মন খারাপের একটি দিন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৬/১১/২০১১ - ১:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২. অনেকগুলো মেইল রোজ দেখতে হয় তাই মাঝে মাঝে মেইল চেক করা কমিয়ে দেই। গতকাল দেখলাম আমাদের সেক্রেটারি পেনশন নিয়ে চলে যাচ্ছেন।গতকালই ছিলো উনার শেষ কর্মদিবস। খুবই ভালো মহিলা ছিলেন। অফিসিয়েল ট্রেভেল থেকে এসে বিল করতে সবারই মেজাজ খারাপ হয়। সবগুলো রিসিট দিয়ে দিলেই উনি ম্যানেজ করে নিতেন। মিটিং রুমে আমাদের মিটিংয়ের চা পানি গ্লাস নিজেরাই নিয়ে নেই। সেক্রেটারির জন্য অপেক্ষা না করে মাঝে মাঝে ম্যানেজার নিজেই নিয়ে নেয়। একজন সেক্রেটারী পুরো বধির। শুধু ইশারায় কাজ করতে হয়। কাজের ঝামেলায় সারাক্ষন একই চিন্তা: নিজেরা যে কবে পেনশনে যাবো। সরকার পেনশনের সময় দিন দিন বাড়িয়ে চলছে। বর্তমানে ৬৭ বছর। এতোদিন বেচে থাকা হয়তো সম্ভব না। তাই প্রাইভেট পেনশন স্কিম চালু করার প্রয়োজন দেখি না। অথচ সবাই এসে বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। ৬৭ হলে তুমি হাজার ইউরো পাবে। এখনই পকেট খালি। ভবিষ্যতের পকেট ভরে লাভ কি।

৩. সাবস্টেশন অটোমেশনের কন্ট্রোল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার ভাগে পড়লো IEC-61850 'এর কাজ। কন্ট্রোল নিয়ে কাজ ভালোই ছিলো। প্রটেকশনের কিছু কাজ জানতাম। ম্যানেজার ব‌্যাটার জ্বালায় এখন কন্ট্রোল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দুটো ফাংশন খুব ভয় পাই। ARC (Auto-reclosing Control), CBF (Circuit-breaker Failure Protection) । দুটোই আমার কপালে। আমার এখন এই বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞানী হতে হবে। দুটো কোর্সে জয়েন করার কথা ছিলো এই বছর। ভাগা দিতে পরেছি। আগামী বছর হয়তো পারবো না। বেশী কাজ হলে যা হয়। কাজ বাদ দিয়ে জগা দাদার গজল শুনতেছি। দেশে বন্ধুকে ফোন দিলাম। দোস্ত লং ড্রাইভে। বল্লাম চলে আসতে। অনেকদিন আনলিমিটেড স্পীডে ড্রাইভ করিনি। এইসব গান শুনলে সবকিছু ফেলে দেশে চলে যেতে মন চায়। কাউকে কিছু না বলে কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজার,রাঙ্গামাটি,সুন্দরবন ঘুরতে এবং ব্যাপক আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে। ক্যারিয়ারের পেছনে দৌড়াতে আর ভালো লাগে না।

৪. সকালে যে একটি মিটিং ছিলো ভুলে গিয়েছিলাম। সবাই যাচ্ছে তাই আমিও গেলাম। বউয়ের দুইটা কল পেয়ে ভাবলাম কিছু জরুরী হয়তো। কলব্যাক করতেই উনার কন্ঠ শুনে বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। উনার বান্ধবী ছয়মাসের অন্ত্বসত্তা ছিলেন। গতকাল উনার সাথে দেখা হয়েছে। হঠাত করে নাকি ব্যাথা শুরু হয়েছে এবং ব্লিডিং শুধু হওয়ার বাসায় গিয়ে ডাক্তারে গিয়েছিলেন। ওরা ভর্তি করে দিয়েছে। রাতে ফোন করে শুনলাম সবই ঠিক আছে। সকালে নাকি miscarriage হয়ে গেছে। গত পরশু বাচ্চার জন্য খাট ও অন্যান্য শপিং করেছে। প্রথম বাচ্চা ছিলো। কিভাবে সান্তনা দিবো ভেবে পাচ্ছি না। নিজেও খুব কষ্টে আছি। গতকাল পেপারে পড়লাম একজন মা তার বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছেন নিজে পালন করতে পারবেন না বলে। সারা দিন ঐ কথাটিই মাথায় ঘুরতেছিলো।

৫. মন খারাপের দিন তাই পুরনো অনেকগুলো ছবি দেখলাম। অনলাইন থেকে Ratatuille এ্যনিমেশন ফিল্ম দেখলাম। শুক্রবার তাই অফিস প্রায় খালি। বাইরে প্রায় মাইনাস ডিগ্রী। আমাকেও ট্রেন ধরতে দৌড়াতে হবে।

হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোতে যদি ফিরে যাওয়া যেতো।

ছবি: জার্মান জীবনের স্মৃতি। অনেকের সাথে এখন যোগযোগ নেই। এতটুকু বিশ্বাস সবাই খুব ভালো আছেন।

Fruhling

ছবি: 
02/06/2007 - 3:11pm

মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো খুবই ভালো লাগলো পড়ে......

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কিছু করার নাই, ফ্রিলিংক, জীবন এরকমই। কাল সকালে দেখবা নোতুন সময়, নোতুন ব্যস্ততা, নোতুন সুখ, নোতুন কষ্ট।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।