শুয়া উড়িল উড়িল রে...

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১০/০৯/২০১২ - ১:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এমনিতেই হুমায়ূন আহমেদ এর চলচ্চিত্র নিয়ে একটা বাড়তি আগ্রহ থাকে তারপরে আবার এটা তাঁর শেষ চলচ্চিত্র। সুতরাং ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নিয়ে আগ্রহ এবং প্রত্যাশার পারদ দ্রুতই উপরের দিকে উঠছিল। মুক্তির দিনে বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে বলাকায় গিয়ে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরতে হল। কারণ আর কিছুই না, আমার মতো আরও অনেকেই মুখিয়ে ছিল সিনেমাটির জন্য; ফলাফল বিশাল লাইন এবং হাটিকেট পরিস্থিতি। এরপর গতকাল হুট করেই নেয়া সিদ্ধান্তে বলাকাতে গিয়েই চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করে আসলাম।

ছবির কাহিনী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেক বছর আগে ঘেটুগান নামক সংগীতের এক রহস্যময় এবং বিচিত্র ধারা নিয়েই কাহিনী আবর্তিত। হাওর অঞ্চলে পানি-বন্দী সময়টুকুতে বিনোদনের জন্য শৌখিন জমিদারেরা ঘেটুগানের ব্যবস্থা করত। ধীরে ধীরে ঘেটুপুত্রকে শারীরিকভাবে ব্যবহারের কুপ্রথা গড়ে ওঠে। তাই জমিদারের স্ত্রীরা ঘেটুপুত্রকে সতীন হিসেবে দেখতে শুরু করে। এমতাবস্থায় জমিদার পরিবারে সৃষ্ট মানসিক টানাপড়েন এবং কিশোর কমলার অমানবিক অভিজ্ঞতাই চলচ্চিত্রটির উপজীব্য।

প্রধান চরিত্র মূলত দু’টি; জমিদার চরিত্রে তারিক আনাম খান এবং ঘেটুপুত্র চরিত্রে মামুন। দুইজনই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এছাড়া জমিদার-পত্নীর চরিত্রে মুনমুন আহমেদও অনবদ্য। তবে জমিদারের ভাড়াটে চিত্রকর হিসেবে আগুনের অভিনয় ভালো লাগলেও চরিত্রটিকে আমার কাছে অগভীর মনে হয়েছে। নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবে প্রাণ রায় এবং ঘেটুদলের প্রধান হিসেবে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ও উতরে যান। জমিদারের দাসী চরিত্রে শামিমা নাজনিনও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন।

আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা মনে হয়েছে সেটা হল সিনেমাটির যে বিষয়, তা বর্তমান সময়ের সাপেক্ষে ভীষণভাবে অফ টপিক। হুমায়ূন আহমেদের কৃতিত্ব বোধ হয় এই খানেই যে, সিনেমাটি দেখতে শুরু করার পর ব্যাপারটা আর মাথায় থাকে না। দর্শক মানসিকভাবে ঐ সময়েরই একজন হয়ে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই কমলার দুঃখ-কষ্টের সমব্যথী হয়ে ওঠেন।

হুমায়ূন আহমেদের অনুসারী মাত্রই জানেন, মানুষের দ্বৈত-সত্ত্বা তাঁর আগ্রহের অন্যতম বিষয়। এজন্য তাঁর হাতে তৈরি কোন চরিত্রই সর্বান্তকরণে ভালো বা মন্দ হয় না। তিনি যেমন নেতিবাচক চরিত্রের ইতিবাচক দিকের উপরে আলো ফেলেন তেমনি ইতিবাচক চরিত্রগুলোর ক্ষুদ্রতাও এড়িয়ে যান না। এই সিনেমার জমিদার চরিত্রটিতেও তাই আমরা দেখা পাই সেই দ্বৈত-সত্ত্বার। ধর্মীয় অনুশাসনে কঠোর এবং দানে বীর এই জমিদার একজন কিশোরের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে তাই পিছপা হন না। সিনেমার শেষ পর্যন্ত গিয়েও তাই তাঁর পক্ষে বা বিপক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা যায় না।

হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম এবং চলচ্চিত্র দেখলে আমার সবসময় একটা কথা মনে হয় যে,ভদ্রলোক একজন সত্যিকারের ‘মুহূর্ত নির্মাতা’। সাধারণ এবং চাইলেই এড়িয়ে যাওয়া যায় এমন অনেক দৃশ্যকে তিনি তাঁর সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি এবং অতুলনীয় রসবোধ দিয়ে অসামান্য করে তোলেন। তাঁর চলচ্চিত্রের কোন চরত্রিকেই আপনি অবহেলা করতে পারবেন না। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমার ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে হাস্যরসের উপস্থিতি আপাত দৃষ্টিতে গুরুগম্ভীর এই সিনেমাটিকে ক্লান্তিকর করে তোলার হাত থেকে বাঁচিয়েছে।

আলাদা করে তাঁর প্রশংসা করতে হয় লোকেশন নির্বাচনের জন্য। তিনি এমন একটি পুরনো জমিদার বাড়ি নির্বাচন করেছেন যা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে হাওর অঞ্চলের পানি-বন্দী এবং পানি নেমে যাওয়ার পর সৃষ্ট দুটি বিপরীত চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

সিনেমাটোগ্রাফি চলনসই তবে দুই একটা দৃশ্য ছাড়া দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো না। বাংলা সিনেমায় ফ্ল্যাশ-ব্যাকে যাওয়ার একটা অতি প্রাচীন পদ্ধতি আছে। ক্যামেরা ধীরে ধীরে স্মৃতিচারণকারীর মুখের কাছে যেতে থাকবে এবং তিনি অন্য একটি দিকে তাকিয়ে থাকবেন তারপর পর্দায় দেখান হবে তাঁর স্মৃতিচারণকৃত পুরনো অংশটুকু। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এই ফর্মুলাটি অত্যন্ত ক্লিশে মনে হয় কিন্তু দুঃখজনক-ভাবে হুমায়ূন আহমেদ এই চলচ্চিত্রটিতে কয়েকবার এই প্রাচীন পথে হেঁটেছেন।

স্মৃতিশক্তি প্রতারণা না করলে সিনেমাটিতে চারটি গান রয়েছে। তন্মধ্যে ‘যমুনার জল দেখতে কালো’ ইতিপূর্বে তাঁর অনেক নাটকে ব্যবহৃত, তাছাড়া ঘেটুগান হিসেবে তা আমার কাছে নতুন কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে নি। কিন্তু শেষ দৃশ্যে প্রান্তির গাওয়া ‘শুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন’ গানটি আমার মতো আবেগ প্রতিবন্ধী মানুষেরও গায়ে কাঁটা দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। সব মিলিয়ে একটা দেখার মতো ছবি।

সিনেমার শেষে কমলার করুণ পরিণতি মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কিন্তু আরও বেশি খারাপ লাগতে থাকে যখন অনুভব করি, এরকম ব্যতিক্রমী কাহিনী বলার মতো, ছোট ছোট দৃশ্য দিয়ে আমাদের জীবনের টুকরো কথাগুলো সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরার মতো মানুষটাই আর নেই...

#হিল্লোল


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

লেখার শেষে যে দুঃখবোধের কথাটা বললেন,সে কারনেই মনে হয় সিনেমাটা আমার দেখা হবেনা।মনে আছে 'কমান্ডোস ৩' গেমটা প্রায় শেষ করে এনেছিলাম,কিন্তু হঠাত মনে হল এই স্টেজ পার হলেইত সব শেষ।তাই সব কমান্ডোকে আইফেল টাওয়ার এর নীচে জমা করে সেভ বাটন চেপে 'এক্সিট' করলাম।এখন স্বান্তনা, কোন একদিন হয়ত খেলব!!!

-রাহাত

অতিথি লেখক এর ছবি

কিন্তু শেষমেশ আমরা বুঝে বা না বুঝে ঐ দুঃখের দিকেই তো ছুটে যাই। কারণ তো ঐ এক সর্বনেশে সংলাপ "Our sweetest songs are those that tell of saddest thought"

হিল্লোল

মেঘা এর ছবি

দেখার ইচ্ছা আছে এই সিনেমাটা। রিভিউ ভালো লাগলো।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখে ফেলুন, পস্তাবেন না আশা করি। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

হিল্লোল

নিলয় নন্দী এর ছবি

কেন যেন ছবিটা দেখার আগ্রহ ছিল না।
আপনার রিভিউ পড়ে মনে হলো একবার দেখা দরকার।
এবং সেই অর্থেই আপনার রিভিউ (গুড়) হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। দেখে ফেলুন সিনেমাটা সুযোগ করে।

হিল্লোল

অমি_বন্যা এর ছবি

ছবিটা দেখা হয়নি তবে আপনার লেখা পড়ে আগ্রহ বাড়ল ।

অতিথি লেখক এর ছবি

যাক আপনার আগ্রহ বাড়াতে পেরেছি জেনে কিছুটা হলেও সার্থক মনে হচ্ছে প্রচেষ্টাটা। ধন্যবাদ।

হিল্লোল

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

বেশ গুছিয়ে লিখেছেন আপনি, সংহত। মুভিটা না দেখে অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারলাম না। তবে ইতিবাচক দৃষ্টি রাখছি।

প্রাচীন যে কোন কাহিনি নিয়েই মুভি হতে পারে, হোক তা সমকামিতা বা অন্যকিছু। তবে এই মুভির ক্ষেত্রে তা শিশু নির্যাতনের মধ্য পড়ে মনে হয়; তবে নির্যাতন নিয়েও মুভি হবে। আশে পাশে নেতিবাচক গুঞ্জন শুনতে পাই তাই কথাগুলো বললাম।


_____________________
Give Her Freedom!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মতে দেখে ফেলাটাই উচিত কাজ হবে।

নেতিবাচক কথা বলার খুব বেশি সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ ছবির বিষয় নির্বাচনে পরিচালকের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত। আর ছবির সব বিজ্ঞাপনে এমনকি হলের বাইরে টাঙ্গানো বিজ্ঞাপনেও শিশুদের সাথে না আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

হিল্লোল

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক

একটা রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ধন্যবাদ। আপনার অনুভূতি পড়ে গানগুলো নামিয়ে দুপুরেই শুনেছিলাম; ভালোও লেগেছিল। বিশেষ করে 'শুয়া উড়িল উড়িল' টা। কিন্তু পড়ে গুগলে সার্চ দিয়ে অন্য এক গায়কের গাওয়াটা শুনলাম এবং চূড়ান্ত মুগ্ধ হলাম; ফজলুর রহমান বাবুর চেয়ে ঊনি অত্যন্ত ভালো গেয়েছিলেন। আসলে মূল গানের সুরকার নিজেই গায়ক। কথাঃ সিতালং শাহ, সুরঃ পণ্ডিত শ্রী রামকানাই দাস। শুনে দেখতে পারেন। লিংকহাসি


_____________________
Give Her Freedom!

শমশের এর ছবি

মূল গানটির সুরকারও সিতালং শাহ। তবে রামকানাই দাস সম্ভবত কিছুটা পরিমার্জন করে প্রচলিত সুরটিকে জনপ্রিয় করেছেন।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

জানতাম না; ধন্যবাদ।


_____________________
Give Her Freedom!

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

রিভিউ ভালো লাগলো। সিনেমাটা দেখার ইচ্ছা আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। দেখে ফেলুন ঝটপট

হিল্লোল

যুমার এর ছবি

শেষ দৃশ্যের "শুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন" আসলেই খুব হৃদয় বিদারক মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার তো রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হিল্লোল

খেকশিয়াল এর ছবি

ধর্মীয় অনুশাসনে কঠোর এবং দানে বীর এই জমিদার একজন কিশোরের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে তাই পিছপা হন না। সিনেমার শেষ পর্যন্ত গিয়েও তাই তাঁর পক্ষে বা বিপক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা যায় না।

বুঝলাম না, ব্যাখা করুন। তার কিশোরের সাথে সমকামকে আপনি কেমন দৃষ্টিতে দেখছেন?

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি জমিদারের চরিত্রের দ্বৈততা বোঝাতে চেয়েছি। একদিকে যেমন তার মাঝে কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তেমনি আবার কিশোর সমকামিতার মতো ভয়াবহ অপরাধেও তিনি জড়িত। সিনেমাটিতে তার চরিত্রটিকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাতে করে তার ভালো দিকগুলোও এড়িয়ে যাওয়া যায় না বলে আমার মনে হয়েছে।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে তিনি অপরাধী। সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার খাতিরে আমি "সিনেমার শেষ পর্যন্ত গিয়েও তাই তাঁর পক্ষে বা বিপক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা যায় না।" এই লাইনটি ব্যবহার করেছি। আমার বোঝানোর মধ্যে খামতি থাকতে পারে। ধন্যবাদ

হিল্লোল

স্যাম এর ছবি

পড়ে ফেললাম, দেখে ফেলব!

অতিথি লেখক এর ছবি

শীঘ্রই দেখে ফেলুন প্রিয় ব্যানারশিল্পী হাসি

হিল্লোল

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিটা দেখার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল।আপনার রিভিউ পড়ে ইচ্ছাটা অব্যাহত থাকল।

মোহছেনা ঝর্ণা

অতিথি লেখক এর ছবি

রিভিউ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শীঘ্রই মুভিটা দেখে ফেলবেন আশা করি।

হিল্লোল

অতিথি লেখক এর ছবি

রিভিউ বেশ ভাল লাগলো। দেখার সুযোগ কখন হবে জানি না, তবে খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আপনার চমৎকার লেখা সেই আগ্রহ বাড়িয়ে দিল। আবেগ প্রতিবন্ধী কথাটা আজ শুনলাম। মনে মনে যে অর্থটা ধরে নিয়েছি তাতে আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে না আপনাকে সেই কাতারে ফেলা যায়।

-এক জোনাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ চমৎকার এবং অনুপ্রেরণার যোগান দেয়া কমেন্ট করার জন্য। আসলে আমি অনেক ক্ষেত্রেই আবেগ প্রতিবন্ধী। যদিও আরোগ্য লাভের আশা ফুরিয়ে যায় নি হাসি

হিল্লোল

অতিথি লেখক এর ছবি

হিল্লোল ভাই স্যারে এই ছবিতে 'ঘেটুপুত্র' যে নামটি দিয়েছেন তা আমাদের এলাকায় ''ঘাটু'' নামে পরিচিত ছিল ।বেশি নয় ১৯৯৯ সালেও আমাদের পাশের গ্রামে তেমনি একটি 'ঘাটু' ছিল । ছেলেটি আমাদের সাথে খেলাদুলা করত,আর আমরা সুযোগ পেলে ক্ষেপাতাম ।তবে ছেলেটি অসম্ভব সুন্দর ছিল ।ছেলেটার নাম ছিল 'আশিক' আর আমরা ক্ষেপাতে গিয়ে 'আশিকা' বলে ডাকতাম ।
গ্রাম বাংলার এমন একটি চরিত্র জীবন্ত করে রেখে যাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ স্যারের প্রতি। আমার ইচ্ছে আছে আমার এলাকার সেই গ্রামে নিয়ে ''ঘেটুপুত্র'' দেখানোর ।
আর হিল্লোল ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।
সবজান্তা

হিমু এর ছবি

"সবজান্তা" নিকটি ইতিমধ্যে একজন সচল ব্যবহার করেন। আপনি সচলায়তনে নিয়মিত মন্তব্য করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অন্য কোনো নিক/নাম বেছে নিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি এই নামে নিবন্ধন করে ফেলছি ।এখন আবার কি একই ইমেল ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারব ? জানালে খু্শি হব ।ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

আপনার নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার কথা নয়, যেহেতু এই নিকটি ইতিমধ্যে রেজিস্টার্ড। আপনি অন্য কোনো নিক ব্যবহার করে আবার নিবন্ধন করুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক আছে ।ধন্যবাদ ভাই ।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের পুরুষ বন্ধুদের মধ্যে যারা দেখতে একটু সুন্দর তাদের আমরা মজা করে 'ঘেটু' বা 'গেলমান' বলে ডাকি এখনো দেঁতো হাসি

ধন্যবাদ কষ্ট করে রিভিউটা পড়ার জন্য।

হিল্লোল

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ঘেঁটুপুত্রদের সম্পর্কে কিছু বলা যাক:

প্রায় দেড়শ-দুশো বছর আগে হাওরাঞ্চলে বর্ষার সময় হবিগঞ্জ-সুনামগন্জের দিকে ঘেঁটুগানের প্রবর্তন হয়। ধারণা করা হয়, জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেঁটুগানের উদ্ভব।

ঘেঁটুগানের সাথে নাচের ব্যবস্থা থাকতো। একজন ছেলে শিশুকে মেয়ে সাজানো হতো, সে নাচ-গান করত। এই ছেলে শিশুদের বলা হতো ঘেঁটুপুত্র। ক্রমেই খুব জনপ্রিয় হতে থাকে ঘেঁটু গান ও নাচ।

শুরুর দিকে শুধুমাত্র গান ও নাচের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পরবর্তীতে খুব দ্রুত এতে যৌনতা ঢুকে পড়ে। ওই অঞ্চলের বিত্তবান পুরুষরা এইসব ঘেঁটুপুত্রদেরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। এক সময় সমাজের উঁচুস্তরে বিষয়টা বেশ প্রসারও পায়। বিত্তবানরা বর্ষার সময় কিছুদিনের জন্য ঘেঁটুপুত্রদের নিজের কাছে রেখে দিত।

পরবর্তীতে সামাজিক নানা প্রেক্ষাপটে বিষয়টি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে থাকে এবং একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে ঘেঁটুপুত্র- ঘেঁটুগান কোনটিরই অস্তিত্ব নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

সিনেমার শুরুতে আসাদুজ্জামানের কণ্ঠে একটা মুখবন্ধ আছে, সেখানে আপনার পরিবেশিত তথ্যের প্রায় সবটুকুই বলা আছে। ধন্যবাদ।

হিল্লোল

তিথীডোর এর ছবি

ঘেঁটুপুত্র কমলা'র গানগুলো পাওয়া যাবে এখানে।

রিভিউ ভাল্লাগলো। চলুক
চেষ্টা করব মুভিটা দেখার...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রিফাতাপু। তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন।

হিল্লোল

কানা বাবা এর ছবি

শুনলাম। 'যমুনার জল দেখতে কালো' গানটা ফজলুর রহমান বাবু জঘন্য গেয়েছেন। আব্দুল কুদ্দুস বয়াতীর গাওয়া গানটি অনেক ভালো ছিলো। তাছাড়া গানের কথাও পরিবর্তন করা হয়েছে যা আমার ভালো লাগে নি। ক্ষেত্র বিশেষে আগের চেয়ে 'ভালগার' করা হয়েছে। যেমনঃ গানের মূল থিমটি হলো কন্যা ধীরে ধীরে যমুনার পানিতে নেমে যেতে থাকে আর ধীরে ধীরে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ভিজতে থাকে। এবার মূল গান আর সিনেমার গানটা দেখা যাক।

সিনেমার গানের কথার একাংশঃ

উরাত পানিতে লাইম্যা কন্যা উরাত মান্জন করে
কোমর পানিতে লাইম্যা কন্যা কোমর মান্জন করে
আমার যমুনার জল দেখতে কালো, চান করিতে লাগে ভালো

কোমরেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো কন্যার অংগ-সৌষ্ঠবের বর্ননা। কোমরের কথাও অনেক পরিশীলিতভাবে বলেছেন আপাত দৃষ্টিতে অশিক্ষিত অথচ স্বশিক্ষিত আব্দুল কুদ্দুস বয়াতীর ( গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক সবই তিনি নিজেই)।

মূল গানের কথার একাংশঃ

উরাত পানিতে লাইম্যা কন্যা উরাত মান্জন করে
কোমর পানিতে লাইম্যা কন্যা কলসি কাখে ধরে
আমার যমুনার জল দেখতে কালো, চান করিতে লাগে ভালো

তবে শুয়া উড়িল উড়িল গানটি ভালো লেগেছে। তবে গায়কিতে মুন্সিয়ানার অভাব ছিলো এটাতেও। হুমায়ূন আহমেদের উচিৎ ছিলো আরো ভালো গায়ক দিয়ে গানঘুলো গাওয়ানো। কিন্তু বেশিরভাগ সময় উনি নিজের গ্যাং মেইনটেইন করে চলেন। তারপরও হুমায়ূন হুমায়ূনই।

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কাছে শিশুশিল্পী প্রান্তির কণ্ঠে গাওয়া 'শুয়া উড়িল উড়িল' গানটা অসাধারণ লেগেছে।

হিল্লোল

কানা বাবা এর ছবি

যা ভেবেছিলাম তাই ঠিক। উপরে একজন পন্ডিত রামকানাই দাসের গাওয়া 'শু্যা উড়িল উড়িলো রে' এর লিন্ক দিয়েছেন। পন্ডিত রামকানাই দাসের গাওয়া গানটি হুমায়ূন গ্যাং এসআই টুটুল আর বাবুর গাওয়ার চেয়ে হাজার গুন ভালো। বাচ্চা ছেলের গাওয়া গানটি অবশ্য ভালো হয়েছে। তবে একে অবশ্য এদের ক্যাটাগোরিতে ফেলা যাবে না। নিকট অতীতে (গত ১০/১২ বছরে) গ্যাং না মেইনটেইন করলে হুমায়ূনের নাটক ও সিনেমার মান অনেক ভালো হতে পারত।

/----------------------------------------------------
ওইখানে আমিও আছি, যেইখানে সূর্য উদয়
প্রিয়দেশ, পাল্টে দেবো, তুমি আর আমি বোধহয়
কমরেড, তৈরি থেকো,গায়ে মাখো আলতা বরণ
আমি তুমি, আমি তুমি, এভাবেই লক্ষ চরণ।।

জাবেদুল আকবর এর ছবি

(গুড়)

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হিল্লোল

দুর্দান্ত এর ছবি

শিবপুরানে শিব ও মোহিনীবালক বেশী বিষ্ণুর লীলেখেলা বা নিমাই সন্যাসির নাটকে শ্রীচৈতন্যের সাথে কিশোর জগন্নাথের প্রেমসিক্ত সম্পর্ক চিত্রায়ন তো বেশ জনপপ্রিয় ছিল সেই মধ্যযুগ থেকে। মুসলিম সমাজেও নিজামুদ্দিনের প্রতি আমির খসরুর কবিতা অথবা সামারকান্দি মিস্রিবি'র কবিতাবলিতেও সমকামনার ছাপ বেশ প্রবল। মিস্রিবি আবার এক কাঠি সরেস, তার বেশ কিছু কবিতার নায়ক (নাকি নায়িকা হবে?) মোটামুটি সর্বদাই কোন শ্যামল বরন হিন্দু যুবা। কাদেরিয়া সুফিদের কাউকে কাউকে সুগঠিত যুবকদের সাধন-সঙ্গী করার প্রচলনের কথা শোনা যায়। লাহোরের হোসেন শাহ'র যেমন ছিল মাধোলাল।

বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে সমকাম সবসময়ই ছিল, আছে। একজন সমকামি তো আর জমিদার হওয়া বা তার অঞ্চলে ঘেটু প্রচলিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনা। ঘেটুগান অবলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু পেডোফিলিয়া অবলুপ্ত হয়নি।বাংলাদেশে পেডোফাইলদের সামনে অনেক রাস্তা খোলা, উদাহরন হিসাবে সে স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক হতে পারে, লিল্লা বোর্ডিং এর খাদেম হতে পারে।

আমি আশা করি হুমায়ুনের এই ফিল্মটা পেডোফেলিয়াকে আলোচনায় নিয়ে আসুক। এটা নিয়ে আমরা কথা বলি, এটা কি যঘন্য অপরাধ, সেটা নিয়ে আলোচনা করি। একে প্রতিহত করতে সোচ্চার হই।

অতিথি লেখক এর ছবি

মাইকেল মধুসুধন দত্ত বাদ পড়লো যে। মাইকেলের সখার নাম ছিলো সম্ভবত গৌর দা বসাক অনেক দিন আগে পড়েছিলাম 'সেই সময়' সেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এরকম কিছু বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমি খুব অবাক হয়েছিলাম এটা জেনে যে মধুসূদন দত্তের তখনকার অনেক কবিতাই গৌর কে নিয়ে লিখা ছিলো, দু একটার উল্লেখও ছিলো উপন্যাসটিতে, ভুলে গিয়েছি। মন খারাপ

.........
রংতুলি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

মাইকেলের বন্ধু গৌর দাস বসাক তো তার সমবয়স্কই ছিলেন। দুজনেই তখন তরুণ। একে তো ঠিক পেডোফিলিয়া বলা যায় না মনে হয় হাসি

কবিতার তথ্যটি নির্ভুল। মাইকেল একটা সনেট লিখেছিলেন- নামটা মনে পড়ছে না। সেটার অষ্টকের আদ্যক্ষরগুলো নিলে গ-উ-র-দা-স-ব-সা-ক হতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

রিভিউ ভালো লাগলো, বাংলা ভালো মুভির অপেক্ষায় থাকি সবসময়! দেখে হবে আশা করি।

.........
রংতুলি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। দেখে ফেলবেন আশা করি।

হিল্লোল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অল্প কথায় গোছানো রিভিউ ভালো লাগলো, হিল্লোল।
এবার একটা মজার লেখা ছাড়েন। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ শিমুল আপু। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

হিল্লোল

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তি পাবার দিনই দেখেচি

অতিথি লেখক এর ছবি

কেমন লাগল জানিয়ে আপনিও একটা পোস্ট দিয়ে ফেলুন না হয়, মিলিয়ে নেব খন।

হিল্লোল

সাবেকা  এর ছবি

দেখার ইচ্ছা আছে, তবে কবে সুযোগ হবে জানি না ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুযোগ হওয়ার আগেই সুযোগ তৈরি করে ফেলুন হাসি

হিল্লোল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।