বড়দা বিয়ে করতে চায় না, কিন্তু সব চাচা-মামা-ফুপা-ফুপু-মামী-চাচী খালি বড়দা’র বিয়ে খেতে চায়। বেচারা বড়দা একা কয়টা বিয়ে করবে। এদিকে আমি আর পরিষ্কার সেই কবে থেকে দুচারটা বিয়ে করতে রাজি, কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের কেউ আমাদের বিয়ে খেতে চায় না। অবশেষে বুঝলাম যে বাবুর্চি আর ভালো রেসিপি থাকলেই হয় না, মানুষজন খাওয়াতে হলে একটা ব্র্যান্ড ও থাকতে হয়। বড়দা সকালবিকাল অফিস-মিটিং-ট্যুর নিয়ে ব্যস্ত, তাই তাঁর বিয়ে খাওয়া হলো ব্র্যান্ডের খাবার খাওয়া। আহারে, কবে যে আমাদেরও একটা ব্র্যান্ডের বিয়ে হবে।
যাক, দুঃখের বাক্স বন্দী করে মেয়ে-বাছাই কমিটির আশেপাশে ঘুরঘুর শুরু করলাম। বাসার গেজেটেড নাগরিকরা ঠিক করেছে, ভালো একটা মেয়ে ঠিক করে বড়দা’কে চেপে ধরা হবে। তখন বিয়ে না করে পালাবে কোথায়? নামকরা ঘটককে খবর দেয়া হলো। উফফ... কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
যে যাই বলুক সুন্দরীদের ছবি দেখতে বড্ড ভালো লাগে। নতুন-নতুন সাজগোজের রকমসকম দেখা যায়, ছবি তোলার বিভিন্ন কায়দাকানুন শেখা যায়, ঘটক চাচার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় (সুরেলা ভবিষ্যতের প্রস্তুতি) – আরও কত কি।
ছবি দেখতে শুরু করবো, হঠাৎ খেয়াল হলো বেচারা পরিষ্কারকে এই ব্যাপারে কোন পাঠদান করা হয় নি। তাকে এই সুযোগটা থেকে বঞ্চিত করা উচিত হবে না। ছাত্রের সন্ধানে গিয়ে দেখি নিজের নামকে বুড়িগঙ্গার পানিতে জলাঞ্জলি দিয়ে, ময়লা মেঝেতে শুয়ে পরিষ্কার ভায়া ভোঁসভোঁস করে বিড়ি টেনে চলেছে। আমাকে দেখেই সাধের বিড়িটা চায়ের কাপে চাঞ্জলি দিলো। আররে আমাকে কিসের লজ্জা, কিসের ভয় – বলতে বলতে, হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকতেই কটমট করে তাকালো। সাধের হাসিটা আমার গলার কাছে আটকে গেলো। “বিড়িতো খাও না, এই ধুমা তুমার বেশি ক্ষতি করব - বুঝছ? তুমারে আবার ডরামু” পরিষ্কার এটুকু বলেই দেয়ালের টিকটিকির সৌন্দর্যে মনোনিবেশ করলো। ত্যাঁদড় ছোঁড়া কথায় কথায় জ্ঞান কপচায়। যাকগে, কুকথায় কান না দিয়ে পরিষ্কারকে হিড়হিড় করে টেনে ঘটক চাচার মজলিসে বসিয়ে দিলাম। জ্ঞান এখন সবদিক দিয়ে বের হবে।
কেমন মেয়ে চান? - এটাতো ঘটকদের কমন প্রশ্ন। তাই আমি আগেই বলে ফেললাম – চাচা আর যাই হোক, একটা সুন্দর ভাবী লাগবে। দুধে-আলতা গায়ের রং নাহলে কিন্তু আম্মার পাশে মানাবে না। আর চুলটা যেন সোজা থাকে, ঢেউ-ঢেউ না। মিষ্টি হাসি, টানাটানা চোখ হলে বেশি ভালো হয়। আমাদের আর কোন দাবি-দাওয়া নেই। তাকিয়ে দেখি আম্মা আর ঘটক চাচা মুগ্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘটক চাচাতো আমার রুচির প্রশংসা করে বলেই ফেললো – উনার সাপ্লাই খুবই ভালো। সব হুরী-পরী-নাগিনী কন্যাদের খোঁজ উনি রাখেন। আমি আর আম্মা খুব খুশি মনে ছবি দেখাতে মন দিলাম, চাচা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে কন্যাদের গুণের বর্ণনা দিতে থাকলেন। পরিষ্কারের দেখি এদিকে কোন মনই নেই, সে চাচার দিকে বিমর্ষ চোখে তাকিয়ে আছে। আচমকা এক রূপবতীর ছবি আসতেই চাচা পাখির মতো কিচিরমিচির করে বললেন – এই কন্যা খুবই উঁচু বংশের মেয়ে, অনেক আত্মীয়স্বজন ইয়োরোপ-আম্রিকা থাকে, দেশে যারা থাকে তাঁদের কয়েকজন এমপি-সচিব। মারহাবা-মারহাবা।
আমি তিড়িং করে লাফ দিতে যাব, পরিষ্কার বলে উঠলো – “মনের মিল না হইলে বিয়া কইরা কাম কি? ইয়োরোপ-আম্রিকার লুকজন, এমপি-সচিবতো শান্তি কিন্না দিবো না। আর সুন্দর মাইয়া না চাইয়া ভালো মানুষ চাও”। আম্মা চোখ গরম করে তাকাতেই আমি সামলানোর চেষ্টা নিলাম। সবার দিকে হাসি দিয়ে বললাম, আরে বেটা মনের মিল হলো কিনা এটাতো আর আগে বোঝা যাবে না। সুন্দর না হলে সবদিকেই ক্ষতি। সুন্দরী ভাবী ঝগড়া করলেও মিষ্টি লাগবে। আর ভালো বংশের মেয়েতো ভালোই হবে। মারমুখী পরিষ্কার হুংকার দিয়ে উঠলো – “সুন্দরী যদি তুমারে ধইরা ঠ্যাঙায়, আর বড়দা'র লগে মিঠা কথা কয় তাইলে কি তুমার ভালো লাগবো? নাকি ভালো একজন মানুষ এই পরিবারে আইলে ভালো লাগবো? সেইটা পরের কথা। আগে বড়দা'রে জিগাও এহন বিয়া করবো কিনা, জুর কইরা বিয়া দিবা – এইডা একটা কথা হইলো?” ঘটক চাচার দিকে তাকিয়ে আরেকটা হুংকার দিলো – “মাইয়ারা কি গরু নাকি যে ছবির অ্যালবামরে কও সাপ্লাই”
পরের ঘটনা কি আর বলব। যে বাড়িতে এরকম ত্যাঁদড় ছোঁড়া থাকে, সে বাড়িতে নাকি ঘটক চাচা কোনও সম্বন্ধ আনতে পারবেন না। মানসম্মানের একটা ব্যাপার আছে না? অবশ্য উনার ফিস একটু বাড়িয়ে দিলে ভেবে দেখবেন।
এই ত্যাঁদড় পরিষ্কারের জন্য কবে জানি আমার পাঠশালার দুর্নাম দিকে-দিকে ছড়িয়ে যায়।
- বান্ধবী
মন্তব্য
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
চৌত্রিশ বছর বয়সে আমার এক কাজিন বিয়ে করেছিল, তখন আমার আম্মু বলছিল, "ছেলেটাকে এত তাড়াতড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে কেন?" বুঝেন এখন আমার অবস্থা! লেখায়
বিয়ের বয়সের ব্যাপারে চাচীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আর আপনার জন্য সমবেদনা
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
সাবাস পরিষ্কার!
facebook
পরিষ্কারকে সাবাস বললেন
এভাবে চললেতো ছোঁড়াকে সোজা করা যাবে না
হাসছেন? ওদিকে ব্র্যান্ডেড বিয়েটা যে পিছিয়ে গেলো
আরে হবে হবে ।
তবে আপনার দুঃখ কি শুধুই এজন্যে যে ব্র্যাণ্ডেড বিয়ে পিছিয়ে গেল ?
নাকি লাইনে যারা সবারই পিছিয়ে গেল তাই ?
ভাল থাকবেন ।
শুভেচ্ছা ।
এভাবে সবার সামনে গোপন কথা বলতে নেই
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
_________________
[খোমাখাতা]
ওরে, সব্বাই দেখি খালি হাসে। ঠিক আছে, আমিও তবে হাসি
মজা পাইলামঃ)
ধন্যবাদ
ভালো লিখেছেন। পাঠদান জারি থাকুক।
ডাকঘর | ছবিঘর
ত্যাঁদড় পরিষ্কার সোজা না হওয়া পর্যন্ত আমি চেষ্টা করতেই থাকবো
পরিষ্কার সিরিজ বেশ মজাদার হচ্ছে, চলিয়ে যান।
উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ
আরও ভালো লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাব।
দুইটা পর্বই পড়লাম, মজার লেগেছে। লিখতে থাকুন।
(শুধু পরিস্কার নামটা কেন জানি পছন্দ হচ্ছে না)
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
মজার লেগেছে জেনে মজা (ভালো) লাগলো। ধন্যবাদ
(ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নামটাতো এখন আর বদলানো যাবে না , একটু কষ্ট করে মেনে নিতেই হবে)
নতুন মন্তব্য করুন