কলম-জীব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৭/১২/২০১২ - ১১:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, স্যার, আজকের মধ্যেই ফার্নিচারগুলো আপনার বাড়ি পৌঁছে যাবে। ‘বেঘুন ফার্নিচারের’ জেনারেল ম্যানেজার জানিয়েছে, আপনার জন্য কিছু এক্সপোর্ট কোয়ালিটি ফার্নিচার আলাদা করে সরিয়ে রেখেছে তারা। আমরা হচ্ছি ওদের সবচেয়ে বড় ফান্ডিং পার্টনার, আপনি নিঃসন্দেহ থাকতে পারেন স্যার, ওদের সেরা জিনিসটাই দেবে আমাদের। আপনাকে তো ইন ফ্যাক্ট উপহারই দিতে চেয়েছিল ওরা, কিন্তু আপনি রাজী না হওয়াতেই স্পেশাল ডিসকাউন্টে....” কথা শেষ করতে পারে না রফিক সাহেব, রুমের বাইরে একটা গোলমালের শব্দ শোনা যায়। পরে গ্লাস-ডোরটি দিয়ে তাকাতে একটি বয়স্ক লোককে চোখে পড়ে, ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে আসছে তার রুমের দিকেই।

লোকটির বয়স ৬০ বছরের উপর হবে। অতি পুরনো ও ময়লা একটা পাঞ্জাবি গায়ের উপর চাপানো। কাঁধে ঝুলানো ধুলোর আস্তরণ পড়া একটি ব্যাগ। বিশাল শরীর। উচ্চতা ছয় ফুট ছাড়িয়ে যাবে নির্ঘাত। লম্বাটে মুখটি পূর্ণ করে আছে সফেদ শ্মশ্রুরাজি । চোখে-মুখে অদ্ভুত একটা প্রত্যয়। তেজস্বী কণ্ঠস্বর। লোকটি যখন প্রকম্পিত কণ্ঠে বলে যাচ্ছিল, ‘মানেজার সাহেব কোথায়, আমি মানেজার সাহেবের সাথেই কথা বলব’, তখন যেন বজ্রপাত হচ্ছিল ছোটর অফিস ভবনটিতে, উপস্থিত প্রতিটি মানুষ অবাক হয়ে দেখছিল লোকটিকে।

অপারেশনস্ ইন-চার্জ তখনও লোকটির পিছু পিছু আসছিল এবং মিউ মিউ স্বরে তার আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল, ‘আপনি আমাকে বলতে পারেন, ম্যানেজার স্যারের রুমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।‘ কিন্তু তার পক্ষে বিশাল বপুর অধিকারী লোকটির পথরোধ করা সম্ভব হল না।

আগন্তুক তাকে পিছে ফেলেই ‘ম্যানেজার’ লেবেল লাগানো রুমটির ভিতর সটান ঢুকে গেল। ম্যানেজার রফিক সাহেবের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আমি বিভিন্ন অফিসে কলম সাপ্লাই দেই, ম্যানেজার সাহেব। আপনার অফিসেও কলম বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। কিন্তু আপনার অফিসার আমার কলম যাচাই না করে হুট করে বলে দিল, তার নাকি কলমের দরকার নেই। ” - ম্যানেজারের জবাবের অপেক্ষা না করেই এরপর সে ব্যাগ থেকে একটি বাক্স বের করে, ‘এখানে ১০ ডজন কলম আছেন, ম্যানেজার সাহেব। দেখুন তো কলমগুলো মানসম্পন্ন কিনা? আমি কখনো নিম্নমানের বা নকল কলম বিক্রি করি না। নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আমার কলম কিনে আপনি ঠকবেন না। ”

রফিক সাহেব কলমগুলোর দিকে তাকালেন, যদিও তাকে খুব বেশী ইমপ্রেসড্ মনে হল না। তবে তিনি লোকটিকে তার সামনের চেয়ারটি দেখিয়ে বসতে বললেন।

‘ভাইয়া, কিছু মনে করবেন না, এটা একটা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। এখানে অনেক লোক আসেন বিভিন্ন কাজ নিয়ে। তাই আপনি যদি আপনার কথাগুলো সামান্য নিচু স্বরে বলেন, আমাদের সবার জন্যই ভাল হয়।‘

আগন্তুক লোকটির চোখদুটি হঠাৎ জ্বলে উঠল, আগুন ঠিকরে বেরুতে লাগল যেন, আগের চেয়েও প্রকম্পিত স্বরে সে বলল, ‘আপনি কয়দিন ধরে চাকরি করছেন, মশাই? কাকে কি বলতে হয় শেখেননি? আপনি জানেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা? ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা কখনো নিচু স্বরে কথা বলে না।‘

রফিক সাহেব পুরোই কুকরে গেলেন। কোথাকার কে, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে কলম বিক্রির জন্য জোরাজুরি করছে! উৎপাতের আর বুঝি শেষ নেই! একটা না একটা উটকো ঝামেলা লেগেই থাকে সবসময়! এই তো গতকালই তো একদল হিজড়া এসে হাজির। তাদের টাকা চাই। না দিলে তারা অফিসের গেট থেকে নড়বে না। মান-সন্মান বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত হাজার খানেক টাকা গুজে দিতে হয়েছিল তাদের হাতে।

যাইহোক, এই মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা লোকটার সাথে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই! লোকটিকে দ্রুত বিদায়ের চিন্তা করতে লাগলেন ম্যানেজার রফিক সাহেব।
হঠাৎই গ্লাস-ডোরের ওপাশে সোলায়মান সর্দারের মাংসল চেহারা ভেসে উঠল। ম্যানেজার রফিক সাহেব হঠাৎ শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন, চকিত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, অতিথির জন্য স্বীয় হাতে ও নত মস্তকে দরজা খুলে দিলেন এবং পরম যত্নভরে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। বলা বাহুল্য, সোলায়মান সর্দার এই লিজিং ফার্মের সবচেয়ে বড় ক্লায়েন্ট। তার মর্জির উপর অনেকখানি নির্ভর করে এই প্রতিষ্ঠানের ভুত-ভবিষ্যৎ। তার সামান্য অসন্তোষ ধসিয়ে দিতে পারে রফিক সাহেবের মসনদ, তলিয়ে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটির পরিপাটি সৌধ।

‘স্যার, আপনি কষ্ট করে এলেন কেন? আমরা জিএম সাহেবের সাথেই তো কথা বলে রেখেছি। আপনার ‘ওয়েভার প্রস্তাবটি’র ব্যাপারে আমাদের ম্যানেজমেন্ট খুবই পজিটিভ। সবচেয়ে বড় কথা হল, আপনার মত বিশিষ্টজনকে পেয়ে আমরা গর্বিত।‘- উচ্ছ্বসিত রফিক সাহেবের কণ্ঠ থেকে মুগ্ধতা আর বিনয় উপচাতে থাকে।
‘আপনেরা যে আমারে ইজ্জত করেন, হেইডা আমি জানি। তয় কইবার লাগছিলাম কি, আমারে অন্য আরো একটা ওয়েভার দেয়া লাগব। হেই বিষয়ডা নিয়াই আলোচনা করবার আইছি।‘
‘কোন সমস্যা নেই স্যার, আপনার জন্য আমরা জান-পরান দিয়ে চেষ্টা করব। স্যার, সামান্য নাশতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কিছু মনে না করেন, নাশতার ফাকে ফাকে না হয় আপনার নতুন প্রস্তাবটি শুনব !’

রফিক সাহেব যখন তার ভিভিআইপি গেস্টকে আপ্যায়িত করতে ডাইনিংরুমে নিয়ে যান, তখন তার রুমের অন্য অতিথির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। তাই, ফিরে এসে যখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা অতিথিকে কটমট চোখে বসে থাকতে দেখলেন, বিরক্তিতে তার ভ্রু-কুঞ্চিত হল। লোকটিকে এখন ভালয় ভালয় বিদেয় করতে পারলে বাঁচেন!রফিক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনার কলমের দাম কত?”

“অনেক সস্তা। মুক্তিযোদ্ধারা তো আর মুনাফালোভি না। ন্যায্য দামটাই রেখেছি। প্রতি বাক্সের দাম...’’ হঠাৎই ক্রিং ক্রিং শব্দ। রফিক সাহেব মুক্তিযোদ্ধাকে থামিয়ে দিয়ে রিসিভার কানে তুললেন, “হ্যালো স্লামিকুম,.....জি স্যার, জি স্যার, কি সৌভাগ্য, আপনার ফোন পাব চিন্তাই করিনি,......ও আচ্ছা, স্যার, কোন সমস্যা নেই, স্যার, আপনি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিন, এটা তো আমাদের দায়িত্ব, এটুকু না করলে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে, .....স্যার, আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আর আমরা যেন ভালভাবে কাজ করতে পারি, সেজন্য দোয়া করবেন।”

রিসিভার রেখে দিয়ে পিবিএক্সে নিজের অপারেশনস্ অফিসারকে ফোন করলেন রফিক সাহেব, “শওকত, আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে তোমার কাছে একজন ছেলে আসবে, নাম নুরু। ওকে উন্নয়ন খাতে দেখিয়ে বিশ হাজার টাকার ভাউচার করে দিও দিও। আমাদের রেগুলেটরি বডির একজন প্রভাবশালী সদস্য তার এলাকার একটি মসজিদ উন্নয়নের জন্য কিছু ডোনেট করার অনুরোধ জানিয়েছেন কিছুক্ষণ আগে।”

রিসিভার রাখার পর নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা লোকটির দিকে চোখ যেতেই পুনরায় ভ্রু-কুঞ্চন করলেন রফিক সাহেব। লোকটিকে সহ্যও করতে পারছেন না, আবার বিদেয়ও করতে পারছেন না। একটার পর একটা কাজ এসে হাজির হচ্ছে। মহা যন্ত্রণা হল দেখছি!
“হ্যাঁ, আপনি কত দাম বলছিলেন?”
“বাজারে কিনতে গেলে ১২০০ টাকার নীচে পাবেন না। কিন্তু আমি মাত্র ১০০০ টাকায় বিক্রি করছি।“

টাকার অংক শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন রফিক সাহেব। তিনি তো মনে মনে আরও বড় অ্যামাউন্টের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। যাইহোক, রফিক সাহেব নিজের প্যান্টের পকেট হাত ঢোকালেন, এই রাগী লোকটাকে আর শওকতের কাছে পাঠাতে মন চাচ্ছে না, হয়ত আরেকটা গণ্ডগোল বাঁধাবে। পকেট থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলেন লোকটির দিকে।

“অনেক ধন্যবাদ, ম্যানেজার সাহেব, দেখবেন আপনার অফিসের সবাই কলমগুলো ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।”-বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলেন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা লোকটি।
কিন্তু পেছন থেকে ম্যানেজার রফিক সাহেবের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, “একটু শুনুন প্লিজ, আমাদের কলমের স্টক এ মুহূর্তে পূর্ণ। কোন নতুন কলমের আসলেই প্রয়োজন নেই। আপনি কলমগুলো নিয়ে যান, নিশ্চয়ই অন্য কোথাও বিক্রি ........।”
কথা শেষ করতে পারলেন না রফিক সাহেব, শীর্ণ কিন্তু শক্ত একটি হাতের খুব জোরাল শট তার গালের উপর গিয়ে পড়ল, মুহূর্তের মধ্যে রফিক সাহেবের ননীকোমল গালে একটা অস্পষ্ট লালাভ রেখা তৈরি হল।

“শুয়োরের বাচ্চা, তোর এত বড় সাহস, তুই একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভিক্ষা দিস! নে, এই কলমগুলি তোকে দান করে গেলাম, এগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খা আর উদর পূর্তি কর, সারাজীবন তো এ করেই খাচ্ছিস! ”- এরপর রফিক সাহেবের নোটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে হন হন করে রুম থেকে বেরিয়ে যান নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করা ষাটোর্ধ লোকটি।

এদিকে হতভম্ব রফিক সাহেব এক দৃষ্টিতে কলমগুলোর দিকে চেয়ে থাকেন। কলমগুলি তার চোখের সামনে কিলবিল করতে থাকে, একের পর এক কালি লেপ্টে দিতে থাকে তার হাত, পা, মুখমণ্ডলসহ দেহের প্রতিটি রন্ধ্রে, রন্ধ্র!

কাজি মামুন
১৬।১২।২০১২


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় কাজি মামুন

আমি জানি না আপনি আমার মন্তব্যটা কীভাবে নেবেন, তবু বলাটা প্রয়োজন বোধ করছি। আমার কাছে এই গল্পটা খুব চিপ লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মসম্মানবোধ, আদর্শবাদকে যেন তেন প্রকারে দেখিয়ে দিলেই মুক্তিযুদ্ধ বা সমসাময়িক প্রসঙ্গের গল্প হয়ে যায় না।

আগন্তুক লোকটির চোখদুটি হঠাৎ জ্বলে উঠল, আগুন ঠিকরে বেরুতে লাগল যেন, আগের চেয়েও প্রকম্পিত স্বরে সে বলল, ‘আপনি কয়দিন ধরে চাকরি করছেন, মশাই? কাকে কি বলতে হয় শেখেননি? আপনি জানেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা? ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা কখনো নিচু স্বরে কথা বলে না।‘

- নিজের পণ্য বিক্রি করতে এসে কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এভাবে নিজের পরিচয় বা বঙ্গবন্ধুকে জাহির করে না। কারণ, তার কোন দরকারই নেই। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী প্রতারকেরা কথায় কথায় নিজের পরিচয় জাহির করে বা সার্টিফিকেট বাগিয়ে ধরে।

কাজী হায়াত গং-দের মতো ঢাকাই চলচিত্র নির্মাতারা গত বাইশ বছর ধরে একটা কাজ করছে। তারা তাদের তথাকথিত সামাজিক অ্যাকশন নামক ছবিগুলোতে নায়ককে মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং ভিলেনকে রাজাকার বা রাজাকারের সন্তান বানিয়ে তাদের সস্তা ফর্মুলা চালিয়ে দেয়। এই গল্পটাকে ঐ'রকম একটা সস্তা ফরম্যাটের জিনিস বলে মনে হলো।

এর আগে আপনার লেখা পড়েছি, মন্তব্যও পড়েছি। আপনাকে পরিশ্রমী ও সম্ভাবনাময় লেখক মনে হয় বলেই এই কথাগুলো লিখলাম। নয়তো এতো কথা লেখার পরিশ্রম করার কোন দরকার ছিল না।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর জীবনের সবচে' গৌরবের বিষয়, মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। তাই এই দুইটা বিষয় নিয়ে কিছু বলতে গেলে বা লিখতে গেলে তাই আরেকটু বেশি মনোযোগ, আরেকটু বেশি পরিশ্রম দাবি করে।

ভালো থাকবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কাজি মামুন এর ছবি

প্রিয় পান্ডবদা,
প্রথমেই বলি আপনার অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলো আমাকে ছুঁয়ে গেছে। কোন লেখকই চিপ কিছু লিখতে চায় না, তবু পাঠকের কাছে তা চিপেস্ট মনে হতে হবার শতভাগ অধিকার আছে এবং পাঠকের সে অধিকারকে আমি শ্রদ্ধা করি। ব্যর্থ একটা রচনার জন্য কস্ট হওয়াও স্বাভাবিক, তবে একজন সিনিয়র ব্লগার ও লেখক হিসেবে আপনার পরামর্শগুলো আনন্দও দিয়েছে, মনে হয়েছে, এই শেষ নয়, সামনে হয়ত ভাল কিছু লিখতে পারব।
বিশ্বাস করুন, গল্পটি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই নেয়া। একজন শ্রমজীবী মুক্তিযোদ্ধাকে তথাকথিত বিলাসী সমাজের হাতে নাজেহাল হতে দেখেছিলাম। যে সংলাপটি নিয়ে আপনার আপত্তি, তাও মিথ্যে নয়।
আমাদের দেশে একটি নব্য ধনিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যার ভিতর কলম পেষা অফিসারও রয়েছেন। এরা নতজানু, দুর্বল, অলস এবং দুর্নীতিপরায়ণ। ভোগবিলাস ও তোষণে আপাদমস্তক মত্ত। এদের বিপরীতে একজন মুক্তিযোদ্ধার দুর্বার সাহস আর নৈতিকতাকে দেখাতে চেয়েছিলাম এই গল্পে। মুক্তিযোদ্ধার রাখঢাক-হীন ও জোরাল স্বরকে রূপকার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছি এরই বিপরীতে।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ,পান্ডবদা।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত উত্তম জাঝা!

''দিবাকর''

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

মামুন ভাই, আপনি বরাবর আমাকে যেভাবে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু ষষ্ঠ পাণ্ডবের সাথে আমিও অনেকাংশে একমত।
আমারও কিন্তু শুরু থেকে কলম বিক্রেতা মানুষটিকে কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল।

আপনার লেখার মোটিভ নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশই নেই।
শুধু আরেকটু বাস্তবসম্মত হলে ভাল হত।

কারণ কারও যদি সত্যিই কলমের প্রয়োজন না থাকে তবে সে যাচাই না করেও বলতে পারে তার দরকার নেই।

আশা রাখি আমার মন্তব্যকে আপনি গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবে নেবেন আর আপনার সংবেদনশীল মন থেকে উপহার দেবেন এরকম ধরণের কিন্তু আরও সুন্দর গল্প।

খুব ভাল থাকবেন।
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

কাজি মামুন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, প্রদীপ্ত-দা।
আপনাকে অনেক দিন পর দেখতে পেয়ে অসম্ভব ভাল লাগছে।
এ ধরণের নয়, তবে আরও সুন্দর ও অন্য ধরণের গল্প লেখার চেষ্টা করব। আসলে গল্পটি অভিজ্ঞতা থেকে লেখা আর পান্ডবদা'র আপত্তি তোলা সংলাপও বানানো নয়। যখন ঐ সংলাপটি বলা হয়েছিল, তখন তাকে এক মুক্তিযোদ্ধার দুর্বার সৎ-সাহসের নমুনা হিসেবেই ধরে নিয়েছিলাম আমি। আপনি দেখবেন, নতজানু ও দুর্নীতিবাজ লোকেরা (যাদের মধ্যে শিক্ষিত শ্রেণির চাকুরে রয়েছেন অনেকে) সব সময় বিড়ালের মত মিউ মিউ করে কথা বলে, কিন্তু তাদের হাত দিয়েই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির ফর্দ বেরোয়। স্বীকার করছি, আমার অভিজ্ঞতাকে সার্থক রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
শুভ কামনা ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সত্যপীর এর ছবি

কলম লাগবেনা এইকথা বলার জন্য একটা লোক চড় খাবে কেন? কি আজব।

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন এর ছবি

কলম লাগবেনা এইকথা বলার জন্য একটা লোক চড় খাবে কেন?

কলম লাগবেনা- এই কথা বলার জন্য এই গল্পে কেউ চড় খায়নি। সেরকম হলে তো, জুনিয়র র‍্যাংকের অফিসারকেই চড় খেতে হত। কারণ সেই প্রথম বলেছে যে, কলম লাগবে না। চড় খেয়েছে আসলে অফিসের কর্তা-বাবু। দুর্নীতি, তোষণ, আর ভোগ-বিলাসে আকণ্ঠ নিমজ্জিত কর্তা-বাবু মুক্তিযোদ্ধাকে দয়ার পাত্র ভেবে নিয়েছিল (যেমনটি সে ভেবে থাকে তার নিকট আসা সাহায্যপ্রার্থী থেকে শুরু বৃহন্নলাদের)। কর্তা-বাবু মুক্তিযোদ্ধাকে কলম ছাড়াই কাঙ্ক্ষিত মূল্য দিতে চেয়েছিল।
আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যাটি করলাম। লেখাটিকে উত্তম মানের প্রমাণের জন্য নয়। কারণ লেখার মান নিয়ে পান্ডবদার মূল্যায়ন আমি মেনে নিয়েছি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

সত্যপীর এর ছবি

নাহ আমি তো দেখলাম তার কলম দরকার নেই এটি বলছেন আর হুট করে মাথাগরম কলম বিক্রেতাটির চড় খাচ্ছেন। দয়ার পাত্র টাত্র দেখলাম না। কিজানি আমারই ভুল হয়তো।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।