মেয়েটি।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৮/০৫/২০১১ - ১২:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেয়েটি হঠাৎ করেই এসেছিল আমার সংসারে। এমন নয় যে তাকে চাইনি আমি। বরং উলটো। তাকে চেয়েছিলাম, খুবই চেয়েছিলাম। সে আসবার আগে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি অনেক রাতে। স্বপ্নে তার সাথে কথা বলেছি, তার সাথে হেসেছি। হাত দিয়ে তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। সত্যিই কি সে আসবে? সত্যিই কি সে আসবে আমার সংসারে?

যেদিন সে এলো, স্পষ্ট মনে আছে যে আমি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। জামার আস্তিনে চোখ মুছেছিলাম বারবার। সে খেয়াল করেনি অবশ্য, তাহলে পরে এটা নিয়ে আমাকে নির্ঘাত খ্যাপাত অনেক। অনেক দিন হয়ে গেল, তাও মনে হয় এইতো সেদিন সে এলো।

একটা জিনিস অবশ্য জানতাম আগে থেকেই। যদি সে আমার সংসারে আসেও, সে চিরকালের জন্যে জন্যে আসবে না। জানতাম একদিন সে চলে যাবে। আমরা কেউই তা নিয়ে কোনদিন কোন কথা বলিনি, কিন্তু মনে মনে দুজনেই জানতাম যে সে চলে যাবে। এই প্রসংগটাকে বারবার এড়িয়ে গেছি। সত্যি কথা বলতে কি আমিই বোধহয় বেশী এড়িয়েছি তার চেয়ে। সে দু একবার আকারে ইংগিতে কথা বলতে চেয়েছিল। আমিই তখন অন্য কথায় চলে গেছি। সে বুঝেছিল নিশ্চয়ই, তাই ওটা নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি।

আজ সেদিনটি এসেছে। আজ তার চলে যাবার দিন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভিতরে ভিতরে তার আয়োজন চলছে। আমি দেখেও না দেখার ভান করেছি। আড়ালে চোখ মুছেছি। আপন মনে চিৎকার করে বলেছি, চলেই যদি যাবে তাহলে এসেছিলে কেন?

ভোর বেলাতে ঘুম ভেঙ্গেছে আজ। বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে আমি পূব আকাশে সূর্য্য ওঠার প্রতীক্ষায় আছি। কোনভাবে আজকের সূর্য্য ওঠাকে থামিয়ে রাখা যায় না? আজকের দিনটা না এলে কি এমন ক্ষতি হতো পৃথিবীর?

পিছনে হালকা পায়ের শব্দ। আমার পাশে এসে সে দাঁড়িয়েছে। আমি মাথা নীচু করে থাকি। চেয়ারের পাশটিতে সে চুপ করে বসে থাকে কিছুক্ষন। তারপর একসময়ে আমার হাতের উপর মাথা রেখে ঝুরঝুর করে কেঁদে ফেলে।
আমার চোখ ভিজে আসে। ঈশ্বর-সে যদি চলেই যাবে, তাহলে তাকে আমার সংসারে আসতে বলেছিলে কেন?
আমি কোন কথা না বলে তার মাথায় হাত রাখি।
কান্নায় ফোঁপাতে ফোঁপাতে সে বলে, “আমি চলে গেলে তুমি একা একা কি ভাবে থাকবে?”

এ প্রশ্নের কোন জবাব হয় না।

পূব আকাশে তখন চতুর্দিক আলো করে সূর্য্য উঠছে। সেদিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বলি, ঈশ্বর তুমি একে শান্তিতে রেখো, তুমি এর মঙ্গল করো।

আজ আমার বড় আদরের ছিঁচকাঁদুনি মেয়েটির বিয়ে।

-নিলম্বিত গণিতক


মন্তব্য

রু (অতিথি)  এর ছবি

ভালো হয়েছে। প্রথম বাক্যটা পড়ে কেন যেন মনে হচ্ছিল সন্তানের কথা বলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেটাই দেখলাম।

আয়নামতি1 এর ছবি

অনেক ভালো লেখেছেন চলুক আপনার অল্প শব্দের গল্পগুলো দেখে আমিও কিছু লেখেছি জানেন দেঁতো হাসি মাইর মাটিতে না পড়ে যদি পিঠে এসে সাওয়ার হয় সেই ভয়ে দেইনি শয়তানী হাসি

ইমতিয়াজ শুভ এর ছবি

ভাল লাগল। দোয়া করি আপনার কন্যার সংসার চিরস্থায়ী হোক। Internet Marketing Blog

বন্দনা- এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো লিখাটা।

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

এটাই জীবনচক্রের স্বাভাবিক নিয়ম। মন খারাপ

আপনার কন্যার জীবন সুখী হোক।

অতীত

শামীম এর ছবি

পোস্টে প্রবেশের আগেই এবং প্রতি লাইনেই কন্যার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি - এটা গল্পটার স্বার্থকতা নাকি ব্যর্থতা সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো মনে হয় ঠিক হবে না হাসি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

গল্পে দুজনের অনুভুতিই খুব সুন্দর ভাবে এঁকেছেন। চমৎকার লেখা। খুব ভালো লাগলো।

meghdut এর ছবি

অনুভূতিটা সুন্দর করে ফুটে উঠেছে।
আপনার আরো লেখা পাবার আশায় রইলাম।

অতিথী  এর ছবি

লেখাটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ। এটি গল্প (অথবা গল্পের প্রচেষ্টা) মাত্র, বাস্তবকাহিনী নয়। ভাল থাকুন।

-নিলম্বিত গণিতক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।