চিকিৎসা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৩/০৩/২০১২ - ১০:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘’মামা, আরো জোরে বল কর।‘’- ৬ বৎসর বয়সী অভ্রের কোন ক্লান্তি নেই। সেই সকাল থেকে টানা ব্যস্ত রেখেছে নির্ঝরকে। কখনো প্লেন নিয়ে, আবার কখনো পুচকে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে। কখনো সখনো করছে গল্প শোনার আবদার! আবার সময় করে কার্টুনও দেখছে মামাকে নিয়ে। কোন আনন্দই বাদ দিতে রাজী নয়। অথচ পড়াশোনায় একদম মন নেই। রীতা ভাবির মেয়েটা কত ভাল রেজাল্ট করেছে স্কুলে! গড়ে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। আর অভ্রের মার্কস সেক্ষেত্রে ৮৮ শতাংশের বেশী নয়। চিন্তায় শক্ত ভাজ পড়ে সোমার কপালে!

নিজের ভাইটার উপরও বেজায় রাগ ধরে সোমার। ২৫টা বছর পার করে দিল, অথচ বুদ্ধি-শুদ্ধি হয়নি মোটেই। একটা নাবালক শিশুর সাথে ওর কোন পার্থক্য করতে পারবে না কেউ। রাস্তায় কোথাও ছেড়ে দেয়া হলে যে ঠিকঠাক বাসায় ফিরতে পারবে, সেই নিশ্চয়তাটুকু নির্ঝরের কাছে আশা করা যায় না!

বাবা গত হয়েছেন বছর দশেক আগে। এরপর থেকে মা শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে আছেন। সোমা আর নির্ঝরকে এক দিনের জন্যও বুঝতে দেন নি বাবার অভাব। সোমার বিয়ে দিয়েছেন ভাল ঘরে। আরিফের মত দায়িত্ববান ছেলেকে নিয়ে সংসারধর্ম ভালমতই উতরে যাচ্ছে সোমা। শুধু নির্ঝরটা যদি স্বাভাবিক হত, তাহলে আজ মাকে সংসারের ঘানি টানা থেকে মুক্তি দিতে পারতো! মায়ের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হয় সোমার!

‘’ও মা, মরে গেলাম!’’- হঠাৎ অভ্রের গগনবিদারী চিৎকার শোনা যায়! সোমা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায়। ড্রয়িং রুমের এক কোনে মুখের উপর হাত রেখে কাতরাচ্ছে অভ্র। অভ্রের বা গালটা ফুলে গেছে অনেকখানি। আর নির্ঝর হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনেই। নির্ঝরের নির্লিপ্ততায় জ্বলে উঠে সোমা, ‘’এই তোর লজ্জা করে না? তোর বয়সী ছেলেরা সংসার চালাচ্ছে! আর তুই একটা দামড়া হয়ে এতটুকু বাচ্চার মুখে বল ছুড়ে মারলি!’’

নির্ঝরের মুখে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। সে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে আগের মতই! সোমার কথা যে তার কানে ঢুকছে, তা বোঝার কোন উপায় নেই। সোমার ক্রোধ আরও বেড়ে যায়, ‘’কি ভেবেছিস তুই? মায়ের আচলে করেই সারা জীবন পার করে দিবি? আসলে সব দোষ মা-বাবার। ছোটবেলা থেকে যদি কড়া-শাসন করতো, তাহলে তোর এই পাগলামি রোগ পালানোর জায়গা পেত না। একটা আবালকে দিয়েও তোর থেকে বেশী কাজ করানো যায়!‘’

সোমা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল; কিন্তু সোমার মা রওশন আরা দ্রুত ছেলেকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজের রুমে নিয়ে যান। রওশন আরা আসলে ঘুমাচ্ছিলেন। কিন্তু অভ্রের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম জড়ানো কানেই পাশের ঘরের কিছু কিছু কথা শুনতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু সোমার গালিগালাজের পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকায় আর থাকতে পারলেন না। রেগে-মেগে সোমা যদি অসুস্থ ছেলেটার গায়ে হাত দেয়! সোমটা আগে এমন ছিল না। ভাইয়ের প্রতি কি দরদ ছিল। পাড়ার লোকেরা ভাইকে সামান্য কটু কথা বললে সোমা মেয়ে হয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত! বিয়ের সময় ভাইকে জড়িয়ে ধরে কি কান্না! অথচ এখন? নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে রওশন আরার!

এক সপ্তাহ হল মেয়ের বাসায় এসেছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন নিজেদের জেলা শহরের বাড়িতে। যদিও জামাই বাবাজি অনেক করে বলেছে তাদের সাথে থাকার জন্য, কিন্তু রওশন আরার পক্ষে সে অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি! দেশের বসতবাড়ি, জমিজমা প্রভৃতি দেখেশুনে না রাখলে যে সব পঞ্চভূতে গ্রাস করবে।

সোমার বাবার রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির দিকে শ্যেন দৃষ্টি রয়েছে সোমার চাচাদের। দুইতলার থাকার বাড়িটি বেশ যত্ন করেই বানিয়েছিলেন সোমার বাবা। পুকুর-বাগানসহ পুরো বাড়িটি প্রায় ২০ কাঠা জমির উপর যার বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকার কম হবে না। তাছাড়া রয়েছে প্রায় ৬০ বিঘা আবাদি জমি। রওশন আরা বেগম পৈতৃক সূত্রেও অনেক জমির মালিক, যার পরিপূর্ণ পরিমাপ এখনো সম্ভব হয়নি। ওদিকে সোমার বাবার ব্যাংক স্থিতিও ফুলে ফেঁপে উঠছে!

কিন্তু এতসব পারিবারিক সম্পত্তির মূল উত্তরাধিকার যে, সেই নির্ঝরই ছোটবেলা থেকে চরম অস্বাভাবিক। অবশ্য হাল ছাড়েননি রওশন আরা। এখনো সমানে ডাক্তার-ফকির দেখিয়ে যাচ্ছেন। ঔষধ পত্র চলছে। কখনো সখনো ছেলেটার ভিতর স্বাভাবিকত্বের কিছু লক্ষণ যে দেখতে পাওয়া যায় না, তা নয়। কিন্তু রওশন আরার আনন্দকে মুছে দিয়ে স্বাভাবিক নির্ঝর মুহূর্তেই উধাও হয়। আবার ডুবে যায় তার নিজস্ব জগতে। এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে থাকে যেন ছেলেটা। সেখান থেকে তাকে বের করে আনার সাধ্য তখন কারো নেই।

বেশ কিছুদিন হলো ছেলেটার বাম চোখে সমস্যা। চোখটা আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে। তাছাড়া তীব্র ব্যথা। রওশন আরা এর আগেও ছেলের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন। তবে সে চিকিৎসা ছিল মানসিক অসুখের। আর এবার এসেছেন চোখের চিকিৎসার জন্য। নির্ঝরকে চোখের ডাক্তারও দেখিয়েছেন ইতিমধ্যে। সেই ডাক্তার আবার রেফার করেছে আরও বড় এক প্রফেসরকে। এক্সরে, সিটি স্ক্যানসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই সমস্যাটা ধরা পড়ছে না। সর্বশেষ মাথার এমআরআই করতে দিয়েছেন ডাক্তার। আজই রিপোর্ট দেয়ার কথা। নির্ঝরের দুলাভাই আরিফ রাতে রিপোর্ট নিয়ে বাসায় ফিরবে। রওশন আরা বেগম চরম উৎকণ্ঠায় ছটফট করতে থাকেন। কে জানে কি আছে তার দুর্ভাগা ছেলেটার কপালে!

আরিফ প্রতিদিনের তুলনায় আজ বরং তাড়াতাড়িই ফেরে। কিন্তু মুখ ভার। কাপড় চোপড় না বদলেই বাসার সবাইকে ডাকে। দুঃসংবাদটা শোনার পর বাসার সবাই ঝিম মেরে যায়। নির্ঝরের চোখে আসলে কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে চোখের পেছনে। যেখানে একটা টিউমারের জন্ম হয়েছে। রওশন আরা ডুকরে কেঁদে উঠেন! মার কান্না সোমার ভিতরও সংক্রামিত হয়। তবে আরিফ শ্বাশুড়ি আর স্ত্রীকে অভয় দেয়, ‘’অনেক সময় দেখা যায়, ডাক্তারদের প্রেডিকশন ভুল হয়। ডাক্তার তো কেবল সন্দেহ করছেন! কনফার্ম হওয়ার জন্য এখন বায়োপসি করবেন। তারপর নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য সেই রিপোর্ট সিঙ্গাপুরেও পাঠাবেন।‘’ রওশান আরা তবু খুব একটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না ছেলের ব্যাপারে। যে পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছে!

যথারীতি বায়োপসী সম্পন্ন হয়। ১৫ দিনের মাথায় সিঙ্গাপুর থেকে ফাইনাল রিপোর্টও চলে আসে। কিন্তু কোন সুখবর পাওয়া যায় না। আগের দুঃসংবাদই বহাল থাকে। রওশন আরাও মনে হয় এমন সংবাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তাই জামাইকে তাড়া দেন, ‘’বাবা আরিফ, দেরী কইরো না। আমার বাবারে বিদেশ নিয়া যাও। সোমার আব্বায় তো কম টাকা-পয়সা রাইখা যায় নাই। জমিজমা যা আছে, সব বিক্রি কইরা ফালাও। আমার বাবাই যদি না থাকে , এই সম্পত্তি দিয়া কি হইব’’। রওশন আরার চোখ দিয়ে পানির প্রবল স্রোত বেরিয়ে আসতে থাকে। সোমা মাকে ধরে নির্বাক বসে থাকে।

এদিকে আরিফ শাশুড়ির কথা শুনে ঢোক গেলে। তার শাশুড়ি বরাবরই তার এই এবনরমাল ছেলেটার প্রতি অন্ধ। আজ নির্ঝরের জন্য সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে চাইছেন। আর মেয়েটার কথা কি অবলীলায় ভুলে যাচ্ছেন! মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হয় শাশুড়ির প্রতি। কিন্তু মনের এই কথাগুলো বাইরে প্রকাশ করতে দেয় না। মুখের অভিব্যক্তি অপরিবর্তিত রাখে। মাকে খুব যত্ন করে জড়িয়ে ধরে পাশে বসায়, ‘’মা, আপনি আগে শান্ত হোন। এতটা ভেঙ্গে পড়বেন না। আমরা তো আছি।‘’

‘’আমি শান্ত আছি বাবা। তুমি নির্ঝরের চিকিৎসা শুরু কর তাড়াতাড়ি। রাজরোগে ধরছে আমার বাবারে। তাড়াতাড়ি বিদেশ না নিয়া গেলে এই রোগ থেকে ফিরায় আনতে পারবা না আর!‘’ বলেই আবারো ডুকরে কেঁদে উঠেন রওশন আরা।

শাশুড়ির আবেগ অবশ্য আরিফকে ছুঁতে পারে না। আরিফ জানে, তাকে স্থির থাকতে হবে। আবেগের উপর ভর করে পৃথিবী চলতে পারে না। নিতে হবে বাস্তব সিদ্ধান্ত। তাই মাকে বলে, ‘’দেখুন, মা, চিকিৎসা তো এখুনি শুরু করতে হবে। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। সারা বিশ্বেই ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা কেমোথেরাপি। কিন্তু আমাদের নির্ঝরের তো মানসিক সমস্যা। কেমোর মত কঠিন চিকিৎসা ও সহ্য করতে পারবে না।‘’ রওশন আরা অবাক চোখে তাকান, ‘’তাহলে আমার নির্ঝরের কোন চিকিৎসা হইব না?’’

আরিফ কণ্ঠস্বরকে অসম্ভব মোলায়েম রেখে উত্তর দেয়, ‘’কেন হবে না। দেখেন আজকাল অনেকেই দেশের বাইরে যায় ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য। এক গাদা টাকাই খরচ হয় কেবল। কিন্তু দেশের থেকে আলাদা কোন চিকিৎসা পাওয়া যায় না। দেশেও অনেক টাকা-পয়সার বিনিময়ে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। তবে হাই-পাওয়ারের কেমো ডোজ যখন শরীরের ভিতর ক্রিয়া করতে থাকে, তখন রোগীর নাকি অসম্ভব কষ্ট হয়! আর আমাদের নির্ঝরের যেহেতু মাথায় একটু দোষ আছে, দেখা গেল, সে ঔষধ-সিরিঞ্জ-স্যালাইনের নল সব ছিঁড়ে-ফুড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গ্যাছে।‘’

জামাই বাবাজির দীর্ঘ ভাষণের সবকিছু বুঝতে না পারলেও অন্তত একটা জিনিস বুঝতে পারেন; তা হল, তার হতভাগা ছেলের জন্য কোন পথই খোলা নেই। রওশন আরার পৃথিবী নিকষ কাল অন্ধকারে ঢেকে যেতে থাকে; তবু মেয়ে জামাইয়ের শরণাপন্ন হন একটুখানি আলোর আশায়, ‘’তাহলে কি করতে কও বাবা? তুমি একটা পরামর্শ দেও। তুমি ছাড়া আমাদের বুদ্ধি দেয়ার মত আর কে আছে?’’

আরিফের কণ্ঠে অসম্ভব দরদ ঝরে পড়ে, ‘’ঘাবড়াবেন না মা। নির্ঝরের যে অবস্থা, তাতে তো ওকে হোমিওপ্যাথির ডাক্তার দেখানো ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না আমি। বিখ্যাত একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কথা শুনেছি, যে নাকি অনেক আধুনিক ডাক্তারের ছেড়ে দেয়া রোগীর ক্যান্সার সারিয়ে দিয়েছে। আপনি অনুমতি দিলে, নির্ঝরকে ঐ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।‘’

অসম্ভব শোকের মধ্যেও জামাই-বাবাজির যুক্তিগুলো মনে ধরে রওশন আরার, ‘অনুমতির কিছু নাই বাবা। এইটা ছাড়া তো আর সমাধানের কোন রাস্তা খোলা নাই। আজই দেখানোর ব্যবস্থা করো, বাবা। আমিও যাব তোমার সাথে।‘’

ডাক্তারের চেম্বার থেকে অনেকটা ভারমুক্ত হয়ে ফেরেন রওশন আরা। ডাক্তার নূরুল হক রোগী দেখে বলেছেন, চিন্তার কিছু নাই। অন্য কোন জটিলতা তৈরি না হলে রোগীর ক্যান্সার নিরাময় করা যাবে। তবে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে ঔষুধ খেয়ে যেতে হবে। ডাক্তারের আশাব্যঞ্জক কথা শুনে রওশন আরার প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। এই তো এখানে আসার আগেও চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। এখন সেখানে স্পষ্ট আলোর রেখা ফুটে উঠছে।

সব কৃতিত্বই জামাই বাবাজির। আরিফের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ছেয়ে যায় রওশন আরার। এই দুঃসময়ে নিজের ছেলের মতই সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।

২.
প্রায় বছর খানেক পরের কথা। নির্ঝরকে নিয়ে আবার মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় হাজির হয়েছেন রওশন আরা। আগে শুধু বাম চোখে সমস্যা ছিল নির্ঝরের। এখন দুচোখেই সমস্যা। চোখ জোড়ার প্রায় অর্ধেকটাই ঢেকে গেছে। পাতা মেলতে পারে না। খাওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। তীব্র ব্যথা পুরো মাথা জুড়েই। কিছুক্ষণ পরে পরেই বেহুঁশ হয়ে পড়ছে। হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নূরুল হক গত একবছর ধরে বিভিন্ন ডোজের ঔষধ গেলালেও এবার আর আশাপ্রদ কিছু শোনাতে পারলেন না রোগী সম্পর্কে। শুধু বললেন, ‘’আসলে উনার অন্য কিছু জটিলতা ছিল; নইলে তো ঔষধে কাজ করার কথা।‘’

মুমূর্ষু নির্ঝরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। জানা গেল মস্তিষ্কের অন্য প্রান্তেও টিউমার গজিয়েছে। দুমাস অনেক সংগ্রাম করল নির্ঝর। তারপর একদিন অর্ধেক ঢাকা চোখ সম্পূর্ণই ঢেকে গেল তার। চিরদিনের জন্য।

৩.
রওশন আরাকে ঘিরে বসে রয়েছে সোমা, আরিফ, আর অন্য আত্মীয়-স্বজনেরা। সোমাদের জেলা শহরের বাড়িটা লোকে লোকারণ্য। নির্ঝরকে দাফন করা হয়েছে তার বাবার কবরের পাশেই। সবার চোখ রওশন আরা আর তার মেয়ে জামাই আরিফের দিকে। মেয়ে সোমা যথারীতি নীরব। ভাইয়ের মৃত্যুতে বুকটা খালি খালি লাগলেও, একটা সান্ত্বনা বিরাজ করছে সোমার মনে! বেঁচে থাকলে নির্ঝরটাকে সারা জীবন অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকতে হত। সেই শাস্তি থেকে তো বেঁচে গেছে তার ভাইটা!

এদিকে রওশন আরা আবারও পুনরুক্তি করলেন, ‘’না বাবা, এই বাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। এখানে আমার ছেলে আর স্বামী শুয়ে আছে। এখান থেকে আমি কোথাও নড়বো না।‘’ আরিফের দায়িত্বশীলতায় পাড়া-প্রতিবেশী ইতিমধ্যে মুগ্ধ; বৃদ্ধ শাশুড়িকে ঢাকায় নিজেদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে, ‘’না, মা, আমরা আপনাকে এখানে একা রেখে যেতে পারি না। তাছাড়া ঢাকায় আপনার মেয়ে আছে, নাতি আছে। ওদের সঙ্গে থাকলে আপনার ভাল লাগবে। ওরাও খুশী হবে আপনাকে সবসময় কাছে পেয়ে।‘’

রওশন আরা তার সিদ্ধান্তে অটল, ‘’না, বাবা, আমি এখানেই ভাল থাকব। প্রতিদিন তোমার শ্বশুর আর নির্ঝরের কবরের কাছে গিয়ে দোয়া-দরুদ পাঠ করতে পারলেই আমি শান্তি পাব।‘’

আরিফও নাছোড়বান্দা, ‘’না মা, যত যাই বলেন, আপনাকে না নিয়ে ফিরবো না আমরা। আপনি একা মানুষ! কত রকম বিপদ-আপদ হতে পারে!’’

রওশন আরা বলেন, ‘’আমি একা কে বলল তোমারে! সোমার চাচা-চাচী-ভাই-বোন সবাই তো আছে। আমার কোনই অসুবিধা হইব না। তোমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পার।’’

আরিফ যেন শোকের পাথারে ভাসতে থাকে। মায়ের কাছে আকুল আবেদন জানায়, ‘’মা, আপনি চলুন আমাদের সাথে। আপনার শরীর পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে! ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত মেডিসিনের ডাক্তার দেখাব আপনাকে! আপনার চিকিৎসা প্রয়োজন! আপনাকে এত তাড়াতাড়ি হারাতে চাই না আমরা।’’

রওশন আরা আরিফের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। জামাইকে কি করে বলবেন, তিনি আর কোন চিকিৎসা নিতে চান না! চিকিৎসাকে তার বড় ভয়। জামাইকেও!

কাজি মামুন
ইমেইল আইডিঃ eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%64%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%64%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%79%61%68%6f%6f%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b')), eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%6d%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%6d%6b%61%7a%69%6d%61%6d%75%6e%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b')) (আইডি প্রদর্শিত হোক চাই না)


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

খুব বেশী ভালো লাগল না। প্লটটা জমেনি। শেষটা একেবারেই সাদামাটা। এভাবে হুট করে একটা কনক্ল্যুশন টেনে দেওয়ায় গল্পটা জমেনি। কাহিনীর আরও বিন্যাস এর দরকার ছিলো।

এটাকে শুধু সমালোচনা হিসেবেই নেবেন, আশা করি। লিখু্ন নিয়মিত।

কাজি মামুন এর ছবি

এভাবে হুট করে একটা কনক্ল্যুশন টেনে দেওয়ায় গল্পটা জমেনি।

চিকিৎসার্থে বিদেশ গমন বা ব্যয়বহুল কেমো চিকিৎসা এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা (যাকে অপ-বিজ্ঞান বলেন অনেকে) করানো হয় অস্বাভাবিক/মানসিক ভারসাম্যহীন নির্ঝরকে; নির্ঝরের বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকার হওয়াটা মনের কোনে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করে দুলাভাই আরিফের; এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে গল্পে। যেমন:

এদিকে আরিফ শাশুড়ির কথা শুনে ঢোক গেলে। তার শাশুড়ি বরাবরই তার এই এবনরমাল ছেলেটার প্রতি অন্ধ। আজ নির্ঝরের জন্য সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে চাইছেন। আর মেয়েটার কথা কি অবলীলায় ভুলে যাচ্ছেন! মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হয় শাশুড়ির প্রতি। কিন্তু মনের এই কথাগুলো বাইরে প্রকাশ করতে দেয় না। মুখের অভিব্যক্তি অপরিবর্তিত রাখে। মাকে খুব যত্ন করে জড়িয়ে ধরে পাশে বসায়, ‘’মা, আপনি আগে শান্ত হোন। এতটা ভেঙ্গে পড়বেন না। আমরা তো আছি।‘’

এখানে আরিফের স্বার্থান্ধ কিন্তু কৌশলী মনোভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে!

এটাকে শুধু সমালোচনা হিসেবেই নেবেন, আশা করি। লিখু্ন নিয়মিত।

ধন্যবাদ!

তাপস শর্মা এর ছবি

আরে ভাই এই ব্যাখ্যা দিতে আমি বলেছি আপনাকে। সমালোচনা করা যাবেনা নাকি ?? একটু কিছু বললেই আঁতে লাগলে কিভাবে হবে ??

কি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, কি পারেন নি সেটাই আমি হয়তো আমার মন্তব্যে বলেছি - তাও আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

আপনার অনেক লেখাই আমার ভালো লেগেছে। হয়তো বলতেও দেখেছেন, তাই না। কিন্তু এটা আমার ভালো লাগেনি। পাশাপাশি আপনার এই এপ্রোচও ভালো লাগেনি।

কাজি মামুন এর ছবি

সমালোচনা করা যাবেনা নাকি ??

যাবে, তাপসদা, হাজারবার যাবে। আপনি আরও কঠোরভাষায় সমালোচনা করতে পারেন; আপনার বা যারাই এটা পড়বে, তাদের সে স্বাধীনতা রয়েছে। আমি অনেক শান্তি পাচ্ছে এইবার; লেখার পোস্টমর্টেম চললে কোন আপত্তি নেই; কিন্তু আমার চরিত্র নিয়েই ঘোরতর সন্দেহ হয়েছিল অনেকের মনে আগের লেখা দুটোর প্রেক্ষিতে (জানি না, এখনো আছে কিনা)!

পাশাপাশি আপনার এই এপ্রোচও ভালো লাগেনি।

যেহেতু হুট করে কনক্লুশান টানার কথা বললেন, তাই আমি বিনীতভাবে বললাম যে, রওশন আরার মেয়ে-জামাই আরিফের স্বার্থান্ধ অথচ কৌশলী চেহারার ইঙ্গিত আগে করা হয়েছে গল্পটিতে (যদিও তা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে এখন)। এই তো। এর বেশী কিছু তো করিনি! নাকি সমালোচনার বিনীত জবাব দেয়াও যাবে না?
যাই হোক, তাপসদা, আমার কোন এপ্রোচ খারাপ লাগলে আমি করজোড়ে মাফ চাইছি! ভাল থাকবেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সমালোচনার জবাব দেয়া লেখকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আমি গল্পের অত ব্যাকরণ বুঝি না।
আমার কাছে ভালই লাগল।
লিখা চলতে থাকুক।

কাজি মামুন এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

কাজি মামুন এর ছবি

আপনার বিরতিহীন উৎসাহে আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ! ভাল থাকবেন ভাইয়া!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।