আমার চোখে কবির সুমেঘ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৯/০৪/২০১১ - ৭:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার চোখে কবির সুমেঘ

‘প্রতিদিন’ সংবাদ পত্রের পাতা চায়ের কাপ হাতে বেতালার মতো উল্টে চলেছি।রেডিওতে নিজের পছন্দের ষ্টেশনের মেগা হার্তজ্‌ খুঁজতে গিয়ে যে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজের সম্মুখিন হতে হয় আজ সকালে সংবাদপত্রের পাতা উল্টাতে উল্টাতে সেরকমই শব্দ খরমর খরমর করে আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল লোভনীয় পপ্‌কর্ণের দিকে আর সাথে অদ্ভুত কাগুজে গন্ধের আবহ!এই পপ্‌কর্ণ মেলা বা শপিং কমপ্লেক্সের কাঁচের বাক্সের মধ্যে নজর কাড়া বিশেষ মুখরোচক খাদ্য নয়।

তবে রুপোলী পর্দার সোনালি ছটা আর বিশ্বায়নের ঘটা একে প্রতিদিনের পাতায় প্রতিদিনই মুখরোচক করে তোলে সেটা বলাই বাহুল্য।রুপোলী পর্দার রঙ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ না করলেও পপ্‌কর্ণের পাতা উল্টে আজ থামতে বাধ্য হয়েছি এর দ্বিতীয় পাতায়।পাতা জুরে কোথাও কপিল দেবের উচ্ছ্বাস আবার মহেন্দ্রা সিং ধোনির স্মিত হাস্য মুখ সদ্য বিজিত বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে আর তার সাথে উল্লাসে ফেটে পড়া ভারতীয় নরনারী জাতীয় রঙে রঙিন হওয়ার সাজের আলোক চিত্র।এর মাঝেই চোখে পড়ল আরেকটি ছবি-একটা চেনা বইয়ের প্রচ্ছদ।নতুন কলেজে ভর্তি হাওয়ার সময় যেমন একটা চেনা মুখ দেখতে পেলেই কলেজে যাওয়া থেকে ক্লাসে বসার দুটো সীট পাশাপাশি হয়,অচেনা মুখ ছেড়ে চেনা মুখের সাথে প্রাথমিক গল্প জমে ঠিক তেমনি এই চেনা প্রচ্ছদ আর প্রিয় কবির নাম দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ছোট্ট আর্টিকেলটা তে।বইটার নাম “দু এক টুকরো সুমেঘ”।সংবাদ পত্র এই বইটির প্রথম পাতার থেকে লেখিকা অনিতা অগ্নিহোত্রীর লেখা “কবির সুমেঘ”এর কিছু অংশ উল্লেখ করেছে।কবি স্বপ্নাভ রায়চৌধুরির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ও তাঁর লেখা কবিতা ও গানের সাথে ক্রমশ পরিচয়।তাঁর ভাষায়,“যুগলবন্দীতে পারঙ্গম হলেও কথার চেয়ে না-বলাই ছিল তাঁর স্বভাব।”তাঁর এই উক্তি কবিকে যেন আরও চেনা পরিচিতের গন্ডির মধ্যে বেধে দেয়।কবির লেখা বই গুলোর মধ্যে এটা আমার পড়া প্রথম বই।দিন রাত এর সাথে পড়তে থাকা এই বইয়ের কবিতা গুলো নিষিক্ত করেছে আমার অনুভূতির বীজ আর তার থেকেই জন্ম নিয়েছে কবিতার প্রতি ভালোবাসা।“কান্না পেলেই সবচে’ ভাল সময় কাটে” এই লাইনটা অনেকভাবে অনেক কথা বলেছে,সামলেছে আবার রাত কেটেছে ভাল সময় হয়ে-উপভোগ করেছি।প্রতিটা কবিতা পড়তে পড়তে একটা কথাই মনে হয়েছে কবির সার্থকতা আমার মতো মানুষদের জীবনের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা ফিরে দেখানো যাতে তারা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো জীবনের ঘরে চুপিসারে পড়ে থাকা ভাল লাগা খারাপ লাগার আদান প্রদান করতে পারে যখন “যাপনসীমানা মাপছে দর্জিফিতে”।আমি সেই সীমা রেখার ধার ধারিনা তাই হয়ত শুধু কবির হাত ধরে বুঝেনিই পরিস্থিতিটা আর মন কেমন করে ওঠে আমার কাঙ্খিত উন্মুক্ত দিগন্তের জন্য।তাই মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মনের কথা গুলো কবি কি ভাবে জেনে গেলেন!হয়ত শুধু আমার নয় সবারই মন কবির ছন্দে বলে-“অন্যমনে ভাসিয়ে দিলাম দু এক মুঠো ভাবনাডানা/তল্পিতল্পা গুটিয়ে যখন উধাও আমার মন ঠিকানা”।তাই অন্য মনস্কতার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্ববিদদের মাঝে মাঝে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ একজন কবিই বলতে পারেন,কারন সবার মনের খবর কবির কলমে বন্দি আর তার মধ্যে কিছুটা বন্দি হয়েছে ‘দু এক টুকরো সুমেঘ’এর পাতায়।লেখনির মসৃন পথ রুদ্ধ করে দাঁড়ানো মারনব্যাধির সাথে যুদ্ধে জয় লাভও তাঁর দৃঢ় সত্ত্বার দৃষ্টান্ত।তাঁর লেখাতেও সেই দৃঢ়তার প্রকাশ পেয়েছে।সঙ্গে তাঁর জীবনদর্শন ধরা পড়েছে বইটির শেষ প্রান্তে দুটি ছোট গল্পে।আর ১১১ পাতার অনুভূতি ছেয়েছে প্রচ্ছদের খয়েরী রঙের উপর ভেসে বেড়ানো সাদা সাদা দু এক টুকরো সুমেঘের গায়ে।প্রতিদিনের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে এই প্রচ্ছদ সাথে কবি স্বপ্নাভ ও তাঁর এই বইটির কিছু কথা।


দু’এক টুকরো সুমেঘ

হরেককিসিম মেঘ দেখেছি ছোট্ট থেকে

বান্ধবমেঘ চিন্তনমেঘ দাম্পত্য

বেশিরভাগই বৃষ্টিকারণ একটা ছাড়া

নাম দিয়েছি সুমেঘ যেটা একলা আমার

ছোট্ট থেকেই একটা ধাঁধা সেপ্টেম্বর

সতেরোতেই বিশ্বকর্মা উড়বে ঘুড়ি

আগের রাতে গোয়েন্দারা ছাদ পাহারায়

সুমেঘ ছাড়া অন্য কোনও মেঘ না জমুক

ফিরতে চাইছি শৈশব ফের ফেরার ইচ্ছে

যাপন এখন সন্ধে পেরোয় রাত অভিমুখ

আগুনচুল্লী কিংবা মাটির নিচের কফিন

দু’একটুকরো সুমেঘ যেন সঙ্গে থাকে


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. লেখার শেষে নিজের নাম দিন।

২. লেখা অনুচ্ছেদে ভাগ করে দিন, নয়তো পড়তে অসুবিধা হয়।

৩. "সুমেঘ" মানে কী?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।