত দেশের বাইরে যত টেস্ট সিরিজ অথবা টেস্ট জিতেছে, তাতে ব্যাটিং-এ টেন্ডুল্কার থেকে দ্রাবিড় ও লক্ষণ-এর কার্যকারিতা বেশি ছিল।
যদিও ওডিয়াইতে টেন্ডুল্কারের তুলনা সে নিজেই। সর্বকালের সেরা ওডিআই ব্যাটসম্যান কোন সন্দেহ নাই। তবে টেস্টে প্রথম ৫ জনে থাকতে পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারো একই অবস্থা...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগলো। পিউর শচীন বন্দনা। শচীনের তুলনা যেমন শচীন নিজেই, তেমনি স্যার ব্র্যাডম‌্যানের তুলনাও স্যার ব্র্যাডম‌্যানই। তাঁর সময়ে তিনিই ছিলেন সেরা। এই সময়ে তিনি খেললে ডাক মারতেন, এটা বলাটা যেমন সহজ, আবার তিনি এই সময়ের হলে শচীনকে হয়তো কেউ মনেই রাখতো না— এমনটাও বলা যায়। এই দুজনের তুলনা তাই চলে না, কোনোভাবেই না। দুজন দুসময়ের ক্রিকেটের বরপুত্র। তবে স্যার ব্র্যাডম্যান শচীনকে তাঁর নব্বুইতম জন্মদিনে দাওয়াত দিয়েছিলেন এই বলে, "ছেলেটা আমার মতোই খেলে"।

স্যার ব্র্যাডম্যানকে না পেলেও আমাদের সময়ের যে তিনজন ক্রিকেট গ্রেটের সাথে পরিচয় হয়েছে তাঁদের মধ্যে একমাত্র লারা ছাড়া বাকি দুজনই বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেতে পেরেছেন। কাঁচের মধ্যেও বলে ঘূর্ণী ধরাতে সক্ষম মুরালিধরনও তাঁর জীবনের শেষ ওডিআই'টা খেলে ফেললেন সেদিন মুম্বাইয়ে। তাঁর ওয়াক'টা দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। হলো না। লারার'টা দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। শচীনের'টা দেখবো এই আশা রাখি।

অপেক্ষায় আছি, শচীন টেন্ডুলকার'কে 'স্যার শচীন রমেশ টেন্ডুলকার' হিসেবে দেখার দিনটির।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও অপেক্ষায় দিনটির জন্য...

নিঘাত তিথি এর ছবি

ভাল্লাগলো লেখাটা।
আমাদের প্রজন্ম সত্যি ভাগ্যবান যে এরকম একজন গ্রেট-এর খেলা ছোটবেলা থেকে দেখেছি, দেখছি। তাই ১৬/১৭ বছরে স্টিকার পুরনো হয়ে গেছে কিন্তু শচীন রয়ে গেছে আগের মতই। পৃথিবীর নানা প্রান্তের অসংখ্য ভক্তের মত আমিও একজন। কত কিছু পাগলামী যে করতাম... একটা সময়ে প্রতি ম্যাচে শচীনের সমস্ত স্কোরের (ডট বল, সিঙ্গেল, ডাবল, চার ছয়সহ) জন্য লগবুক রাখতাম, একটা খেলাও মিস হতো না। সেঞ্চুরীর দৌড়ে এক পর্যায়ে শচীন, সাঈদ আনোয়ার, আর মার্ক ওয়াহ কাছাকাছি চলে এলো। সেই আঠারো সেঞ্চুরীর কোঠা পেরিয়ে এরপর শচীন একাই একের পর একে ভেঙ্গে যাচ্ছে নিজের রেকর্ড। এখন আর নিয়মিত খেলা দেখা হয় না, তবু ভাগ্যবান যে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরী করার ম্যাচটা মিস করিনি। এবং অবশেষে ২১ বছর পর অবশেষে বিশ্বকাপ উঠলো তার হাতে। সব কিছু যার পাওয়া হয়ে গিয়েছিলো বিশ্বকাপটাই বা কেন বাকি থাকবে?

ছোটবেলায় ভাবতাম শচীন যেদিন খেলবে না সেদিন থেকে ক্রিকেটে আর কোন ইন্টারেস্ট থাকবে না। আল্লাহ বাঁচিয়েছে, এখন আমার বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলে, এখন মনপ্রান দিয়ে নিজের দেশকে সমর্থন করি। শচীনের সাথে সাথে নিজের দেশের বাইরে অন্য দলকে সমর্থনও শেষ হয়ে যাবে।

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে। একজন ভক্তের অন্তরের কথাগুলো আপনি লিখেছেন। আমি অবশ্য ব্যাক্তিগতভাবে শচীনের ভক্ত তার কনসিস্ট্যান্সির জন্যে এবং মানবিক গুনাবলীর জন্যে। তার অতিমানবীয় ধারাবাহিকতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমি শচীন থেকে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস এবং ব্রায়ান লারার ব্যাটিং বেশি উপভোগ করতাম। লারা আমার প্রিয় ব্যাটসম্যান। ভিভের আগ্রাসী এবং লারার নান্দনিক ব্যাটিংশৈলী আমাকে অনেক বেশি টানে। তারপরও বলবো, শচীনের ধারাবাহিকতা, আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। একজন মানুষ কিভাবে এটা পারে!

আমরা ব্র্যাডম্যান-রিচার্ডসকে দেখিনি, লোকের মুখে শুনেছি। তবে তাঁরা যদি আপনার মত খেলে থাকেন, তবে অবশ্যই তাঁরা ভাল খেলোয়াড় ছিলেন।

ব্র্যাডম্যান এবং রিচার্ডসকে শচীনের মতো খেলে ভালো খেলোয়াড় হতে হবে, এই জায়গাটায় একটু দ্বিমত পোষন করলাম। শচীনবন্দনা করতে গেলেও অপরাপর গ্রেটদের তাদের জায়গাতেই থাকতে দিন প্লিজ, শচীনের সাথে তুলনা শচীনেরই হোক আর অন্যদের তুলনা হোক তাদের নিজের নিজের সাথে। দে অল আর গ্রেটস্‌।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।