এইতো জীবন। পর্ব – ৪

তাপস শর্মা এর ছবি
লিখেছেন তাপস শর্মা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/১১/২০১১ - ৪:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডুম্বুরভ্যালীতে দ্বিতীয় দিনের শুরুটা খুবই সুখকর হয়নি। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই দেখি চরম বৃষ্টি। এমনিতেই হাতে মাত্র একদিন সময় আছে। খুব ভয় করছিল, আসলে তিন দিনের সময় নিয়ে এসেছি এখানে। এর মধ্যে আমার যে প্রধান কাজ তাই করা হয়নি। মানে ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছে এখানকার জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর একটা রিপোর্ট করার জন্য। আর আমি ব্যস্ত আছি আমার ডকুমেন্ট্রি এবং অন্যান্য কাজ নিয়ে। সকালে কোন রকমে ব্রেকফাস্ট সেরে বৃষ্টির মাঝেই ছাতা মাথায় বেরিয়ে পড়লাম। অফিস কাছারি কিছুই খোলা নেই। স্থানীয় একজনকে ধরলাম। এলাকার কিছু বিস্তারিত তথ্য তার কাছ থেকে জানা হল। কিন্তু অফিস না খোলা পর্যন্ত অফিশিয়ালি কাওকে পাচ্ছিনা। ভাবতে ভাবতে একটা চিন্তা মাথায় এল। একজনকে জিজ্ঞাসা করে পৌছালাম প্রোজেক্টের স্টেশন ইঞ্জিনীয়ার এর কোয়াটারে।

সমস্ত কাজ মিটিয়ে যখন ফিরলাম তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে মেঘ করে আছে খানিকটা। স্টেশন ইঞ্জিনীয়ার লোকটি ভালো মানুষ। আমাকে যা যা দরকার সব ভাবেই সাহায্য করেছেন। জানা গেলো গোমতীর জলস্তর অনেকটাই নেমে গেছে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেছে। বলতে গেলে তিনটি টারবাইন এর মধ্যে একটি এখন চালু আছে। বাকি দুটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। যেহেতু সম্পূর্ণ প্রোজেক্টের রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে তিনি আছেন ফলে তার কাছ থেকে অনেক পুরোনো তথ্যও উদ্ধার করতে পারলাম। যাক এইবার একটু শান্তি লাগছে মনে। কাজ শেষ না হলেও মোটামুটি কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছি। বিকেলে একবার মেইন অফিসে যেতে হবে, কিছু ডেটা কালেকশানের জন্য। উনি বলেছেন তিনি থাকবেন। তারপর আর চিন্তা নেই। এইবার আমার কাজ শুরু করার পালা।

ফিরে এসে দেখি আমার দুই সঙ্গী বন্ধু একটা ভালো কাজ করে ফেলেছে। ওদের বলে গিয়েছিলাম যদি পারিস নারিকেলকুঞ্জে যাওয়ার জন্য একটা বোট ভাড়া করে রাখিস। ওরা তা করেছে। গোমতীর তাজা রুই মাছ সহযোগে গরম গরম ভাত খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

IMG_121211

IMG_321156677

IMG_06655

IMG_90654

IMG_89900

IMG_231113

IMG_3223344

IMG_12233

IMG_433122

IMG_4554433333

IMG_76553333

IMG_55523

IMG_00443877

একসময় প্রায় ১০০টির মতো ছোট্ট দ্বীপ ছিল গোটা নারিকেলকুঞ্জে। এখন বেঁচে আছে ৫০ থেকে ৬০টির মতো। ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের উদাসীনতা কতটা চরমরূপ ধারণ করেছে তা এলাকায় পৌছেই বুঝতে পারলাম। রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাবে সব কিছুই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদিও পরে এই ব্যাপারে আমি রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীর সাথে আমি কথা বলেছিলাম। উনিও ঠিকঠাক জবাব দিতে পারেননি। যদিও এলাকাটা প্রচণ্ড দুর্গম, কিন্তু এই কারণে পর্যটনের এই হাল হতে পারেনা? একটা মজার ঘটনা বলি – আমি মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ডুম্বুরভ্যালীর জন্য আপনাদের পরিকল্পনায় এত খামতি কেন আছে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আপনার কাছে যদি কোনো উন্নত পরিকল্পনা থাকে তাহলে দপ্তরে এসে জানান, আমরা অবশ্যই ভেবে দেখব। আমার মাথা এমনিতেই তাড়াতাড়ি গরম হয়। বলা বাহুল্য তখনও হয়েছিল। কিন্তু উনাকে কি আর কিছু বলা যায়। তাই আর কথা বাড়াইনি। যাই হোক আমার বলতে ইচ্ছে করছিল লক্ষ লক্ষ টাকা বেতন দিয়ে যে কর্মী, ডেভলাপমেন্ট স্টাফ, ইঞ্জিনিয়ারদের পোষে রেখেছেন তারা কি করে? ঘোড়ার ঘাস কাটে?

দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে বোটে চড়ে বসলাম। গন্তব্য নারিকেলকুঞ্জ – দ্যা আইল্যান্ড। মনে একটা চাপা উত্তেজনা। যে আইল্যান্ডের কথা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি আমি সেখানে যাচ্ছি। কিন্তু বোটে উঠেই শরীরে একটা শিহরণ জেগে উঠল। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশী জলপথে সফর। আমার শুটিং এর বেশীর ভাগ শট এই জল পথেই নিতে হবে। কিন্তু আমি তো সাঁতারই জানিনা! যদি মাঝ পথে কোনো কিছু হয়ে যায়। যদিও আমার সাথে দুই বন্ধু এবং আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আছে। তাছাড়া আছে বোট এর চালক এবং সহচালক। কিন্তু তারপরও একটা ভয়। ছোটবেলা থেকেই চৌবাচ্চায় স্নান করে বড় হয়েছি, তাই এত বড় জলাশয়ের মাঝে আমি খেই হারিয়ে ফেললাম। বন্ধুরা হাসছিল। ওরা আমাকে সাহস জোগাতে বোট এর ছাদে নিয়ে গেল। মুলি বাঁশের বেড়া দেওয়া ছাঁদে উঠে আমার তো প্রাণ যায়যায় অবস্থা। কারণ ভেতরে বসে অতটা টের না পাওয়া গেলেও ছাদে উঠার পর স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে। স্রোতের সাথে বোট টাল খাচ্ছে বারবার। কয়েক মিনিট আমি চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। তারপর ধীরে ধীরে ধাতস্থ হলাম। না এইবার কাজ শুরু করা দরকার। আমরা মূল জলাশয়ে প্রবেশ করেছি।

অদ্ভুত অনাবিল একটা আনন্দে আমার মনটা ছেয়ে গেলো। আমি চারিদিকে চেয়ে দেখছি। কি অপূর্ব সব দৃশ্য। এই পথ ধরেই গোমতী এগিয়ে গেছে। ভাবতেই খুব ভালো লাগছিল। বোটের ইঞ্জিনের শব্দ নিঃশব্দ প্রকৃতির বুকে অনুরণন করছিল বারবার। হঠাত আমার বন্ধু আমার জামা টেনে ধরল বলল – দেখ দেখ। আমি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম – একটা হরিণ। তারপর আর বলার মতো নয়, ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ নেমে এল। কিন্তু সেগুলি ক্যামেরার রেঞ্জ থেকে এতটাই দূরে যে শুট করতে পারলাম না। বন্ধুরা বলল – আরে আরও অনেক কিছু বাকি আছে। ভুলে গেছিস ডুম্বুরভ্যালীর স্পেশালিটি। বিমল ভেংচি কাটল। হা হা, অ-তে অজগর আসছে তেড়ে। আমার মনটা কেমন আনচান করছে সত্যি দেখা পাওয়া যাবে কি। পাইথন। তারপর আবার মাথায় হাত। বলা নেই কওয়া নেই, ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামল।

---------------*----------------

[url= http://www.sachalayatan.com/node/41371]এবং আমিঃ এইতো জীবন – ১ [/url]

এবং আমিঃ এইতো জীবন – ২

এবং আমিঃ এইতো জীবন – ৩

===================================
তাপস শর্মা
আমার শহর
নভেম্বর ০৯ ২০১১


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

ভাল হইছে চলুক , কিন্তু ভিডিও কই?

তাপস শর্মা  এর ছবি

হাসি । আসছে ওয়েট এন্ড ওয়াচ দেঁতো হাসি

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

চমৎকার ছবি আর লেখার জন্য অভিনন্দন।
আচ্ছা আপনি না হাচল? তাহলে অতিথি লেখক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখছেন কেন?

তাপস শর্মা  এর ছবি

ধন্যবাদ।

নিটোল এর ছবি

ছবিগুলো দারুণ তো! ১ আর ৮ নম্বরটি খুব ভালো লাগল।

_________________
[খোমাখাতা]

তাপস শর্মা  এর ছবি

ধন্যবাদ নিটোল

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

যথারীতি সুন্দর দাদা। হাচল একাউন্ট ব্যবহার করার অনুরোধ রেখে গেলাম। হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

তাপস শর্মা  এর ছবি

ধন্যবাদ অলি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দারুন!

৮ নম্বরের সাদাকালো ছবিটা আর একটু পরিষ্কার হলে মনে হয় আবেদন একটু বাড়তো। এধরনের ছবির কিছু নমুনা পাবেন আমার বন্ধু Jan Grarup-এর ছবিতে

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাপস শর্মা  এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা।
আপনার লেখা এবং ছবি গুলো দেখে এলাম। অসাধারণ সব ছবি। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, আমার খুব উপকার হল, পরবর্তী পোষ্টের জন্য। হাসি

তাপস শর্মা  এর ছবি

তিথী, ওটা এখন বন্ধ আছে। সো আমাকে এখানেই লিখতে হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে ধন্যবাদ আপনাকে।

তিথীডোর এর ছবি

আপনি হাচল হয়েও 'অতিথি লেখক' অ্যাকাউন্ট থেকে লিখছেন কেন? চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাফি এর ছবি

এক্দম বাংলাদেশ বাংলাদেশ সব ছবি। শেষের ছবিটা সেরা লেগেছে বিশেষ করে।

তাপস শর্মা  এর ছবি

ভাই সাফি, ছিলাম তো একই দেশের। আমাদের রঙ আর আপনাদের রঙ আলাদা নয় ভাই। তাই একাত্মতা।

তানিম এহসান এর ছবি

লেখা এবং ছবি দুটোই ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো হাসি

তাপস শর্মা  এর ছবি

তানিম ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।