প্রাচীন ভারত উপমহাদেশের কথা: পর্ব-১ (খ্রীঃপূঃ ৬ মিলিয়ন বছর আগে থেকে খ্রীঃপূঃ ৩,০০০ বছর পর্যন্ত)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৯/০৯/২০১২ - ৭:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকা: বর্তমানে ভারত উপমহাদেশে বিরাজমান সংস্কৃতির মতই এর ইতিহাসও অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। সময়ের পথ ধরে, ইতিহাসের নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে অখণ্ড ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে আধুনিক কালের দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহ। মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাস জুড়ে রয়েছে বিদেশী শক্তির আগ্রাসন, পরাধীনতা ও সাম্রাজ্যবাদ। মূলত ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের পরে থেকেই এই উপমহাদেশ বিদেশী শাসকদের অধীনে চলে যায়। প্রথমে মুঘলরা এবং পরে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে রাজত্ব করে। একথা বলার উপায় নেই যে, ১২০০ শতকের পূর্বে এই উপমহাদেশ পরাশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু তখন পর্যন্তও এই উপমহাদেশের শাসকেরা বিভিন্ন সময়ে আসা পারস্য ও গ্রীক আক্রমণ ঠেকিয়ে নিজেদের দেশ নিজেরাই শাসন করেছেন। এখানে মূলত ১২০০ শতকের পূর্ববর্তী সময়ের (যা এখানে ভারত উপমহাদেশের প্রাচীনকাল হিসেবে ধরা হয়েছে) ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই পর্বে ভারত উপমহাদেশে প্রথম মানুষের আবির্ভাব থেকে শুরু করে নব্য-প্রস্তর যুগ পর্যন্ত সময়কাল নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এই সময়ের ইতিহাস রচিত হয়েছে মূলত প্রত্নতাত্ত্বিক গন ও জীবাশ্ম-বিদ গনের হাতে। অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে ভারত উপমহাদেশে মানুষের আবির্ভাব এবং মানব সভ্যতার বিকাশ নিয়ে একটা মোটা দাগের ধারণা পাওয়া যায়। এই রচনার মূল উদ্দেশ্য, সাধারণ পাঠকের কাছে প্রাচীন ভারত উপমহাদেশ সম্পর্কিত এই মোটা দাগের ধারণাটি আরও মোটা দাগে পৌঁছে দেওয়া।
[বিঃদ্রঃ আমি ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্বের লোক নই, কিন্তু দুটোই আমাকে সমান ভাবে আকর্ষণ করে। এই রচনাটি তৈরি করেছি, “India: The Ancient Past, A history of the Indian sub-continent from c. 7000 BC to AD 1200 -by Burjor Avari” এই বইটির উপর ভিত্তি করে। আমার জানা ও বুঝায় ভুল থাকা খুবই স্বাভাবিক, কাজেই প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবেত্তা পাঠকের কাছে অনুরোধ থাকবে, কোনও অসঙ্গতি নজরে এলে সেটা দয়া করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং শুধরে দিবেন]

আফ্রিকা থেকে ভারত উপমহাদেশে মানুষের আগমন:
আজ থেকে প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিবর্তনের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটে বলে ধারণা করা হয়। এই সময়ে আফ্রিকাতে সর্বপ্রথম চতুষ্পদী প্রাইমেট থেকে দ্বিপদী আদি-মানবের আবির্ভাব ঘটে। জীবাশ্ম-বিদেরা এই দ্বিপদী আদি-মানবদের হোমিনিন নামে অভিহিত করে থাকেন। প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রজাতির হোমিনিনেরা আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে বিচরণ করত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ২.৫ মিলিয়ন বছরের পূর্ববর্তী সময়ে এইসকল হোমিনিনেরা কোনও হাতিয়ারের ব্যবহার শিখছিল বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাপ্ত জীবাশ্ম অনুযায়ী এটা ধারণা করা হয় যে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে সর্বপ্রথম হোমিনিনেরা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করা শুরু করে। এই সময়ে হোমিনিনেরা মূলত হোমো হেবিলিস, হোমো এরগ্যাস্টারহোমো ইরেক্টাস এই তিনটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। আরও পরে, প্রায় ১ মিলিয়ন বছর পূর্বে হোমো এরগ্যস্টারহোমো ইরেক্টাস প্রজাতির হোমিনিডেরা আফ্রিকার বাইরে ইউরোপ, ও এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।
হোমো গোত্রের এইসকল প্রজাতিরা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর আগে পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহার শিখলেও সর্বপ্রথম পরিপূর্ণ মানব বা আধুনিক মানুষের (হোমো সেপিয়েন্স) আবির্ভাব ঘটে মাত্র ৪ লক্ষ বছর পূর্বে। এই সময়ে হোমো ইরেক্টাস ও তার থেকে বিবর্তিত হোমো সেপিয়েন্স উভয়েই পৃথিবীব্যাপী সহাবস্থান করে। হোমো সেপিয়েন্সের উৎপত্তি-কাল নিয়ে মতানৈক্য না থাকলেও এদের উৎপত্তিস্থল নিয়ে দ্বিমত আছে। একদলের মতে এরা প্রায় কাছাকাছি সময়ে আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়া হোমো ইরেক্টাস থেকে বিবর্তিত হয়, অন্য দলের মতে এরা মূলত আফ্রিকাতে হোমো ইরেক্টাস থেকে বিবর্তিত হয় ও পরবর্তীতে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যাইহোক, ধারণা করা হয় যে ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম আধুনিক মানুষের আগমন ঘটে মাত্র ৩০ হাজার বছর পূর্বে। এরা আফ্রিকা থেকে পশ্চিম এশিয়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। কেউ কেউ মনে করেন প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে নৌপথে দক্ষিণ ভারতে সর্বপ্রথম আধুনিক মানুষের আগমন ঘটে থাকতে পারে।
আধুনিক মানুষের ইতিহাস ৩০-৫০ হাজার বছরের পুরনো হলেও এই উপমহাদেশে প্রস্তর যুগের সূচনা হয় প্রায় ৫ লক্ষ বছর পূর্বে যখন পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারকারী হোমো ইরেক্টাসরা এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসবাস শুরু করে (আফ্রিকাতে প্রস্তর যুগের সূচনা হয় ২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে)। উপমহাদেশে প্রস্তর যুগের ব্যাপ্তিকাল ছিল প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার বছর আগে পর্যন্ত যখন সর্বপ্রথম হরপ্পাতে তামার প্রচলন শুরু হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রস্তর যুগের এই দীর্ঘ ব্যাপ্তিকালকে আলোচনার সুবিধার্থে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা আদি-প্রস্তর যুগ, মধ্য-প্রস্তর যুগ ও নব্য-প্রস্তর যুগ এই তিনটি উপ-ভাগে বিভক্ত করেছেন। এখানেও উপমহাদেশে প্রস্তর যুগের ইতিহাসকে এই তিনটি উপ-ভাগে আলাদা-আলাদা ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আদি-প্রস্তর যুগ: উপমহাদেশে আদি প্রস্তর যুগের ব্যাপ্তিকাল ছিল প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৬,০০০ বছর পর্যন্ত। এই যুগের প্রধান হাতিয়ার ছিল নুড়ি পাথরের ধারালো কাটালি আর পাথরের তৈরি একধরনের হাত কুঠার। পাকিস্তানের সন নদীর উপত্যকায় বিস্তর এলাকা জুড়ে নুড়ি পাথরের কাটালির স্তর পাওয়া গেছে। আর হাত কুঠারের সন্ধান পাওয়া গেছে মাদ্রাজের চেন্নাইয়ে। আদি প্রস্তর যুগের হাতিয়ার আর ফসিল গুলো থেকে এটা ধারনা করা যায় যে ঐ যুগের মানুষেরা ছিল মূলত শিকারি ও সংগ্রহকারী। তারা মূলত পশু শিকার, আর বুনো ফলমূল, শিকড়-বাকড়, ইত্যাদি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা মূলত যাযাবরের মত খোলা জায়গায় বসবাস করলেও কখনও কখনও নিরাপত্তার জন্য গুহায় আশ্রয় নিত। মধ্য ভারতের নর্মদা নদীতীরের গুহা চিত্রগুলো এমনটিই ইঙ্গিত করে। অল্প কিছু ফসিল, উপরোল্লিখিত হাতিয়ার আর এই গুহাচিত্রগুলো ছাড়া এই যুগের আর তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য নমুনা পাওয়া যায়না।

মধ্য-প্রস্তর যুগ: মাইক্রোলিথ নামক একধরনের ছোট আকারের হাতিয়ারের ব্যবহার মধ্য-প্রস্তর যুগকে আদি-প্রস্তর যুগ থেকে আলাদা করেছে। আকারে ছোট হলেও পূর্ববর্তী যুগের যেকোনো হাতিয়ারের চেয়ে মাইক্রোলিথ ছিল উৎকৃষ্ট-মানের ও অধিক কার্যকরী। এগুলো ছিল আকারে খুবই ছোট (লম্বায় এক সেঃমিঃ বা একটু বেশি আর পাশে প্রায় তার অর্ধেক) আর নানা আকৃতির (ব্লেডের মত চ্যাপ্টা, ত্রিকোণাকৃতির, ট্রাপিজিয়ামাকৃতির, অর্ধচন্দ্রাকৃতির, তিরের অগ্রভাগের মত সূচালো ইত্যাদি)। এই হাতিয়ার তৈরিতে প্রয়োজন হত কোয়ার্টজ, ফ্লিন্ট বা চেলসিডোনির মত শক্ত পাথরের। নদী অববাহিকায় প্রাপ্ত নুড়ি সমূহ ছিল এই সকল হাতিয়ারের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। কাজেই পাথরের খোঁজে মধ্য-প্রস্তর যুগের মানবেরা নদী অববাহিকা ছেড়ে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাস শুরু করে। আবার আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে মধ্য-প্রস্তর যুগের মানুষের মধ্যে ঋতু ভিত্তিক আবাস্থল পরিবর্তনও লক্ষণীয়। সাধারণত শীতকালে এরা গঙ্গা অববাহিকা থেকে মধ্য ভারতের বিন্ধা পার্বত্যাঞ্চলের দিকে চলে যেত এবং গুহায় আশ্রয় নিত আর গ্রীষ্মকালে পুনরায় নদী অববাহিকায় ফেরত আসত। পাথরের তৈরি একধরনের যাঁতাকল ও গোলাকৃতির পাথরের ব্যবহার এই যুগে আদিম কৃষিকাজের সূচনার ইঙ্গিত করে। মানব আবাস্থলের সন্নিকটে প্রাপ্ত গরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি পশুর হাড়গোড়ের অবশিষ্টাংশ এই যুগে সর্বপ্রথম পশু-পালনের সূচনারও ইঙ্গিত করে। মধ্য-প্রস্তর যুগে প্রথম মৃতদেহকে কবর দেওয়ার নিদর্শনও পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা যায় যে এই যুগে মানুষের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রতি বিশ্বাস ছিল। উপমহাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এই যুগের নিদর্শন সমূহ পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহ হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা, বর্তমান ভারতের রাজস্থানের বাগড়, গুজরাটের লানগঞ্জ, গঙ্গা সমভূমির সরাই নহর রাই, মহাদহ ও দমদম এবং মধ্যাঞ্চলের আদমগড়, ভিমবেক্তা ও ঘাগড়িয়া।

নব্য-প্রস্তর যুগ ও কৃষির বিস্তার: প্রায় ১১,০০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব) পূর্বে, শেষ বরফ যুগের সমাপ্তির সাথে সাথে মধ্য-প্রস্তর যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং নব্য-প্রস্তর যুগের সূচনা হয়। অনুকূল জলবায়ু ও ভূমির উর্বরতা এই যুগে ব্যাপক ভাবে কৃষির বিকাশ ঘটাতে ভূমিকা রাখে। তথাপি বরফ যুগের পতনের সাথে সাথেই এই অঞ্চলে কৃষির বিকাশ ঘটেনি কিংবা সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে একই সময়ে কৃষির বিকাশ ঘটেনি। ছোট ছোট অঞ্চলে ধীরে ধীরে কৃষির বিস্তার ঘটতে থাকে এবং শিকার-সংগ্রাহক থেকে মানুষজন কৃষকে উন্নীত হতে থাকে। কাজেই প্রায় কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত এই দুই শ্রেণীর মানুষ সহাবস্থান করে। উপমহাদেশের অন্তত ৪-৫ টি অঞ্চলে শিকার-সংগ্রহ থেকে পুরোপুরি কৃষি নির্ভর জীবন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটে প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৮,০০০ বছরের দিকে। আবার কোনও কোনও অঞ্চলে এই পরিবর্তন ঘটে মাত্র হাজার বছর পূর্বে।
নব্য-প্রস্তর যুগে সমস্ত উপমহাদেশ জুড়ে মানুষের বসবাস থাকলেও চারটি বিশেষ অঞ্চলে প্রাপ্ত নিদর্শন সমূহ ঐ যুগের আঞ্চলিক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য গুলোকে ধারণ করে। প্রথম অঞ্চলটি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অবস্থিত। বেলুচিস্তানের মেহেরগড়ে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ এই অঞ্চলে প্রায় ৭,০০০ বছর পূর্বে কৃষিকাজের সূচনার ইঙ্গিত করে। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত নব্য-প্রস্তর যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাটির তৈরি কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ, বার্লি ও গমের বীজ, ভেড়া ও ছাগলের হাড়, চার্ট এর তৈরি ব্লেড ইত্যাদি। এই সকল নিদর্শন সমূহ পরিষ্কারভাবে কৃষির ইঙ্গিত বহন করে। দ্বিতীয় অঞ্চলটি পাকিস্তানের কাশ্মীর ও সোয়াত উপত্যকায় অবস্থিত। এইখানে কৃষিকাজের ইঙ্গিত বাহি সাধারণ নিদর্শন সমূহ সহ আরও বিশেষ এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। এখানে প্রাপ্ত ঘণ্টা-আকৃতির গর্ত সমূহ এই অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল সমূহ থেকে আলাদা করেছে। এই গর্তসমূহের ব্যবহারিক দিক নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের মধ্যে দ্বিমত আছে। অনেকেই মনে করেন ১৫ ফুট চওড়া ও ১৩ ফুট গভীর এই গর্তগুলোতে সে যুগের মানুষেরা বসবাস করত। তারা এটাও মনে করেন যে এই অঞ্চলের নব্য-প্রস্তর যুগের মানুষেরা মধ্য এশিয়ার গর্ত-বাসী নব্য-প্রস্তর যুগের মানুষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। অন্যদিকে, ভিন্ন মতাবলম্বীরা মনে করেন যে এই গর্ত সমূহ শস্য ভাণ্ডার কিংবা আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হত। তৃতীয় অঞ্চলটি পূর্ব ভারতের গঙ্গা অববাহিকায় বিরাট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই অঞ্চলে কৃষির আবির্ভাব ঘটে তুলনামূলক ভাবে অনেক দেরিতে। এখানে প্রাপ্ত নব্য-প্রস্তর যুগের অনেক নিদর্শনই দেখতে মধ্য-প্রস্তর যুগের নিদর্শন সমূহের মত। তথাপি এখানকার কোনও কোনও এলাকা যেমন চোপানি মন্দ, মহাগরা, কলদিহাওয়া ও চিন্দ্রাতে প্রাপ্ত নব্য-প্রস্তর যুগের নিদর্শনসমূহ এইসব এলাকায় প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ৪,০০০ বছর আগে কৃষির আবির্ভাব হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। এখানে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য শস্যাবশেষ হল ধান, যদিও সেই যুগে ধান চাষ নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকেই মনে করেন এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ধান চাষের আবির্ভাব ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ২,০০০ বছর এর পরে। নব্য-প্রস্তর যুগের চতুর্থ অঞ্চলটি দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত। এই অঞ্চলে প্রাপ্ত নব্য-প্রস্তর যুগের নিদর্শন সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ছাইয়ের স্তূপ। ধারনা করা হয় যে এগুলো এক ধরনের খোয়ারের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে ঐ যুগে নির্দিষ্ট ঋতুতে গবাদি পশু পোষ মানানো হত আর ঋতু শেষে সেগুলো আগুনে পোড়ানো হত। অনবরত বছরের পর বছর ধরে একই স্থানে পোড়ানো ছাই গুলো স্তূপাকৃতি ধারণ করে। অঞ্চলভেদে নানা বৈসাদৃশ্য থাকলেও উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে নব্য-প্রস্তর যুগে সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে জীবন-ব্যবস্থা ছিল মূলত কৃষি ও পশুপালন ভিত্তিক। এতদস্বত্বেও একদল নব্য-প্রস্তর যুগীয় মানুষ কৃষি কাজে না গিয়ে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত শিকারি ও সংগ্রাহক হিসেবে বসবাস করে।
কৃষিকাজের আবিষ্কারের সাথে সাথে সেই যুগে মানুষের জীবন ব্যবস্থায় তুমুল বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। সেই যুগের মানুষেরা প্রথমে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে হয়ে, একদল কৃষক, একদল পশুপালক আর একদল শিকারি। হাজার বছর ব্যাপী এই তিন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে এক ধরনের তৈরি হয় এক ধরনের পরস্পর নির্ভরশীলতা। এক দল আরেক দলের উপর বিভিন্ন উপকরণের জন্য নির্ভর করতে থাকে। যেমন কৃষক চামড়া ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদির জন্য পশুপালকের উপর নির্ভর করে তেমনি পশুপালক শস্য ও গোখাদ্যের জন্য কৃষকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কৃষকের ফসল কাটা হয়ে গেলে, পশু পালকেরা সেগুলো গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করত, অন্যদিকে সেই জমিতে গোচারণের ফলে জমা হওয়া গোবর জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে কৃষকের উপকার করত। আবার কৃষক বনজাত দ্রব্যাদি ও মধুর জন্য নির্ভর করত যাযাবর শিকারিদের উপর। এভাবেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন পেশার মানুষের উদ্ভব হতে থাকে। আবির্ভাব ঘটে কারিগর ও বনিক শ্রেণীর। সেই যুগের মানুষ জন যে একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট শান্তি পূর্ণ জীবন যাপন করত এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। প্রায়শই দলে-দলে বা গোত্রে গোত্রে মারামারি হানা-হানি হত। এর মূল কারণ অবশ্য ছিল চাষ যোগ্য ভূমি। চাষাবাদের জমি ও ফসল রক্ষার জন্য প্রায়শই কৃষকের সাথে পশুপালক শ্রেণীর যুদ্ধ-বিগ্রহ হত। ভূমির দখল বা মালিকানা রক্ষার নিমিত্তে তৈরি হয় গোত্র ব্যবস্থা। আর স্বাভাবিক ভাবেই গোত্রের সবচেয়ে ব্যক্তিত্বপূর্ন মানুষের হাতে যায় গোত্রের নেতৃত্ব। গোত্র ব্যবস্থা পরবর্তীতে পরিবার ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। চালু হয় বিবাহ প্রথার। খ্রিষ্টপূর্ব ৩,০০০ সালের দিকে হরপ্পান সভ্যতার বিকাশ এর মাধ্যমে নব্য-প্রস্তর যুগের সমাপ্তি ঘটে। পরের পর্বে হরপ্পান সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মাহফুজ খান


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পড়ছি।

আপাতত: প্রথম প্যারা পড়ে যা পেলাম।

মুঘলদেরকে ব্রিটিশদের মত একই কাতারের বিদেশী শাসক বলাটা কতটুকু যৌক্তিক?
মুঘলদেরকে যদি বিদেশী বলা হয়, তাহলে, আর্য এবং তারও আগে অনার্যরাও তো বিদেশী।
আবার, আর্য-অনার্যরা এদেশে স্থায়ী নিবাস গড়েছিল বলে তারা স্থানীয় হয়ে উঠেছে, এমনটি ধরে নিলে মুঘলরাও স্থানীয় ভারতীয় হয়ে উঠেছে।
আর ব্রিটিশরা তো এ বিতর্কের উর্ধ্বে, ওরা তো এখানে স্থায়ী আবাসই গড়েনি। (তবে, অ্যাংলো-ভারতীয়রা স্থানীয় ভারতীয় কাতারে পড়ে)।

আমার কাছে ভারতে এসে স্থায়ীবসতি স্থাপন করা মুঘল/ মুসলমানদের বংশধরদের বিদেশী বলাটা অদ্ভুত ঠেকে। যে যুক্তিতে বিদেশী বলা হয়, তাহলে, স্থানীয় ভারতীয় বলে কেউ থাকে না। আর ধর্মের কারণে যদি ভারতে এসে স্থায়ীবসতি স্থাপন করা মুঘল/ মুসলমানদের বংশধরদের বিদেশী বলেন, তাহলে আপনি স্রেফ মৌলবাদী, বিশ্বাসন্ধ।

পরের প্যারাগুলো নিয়ে পরের মন্তব্যগুলোতে বলব।

দুর্দান্ত এর ছবি

ব্রিটিশরা স্থায়ী আবাসা না গড়লে এখানে রেলরাস্তা, কোলকাতা, সংসদীয় গণতন্ত্র, মুসলিম লিগ-কংগ্রেস, জজ সাহেবদের মাথায় উইগ-গায়ে কালো আলখাল্লা-অব্জেকশান মিলড - এগুলা কি? গায়ের রং সাদা করতে পারেনাই। এছাড়া তো আমি আপনি সবাই ইংরেজ-তুর্কি-সংস্কৃত-মালো এগুলোর শঙ্কর।

স্থায়ী আবাস গড়লেই কি মানুষের বহিরাগত পরিচয় লোপ পায়? তাহলে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশীরা আমেরিকান? তাহলে বিহারিক্যাম্পের ওরা বাংগালি? তাহলে পার্বত্যচট্টগ্রামে যে বাংগালিরা বাসা গড়েছে ওরা চাকমা?

উদ্দ্যেশ্য বিচারে আর্য-মোঘল-ব্রিটিশ দের কোন পার্থক্য ছিল কি? এরা সবাই উপনিবেশ স্থাপন করে মূলত গায়ের জোরে স্থানীয় মানুষের ওপরে কর ও শুল্ক রোজগারের উদ্যেশ্যে এখানে এসেছে। মিল একটাই ওরা নিজ দেশ থেকে এসব নিয়ে আসে নাই, আগের কাঠামোকে ব্যাবহার করে সেটার এফিশিয়েন্সি বাড়িয়েছে এই যা। কর-শুল্ক আয়ের জন্যই প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান আর অবকাঠামো তার তৈরী করেছে, সেখান থেকেই সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে, সেটা ব্যাবহারে করে শুধুমাত্র শুল্ক আয় বাড়াতে। দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু এখন যে ব্যবস্থা চালু আছে, সেটা কিন্তু সেই কাঠামোরই খোলস। গায়ের রং পাল্টেছে, কিন্তু উপমহাদেশ এখনো দিল্লীর উপনিবেশ, বাংলাদেশ ঢাকার উপনিবেশ, আর পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডির (তিনটি কেন্দ্রই ব্রিটিশদের বানানো উপনিবেশযন্ত্র)। আর্য বর্ণপ্রথা, মোঘল সুবেদারি, ব্রিটিশ আই এসপি এগুলোর সবগুলোর উদ্দ্যেশ্যই ছিল স্থানীয় উতপাদন উদ্বৃত্ব ডাকাতি করে নিজ জাতির সম্পদ বাড়ানো।

রংতুলি এর ছবি

চলুক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আপনি আদতে আমার সাথে মত মেলালেন। হাসি আমরা সঙ্কর জাতি।

জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশীরা আমেরিকান? তাহলে বিহারিক্যাম্পের ওরা বাংগালি? তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বাংগালিরা বাসা গড়েছে ওরা চাকমা?

নৃত্বাত্তিক পরিচয় আর ভূ-তাত্ত্বিক পরিচয় কি এক হলো?
'ভারতীয়'/'হিন্দুস্তানী'/'আমেরিকান'/'বাংলাদেশী' এগুলো ভূ-তাত্ত্বিক জাতি পরিচয়, নৃতাত্ত্বিক নয়।

ঘোড়ায় চড়ে রাজ্য জয় করে তা শাসন করা আর ঘোড়া থেকে নেমে সাধারণের সাথে মিশে রাজ্য শাসন করা আলাদা বিষয়।
তবে, মুঘল এলিট ফ্যামিলি দিয়ে যদি সব মুঘলকে এক কাতারে ফেলেন, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

দুর্দান্ত এর ছবি

প্রলেতিয়ারেত মোঘলও আছে নাকি? সেটা নিয়া প্লিজ বিস্তারিত বলুন/লিখুন।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

মুঘলরা একটি 'পারসিক-তুর্কি-মঙ্গল কনফেডারেশান'। এখানে সাধারণ মুঘল থাকবে না কেন?
পুরাতন দিল্লী ঘুরে আসতে পারেন; বিশেষত: চাঁদনী চক।

দুর্দান্ত এর ছবি

হচ্ছিল মোঘল সাম্রাজ্য়ের কথা। আপনি বলছে দিল্লী ৬ এ বসবাসকারিদের মধ্য়ে যারা নিজেদের মোঘল মনে করে সুখ পায় তাদের কথা - সেভাবে খুজলে তো ভাই পুরাতন ঢাকার ৫০% আর মোহম্মদপুরের জেনেভা ক্য়াম্পের ৮০% লোকও মোঘল। যেভাবে পরীবাগ-নারিন্দার মোটামুটি সবাই নবাব ফ্য়ামিলির। প্রশ্ন তো সেটা ছিলনা, প্রশ্ন ছিল, ব্রিটিশরা আসার আগে উপমহাদেশে কোন মোঘল প্রলেতারিয়েত (সম্রাটের প্রতিনিধি নন) ছিল কিনা, সেটা ছিল আমার প্রশ্ন।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ব্রিটিশরা আসার আগে উপমহাদেশে কোন মোঘল প্রলেতারিয়েত (সম্রাটের প্রতিনিধি নন) ছিল কিনা?

'সম্রাটের প্রতিনিধি' বলতে কি আপনি 'রাজকর্মচারী' বুঝাচ্ছেন?
'ভারতে মাইগ্রেট হওয়া মুঘল বা, মুঘলদের বংশধররা সবাই রাজকর্মচারী ছিল'- আপনি কি এটা দাবী করছেন?
যদি আপনি 'সম্রাটের প্রতিনিধি' বলতে 'সম্রাটের প্রতি অনুগত' বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে সেটা ভিন্ন বিষয়।
ভারতে মাইগ্রেট হওয়া মুঘলদের বংশধরদের অধিকাংশই স্বাভাবিক কারণে মুঘল সম্রাটের অনুগত হবে। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার, তাই না।
কিছু বইয়ের নাম বলি, পড়ে দেখতে পারেন।
Travels in the Mogul Empire (Francois Bernier)
A Search for Identity of Indian Nations (Edited by- L.K. Mallick & M. Chandra)

আলোচনার বিষয় ছিল মুঘলরা কি ভারত উপমহাদেশের মানুষ বলে গণ্য হবে নাকি, ব্রিটিশদের মত বিদেশী বলে গণ্য হবে?
আমার উত্তর ছিল সোজাসুজি।
আকবর থেকে কোন মুঘল সম্রাটকে আমি বিদেশী বলতে রাজি নই। (হুমায়ুন প্রথম ভারতে মাইগ্রেট হওয়া মুঘল প্রজন্মের শেষাংশ)। কারণ, তারা এদেশে স্থায়ীভাবে সেটেল হয়েছিল এবং স্বাধীন রাজব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল। কোন বিদেশী শক্তির প্রতিনিধি ছিল না।
ব্রিটিশদের সাথে এদের বড় পার্থক্য এখানেই। ব্রিটিশরা ভারতকে যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ বানিয়েছিল কিন্তু মুঘলরা ভারতে স্থায়ীভাবে শিফট হয়ে স্বাধীন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, ভারতকে কারো উপনিবেশে পরিণত করে না।
আরো সহজ করে বললে, মুঘলরা ভারত আর্যদের মত মাইগ্রেট করেছিল।
সাধারণ মুঘলদের (মুঘল রাজপরিবারের সদস্য যারা নয়) যারা ভারতে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মও ভারতীয়।
ভারতে মুঘলদের আগমন, আর্যদের ভারতে আগমনের থেকে বিষয়গত কোন আলাদা তাৎপর্য রাখে না।
মুঘলরা ভারতে মাইগ্রেট করেছিল কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতে মাইগ্রেট করেনি।
ব্রিটিশরা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল কিন্তু মুঘলরা কারো উপনিবেশ স্থাপন করেনি।

পরমার্থ এর ছবি

দেখুন মুঘলদের খাদ্য আচার প্রাচীন ভারতের চলমান সংস্কৃতির সাথে এক করা যায় না .. আর আর্য যদি বিদেশ থেকে আসে তবে তারা অবশ্যই বিদেশী .. এই ভারতবর্ষ এভাবেই ভিন্ন সংস্কৃতির প্রাচুর্যলাভ করে ..
প্রাচীন ভারতবর্ষের অনেক পুস্তকে বিদেশী জ্ঞান বিজ্ঞান বর্ণিত হয়েছে .. কথিত আছে ভারতবর্ষকে জানলে সমস্ত বিশ্বকে জানা হয় ..

এদেশে আদিবাসী যারা তারা অনেকাংশে আর্য বা বহিরাগতদের দ্বারা নির্যাতিত .. কথিত আছে প্রাকৃতিক নিয়মে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি উষ্ণ আবহাওয়ায় বেটে বা বামন মানুষেরা বেশি উপযোগী .. একারণে এদেশিযরা কিছুটা অনুচ্চ হয় .. আপনি খেয়াল করবেন এদেশে বামনদেরকে অবহেলা করা হয় আর উচালম্বা মানুষেরা বেশি সমাদৃত হয় ..

আর সব মুসলিমরা মোঘল নয়, মোঘলরা খাজনা আদায়ের তাগিদে, শাসন শোষনের তাগিদে উপমহাদেশের মানুষদেরকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে .. এবং স্পষ্টতই তারা স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে .. অর্থাত সব মুসলিম বিদেশী নয় .. তবে এদেশের কিছু মানুষ আজ নিজেদেরকে বাঙালি বলার আগে ইয়েমেনী পরিচয় দিতে ভালবাসে .. এর মধ্যে অবশ্যই রাজনীতি জড়িত .. এদেশের মানুষেরা এদেশের মানুষ হিসেবে যতনা গর্বিত তার থেকে গর্বিত অন্য কোনো দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশের পরিচয়ে ..

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

১। ভারতীয় সংস্কৃতি মানে কাদের সংস্কৃতি?
২। 'মোঘলরা খাজনা আদায়ের তাগিদে, শাসন শোষনের তাগিদে উপমহাদেশের মানুষদেরকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে' এটা দিয়ে কি ফোর্সড কনভার্ট বুঝালেন? সোর্স দেখান তো। 'কথিত আছে'-এটা কোন সোর্স না।
ভারত উপমহাদেশের শতকরা আশিজন মুসলমান স্থানীয় ভারতীয়, মধ্য ও পশ্চিম এশীয় না।
৩। কিছু মানুষ দিয়ে পুরো জাতিকে বিচার করলে তো হয় না।

পরমার্থ এর ছবি

"ভারতীয় সংস্কৃতি মানে কাদের সংস্কৃতি"

কথাকে কেটে আপনি অদ্ভুত আচরণ করছেন, আমি বলেছি **"প্রাচীন"** ভারতের চলমান সংস্কৃতির সাথে এক করা যায় না .. মোঘলদের সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতিকে অনেকাংশে সমৃদ্ধ করেছে সেকথা আমি বলেছি ..

"ভারত উপমহাদেশের শতকরা আশিজন মুসলমান স্থানীয় ভারতীয়, মধ্য ও পশ্চিম এশীয় না।"

আমি সেই কথাটিই বুঝতে চাচ্ছি, এখানে লেখক সকল মুসলিমদের অভারতীয় বলে চাচ্ছেন না .. সুতরাং এখানে কোনো "মৌলবাদী, বিশ্বাসন্ধ" আচরণ করছেন না .. আর অর্যদেরকে বহিরাগত বললে অন্ধতা হয়ত দূর হবে, তাইত ?

"কিছু মানুষ দিয়ে পুরো জাতিকে বিচার করলে তো হয় না"

এ ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত .. তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবহার একটি কার্যকর চিত্র ..

"মোঘলরা খাজনা আদায়ের তাগিদে, শাসন শোষনের তাগিদে উপমহাদেশের মানুষদেরকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে"

কিভাবে প্রমান করব সেটা একটা প্রশ্ন .. দেখুন খাজনা সমস্যা জুলুম বাংলাদেশে মহারাজা প্রতাপাদিত্যএর উত্থানের কারণ(http://en.wikipedia.org/wiki/Pratapaditya) .. ওই সময় আপনি থাকলে আপনিকি বাংলার পক্ষে থাকতেন নাকি মোঘলের পক্ষে, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে ? .. মোঘলদের দ্বারা প্রতারিত কিছু আফগান সে সময় বাংলার রাজার পক্ষে যুদ্ধ করেন .. রাজার পরাজয়ের শত শত বত্সর পরেও আপনি দেখবেন সেই সময়ের প্রচারিত নিন্দা ধিক্কার এখনো বহন করে বরিশালের মানুষেরা .. অতীতকে কিভাবে প্রমান করব সেটা কঠিন প্রশ্ন .. তবে বর্তমানে আমি আমার পরিচিতজনের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি ..
উপনিবেশিকতার প্রথম শর্ত ওই দেশের স্থানীয় সংস্কৃতিকে ধংশ করা, প্রতিনিয়ত তার নিন্দা করা আর রাজ্য পরিচালিত ধর্মকে ব্যবহার করা ..
" If you want to control a population, keep them passive, keep beating them over the head and let them look somewhere else, one way to do it is to give them a god to worship." - Noam Chomsky

এমন আপনি ইতিহাস ঘটলে ভুরি ভুরি পাবেন ..

ইংরেজ যদি এদেশের হিন্দু মুসলিম বিভেদকে একভাবে ব্যবহার করেছে ..

আবার একাত্তরে বিশাল সংখালঘু মানুষকে ধর্মান্তরিত করার অথবা দেশত্যাগের চাপ দেয়া হয় .. তাদের সম্পত্তিকে পাকিস্তান আমলে (এমনকি আমার নিজের পূর্বপুরুষের) শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করা হয় .. আপনার দৃষ্টিতে হয়ত সেটা নির্যাতন নয় ..

আমাদের কাছাকাছি দেশ নেপালের রাজাকে শিবের অবতার বলা হচ্ছিল তার রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য ..

ইউরোপেও রাজ্য শাসিত হয়েছে চার্চের মাধ্যমে ..

ধর্মের মধ্যে যদি রাজনীতি না থাকত তবে তা হত শুধুই জীবন দর্শন, হত না কোনো ভেদাভেদ, ঘৃনা আর সহিংসতার উত্স ..

আর বেশি বলে মরতে চাই না .. পরে আমার কথা থেকে আপনি কি বুঝেন, আর আমি খুন হয়ে যাই .. সাম্রাজ্যবাদ যেখানে সেখানে ধর্মের জন্য মানুষ মৃত্যুর স্বীকার হয় ..

পরমার্থ এর ছবি

দেখুন মোঘলদের কীর্তি .. এক (http://en.wikipedia.org/wiki/Somnath_Temple) মন্দিরের দুই হাজার বছর ধরে বহিরাগতদের আক্রমন চলে ..

The first temple of Somnath is said to have existed before the beginning of the common era.[13]

The second temple, built by the Yadava kings of Vallabhi in Gujarat, replaced the first one on the same site around 649 CE.[13]

In 725 CE Junayad, the Arab governor of Sind, sent his armies to destroy the second temple.[13] The Gurjara Pratihara king Nagabhata II constructed the third temple in 815, a large structure of red sandstone.

In 1024 CE, the temple was once visited by Mahmud of Ghazni[14][15] who raided the temple from across the Thar Desert. The temple was rebuilt by the Gujjar Paramara King Bhoj of Malwa and the Solanki king Bhimadev I of Anhilwara, Gujrat (present day Patan) between 1026 and 1042. The wooden structure was replaced by Kumarpal (r.1143-72), who built the temple of stone.[16][17]

In 1296 CE, the temple was once again destroyed by Sultan Allauddin Khilji's army.[13][14][17] According to Taj-ul-Ma'sir of Hasan Nizami, Raja Karan of Gujarat was defeated and forced to flee, "fifty thousand infidels were dispatched to hell by the sword" and "more than twenty thousand slaves, and cattle beyond all calculation fell into the hands of the victors".[13] The temple was rebuilt by Mahipala Deva, the Chudasama king of Saurashtra in 1308 AD and the Linga was installed by his son Khengar sometime between 1326 and 1351 AD.[17]

In 1375 CE, the temple was once again destroyed by Muzaffar Shah I, the Sultan of Gujarat.[13][17]

In 1451 CE, the temple was once again destroyed by Mahmud Begda, the Sultan of Gujarat.[13][14][17]

In 1701 CE, the temple was once again destroyed by Mughal Emperor Aurangzeb.[13] Aurangzeb built a mosque on the site of the Somnath temple, using some columns from the temple, whose Hindu sculptural motifs remained visible.[18]

Later on a joint effort of Peshwa of Pune, Raja Bhonsle of Nagpur, Chhatrapati Bhonsle of Kolhapur, Queen Ahilyabai Holkar of Indore & Shrimant Patilbuwa Shinde of Gwalior rebuilt the temple in 1783 AD at a site adjacent to the ruined temple which was already converted to a mosque.[18]

আমি কাশিতে কিছু মন্দির দেখেছি যার অর্ধেক মসজিদ .. এগুলো বাস্তবতা ..
আবার এর বিপরীত চিত্র আচ্ছে যেখানে কিছু মুসলিম শাসক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মন্দির স্থাপনের জন্য অর্থায়ন করেন ..

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আলোচনা প্রসঙ্গ থেকে সরে গেছে। তাই, নিজের অবস্থান ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলাম।
০১। রাজতান্ত্রিক শাসকশ্রেণী সবসময় খারাপই হয়। সেটা মুঘলই হোক, বারো ভূঁইয়াই হোক আর রাণীই হোন না কেন।

০২। সাধারণ মুঘলরা যখন স্থায়ীভাবে ভারতবর্ষে থেকে যায়, তখন তাদের বংশধরদের কি আর বিদেশী বলা যায়?

আমি উপরে দুর্দান্ত দা'র জবাবে বলেছি, শাসক মুঘল আর সাধারণ মুঘল এক নয়। শাসক মুঘল শোষক।

পোস্ট লেখক কোন অনুবাদ পোস্ট করেননি, উনি একটি বইয়ের ভিত্তিতে নিজের মতামত লিখছেন। উনি এই পোস্টের মাঝের ও শেষের অংশে 'সভ্যতার ইতিহাস' বলছেন আর পোস্টের শুরুতে শাসক মুঘলদের কাঁধে গুলি রেখে সকল মুঘলদের বিদেশী বলছেন। এটা আমাদের কমন বিষয়।

সভ্যতার ইতিহাস আর রাজাদের ইতিহাস ভিন্ন বিষয়।

* ফোর্সড কনভার্টের সূত্র দেখাতে বলেছিলাম, দেখাননি। ভারতেও ইনকুইজিশান হয়েছিল জানতাম না। চাল্লু

পরমার্থ এর ছবি

ধর্মান্তরিতকরণের কারণেই বাংলায় মহারাজা প্রতাপাদিত্য বাংলা থেকে মুঘল উচ্ছেদের যুদ্ধ শুরু করেন .. প্রতাপাদিত্যের অনুপস্থিতিতে বাংলায় চলে আরঙ্গজেব ইশারায় হিন্দুদের ভয়াবহ নির্যাতন, মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মান এবং ধর্মান্তরিতকরণ ..

"Mughal ruler Aurangzeb cherished the ambition of converting India into a land of Islam. For this, he encouraged forced religious conversions and destroyed thousands of Hindu temples during his reign." (http://en.wikipedia.org/wiki/Forced_conversion#India)

আরঙ্গজেব শুধু হিন্দুদের না শিখদের গুরুকে মেরে ধরে মুসলিম করতে চেয়েছিল . "Two of the younger sons of Guru Gobind Singh [Zoravar Singh and Fateh Singh] aged only 9 and 7 were bricked up alive within a wall by Wazir Khan in Sirhand (Punjab)" (http://en.wikipedia.org/wiki/Islam_and_Sikhism)

এই উপমহাদেশে ইসলামের ইতিহাস রক্তে লেখা, আপনার বাবা আপনার শিশুমনে আঘাত দিতে চাননি .. তাই আপনি হয়ত ভুল শিখেছেন ..

আর একটি কথা, এই উপমহাদেশে ইসলাম কায়েম করে অরান্গাজেব শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন ভাবলে আপনি ভুল ভাববেন .. সাম্রাজ্যবাদ শুধু খুন খুনি হানাহানির সৃষ্টি করে, পূর্ববর মুঘল শাসকেরা নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি করে শেষ হয়েছে, গণতন্ত্রহীন পাকিস্তানের দিকে তাকালে আপনি একিই চিত্র দেখবেন ..

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পরমার্থ,

আমাকে শিশু বলায় ধরে নিচ্ছি আপনি অনেক বয়স্ক। বয়স্ক মানুষের সাথে আলোচনা করার সমস্যা হল উনারা মূল প্রসঙ্গ থেকে সরে যেয়ে অন্য বিষয়ের অবতারণা করে আলোচনাটিকে বিশাল আকার দিয়ে ফেলেন। এতে, মূল আলোচনাই পন্ড হয়।

১। আমি আওরঙ্গজেবের মত ধর্মান্ধর বন্দনা আমার মন্তব্যর কোন জায়গায় করলাম? বা, মুঘল শাসকদের বন্দনাই বা কোন জায়গায় করলাম?

২। আপনার বর্ণনার ধরন দেখে আমি মুঘল শাসকদের ফোর্সড কনভার্সানের তথ্যসূত্র জানতে চাই। কারণ, আপনার বক্তব্যে ছিল, ভারত উপমহাদেশে ইসলাম শুধুমাত্র অস্ত্রের মুখে বিস্তার লাভ করেছিল শুনে অবাক হলাম।
জোর করে ধর্মান্তর করার ঘটনা ভারত উপমহাদেশে ঘটেছে, এটি সত্য। তবে, ভারতবর্ষের অধিকাংশ মুসলমানের পূর্বপুরুষ স্বেচ্ছায় ইসলামে ধর্মান্তরিত।

৩। ভারতের সব মুসলমান মুঘল এধরণের দাবী আমি আমার কোন মন্তব্য কোন অংশে করিনি।

৪। পোস্টের আলোচনার বিষয় ছিল মুঘলরা কি ভারত উপমহাদেশের মানুষ বলে গণ্য হবে নাকি, ব্রিটিশদের মত বিদেশী বলে গণ্য হবে?
আমার উত্তর ছিল সোজাসুজি।
আকবর থেকে কোন মুঘল সম্রাটকে আমি বিদেশী বলতে নারাজ। (হুমায়ুন প্রথম ভারতে মাইগ্রেট হওয়া মুঘল প্রজন্মের শেষাংশ)।
সাধারণ মুঘলদের যারা ভারতে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্মও ভারতীয়।
ভারতে মুঘলদের আগমন, আর্যদের ভারতে আগমনের থেকে বিষয়গত কোন আলাদা তাৎপর্য রাখে না।
মুঘলরা ভারতে মাইগ্রেট করেছিল কিন্তু ব্রিটিশরা ভারতে মাইগ্রেট করেনি। ব্রিটিশরা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল কিন্তু মুঘলরা কারো উপনিবেশ স্থাপন করেনি।

৫। কিছু মুঘল শাসক ধর্মান্ধ হওয়ার কারণে যদি ভারতে আসা মুঘলদের বিদেশী বলে ট্যাগ করা হয়, ভারতের ভুরি ভুরি হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ শাসক পাওয়া যাবে যারা একইরকম ধর্মান্ধ।

৬। মুঘলদের প্রসঙ্গে ধর্মের বিষয়ের অবতারণা কিন্তু আপনিই করলেন।
আমি মুঘল জাতি বিষয়ক আলোচনা করছিলাম, এতে ধর্মকে আপনি টেনে আনলেন।
আমার আলোচনা ছিল 'জাতিরসত্ত্বা পরিচয় বিষয়ক'। এই আলোচনায় ধর্মকে আপনি ঢুকালেন।
ধর্ম 'জাতিসত্ত্বা পরিচয় বিষয়ক' আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক নয় কিন্তু এই পোস্টে 'জাতিসত্ত্বার পরিচয় বিষয়ক' আলোচনার যেদিকটি আমি তুলে ধরেছিলাম, তাতে ধর্ম অপ্রয়োজনীয় ছিল।
এধরণের আলোচনায় ধর্মের প্রসঙ্গ তুলে সহজেই মূল আলোচানর বিষয়বস্তু হতে সরে যাওয়া যায়, যা আপনি খুব সফলতার সাথে করলেন।
আলোচনার বিষয় ছিল, মুঘলরা কি ভারত উপমহাদেশের মানুষ বলে গণ্য হবে নাকি, ব্রিটিশদের মত বিদেশী বলে গণ্য হবে?
এতে ধর্মের কোন ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও ধর্মকে টেনে আনলেন।

৭।

এই উপমহাদেশে ইসলামের ইতিহাস রক্তে লেখা, আপনার বাবা আপনার শিশুমনে আঘাত দিতে চাননি .. তাই আপনি হয়ত ভুল শিখেছেন ..

এই বাক্যটি দিয়ে আপনি কিন্তু আমাকে ব্যাক্তিগত আক্রমন করলেন।
এক। আপনার ভাষ্যমতে, আমার বাবা আমাকে ভুল শিখিয়েছেন।
দুই। ভুলের প্রসঙ্গ বর্ণনায় আপনার মতামত ছিল ধর্মীয় পরিমন্ডলীয়। সোজা কথায়, আপনি আমার বাবাকে ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী বলতে চাইলেন।
আমার বাবার সাথে আপনার পরিচয় হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে, আমার বাবার সম্পর্কে এধরণের মন্তব্য করেছেন নিশ্চয় আমার লেখাগুলো পড়ে। আমার কোন লেখায় কিন্তু কোন ধর্মান্ধর প্রতি সহানুভূতি নেই। আছে ধর্মান্ধদের জন্য ঘৃণা।
তাহলে, কি দেখে আপনি আমার বা, আমার বাবার সম্পর্কে এজাতীয় মন্তব্য করলেন? আমি ভারতে আসা ইসলাম ধর্মানুসারী মুঘলদের ভারতীয় বলেছি, সেজন্য?
আপনি কি 'মুঘল জাতি' ও 'ইসলাম ধর্ম' বিদ্বেষী? আপনার বক্তব্যর ধরন আপনার বিদ্বেষী পরিচয় দিচ্ছে।
ভারতে যে ধর্মগুলোর (হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, শিখ, খ্রীস্ট ধর্ম) অনুসারীরা শাসকের আসনে বসেছে, তাদের কেউই কিন্তু নিজের ধর্মের সুন্দর দিকটি ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। সব ধর্মের শাসকরাই নিজেদের ধর্মান্ধ বলে পরিচয় দিয়েছে।
যে 'মহারাজা প্রতাপাদিত্যের' কথা বলে আপনি সুখ পাচ্ছেন, সেও আওরঙ্গজেবের মত পাঁড় ধর্মান্ধ। নাকি 'মহারাজা প্রতাপাদিত্য' মুসলমান ধর্মের না হয়ে অন্য ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তার ধর্মান্ধতা মাফ হয়ে যায়?
আপনার ব্ক্তব্য দেখে মনে হল, আপনি 'মুঘল জাতি' ও 'ইসলাম ধর্ম' বিদ্বেষী। 'কোন জাতি' বা, 'কোন ধর্মকে' ঘৃণা করে মুক্তমনা-মানবতাবাদী হওয়া যায় না।
কোন 'জাতি বা, ধর্মের' প্রতি ঘৃণা পোষণকারী আর যাই হোক মানবতাবাদী-মুক্তমনা হতে পারে না। ঘৃণা-পোষণকারী ওই ব্যাক্তিও এক ধরণের মৌলবাদী-বিশ্বাসন্ধ।

আর বেশি বলে মরতে চাই না .. পরে আমার কথা থেকে আপনি কি বুঝেন, আর আমি খুন হয়ে যাই .. সাম্রাজ্যবাদ যেখানে সেখানে ধর্মের জন্য মানুষ মৃত্যুর স্বীকার হয় ..

সবাইকে নিজের মত ধর্মান্ধ মনে করা কি ঠিক?

পরমার্থ,
মানবতাবাদী-মুক্তমনার জন্য আমি দু'হাত বাড়িয়ে দেব কিন্তু আপনি 'কোন ধর্মের অন্ধবিশ্বাসী বা, মৌলবাদী' হলে আপনার থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়।

পরমার্থ এর ছবি

শুরু থেকে লেখককে মৌলবাদী বলায় এই প্রসঙ্গগুলো আসলো .. এদেশের মানুষেরা একসময় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায় এই ধর্মের কারণে .. আর এই সুযোগে ইংরেজ আমাদের দেশে স্থায়ীভাবে আবাস গড়ে .. এখানেই ধর্মের স্বার্থকতা ..

আমি ধর্মান্ধদের ঘৃনা করি না, আমার মনে হয় এই ব্যাপারটি তাদের ভুল শিক্ষা থেকে এসেছে ..

কোনো মুঘল সম্রাট বা সিরাজদ্দৌলার পাপের ভাগী আপনি নন, সুতরাং এ নিয়ে মন খারাপ করবেন না .. আমার সবচেয়ে দুঃক্ষ এই জায়গায় যে জাপান ও চিনে যেখানে সব ধর্মকে মানুষ একভাবে গ্রহণ করেছে, যেখানে মানুষ সব ধর্মের প্রার্থনালয়ে যেতে পারছে, আমাদের দেশে তা হচ্ছে না .. এদেশে মানুষ নিজেদের আলাদা আলাদা ধর্মীয় পরিচয় তৈরী করে নিয়েছে, আর কিছু কিছু স্থানে ধর্মকে কেন্দ্র করে দলাদলি আর ঘৃনা সৃষ্টি হয়েছে, সর্বপরি দেশ ভাগ হয়েছে .. ধর্ম এখন ধর্মগুরুদের আয়ত্ব থেকে কিছু সন্ত্রাসীর হাতে চলে গেছে ..

আমার কথায় আপনি একান্ত ব্যক্তিগত ক্ষোভ খুঁজে পেতে পারেন, কারণ আমি ইসলাম ও খ্রিস্টান(সম্ভবত তারা আমাকে গারো অথবা অশিক্ষিত ভেবেছে, আমার বাসায় আসে অর্থহীন বয়ান দেবার জন্য, আমার আত্মীয় পাকিস্তান থাকা অবস্থায় দৈন্য দশায় পরে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে, চার্চ তাকে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে, চাকরি দিয়েছে, এই ব্যাপারটি মুসলিম ধর্মের ক্ষেত্রেও আপনি পাবেন) উভয় ধর্মের অনুসারীদের দেখানো হুমকি আর লালসার স্বীকার .. এদেশের প্রত্যেক সন্খালোঘুই এর স্বীকার, যদি কোনো ধর্মে কোনো ভালো দর্শন থাকে তবে তা মানুষ পড়তে পারে আগ্রহ থেকে, আমাদের বাসায় কোরান আছে, কিন্তু প্রতিনিয়ত ভীতি প্রদর্শন, গালাগালি, রাজনীতি এগুলো খুব ভুল জিনিস .. যদি ভাবেন তারা ভালো কাজ করছে, দরিদ্র সেবা করছে, আমি বলব আপনি ভুল বুঝেছেন .. ভারতে rss একিই ধরনের সেবা শুরু করেছে, এগুলো সরাসরি হিংসার বীজ বপন করে, বাংলাদেশ সম্পর্কে নাইবা বললাম ..

এত কিছুর পর আমি ভাবব যে আপনি-আমি "কুতর্ক" দূরে ঠেলে প্রসঙ্গে ফিরে আসব(এসব বলে আমি নিজেই নিজের উপর বিরক্ত) ..

রংতুলি এর ছবি

বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করে ১৫২৬ সালে। এই বাবর কুখ্যাত দাঙ্গাবাজ বা লুটেরা চেঙ্গিস খানের বংশধর। আর আকবর তের বছর বয়েসে সেই সিংহাসনে বসে ১৫৫৬ সালে। পরাজিত হিন্দু রাজাদের স্ত্রী ও কন্যাদের জোরপুর্বক বিয়ে-শাদি করে স্থায়ী আবাস গেড়ে বসে। মাত্র ত্রিশ বছরে এই বিদেশি রাজশক্তি যদি ভারতীয় হয়ে গেলো, তাহলে ইংরেজরা ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধ জয় করে ১৯০ বছর ভারত শাসন করে গেছে, তাহলে তাদেরকেই বা আমরা বিদেশী বলি কি করে?

ব্রিটিশরা মোঘলদের মত বিয়ে-থা করে স্থায়ী আবাস গড়েনি তার কারণ, তারা বুদ্ধিমান জাতি; ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসের চেয়ে সামন্ত পুঁজি গঠনেই তাদের মনোযোগ ছিলো বেশী। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত বলপূর্বক স্থায়ীনিবাস গেড়ে বসা মোঘল দ্বারা পরিচালিত শাসন ও পুঁজিগঠনের মাধ্যমে নিজের আখের গুটানো ইংরেজ শাসনের মধ্যে বস্তুত কোনো প্রাথক্য ছিলো বলে মনে করিনা। তাই যুক্তির বিচারেও ভারতীয় উপমাহাদেশে এই দুই আগন্তুক শাসনকালকে বিদেশী শাসন বলাতে কোনো নীতিগত বাধা দেখিনা।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দুর্দান্ত দা'কে দেয়া মন্তব্যর শেষ অংশ দেখুন।

সব মুঘলরাই শাসকশ্রেণীর ছিল কে বলছে আপনাকে? অধিকাংশই তো প্রজা।
তাহলে, ভারতীয় কে, কারা?
অনার্যদের হটিয়ে, তাড়িয়ে আর্যরা এদেশে আসে শাসক ও প্রজারূপে।

রংতুলি এর ছবি

মুঘলদেরকে ব্রিটিশদের মত একই কাতারের বিদেশী শাসক বলাটা কতটুকু যৌক্তিক?

মন্তব্যটা করা হয়েছিলো মোঘলদের বৃটিশদের মত বিদেশী শাসক বলা যায় কিনা তার প্রেক্ষিতে। উপরের মন্তব্যে ইতিহাসলব্ধ প্রমাণসহ দেখানো হয়েছে উপমহাদেশে মোঘলদের আগমনও বৃটিশদের মতই জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়েই ঘটেছে। আপনি এখানে সব মোঘল যে শাসক শ্রেণী ছিলো না এটা দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, স্পষ্ট না।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আচ্ছা, আমি স্পষ্ট করে দিচ্ছি।
আকবর হতে পরবর্তী সকল মুঘল সম্রাটদের আমি বিদেশী বলে মনে করি না। কারণ, তারা এদেশে স্থায়ীভাবে সেটেল হয়েছিল এবং রাজব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল। কোন বিদেশী শক্তির প্রতিনিধি ছিল না।
ব্রিটিশদের সাথে এদের বড় পার্থক্য এখানেই। ব্রিটিশরা ভারতকে যুক্তরাজ্যের উপনিবেশ বানিয়েছিল কিন্তু মুঘলরা ভারতে স্থায়ীভাবে শিফট হয়ে স্বাধীন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, ভারতকে কারো উপনিবেশে পরিণত করে না।
আরো সহজ করে বললে, মুঘলরা ভারত আর্যদের মত মাইগ্রেট করেছিল।

আপনি এখানে সব মোঘল যে শাসক শ্রেণী ছিলো না এটা দিয়ে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, স্পষ্ট না।

কোন জাতির বর্ণনা দিতে গিয়ে আমরা সাধারণত: সে জাতির শাসকশ্রেণীর চরিত্র দিয়ে ওই জাতিকে মূল্যায়ণ করি। আর আমাদের শিক্ষিত সমাজের মাঝে মুঘল জাতিকে খারাপ ভাবার প্রবণতা আছে। এর কারণ, মুঘল শাসকদের কুকর্মকান্ড।
শাসকশ্রেণী দিয়ে পুরো জাতিকে মূল্যায়ণ করার বিরোধী মানস থেকে মন্তব্যর ওই লাইনটি লেখা হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব,
মহাবলী আওরঙ্গজেবকে আপনার কোন সেন্সে ভারতীয় মনে হয়?
১/ সঙ্গীতের জানাজা বের করাতে?
২/বাহুবলে ধর্মান্তর করানোতে
৩/ইসলামসম্মত জিজিয়া আদায় করাতে?

নির্ঝর অলয়

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিব, এর আগে, আপনি আমাকে বলেন-
আপনি ভারতীয়/ভারত উপমহাদেশীয় বলতে কি বুঝেন?

আপনি উপরে যা লিখেছেন, সেগুলো আওরঙ্গজেবের কৃতকর্ম।
কৃতকর্মের ভিত্তিতে জাতিসত্ত্বার পরিচয় নির্ধারণ হয় কি?

এখানে কে ভাল, কে খারাপ, কে ধর্মান্ধ, কে সাধু- সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল না।
এখানে ভারতীয় জাতিসত্ত্বার পরিচয় বোধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।

জাতিসত্ত্বার পরিচয়বোধের আলোচনায় আওরঙ্গজেব নামক এক ধর্মান্ধ-ছাগু সম্রাট কি করেছিল, না করেছিল-সে আলোচনা কেন আসবে তা বোধগম্য হল না।

দুর্দান্ত এর ছবি

সিন্ধুর পশ্চিম পাড়ের কোন এলাকাকে কি ঐতিহাসিভাবে উপমহাদেশের অন্তর্গত বলা যায়?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ব্রিটিশরা তো উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এলাকাকেও এক সময় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর আওতায় নিয়ে এসেছিল। তাতে কি পাখতুনখোয়া বাঙলা হয়ে যায়! ভারতের লোকজন আফগানিস্তানের প্রতি যতটা নৈকট্য অনুভব করে সমদূরত্বের পারস্য বা কাচিন বা শানদের সাথে সেই নৈকট্য অনুভব করে না। এ'সব অনুভূতি/মনে করা কোনটার কোন ভিত্তি নাই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহফুজ খান এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন, সঠিক উত্তর মনে হয় দিতে পারব না। তবে আমি যে বইটির রেফারেন্স দিয়েছি সেখানে এমনকি আফগানিস্তানকেও উপমহাদেশের অন্তর্গত করা হয়েছে।

পরমার্থ এর ছবি

আফগানিস্তান দেশটি একসময় গ্রীক-ভারতীয় শাসকদের দ্বারা শাসিত ছিল .. তখন সেখানে ভারতীয় সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে .. আমি বিস্তারিত বলতে পারব না, হরপ্পার মত সভ্যতা কিন্তু ভারতবর্ষের বাইরে কাজাকিস্থানে পাওয়া গেছে .. এই দেশের ভাষা ও আবহমান সংস্কৃতি এইসব অগ্রসরমান অভারতীয়দের হাতেই সমৃদ্ধি লাভ করে ..

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সৈয়দ মুজতবা আলী, তাঁর 'দেশে বিদেশে' বইতে লিখেছেন,
'আফগানিস্থানের উত্তরভাগ অর্থাৎ বলখ বদখশানের ইতিহাস তার সীমান্ত নদী আমুদরিয়ার (গ্রীক অক্ষুস, সংস্কৃত বক্ষু) ওপারের তুর্কীস্থানের সঙ্গে, পশ্চিমভাগ অর্থাৎ হিরাত অঞ্চল ইরানের সঙ্গে, পূর্বভাগ অর্থাৎ কাবুল, জলালাবাদ খাস ভারতবর্ষ ও কাশ্মীরের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে নানা যুগে নানা রঙ ধরেছে।'

আরেক জায়গায় লিখেছেন, 'হিউয়েন-সাঙ, কান্দাহার, গজনী, কাবুলকে ভারতবর্ষের অংশরূপে গণ্য করেছেন।'

অন্যত্র দেখছি , 'বুদ্ধের শরণ নিয়ে কাবুলী যখন মগধবাসী হয়নি তখন ইসলাম গ্রহণ করে সে আরবও হয়ে যায়নি। ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে মুসলিম আফগানিস্থান - বিশেষ করে কান্দাহার, গজনী, কাবুল, জলালাবাদ - বাদ দিলে ফ্রন্টিয়ার, বান্নু, কোহাট এমনকি পাঞ্জাবও বাদ দিতে হয়।'

দুর্দান্ত এর ছবি

ইন্টারেস্টিং। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

মহাভারতে কান্দাহারকে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। এর নাম বলা হয়েছে গান্ধার এবং এর রাজকুমারী ছিলেন চোখে পট্টি বাঁধা গান্ধারী।

নির্ঝর অলয়

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক তথ্য পাওয়া যাবে আশা করছি। আশা করবো প্রাচীন ভারতের মনীষীদের (যেমন জীবক, কর্ণাদ, বরাহমিহির ইত্যাদিদের) কথা যথোপযুক্তভাবে উঠে আসবে।

-অয়ন

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাহ, দারুণ তো!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

আধুনিক তথা বর্তমান বিশ্বে বিরাজমান সকল মানুষ "হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স" প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত। এই প্রজাতির উদ্ভব আনুমানিক দেড় লক্ষ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে। আনুমানিক ৬০-৮০ হাজার বছর আগে এই প্রজাতি সাভানা অঞ্চল থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং আফ্রিকার বাইরে ইউরেশিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা "আউট অব আফ্রিকা" তত্ব হিসেবে পরিচিত, এই তত্বটি এখন আধুনিক মানবজাতির উদ্ভবের বিষয়ে নৃ-বিজ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ব। এই মানবগোষ্ঠীর দ্বারাই ক্রমে ক্রমে রচিত হয় বর্তমান মানব সভ্যতা এবং তাদের দ্বারাই নির্মুল হয় পূর্বতন অন্যান্য মানব প্রজাতি সমূহ (হোমো সেপিয়েন্স এর অন্যান্য ধারা, হোমো নিয়ানডার্থাল, এমনকি হোমো ইরেক্টাসদের বিভিন্ন প্রজাতি)। আফ্রিকা থেকে কোন পথরেখা ধরে তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, বিজ্ঞানীমহলে এ নিয়ে মতভিন্নতা আছে, তবে আউট অব আফ্রিকা তত্ব নিয়ে এখন আর তেমন কোন সংশয় নেই। এই তত্ব অনুযায়ী আধুনিক মানুষের একটি ক্ষুদ্র দল ৬০-৮০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে লেভান্ত(ইসরাইল-ফিলিস্তিন-সিরিয়া) ও ইরানের জাগ্রেব হয়ে ৫৫-৭০ হাজার বছর আগে ভারতে প্রবেশ করে।
"আউট অব আফ্রিকা" তত্ব অনুযায়ী ভারতবর্ষে আধুনিক মানুষদের প্রথম যে গোত্রটির আগমন ঘটেছিল, নৃ-তত্বের পুরাতন সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা ছিল নেগ্রিটো প্রজাতির মানুষ( নেগ্রিটো- আফ্রিকার বাইরের নিগ্রো)। এর পরে সারা ভারতে এবং দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় সুসংহত অবস্থান গ্রহন করে অষ্ট্রোলয়েড প্রজাতির মানুষেরা। অষ্ট্রোলয়েডদের উৎপত্তি ভারতে নাকি দক্ষন চীনে, এ নিয়ে মতবিরোধ আছে নৃ-বিজ্ঞানী মহলে, তবে বর্তমান ভারতের মুন্ডা, দ্রাবির এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী যেমন সাঁওতাল, হো, খাড়িয়া, মালপাহাড়ী (মুন্ডা), চেঞ্চু, লোধা, ইরুলা, কোটা(দ্রাবির), কোল, ভীল(ইন্দো-ইউরোপীয়) ইত্যাদি জনগোষ্ঠী যে নৃ-তাত্বিক অষ্ট্রোলয়েড মহাজাতির উত্তর প্রজন্ম, সে বিষয়ে তেমন কোন মতান্তর নেই। পরবর্তীতে প্রথমে এদের মধ্যে সংস্থাপিত হয়েছে দ্রাবির ভাষা ও সংস্কৃতি( দ্রাবির ভাষা ও সংস্কৃতির উৎপত্তি ভারতে, নাকি বাইরে, এ নিয়ে গুরুতর মতভেদ আছে)। এর পরে মোটামুটি সাড়ে তিন হাজার বছর আগে থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী বিভিন্ন জাতি ক্রমাগতভাবে ভারতে আগমন করতে থাকে, প্রথমে আর্য, তারপর শক, তারপর হুন, গ্রীক, বিভিন্ন জাতি। পূর্বতন ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সাথে দীর্ঘকালীন নানামূখী সংস্বর্গে নানা ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে এভাবেই ভিত গড়ে ওঠে আধুনিক ভারতীয় জাতি ও সংস্কৃতির। অবশ্য এর মধ্যে রয়ে গেছে একটি রহস্যময় অধ্যায়, সিন্ধু সভ্যতা।
এর বহু পরে মধ্য এশিয়া, ইরান আফগানিস্তান থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বী যে মানুষদের ক্রমাগত অভিবাসন চলতে থাকে ভারতবর্ষে, তাদের সাথে পূর্বে আগত আর্য ও অপরাপর ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাভাষীদের মধ্যে নৃ-তত্বগত ভাবে তেমন একটা পার্থক্য নেই, পার্থক্য মূলতঃ ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিতে। আরও একটি বড় পার্থক্য হলো পূর্বতনরা ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির মাঝে বিলীন হয়ে গেলেও মুসলিমরা নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় সুসংহত করার চেষ্টা করতে থাকে। এভাবে মুসলমানেরা ভারতীয় জাতিগঠনে একটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় ধারা সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়, যদিও সংগত কারনেই তাতে নৃ-তাত্বিক মিশ্রনের (প্রধানতঃ মাতৃধারায়) ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ন। অপরপক্ষে ষোড়শ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতির ভারতে আগমন এখানে রাজনৈতিক ও বস্তুগতভাবে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করলেও নৃ-তাত্বিক ভাবে আধুনিক ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত নগন্য।

তারেক অণু এর ছবি

প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে ৭০,০০০ বছর আগে সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। হোমো স্যাপিয়েন্সদের দ্বারা হোমো নিয়ান্ডার্থালরা যে আক্রমণের শিকার এবং খুন হয়েছে এমন একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিন্তু আপনার মন্তব্যে হোমো ইরেক্টাসদের নির্মূল হবার পিছনেও যে হোমো স্যাপিয়েন্সদের ভূমিকা আছে বলেছেন সেটির কোন রেফারেন্স দিবেন কি, তাহলে জানতে পারতাম।

মন্তব্য ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব উপকৃত হলাম এই মন্তব্যে, ধন্যবাদ আপনাকে

তুষার রায়

সামাদ এর ছবি

আফগানিস্থানের বামিয়ান প্রদেশের বৌদ্ধমন্দিরের কথা কেউ বলছে না। যেন তা কখনোই ছিল না। কি হাস্যকর!

বরণ এর ছবি

এখানে হাস্যকরের কি দেখলেন? সবকিছু কি এক লেখা বা মন্তব্যে কাভার করা সম্ভব? আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে তা লিখুন।

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

@তারেক অণু, ধন্যবাদ আপনাকে।
কি কারনে বুঝলাম না, আপনার মন্তব্যে উত্তর দিতে পারলাম না, তাই এখানে উত্তর দিলাম।
হোমো ইরেক্টাসদের নির্মূল হবার পিছনে হোমো স্যাপিয়েন্সদের ভূমিকার বিষয়ে আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, সে বিষয়ে-
না, এ বিষয়ে সুনিদ্রিষ্ট কোন গবেষনামূলক সিদ্ধান্ত আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার যে সমস্ত অঞ্চলে হোমো ইরেক্টাসদের ফসিল পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে জাভায় বেশ কিছু এমন ফসিলও পাওয়া গেছে যাদের বয়স ত্রিশ হাজার বছরের চেয়ে কম, সবচেয়ে কম বয়সের টা ছয় হাজার বছরের। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্সরা পৌঁছে গেছে কম বেশী পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। সুতরাং তাদের মধ্যে ইন্টারাকশনের সম্ভাবনা খুবই বেশী। আর সে সময়ে ইন্টারাকশন হলে তা শান্তিপূর্ন হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম। যদি ইন্দোনেশিয়ায় হোমো ইরেক্টাসদের সাথে কো-এক্সিসটেন্স হয়ে থাকে, তাহলে এমন সম্ভাবনা থেকেই যায় যে অন্য কোথাও এমন কো-এক্সিসটেন্স থেকে থাকতে পারে, যার ফসিলগত প্রমান এখনও মেলেনি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কঠিন বিষয়; খালি ঢালতলোয়ার যুদ্ধের ইতিহাস না; এক্বেবারে মাটির নীচের হাড়গোড়ের ইতিহাস

কিন্তু ভারতীয় নৃতত্ত্বে (বানানটা কি ঠিক হলো?) রামাপিথেকাস- শিবাপিথেকাস- সুগ্রীবপিথেকাসদের কথা শুনেছি

এদের বিষয়টা কি আপনি এড়িয়ে গেলেন নাকি আপনার আলোচনাতে অন্য নামে এরা এর মধ্যেই চলে এসেছে?

মাহফুজ খান এর ছবি

মাহবুব ভাই, ধন্যবাদ যে বিষয়টা আপনার নজরে এসেছে। বলতে পারেন যে এটা আমি ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেছি। যদিও ধারণা করা হয় যে এই উপমহাদেশে হোমো ইরেক্টাস ও সমসাময়িক পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারকারি হোমিনিডেরা সর্বপ্রথম আগমন করেন প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে এবং সেটাকেই এখানে প্রস্তর যুগের সূচনা কাল হিসেবে মনে করা হয়, কিন্তু বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়। এখানে প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বের পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারকারি হোমনিড যেমন রামাপিথেকাস- শিবাপিথেকাস এর সন্ধান বিষয়টিকে কিছুটা জটিল করেছে বৈকি, যেটা আমি ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছি।

বরণ এর ছবি

পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।

মাহফুজ খান এর ছবি

ধন্যবাদ, আশা করছি শীঘ্রই পরের পর্ব পোস্ট করব।

guest_writer এর ছবি

পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।

মন মাঝি এর ছবি

অন্য দেশ থেকে এসে সেটল করেছে বলে একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে মানবগোষ্ঠীর দুই বা ততোধিক দলের মধ্যে দেশি-বিদেশী, আদিবাসী-অনাদিবাসী, অনাগত-বহিরাগত - ইতিহাসের ক্ষেত্রে এইসব নিয়ে বিতর্ক বা কামড়াকামড়ি দেখলে একটা প্রশ্ন মাথায় আসে বারবার --

-- এই পৃথিবীতে আফ্রিকার বাইরে কে আসলে আদিবাসী বা বহিরাগত নয়?
-- উত্তর হচ্ছেঃ কেউ না! কিম্বা আরও ভাল ভাবে বললে হোমো স্যাপিয়েন্সপূর্ব বান্দর শ্রেণীর প্রাণীরাই হচ্ছে আসল আদিবাসী। সুতরাং আফ্রিকা বাদে বাকি পৃথিবীর হোমো স্যাপিয়েন্সগুলারে এক্ষুনি গলাধাক্কা দিয়ে আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ।
-- কিন্তু তাতেও তো সমস্যা। এইসব হোমো স্যাপিয়েন্সগুলা তো আফ্রিকারও আদিবাসী না! আফ্রিকা (তথা সারা পৃথিবীর) প্রকৃত আদিবাসী হচ্ছে বিভিন্ন হোমিনিডপূর্ব প্রাণী - স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভচর, পোকামাকড়, এ্যান্থ্রোপড, ইত্যাদি। এই হোমিনিনি ও পরবর্তী হোমো স্যাপিয়েন্স বদমাইশগুলা তো স্রেফ উড়ে এসে জুড়ে বসে গায়ের জোরে গুণ্ডামি-মাস্তানি করে ঐ সব মহান আদিবাসিদের রুটিরুজিতে ভাগ বসাতেই হাজির হয়েছে। সুতরাং স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভচর, পোকামাকড়, এ্যান্থ্রোপড-দের মহান জাতীয়তাবাদী এলায়েন্স তথা প্রিহোমিনিড-স্বয়ংসেবক-সঙ্ঘের জোর দাবী হচ্ছে এইসব হোমিনিড বা হোমিনিনি বহিরাগত ডাকাতদের অবিলম্বে আফ্রিকা থেকেও বহিষ্কার করা হোক।
-- এখন বিপদ হলো, এই বহিরাগত হোমিনিনিরা আদতে কোথা থেকে আগত? কোথায় পাঠানো যায় এদের?
-- এই পর্যায়ে আফ্রিকার প্রাক্‌-প্রিহোমিনিনি এম্ব্রায়োফিটা শ্রেণীর ডাঙার উদ্ভিদদের সংগঠন এম্ব্রায়োফিটা-মহাসভা দাবি করে বসলো হোমিনিনিদের যদি বহিরাগততা বা অনাদিবাসিত্বের কারনে বহিষ্কার করা হয় বা বিদেশি/বহিরাগত ইত্যাদি আখ্যা দেয়া হয়, তাহলে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভচর, পোকামাকড়, এ্যান্থ্রোপড-দের ঐ প্রিহোমিনিড-স্বয়ংসেবক-সঙ্ঘওয়ালাদেরও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে। কারন ওরাও তো বহিরাগত!! এইসব হোমিনি-প্রিহোমিনি স-ও-ব ব্যাটা আসছে আসলে সাগর থেকে। সুতরাং দাও ফালায়া সব ব্যাটারে ঘাড় ধাক্কা দিয়া সাগরে।
-- এই পর্যায়ে হোমিনিনি আর প্রাক-হোমিনিনিদের সঙ্ঘ তেড়েফুড়ে বলে উঠল - তাহলে তোমরা কোন স্বর্গধাম থেকে আসছ চান্দুরা, হেঁহ্‌ ? তোমরাও বহিরাগত, আইছ ঐ সাগর থিকাই। ছিলা তো শ্যাওলা, এখন গলা মোটা করতাছ! যাইতে হইলে তোমাদেরও যাইতে হবে কয়া দিলাম সোনার চান্দুরা, থুক্কু শ্যাওলার চান্দুরা।
-- এই অবস্থায়, পৃথিবীর মাটি এক ধাক্কা দিয়ে সব কয়টাকে সাগরে ফেলে দিয়ে বলে উঠল - যা ভাগ ব্যাটারা, যেখান থেকে আসছস সেখানে যা! বিলিয়ন-বিলিয়ন বছর ধরে আশ্রয় দিলাম, সুযোগ দিলাম, তাও তোদের কামড়াকামড়ি খেয়োখেয়ি গেল না। বলে কিনা এইটা আমার - ওইটা তোমার, আমি অনাগত - তুমি বহিরাগত, যেন বাপের সম্পত্তি! যেন যেখানে খাড়ায়া আছ সেই মাটি ফুইড়াই বাইরাইছ! এখন যা, যেই এককোষী আদিমাতা এমিবা, প্রোকারিয়োট বা প্রোটোবায়োন্টের পেটে জন্মাইছস সেইখানে যা। আদিবাসি কারে কয় ভাল করে বুঝ্‌।
-- ঠেলা খেয়ে অথৈ সাগরে পড়ে হোমোস্যাপিয়েন্স/হোমিনিড/প্রিহোমিনিড/এম্ব্রায়োফাইট সব্বাই চক্ষে অন্ধকার দেখা শুরু করল। কারন এইখানেও জায়গা নাই। অভাগার যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। এইবারে সাগরের সব তিমি-হাঙর-বোয়াল থেকে শুরু করে এককোষী প্রাণীগুলা পর্যন্ত তাদের ছেঁকে ধরেছে। বলে কিনা -- আরে, এই বহিরাগতগুলা কে রে? নবাগতরা যতই বলে আমরা তোমাদেরই ভাইবুন, তোমাদের পূর্বপুরুষ আর আমাদের পূর্বপুরুষ একই মানুষ ছিল আর এই সাগরে তো আমাদেরও অধিকার আছে, আমরা তো তোমাদেরই আত্নীয়। আমাদের এই বিপদের দিনে একটু জায়গা দিবা না? ততই সাগরের প্রাণীগুলা বলে - যা ভাগ ব্যাটা বহিরাগতর দল, চান্দাবাজি করতে আইছস না? তোদের আমরা চিনি না, আমরাই এখানে আছি বিলিয়ন-বিলিয়ন বছর ধরে। পুরান পাগলে ভাত পায় না, আবার নতুন পাগল আইসে! এলা যা, যেখান থেকে আইছস হেইখানে যা গা।
-- এবারে কই যাবে মানুষ ও মানুষপূর্ব প্রাণীসহ অন্য সবাই? এশিয়া, আম্রিকা, এন্টার্টিকা, আফ্রিকা থেকে শুরু করে ডাঙার কোথাও তারা আদিবাসি না, এমনকি সাগরেও তাদের স্থান নেই। সেখানেও তারা বহিরাগত!
-- কংক্লুশনঃ সুতরাং এই অনাগত-বহিরাগত দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে - পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টির পূর্বতন ধাপ প্রোটোবায়োন্ট শ্রেণীর জৈব অণুগুলি বাদে আর সব্বাইকে (জীব) দুনিয়ার বাইরে অন্য কোন গ্রহে পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ। এই জড়বস্তুর পৃথিবীতে তারা সবাই বহিরাগত!

****************************************

পান্না এর ছবি

দেঁতো হাসি হাততালি চলুক

asif এর ছবি

আমার বাবা বিদেশী, আমার জন্ম এদেশে, আমি কি বিদেশী ?
স্হানীয় বলছেন কাকে ? তারা কোথা থেকে আসলো ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।