দিদিমণি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০৬/২০১১ - ১০:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার দিদিমণি-কোনো অসাধারণ নারী হয়তো নন, কিন্তু এই সাধারণ নারীটি তার অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে অন্তত একটি জীবনকে ঋদ্ধ করেছেন। আমি তার কাছে ঋণী। সাতচল্লিশের দেশবিভাগে বাংলাদেশের যেই বাড়িটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই বাড়ির সেই ভয়ালরাতের নির্মমতার প্রত্যক্ষদর্শী, মুক্তিসংগ্রামের অস্থির সেই দিনের সাক্ষী এই নারী গত ১৫ই জুন,২০১১ সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। এ কবিতায় তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।

দিদিমণি, তুমিও চলে গেলে?
তুমিও ছিঁড়ে গেলে এই মায়ার বাঁধন?
তুমিও বুঝি স্বর্গালোকের ঐ শুভ্রাসনকে ফিরিয়ে
এই কালোঘেরা পৃথিবীতে আর থাকতে চাইলে না?
তা চাইবেই বা কেন;
এ স্বার্থপর পৃথিবী তোমাকে আর কিবা দিতে পারতো?
দিয়েছে তো অনেক-
দুঃখ, জ্বালা, যন্ত্রণা আর অনেক অনেক কষ্ট।
অনেক বেদনাকে সয়েছো তুমি;
তবু হাসি ফোটাতে চেয়েছো সবার মুখে।
যেই চোখদুটো কালের খেলা দেখে গেছে অপলকে
শেষবেলাতে ঠিকমতো দেখতেও পেতে না সেই চোখে।
হাতড়ে হাতড়ে আমার চোখে-মুখে হাত বোলাচ্ছিলে
আর বলছিলে, “তুই কত্তো বড়ো হয়েছিস!”
হ্যাঁ দিদিমণি, আমি অনেক বড় হয়ে গেছি।
দেখছো না আমার চোখে জল নেই-
কারণ আমি বড় হয়ে গেছি;
বড়দের কাঁদতে নেই।
আমি তো বড় হয়ে সব ভুলে বসে আছি;
তুমি আমায় মনে করিয়ে দাও না দিদিমণি-
সেই রূপকথাগুলো, সেই ছড়াগুলো।
সেই রূপকথা-যা আমি তোমার কোলে শুয়ে শুনতাম।
সেই ছড়াগান-যা আমি উঠানময় গেয়ে ছুটতাম।
বলো না তোমার বধূবেশে পালকিতে চড়ার গল্প;
কিংবা ডিঙ্গিনায়ে করে নাইওর যাওয়ার গল্প।
অথবা বলো সেই রক্তস্নাত দিনের কথা;
সেই নির্মম ভয়াবহতার কথা-
যা শুনে শিউরে উঠতাম, মুখ লুকাতাম তোমার কোলে।
সেই সাতচল্লিশের রায়টের কথা,
সেই যে তুমি সবে বধূবেশে এসেছিলে স্বামীর ঘরে,
ওরা খুঁজছিলো সারা বাড়িময়।
তুমি লুকিয়েছিলে চুপটি করে;
লুকিয়ে থেকে চোখের সামনে জবাই হতে দেখেছিলে
প্রবল প্রতাপশালী শ্বশুরকে।
বলতে বলতে তুমি আঁতকে উঠেছিলে।
তোমার মুখেই প্রথম শুনেছি
স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুনঝরা দিনের গল্প।
সেইসব দিনের আতঙ্কের কথা,
পাকিস্তানিদের অত্যাচারের কথা
আর মুক্তিসেনাদের বীরত্বের কথা ।
আজও মনে পড়ে তোমার সেই কথাগুলো-
পৃথিবীটা বড় নির্মম দাদুভাই, বড়ই নির্মম।
সত্যিই দিদিমণি, পৃথিবীটা বড়ই নির্মম।
মায়ার বাঁধন বোঝে না, স্নেহের টান বোঝে না।
সময়ের স্রোতে ভাসিয়ে নেয় সব-
তবু তার সর্বগ্রাসী ক্ষিদে মেটে না।

--বাংলামায়ের ছেলে


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

শ্রদ্ধা

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

পাঠের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দিদিমণির জন্য শ্রদ্ধা। তার নামটা জানালে আরো ভালো হতো

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

পাঠের জন্য ধন্যবাদ। দিদিমণির নাম স্বর্গীয়া রাণী প্রভা সাহা। অতি শীঘ্রই তাঁকে নিয়ে আরো কিছু কথা লেখার আশা রাখি।

অমিত রঞ্জন এর ছবি

১৯৪৭ সালের রায়টের পর মহাত্মা গান্ধী বাংলাদেশে(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছুটে এসেছিলেন। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় এ রায়টের ভয়াবহতা-বর্বরতা আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। অত্যাচারের রক্তাক্ত খড়গ নেমে এসেছিলো হাজার হাজার মানুষের উপর। একইবাড়ির প্রায় অর্ধশত মানুষকে একরাতে মারা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সেইসময়কার গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন । সেই বাড়ির নববধূ দিদিমণি তাঁর শ্বশুরকে সেই রাত্রে চোখের সামনে জবাই হতে দেখেছেন...দিদিমণির নামটা না হয় গোপনই থাকুক...কি হবে আর পুরোনো ইতিহাস খুঁড়ে?...২০০১ সালে এই স্বাধীন বাংলাদেশেই তো দেখে ফেলেছি ধর্মান্ধতা কতটা বর্বর হতে পারে...

অমিত রঞ্জন এর ছবি

১৯৪৭ সালের রায়টের পর মহাত্মা গান্ধী বাংলাদেশে(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছুটে এসেছিলেন। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় এ রায়টের ভয়াবহতা-বর্বরতা আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। অত্যাচারের রক্তাক্ত খড়গ নেমে এসেছিলো হাজার হাজার মানুষের উপর। একইবাড়ির প্রায় অর্ধশত মানুষকে একরাতে মারা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সেইসময়কার গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন । সেই বাড়ির নববধূ দিদিমণি তাঁর শ্বশুরকে সেই রাত্রে চোখের সামনে জবাই হতে দেখেছেন...দিদিমণির নামটা না হয় গোপনই থাকুক...কি হবে আর পুরোনো ইতিহাস খুঁড়ে?...২০০১ সালে এই স্বাধীন বাংলাদেশেই তো দেখে ফেলেছি ধর্মান্ধতা কতটা বর্বর হতে পারে...

অমিত রঞ্জন এর ছবি

১৯৪৭ সালের রায়টের পর মহাত্মা গান্ধী বাংলাদেশে(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছুটে এসেছিলেন। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় এ রায়টের ভয়াবহতা-বর্বরতা আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। অত্যাচারের রক্তাক্ত খড়গ নেমে এসেছিলো হাজার হাজার মানুষের উপর। একইবাড়ির প্রায় অর্ধশত মানুষকে একরাতে মারা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সেইসময়কার গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ত্ব ছিলেন । সেই বাড়ির নববধূ দিদিমণি তাঁর শ্বশুরকে সেই রাত্রে চোখের সামনে জবাই হতে দেখেছেন...দিদিমণির নামটা না হয় গোপনই থাকুক...কি হবে আর পুরোনো ইতিহাস খুঁড়ে?...২০০১ সালে এই স্বাধীন বাংলাদেশেই তো দেখে ফেলেছি ধর্মান্ধতা কতটা বর্বর হতে পারে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শ্রদ্ধা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বইখাতা এর ছবি

কবিতাটা ভাল লেগেছে। তবে সেই সাথে সেই সময়ের ভয়াবহতা ও অন্যান্য কথা আরেকটু বিস্তারিত জানতে ইচ্ছা করেছে। আপনার দিদিমণির জন্য শ্রদ্ধা।

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

পাঠের জন্য ধন্যবাদ।
অতি শীঘ্রই এ বিষয়ে আরো কিছু কথা লেখার আশা রাখি।

কবি-মৃত্যুময় এর ছবি

মন খারাপ শ্রদ্ধা

অমিত আহমেদ এর ছবি

দিদিমণির জন্য শ্রদ্ধা।

কবিতার শেষ চারটি পঙ্ক্তি চমৎকার লেগেছে।

বাংলামায়ের ছেলে এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।