যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: প্রেক্ষিত সাম্প্রতিক জামাত-শিবিরের তাণ্ডব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০১/১২/২০১২ - ৫:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১০ এর মাঝামাঝি সময়ে যা এখনও চলমান। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে যাদের মধ্যে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং বাকি দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের কাজ চলছে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে ২০০৮ সালে নির্বাচিত বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখিত এই বিচারের প্রতিশ্রুতিই মূলত তার নির্বাচিত হওয়ার কারণ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন মহাজোট যদি মনে করে তাদের অতীত কোনো সুকীর্তির বলে তারা এবার দায়িত্ব পেয়েছে দেশ পরিচালনার, তারা ভুল করবে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আগের চেয়েও বেশি সোচ্চার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে। তার প্রতিফলন স্পষ্ট হয়ে দেখা গেছে গত সংসদ নির্বাচনে। মূলত তরুন ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত এই সরকারের সাফল্য ব্যার্থতা অনেকটাই নির্ভর করছে এই বিচার প্রক্রিয়ার উপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সার্বিক অর্থে জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। বরং সন্দিহান করে তুলেছে একে পরবর্তী নির্বাচনের বৈতরনী পারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করার আশঙ্কাটি। বিভিন্ন সময়ে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শাহরিয়ার কবির সহ দেশের বিশিষ্টজনেরা। জনমনেও একই ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার পৃথিবীতে এর আগেও হয়েছে যার কিছু কিছু এখনও চলমান। তবে অন্যান্য বিচার প্রক্রিয়ার সাথে এই বিচার প্রক্রিয়ার কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্যে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল করা হয়েছে মূলত ১৯৭২ সালে প্রণিত দালাল আইনের ভিত্তিতে যা মূলত আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করা একটি দেশীয় আইন। তাই বলা যায় এই ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ দেশীয়, যদিও তা একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্যেই গঠন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে কোনও পাকিস্তানি বিশেষত সেই ১৯৩ জন বন্দি যারা গণহত্যার অভিযোগে বাংলাদেশে আটক ছিল তাদের কারও বিচার হচ্ছে না। ২০১০ এ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর ধাপেই বর্তমান আইনমন্ত্রি পাকিস্তানিদেও এই প্রক্রিয়ার বাইরে বলে নিশ্চিত করেছেন। তাই বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে একাটি আভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবে বলা যায় যেখানে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দীর্ঘদিনের গণদাবী যা উপেক্ষিত ছিল এতকাল। পরপর দুটি সামরিক শাষণ এবং পুণঃপাকিস্তানিকরনের মধ্য দিয়ে এদেশের প্রকাশ্য শত্রুরা পুনর্বাসিত হয়েছে বিপুল প্রতাপে। তারই মহড়া আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে। সাম্প্রতিক সময়ে চলমান বিচার প্রক্রিয়া ও এতে অভিযুক্ত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবীতে জামাত-শিবিরের সারা দেশব্যপী চালানো তা-ব এরই একটা অংশ। গত ৫ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসের তাণ্ডববলীলা চালিয়েছে সারাদেশে। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, জয়পুরহাট, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জামায়াত শিবির সহিংস হয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। মাত্র ১৫ দিনেই সারাদেশে ২ শতাধিক পুলিশকে আক্রমণ করে তারা আহত করেছে। তারা শুধু পুলিশের ওপর আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। পুলিশ এখানে নিরব ভুমিকা পালন করেছে। আগে থেকেই গোয়েন্দা সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও পুলিশের এই নিরব আচরণ তাই যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ দুয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। এ জন্য বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের আগেই সারাদেশে জামায়াত-শিবির সংগঠিত হয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু বিগত ঘটনার সাথে এর একটা বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী যারা ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের হত্যা ও ধ্বংষযজ্ঞের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, যারা নিজেরাও ধ্বংষযজ্ঞ চালিয়েছে, যারা এই দেশের অস্তিত্বকে অস্বিকার করেছে তার অভ্যুদয়ের কালেই, যারা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তৎপরতা চালিয়েছে তাদের পক্ষাবলম্বন করে আন্দোলনে নামা কোনক্রমেই রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক অধিকার হতে পারে না। রাষ্ট্রের নিয়মিত একটি বাহিনীকে লক্ষ্য করে পরিচালিত এই সহিংসতা সরাসরি রাষ্ট্রেরই বিরোধীতা।

অভিযোগ গঠন এবং বিচারিক কাজ শুরুর বিষয়ে দীঘৃসূত্রিতাও একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় যেখানে আমরা জানি যে, ১৯৭২ বা দালাল আইন আদেশ শিরোনামে আইন প্রণয়ন করার পর ১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এই আইনের আওতায় দুই হাজার ৮৮৪টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাজা দেওয়া হয় ৭৫২ জনকে। এদের মধ্যে মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিল। পরবর্তীতে দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার আরম্ভ হয়। এর পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কর্মরতদের কেউ দালালি এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না তা যাচাই করার জন্য ১৯৭২ সালের ১৩ জুন একটি আদেশ জারি করে যা তখন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, তদন্তের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর মধ্য থেকে ১৯৫ জনকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল তিন এর লংঘন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটের অপরাধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য চিহ্নিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর দালাল আইনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর দালাল আইনে আটক ৩৭ হাজারের অধিক ব্যক্তির ভেতর থেকে প্রায় ২৬ হাজার ছাড়া পায়। অর্থাৎ ১১ হাজারের উপর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়।

এখন পর্যন্ত ১০ জনকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে আটক করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা বর্তমান এই সরকার এর মাঝে তার মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্ন উঠে আসছে তা হলো, বিচার কি তাহলে প্রতিকী হয়ে উঠছে? বহুল আলোচিত সাধারণ ক্ষমার পরেও যেখানে অভিযুক্ত ছিল ১১ হাজারের উপর যুদ্ধাপরাধী সেখানে চার বছওে মাত্র ১০ জনকে বিচারের আওতায় আনাটা কতটা যৌক্তিক? এক্ষত্রে আরও একটি প্রসঙ্গের অবতারনা করা যায়, তা হলো ১৯৯২ সালের শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে পরিচালিত গণ আদালত। আদালতে রাজাকার গোলাম আজমের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। উল্লেখ্য এই আদালতে ফরিয়াদী পক্ষের একজন কৌশুলি ছিলেন বর্তমান আইনমণ্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন আলোচিত বিচার প্রক্রিয়ায় গণ আদালতের রায়কে আমলে নেয়ার বিষয়টি ইতোপূর্বে দেখেছি। ভিয়েতনামে মার্কিনীদের আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে বার্টান্ড রাসেলের নেতৃত্বে একটি গণ আদালত হয়। সেখানে ওই যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়। পরে রোমে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল পিপলস ট্রাইব্যুনাল নামে যার অধীনে ভুপালে যে গণহত্যা হয়েছিল তার বিচার করেছিল। নিদেনপক্ষে গোলাম আজমের বিচার প্রক্রিয়ায় এই গণ আদালতের রায়টি বিবেচিত হতে পারত। উল্লেখ্য কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমের বয়স এখন ৮৯ বছর। বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই এমনকি তার স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক মৃত্যুর পরে বিচার সম্পন্ন হলে, সে বিচারে তার মৃত্যুদণ্ডেরর আদেশ হলেও তা লক্ষ্য লক্ষ্য শহীদ পরিবার ও জনগণের দাবীকে কতটা প্রশমন করতে পারবে?

এটা আগেই বলা হয়েছে যে,বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল যে গণদাবীর প্রেক্ষিতে, তা যুদ্ধাপরাধের বিচার। সরকার তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ৭২ এর সংবিধান পুণর্বহালের কথাও বলেছিল যদিও তা কার্যত করেনি। বরং আলোচিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যে পরষ্পর বিরোধিতা রেখে দেয়া হয়েছে তার মূল্য জাতিকে দিতে হবে কত নিদারুনভাবে তা ভবিষ্যত বলে দেবে নিশ্চয়। তবে তার চিহ্ন আমরা এখুনি দেখতে পাচ্ছি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার পাশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে দেওয়া যেমন বিতর্কের সুযোগ রেখে দিয়েছে তেমনি জামাতের মতন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করে এক অর্থে সংবিধানের মর্যাদাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম সহ আরো কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামি দলটির নিবন্ধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও ইসি তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। বরং নির্বাচন কমিশন জামায়াতের গঠনতন্ত্র বদলের আহ্বান জানিয়ে তার দ্বায়িত্ব সেরে নিয়েছে। সে সময় জামাতের গঠনতন্ত্রের ২-এর (৫) ৩, ৬, ৭, ১১ ধারা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় কমিশন। ২-এর ৫ ধারায় আল্লাহ ব্যতীত কাউকে বাদশাহ-রাজা হিসেবে না মানা, কাউকে কোন আদেশ-নিষেধ করবার অধিকারী মনে না করা, কাউকে আইনপ্রণেতা হিসেবে মেনে না নেয়ার বিষয়ে সবাইকে বারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ছাড়া কারও নেই। ইসির চিঠি অনুযায়ী এ ধারায় দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অস্বীকার এবং দেশের প্রচলিত রীতিনীতিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। ধারা (৩)-এ রয়েছে, ইসলামী মূল্যবোধের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। ইসলামে আইনগত সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। এ ধারায় সুকৌশলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার চেতনাকে অস্বীকার করার অভিযোগ আনে ইসি। গঠনতন্ত্রের ধারা (৬)-এ রয়েছে, ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সংশোধন এনে সরকার পরিবর্তন এবং সর্বস্তরে খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করতে হবে। এ ধারায় দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে বলে চিঠিতে জানিয়েছে কমিশন।

গঠনতন্ত্রের ধারা (৭)-এ রয়েছে, এমন কোন দল বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না যাদের লক্ষ্য জামাতের লক্ষ্যের পরিপন্থী। এ ধারায় নিবন্ধন আইনের পরিপন্থী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের অভিপ্রায় বলে মনে করছে ইসি। গঠনতন্ত্রের ধারা (১১)-তে অমুসলিম নাগরিকদের দলের সদস্য হওয়ার জন্য আলাদা নিয়ম রাখা হয়েছে। বিষয়টিকে নিবন্ধন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ইসি। ধারা (১৬)-এর ২(খ)-তে জামাতের লক্ষ্য অর্জনে জান-মাল দিয়ে চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। ‘জান-মাল’ দিয়ে কথাটুকুর স্পষ্ট ব্যাখ্যা চায় ইসি।

বাংলাদেশ সংবিধানে ৭(১) ধারায় লেখা আছে, “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।” আর ‘ইসলাম’ শব্দ ব্যবহারের কারণে জামাতকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় স্বীকার করতেই হয় যে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ পাক।’ সেক্ষেত্রে জামাতের রাজনীতি সংবিধানের এ ধারা মুতাবিক বাদ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সংবিধানের ৭(২) ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।” বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ সংবিধানের কেবলমাত্র মৌলিক অধিকার অধ্যায়েই যা বর্ণিত আছে তার প্রেক্ষিতে কোনো মতেই এদেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ সম্ভব নয়। সংবিধানের দৃষ্টিতে দেশদ্রোহী, সংবিধানদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী এই যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা উচিত। এ ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা সরকারের গাফলতি ইতিহাসের অমার্জনীয় অপরাধ বলে ধিকৃত হবে।

সর্বোপরি চলমান বিচার প্রক্রিয়ার অধীন চিহ্নিত দেশবিরোধীদের মুক্তির দাবীতে জামাত-শিবিরের সহিংস আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গটিকে একটি মিমাংসিত বিষয় দাবী করে পোস্টার ও লিফলেট প্রচার করা কতটা গণতান্ত্রিক অধিকার আর কতটা আমাদেও ও সরকারের মেরুদ-হীনতা তা ভাবনার বিষয়। সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন তাই ঘনীভূত হয়- ৭১-এর ঘৃণিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, হাত-পায়ের রগ কাটা দল অস্ত্রভা-ার গড়ে তোলার দল বৃষ্টির মত গুলি করার দল জঙ্গিদের ষাটভাগ কর্মী বিতরণসহ জঙ্গিদের নেপথ্য মদদদানকারী ও জঙ্গিদের সাথে গভীর সম্পৃক্ত দল- জামাতকে, শিবিরকে এখনো জঙ্গি বলা হচ্ছে না কেন? আর কেনই বা তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে না? ১৯৯২ সালে গণ আদালত গঠন কওে দেশবিরোধী রাজাকার গোলাম আজমের বিচার করার অপরাধে যদি শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা যায় তাহলে কোন যুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বনকারী, সংবিধান ও দেশবিরোধী একটি দলকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যাবে না? যে গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দিয়ে দেশবিরোধীদের এই তথাকথিত আন্দোলনের সাফাই গাওয়া হচ্ছে তা দেশের গণতন্ত্রকে কতটা সুরক্ষিত করছে? দেশবিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার বিষয়ক সাফাই প্রকারান্তরে দেশবিরোধীতারই সামিল। আর এই দেশবিরোধীদের আগলে রাখতে বা, প্রতিকী নির্বাচন দিয়ে দ্বায়িত্ব সারতে গেলে সরকার তার চরম ভুলটি করবে। এদেশের তরুনরা প্রয়োজনে আবারো গণ আদালত বসাবে, আর প্রাক্তনদের ব্যার্থতার দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করবে। তাই সাধু সাবধান।

স্বয়ম


মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

পড়তে পারলাম না বলে দুঃখিত। আরেকটু ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ আর সেগুলির মধ্যে ফাঁক রাখলে পড়তে সুবিধা হত।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। দুঃখিত অগোছাল হওয়ার জন্যে। এডিটের কোনও অপশন দেখতে পাচ্ছি না। এলাইনমেন্টটাও ঠিক করা গেলে ভাল হতো। মডারেটররা কি একটু দেখবেন?
স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

ঋণ স্বীকার করা হয়নি। আসলে চলমান ঘটনা থেকে,সাম্প্রতিক ব্লগ, পুরোনো পত্রিকা টুকে রাখা কিছু তথ্য,সংবিধান এবং এ সম্পর্কিত পূর্বের আলোচনাকে (পাঠচক্রে) সূত্র ধরে লেখা। লিংকগুলো বা সূত্রগলো যথাযথভাবে দিতে পারছি না বলে দুখিঃত।

স্বয়ম

পুতুল এর ছবি

স্বয়ম, আপনার লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তার কারণ পরে বলছি; কিন্তু লেখাটির অনুচ্ছেদ ভাগ ভাগ করে দিলে পড়তে আরাম হতো এবং আরো পাঠক লেকাঠি পড়তো। এখন সে কথা বলে লাভ নেই কারণ; আপনি চাইলেই আর কোন পরিমার্জন করতে পারবেন না। আশাকরি ভবিষতে আপনার কাছ থেকে এই ধরণের আরো লেখা পাব, এবং তখন প্রকাশের আগে রিভিউ দেখে নেবেন।

কিন্তু অনুচ্ছেদ যত বড় আর ছোটই হোক না কেন, আপনার বক্তব্য বুঝতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। এবং আপনার মতো একজন তরুণ কেরিয়ার নিয়ে না ভেবে ন্যায় অন্যায় নিয়ে আপনার মূল্যবান সময় ব্যায় করছেন, এই ব্যাপারটার একটা অতিরিক্ত মূল্য আছে আমার কাছে। সে জন্যই লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি শুরুতে।

আমি সংখ্যা, দিন তারিখ নিয় ভাল কাজ করতে পারি না, তাই সেদিকে যাব না। কিন্তু আপনার লেখায় সংখ্যা বা দিন তারিখের কোন বিরাট হেরফের হয়েছে বলে মনে করি না। সে সব ব্যাপার সামলাবে আদালত। আমার কাছে গুরুত্ব বহন করে মানুষের চিন্তা-চেতনা।

আপনার চেতনা আমাকে উদ্ভূদ্ধ করছে বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধ এবং তার বিচার নিয়ে কিছু বলতে। এটা মোটেই কোন একাডেমিক আলোচনা নয়। শুধুই আমার পর্যবেক্ষণ এবং অনুমান। তা সহজেই বাতিল করা যাবে, কোন অসুবিধি নেই। আমার কাছে কোন জরিপ বা প্রমান নেই। শুধুই পর্যবেক্ষণ।

ভারত ভাগের সময় বা তারও আগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা নীচু শ্রণীর মুসমানদের হিন্দু আভিজআত্যের প্রতি একটা আক্রশ ছিল। ধর্মের কারণে আমারা অনেক প্রণসংহারী বিবাদ করেছি করেছি, হিন্দু বনাম মুসলমান। এবং আমাদের দেশে হিন্দুদের বৈরিতার কারণে অনেক মুসলমান চলে এসেছে। আবার মুসলমানের সংখ্যা বেশী হওয়ায় আমাদের এলাকা ছেড়ে অনেক হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে গেছে। মোট কথা আমাদে মধ্যে বিদ্ধেশ ছিল।

ইংরেজ চলে যাওয়ার পরে আমরা মুসলমানদের পক্ষে হঠাৎ অনেক নেতা পেয়ে গেলাম। তারা গান্ধী বা নেহেরুর সাথে উঠ-বস-পানা-হারে অভস্ত থাকলেও মুসলমানদেরন জন্য আলাদা রাজ্য চাইতে ভূলেন নি। এই ধরণের সুবিধাবাদী নেতা ভারত এবং পাকিস্তানের পক্ষে পাবেন।

এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষেত হয়েছে; তা হল জনগন কী চায়? দাঙ্গা হয় একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, নির্দষ্ট কিছু লোকের অশংগ্রহনে। যেমন আপনি বলেছে; ছাত্র শিবিরের তাণ্ডব। সেটা কী একটা সর্বজনিন অবস্থা? শিবির আছে বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তারা কী বাংলাদেশের সব খানে আছে?

নেই। থাকার দরকারও নেই। শিবির জানে কোথায় আঘাত করলে তারা জাতীয় ফেক্টর হয়ে যাবে। এবং শিবির কিন্তু অন্য দল বা ছাত্রদের তুলনায় নগন্য। প্রশ্ন হল; তার পরেও তারা এতো মনোযোগ পায় কেন? নিশ্চই আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে এন্টারেষ্টিং প্রশ্ন।

সেই দিকে সময় এবং সুযোগ হলে যাব। আপাতত যুদ্ধপরাধের বিচারেই সীম্বদ্ধ থাকি।

যেম ধরুণ; পানি একটা মোরগ জবাই করলেন। অনেক ধর্মেই ব্যাপারটা আছে, পূন্য হিসাবে। ইসলামে আছে; কাফের মারা পূন্যকর্ম। হয়তো হিন্দু ধর্মেও আছে।

এখন একজন রাজাকার বা পাক হানাদার একটি পূণ্যকর্ম করছে, কী ভাবে? কাফের মরে। এবং সহি মুসলিম পয়দা করছে, কী ভাবে? ধর্ষণ করে।

এই হল, তাদের দর্শন। তারা এটা অপরাধ হিসাবে দেখছে না। তাদের কাছে এটা পূন্যকর্ম।

সেই পূন্যকর্মে যোগ দেয়া কিছু মুসলিম তরুণ দেখল; কাজটাতো ঠিক হচ্ছে না। তারা পালিয়ে গেল রাজাকার বাহিনী ছেড়ে।
তাদেরকে ক্ষমা করে শেখ মুজিব ভুল করেন নি।

এই যে পালিয়ে যাওয়া রাজাকার; তারা তো পাকিস্তানের পক্ষেই ছিল, যদি না পাকিস্তানীরা এতো অত্যাচারী হয়ে উঠতো; তাহলে সেই রাজাকাররা পাকিস্তানের পক্ষে, মুক্তি বাহিনীর বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে যেত।

কারা এই পালিয়ে যাওয়া রাজাকার?

মানবিক দিক থেকে আপনার আমার চেয়ে খারাপ নয়। কিন্তু একটি মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষে। এবং সেই মুসলিম রাষ্ট্র রক্ষা করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে গেছে। জানিনা তখণকার হাল অবস্থা কেমন ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় শিক্ষিত মধ্য বিত্ত মুসলিমরা তাদের উপর হিন্দুদের দাদাগিরি পছন্দ করতো না। বলাই বাহুল্য; তারা সমাজকে প্রভাবিত করতে পারতো, এমন শিক্ষা তাদের ছিল। অনেক জ্ঞানী-গুনীর মাঝে শেখ মুজিব এমন এক জন। সে জন্যই তাঁর দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

তাদের সবাই শেখ মুজিবের মতো উদার অথবা বিচক্ষণ ছিলনা। তাদের সাম্প্রদায়ীক ভাবধারা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারেন নি। রয়ে গেলেন পুরানো মুসলিম আদর্শ-উদ্দেশ্য নিয়ে। মুসলিম আদর্শ-উদ্দেশ্য লালিত সবাই কিন্তু রাজাকার ছিল না। কিন্তু তাদের কামনা-বাসনা ছিল; যেন একটা ইসলামী ভাব-ধারা, চালু থাকে।

এই শ্রেনীর সবাই উচ্চ শিক্ষিত। তাদের একটা ধারা কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী। এবং বর্তমান বাংলাদেশে তাদের প্রভাব সব চেয়ে বেশী। হুমায়ূন আহমেদ (বানানটা ঠিক হল তো?) আনিসুল হকরা তাদের প্রথম সাড়িতে আছেন। কিন্তু পেছনে বসে সজাগ দৃষ্টি রাখছে; সেই ইসলামী ভাবধারা চালু রাখার পক্ষের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম অভিজাত শ্রেনী। একা প্রথম আলোর মতিউর রহমান নিজামীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তার পেছনে আছে ইসলামী ভাবধারার লক্ষ্য লক্ষ্য পাঠক। দেখুন গুনগত মানে বাংলাশেদেল শ্রেষ্ঠ দৈনিক সংবাদ তেমন চলে না, কিন্তু ইসলামী ভাবধারার প্রথম আলো; "আলো" দিয়েই যাচ্ছে!

এই যে প্রথম আলোর আলোকিত পাঠক; তারাই বঙ্গবন্ধু হত্য অনুমোদন করেছে। জয় বাংলা, জয় হিন্দ। লুঙ্গি ছাইড়া ধূতি পিন" শ্লোগান এরাই আবিস্কার করেছিল ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ এর আগেই কিন্তু। তারপর বলেছিল "এক নেতার এক দেশ, এক বুলেঠে সব শেষ"।

তাদের একটি মুসলিম আদর্শের রাষ্ট্র বাস্তবায়নের পক্ষে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের কিছু লোককে কোরবানী দিলেও সবাইকে দেওয়া দরকার নাই। এর আলামত শেখ মুজিব তার অতি মানবিকতা (আমার বিবেচনায় অদূরদর্শিতা) দিয়ে (কিছু রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা) শুরু করে গেছেন।

শেখ হত্যার পরে জিয়া যে যুদ্ধে গিয়েছিলেন রাজারকারদের পক্ষে; তা প্রকাশ হয়ে যায়। সেখানেও "সেই ইসলামী ভাবধারা চালু রাখার পক্ষের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম অভিজাত শ্রেনী।" খুসী হয়েছিলেন। এবং সুনিপুন ভাবে জিয়া বাংলাদেশকে ভারতের পূর্ব দিকে একটা পাকিস্তান রাষ্ট্রে পরিনত করেছেন।

সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিন্ত এখনও এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও সেই বিখ্যাত শ্রণীকে গুনায় ধরেই নিতে হয়। তাদের সব কিছু আবার মানবিকও হতে হয়। ঠিক আছে গোলমাল আযামের বিচার হোক। "তারপর থীক্যা কিন্তু এই ঝামেলা শেষ"। সেটা শেখ হাসিনার মাথায় রাখতে হয়। যে কোন সরকার; একটা কম্পানীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াই আর কিছুই নয়। এবং আওয়ামী লীগেই "সেই ইসলামী ভাবধারা চালু রাখার পক্ষের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম অভিজাত শ্রেনী" সব চেয়ে বেশী এবং ক্ষমতাবান।

আমি শুধু পর্যবেক্ষক; গবেষক নই। সে জন্যই অনেক কিছু সহজে বলে ফেলতে পারি। তাই অনুমান করি; আওয়ামী লীগের বিগত জয়ের পছনে, তাদের নির্বচনী অঙ্গীকার বিএনপি বা অন্য কোন দল থেকে মোটেও ভাল ছিল না। সামরিক সরকার বিএনপির চুরি-বাটপারিটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সে জন্যই লোকজন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই আপনার আমার মতো মানুষ ছিল যারা ভেবেছে; আওয়ামী লীগকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার হলেও হতে পারে, কিন্তু বিএনপিকে দিয়ে হবে না। কিন্তু আওয়ামী ভোটারদের ভেতর সবাই আপনার আমার মতো না।

সে জন্যই; ক্ষিধার জ্বালায় রুটি চুরি করলে ছোট শিশুকেও আমাদের দেশের মানুষ গনধোলাই দেয়; কিন্তু দ্বীনিস্লামের পক্ষে শিবির পুলিশ পিটাইলেও কিছু কয় না।

কী যেন একটা বিহিনী ছিল না আমাদের! যারা ডাকাত বা সন্ত্রাসী ধরে নিয়ে আসার সময় সন্ত্রাসী দৌড়ে পালেতে গেলে গুলি করতো, আর সন্ত্রাসী মারা যেত। সেই বাহিনী কিন্তু আপনার ভাষায় তাণ্ডব করা শিবিরকে ধরতেই যায় না। কেন?

এর বহুবিধ উত্তর হতে পারে। একটা জনপদের বেশীর ভাগ মানুষ যা চায়, তাই হয়। হয়তো আমাদের মৌণ সম্মতিই শিবিরকে শক্তি যোগায়। আপনার ব্লগে এত কথা বললাম কারণ; আপনি শিবিরকে মৌন সম্মতি দেন নি। অনেক কষ্ট করে এই লেখাটা লিখেছেন। সুন্দর গল্প কবিতার লেখার লেখক আমরা অনেক পাব। কিন্তু অন্যায়ের বিরোদ্ধে প্রতিবাদী মানুষ খুব বেশী হয় না। এর একটা মূল্য আছে আমার কাছে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

ফারাসাত

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, এত দীর্ঘ এবং পর্যবেক্ষণধর্মী একটা মন্তব্য দেয়ার জন্যে। ভঅরত ভাগ এবং হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার বিষয়ৈ বেশি কিছূ বলব না, শুধু এটা মনে পড়ল যে, দেশভাগের দায় হিন্দু মুসলিম দুয়েরই। লাহোর প্রস্তাব যখন উত্থাপিত হয়, তখন দ্যা হিন্দু পত্রিকার পরদিনে হেড ছিল- পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। উল্লেখ্য ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তান নামটিই গৃহিত হয় মুসলিমদের দ্বারা। এরকম অনেক অনেক বৈপরিত্যে ভরা দ্বৈরথ আমরা দেখাতে পারব। কিন্তু এতো সত্যি যে, গান্ধি হত্যার সংবাদ সবচেয়ে বেশি অসহায় করেছিল ভারতে থেকে যাওয়া তখনকার মুসলিমদের। এ বংালায় বসে পাকিস্তানের গান্ধিবাদী রাজনীতির একসময়ের ঘোর বিরোধী তাজউদ্দিনকে যে কারণে আমরা দেখি নির্ঘুম রাত কাটাতে এই দুশ্চিন্তায় যে, এখণ মুসলিমদের কি হবে? অর্থাৎ মুসলিমদের নিরাপত্তার একটা বড় নিশ্চয়তা ছিলেন গান্ধি নিজে। এর বিপরীতে জিন্নাহকে আমরা কোন ভূমিকায় দেখি? রাষ্ট্রপক্ষ নিজেই উস্কে দিচ্ছে দাঙ্গায়। দেশে এখণ হিন্দুর সংখ্যা শতকরা হিসেবে ৯%। একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।
দেশভাগ বলি আর মুক্তিযুদ্ধ বলি ইতিহাসের সরলিকরণের জায়গায় দাঁড়ালে একটা পুণরাবৃত্তি চোখে পড়ে প্রকটভাবে। বৃটিশবিরোধী আনোদলনে তবু একটা সার্বিক টান ছিল, সবার মুক্তির প্রসঙ্গ বিচ্ছিন্নভঅবে হলেও অগ্নীযুগের বিপ্লবীরা ভেবেছে। নিজের মত করে চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাকিস্তান পত্তনের পর, আমরা মূলত এখানে সদ্য বেড়ে ওঠা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সাথে বেশি সুবিধঅ পাওয়া শিক্ষিত মধ্যবিত্তেরই দ্বন্দ দেখি। গণমানুষের কোনও ঝোঁক ছিল না তা বলছি না, বলতে চাইছি যে বা যারা একটা প্রজন্মকে বা একটা আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রন করেছে তাদের শ্রেনীগত অবস্থান এবং তার অবশ্যম্ভাবি পরিণাম। আমরা তারই বলী হয়েছি। বৃটিশ অভিজাত থেকে ক্ষমতা এসেছে এক অংশে হিন্দু অভিজাত ও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অন্য অংশে নিয়েছে মুসলিম একই শ্রেনী। দু অংশেই আবার কেন্দ্র কাঠামো তৈরি হয়েছে। যা মূলত দ্বন্দের মূল কারণ। পাকিস্তানি তথা পশ্চিম পাকিস্তানি মধ্যবিত্ত ও পুঁজি ক্ষমতা কাঠামোয় বসে আর শিক্ষিত বাঙালি শঅসিত হচ্ছে, যেখানে কেন্দ্র থেকে তার ভৌগোলিক দূরত্ব রয়েছে। খেয়াল করলে দেখা যায় , একই সময়ে শুরু হওয়া বেলুচদের সংগ্রাম কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। এর একটা বড় কারণ বোধ হয় ভৌগোলিক অবস্থান। এটা আমার ব্যাক্তিগত মত, কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মত নয় বোধ হয়।
জনপদের বেশিরভাগ মানুষ সত্যি এমন নয়। তবে মানুষ তার চাওয়া টাকে সামনে হাজির করতে পারে না। এ অঞ্চলের মানুষ ধর্মভীরু ছিল কিন্ত ধর্মান্ধ ছিল না। এখন কিন্তু মনে হয় অনেকটা উল্টা। এটা ভিতিকর বিষয় অবশ্যই। যখন বিপরীত সামনে এসে দাঁড়ায় তখন নির্লিপ্ততা তাকে সমর্থন দেয়ারই সামিল।েআমরা এমন ভদ্রলোকি নির্লিপ্ততার মধ্য দিয়ে নিজেদের সাড়ে সর্বনাশ ইতোমধ্যে করে ফেলেছি। বাকি যা তার ফলাফল নির্ভর করছে আমাদের নির্লজ্জতার মাত্রার উপর-----

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

জামাত-শিবিবের তান্ডব প্রতিহত করা হোক।

অতিথি লেখক এর ছবি

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোনও টালবাহানা না। প্রতিকী না, সীমিত না, যেনতেন না, পূর্ণাঙ্গ বিচার করতে হবে।

স্বয়ম

বিলাস এর ছবি

আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা। লেখক কে অনেক ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। লেখা কতটা গুরুত্ব তুলে ধরতে পেরেছে জানি না। তবে বিষয়টি নিসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। লেখা অগোছাল থেকে গেছে। তারপরও কষ্ট করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

স্বয়ম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।