কবে ঘুম ভাঙবে আমাদের?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১১/০৩/২০১৩ - ১০:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৪২ বছরেও আমাদের ঘুম ভাঙেনি। অনেক হয়েছে এবার আমরা ভোর দেখতে চাই। প্রসঙ্গতই আমার এই লেখাটা যুদ্ধাপরাধী আর জামাত-শিবির নিয়ে। ব্যক্তিগত ভাবে জামাত-শিবির আমার খুবই অপছন্দের। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জামাতে ইসলামের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেয়া হয় আর ধীরে ধীরে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে তারা আজ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের একটি। ২০০১ সালের সালের মন্ত্রিসভায় জামাতে ইসলামের দুইজন মন্ত্রীও ছিলেন। ২০০৯ নির্বাচনে সুবিধা করতে না পারলেও এক্কা-দুক্কা করে এখন তাদের সমর্থক অনেক। এখন শত জোর-জবরদস্তি, আইন করেও এদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া সহজ কাজ নয়।

এখানে চিন্তার বিষয় যেই দলটা একাত্তরে বাংলাদেশকেই চায় নি, সেই দলটাই বাংলাদেশেই কিভাবে এত সমর্থক তৈরি করল? ভুলিয়ে-ভালিয়ে হোক, ধর্মের দোহাই দিয়েই হোক ভাল ভাল মেধাবী ছেলেপেলের তাদের দলে ভিড়িয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির ছাত্ররাই এদের সমর্থন করছে। এরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই থেমে নেই দেশের নামকরা স্কুলগুলোতেও নাকি এদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। সময় হয়েছে এই সমস্যার মূল কারণ (Root Cause) খুঁজে বের করার। বারবার বলা হচ্ছে শিবির ভাল ছাত্রদের ব্রেইনওয়াশ করে ওদের দলে ভেড়ায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই মেধাবী ছেলেগুলো কেনই বা ব্রেইন ওয়াশড হবে, কোথায় গলদ?

আমার কাছে যেটা মনে হয়, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আমাদের ইতিহাস নিয়ে আমাদের খুব একটা দ্বিমত নেই, কিন্তু এরপরের ইতিহাস শুধুই ধোঁয়াশা। প্রতি পাঁচ বছর পরপর বদলে যায় বাংলাদেশের জন্মের কাহিনী। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন বাংলাদেশের ইতিহাস শুধু ওয়ান ম্যান শো, শুধুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবার যখন বি এন পি আসে, তখন আমরা জানি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ই সব।

ধরুন আওয়ামী লীগ শাসনামল, একটা ছেলে ক্লাস সেভেনে জানল যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঊনার পক্ষ থেকে এম এ হান্নান প্রথম রেডিও থেকে ওই ঘোষণা পাঠ করে। আর জিয়াউর রহমান একজন ছিলেন অর্ডিনারি মুক্তিযুদ্ধা(!)। এরপর ধরুন পরের বছর ইলেকশনে জিতল বি এন পি আর ওই ছেলেটাও ক্লাস এইটে উঠল। এইবার ছেলেটা যে বই পেল, ওটা তে লেখা আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তখন শেখ মুজিবুর রহমান নামের একজন নেতা ছিলেন, উনি মূলত আওয়ামী লীগএর প্রধান আর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কারাগোপনে ছিলেন(!)। ছেলেটা এটা পড়া মাত্র বাবাকে জিজ্ঞেস করবে, ব্যস্ত বাবা কিছু একটা বুঝিয়ে দিয়ে ওকে বিদায় করে দেবে। পরে যাবে, মায়ের কাছে, মা বলবে, যা আছে ওটাই তোকে মুখস্থ করতে হবে, তোকে কিন্তু এবার ক্লাসে প্রথম হতেই হবে। এভাবে ছেলেটা বিকৃত ইতিহাস জেনেই বড় হয়। পরবর্তীতে সে যখন বুঝতে শিখে, বিশ্লেষণ করতে শেখে, তখন তার কাছে দেশপ্রেম, দেশের জন্য ভালবাসা এই বিষয়গুলো খুব নগন্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর এইসব ছেলেদের মধুমিশ্রিত চুটকিতেই যেকোন দলে ভিড়ানো যায়। সুতরাং এই সব ছেলেদের দোষারোপ করে কোন লাভ নেই।

আমাদের যাদের জন্ম ৭১ এর পর, আমরা বড় অভাগা, এখন পর্যন্ত আমাদের মাতৃভূমির ইতিহাস সঠিকভাবে জানিনা। ইতিহাস বিকৃতির কারণেই আমার দেশের মেধাবী ছেলেগুলো খুব সহজেই জামাত-শিবিরের ফাঁদে পা দিচ্ছে। বাংলাদেশের ১ম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ানো হয়। আর আমাদের চিন্তা শক্তির ভিত গড়ে দেয় এই দশ বছরের পড়াশুনা। প্রতি পাঁচ বছর পর পর কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে ইতিহাস না বদলিয়ে একটা কমন প্লাটফর্ম কি গঠন কি করা যায়না? যেখানে ইতিহাসবিদরা থাকবেন, বুদ্ধিজীবীরা থাকবেন, মুক্তিযোদ্ধারা থাকবেন এবং অবশ্যই দলমত নির্বিশেষে থাকবে এদের উপস্থিতি। এদের কাজ হবে সবাই একমত বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস লিপিবিদ্ধ করা যেন পাঁচ বছর পর পর যেন ইতিহাস বদলাতে না পারে। ছেলেমেয়েরা যখন সঠিক ইতিহাস জানবে তখন নিশ্চয় ভুলিয়ে ভালিয়ে শিবিরে ঢোকানো যাবেনা। এভাবেই ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে এই দলটি।


মন্তব্য

শামীমা রিমা এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার প্রস্তাবটি আসলেই চমৎকার এবং গ্রহনযোগ্য। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিৎ।

সাম্পানওয়ালা

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো। আমার মতে শুধু পাঠ্যপুস্তক নির্ভরতা কাটিয়ে প্রত্যেকটি পরিবারেরই উচিৎ সত্যিকার ইতিহাস সম্বলিত বই সন্তানের হাতে তুলে দেয়া। সেরকম পারিবারিক পরিবেশে বড় হতে থাকলে একটা সময় পর তার নিজেরাই খুঁজে নিতে পারবে সত্যের উৎস। আমি ভাগ্যবান, আমার বাবা-মা এই কাজটি খুব সুন্দর ভাবে করেছেন। এটা যে কাজে দেয় তা আমাদের ভাই-বোনদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি।

লেখার শেষে নিজের নামটা লিখে দিও বাছা ...

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

পরাগ জাফর সিদ্দিক এর ছবি

নিজের নাম লিখতে ভুলে গেছি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

... ... ... আমার জন্মও কিন্তু ৭৫-৯০ এর সেই জল্পাই সবুজ আঁধারের শেষ দিকে... আমাদের ছোটকালে এখনকার মত এত্ত এত্ত বই পাওয়া যেত না... সবেধন নীলমণি ছিল ডঃ মোহাম্মদ হান্নানের একটা বই... আর অসাধারণ বাবা-মা... বাসায় স্বাধীন বাংলা বেতারের গানগুলোর ক্যাসেট ছিল... ছিল ৭ মার্চের ভাষণের ক্যাসেট... সেই সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শী বাবা-চাচা... ... ... ...

... ... ... আমি ভাগ্যবান যে পাঠ্যবই পড়ে আমাকে ইতিহাস জানতে হয় নি... ... নতুন প্রজন্মের বাবা-মা যারা হবেন তারা অনেক সৌভাগ্যবান... তাদের হাতে অনেক ডকুমেন্টস থাকবে... একটাই অনুরোধ বাচ্চাদেরকে আমাদের চেয়েও সৌভাগ্যবান করে গরে তুলুন... আমাদের বাবা-মা দের হাতে অনেক অজুহাত ছিল (তথ্যের অপ্রাপ্যতা/অস্পষ্টতা সংক্রান্ত, যদিও আমার বাবা-মা সে অজুহাতের আশ্রয় নেন নি)... আপনাদের হাতে কিন্তু তেমন কোন অজুহাত নেই (ভাগ্যিস দেঁতো হাসি )

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আরও একটু যোগ করি,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবন শুরু করতেই শিবিরের মগজ-হামলার শিকার আমিও... কই আমি তো সে হামলায় লুটিয়ে পড়িনি... শক্তি ছিল আশৈশব জেনে আসা ইতিহাস... ...

হিপ্নোটাইজ করা হতে পারে জানা থাকলে সম্ভবত সে মানুষকে হিপ্নোটাইজ করা যায় না... আপনার সন্তানকে ছোট থেকেই শিখিয়ে দিন এন্টি-হিপ্নোটিক মন্ত্রাবলী ...

iftekhar এর ছবি

বলা হয়ে থাকে, শিক্ষার হার বেড়েছে; বেড়েছে জীবনমান-আয় উন্নতি। ১।ধনী গরীবের ব্যবধান অনেক বেড়েছে। ২।অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত জনগষ্ঠির শিক্ষার মান/সচেতনতার ব্যবধান অনেক বেশী বেড়েছে -আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগষ্ঠির তুলনায়। এই গরীব-অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত জনগষ্ঠিকে (যারা সংখ্যাগরিষ্ট) কিছু সাহায্য করে দলে টেনে ভুল বুঝিয়ে সংখ্যালগিষ্ট শিক্ষিত মধ্যবিত্ত(যারা সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে/ভোগ করে)-এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা খুবই সহজ(হতে পারে তা ধর্মের নামে)। তাই হচ্ছে। শাহাবাগের সচেতন জনগণ/তথা সমাজ/তথা সরকার, মহাপ্রলয় ঠেকাতে চাইলে; এখনও সময় আছে-গরীব/অশিক্ষিত/স্বল্পশিক্ষিত জনগষ্ঠির পাশে দাড়ান।-নির্বাক

অতিথি লেখক এর ছবি

"যে যার গল্পের নায়ক" হয়ে ওঠার প্রবণতা আমাদের সঠিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। নিরপেক্ষ বিবেচনাবোধ এবং প্রজন্মের প্রতি দ্বায়বদ্ধতার বড় অভাব এখানে।
জানিনা এই অমানিশার শেষ কোথায় !

বিজন কথক

রিপন মজুমদার এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে জামাত-শিবির আমার খুবই অপছন্দের

ডিসক্লেইমারটির দরকার ছিল কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

নিষিদ্ধ করা সহজ হবে না জানি, জানি আমাদের এই দাবী নিয়ে পর্দার আড়ালে অনেক ঘুঁটি চালাচালি হচ্ছে। কিন্তু দাবী আমরা করবোই। এবং এখন নয় তো কখনোই নয়।

ইতিহাস পাল্টাবেই। এ দেশে ঘটে এক মজার ঘটনা। বিজয়ীর পাশাপাশি বিজিতেরাও ইতিহাস লিখে। গোলাম আযম হয়ে যায় ভাষা সৈনিক, জিয়াউর রহমান হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা প্রদানকারী, শেখ মুজিব হয়ে যান বাকশালী নেতা।

চলুক এভাবেই। আমার মগজ ধোলাই হয় নি। আরো অনেকের হয় নি। যাদের হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে শুধু ইতিহাসের দোহাই দিয়ে তাদের ব্যাক্তিগত দোষ আড়াল করা হচ্ছে কিছুটা হলেও আমি মনে করি।

সামি

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস পড়ার সময় সাধারন জ্ঞান কাজে লাগালেই সঠিক ইতিহাস জানা সম্ভব।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন - তাহলে তিনি কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা দিতে পারে ?
বিষয়টি আমার কাছে মনে হয় এরকম-
‘‘একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যদি বলেন - আমি পুরো জেলার উন্নয়ন কাজ করছি “
রশিক রশীদ

রিপন মজুমদার এর ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন

সেক্টর নাম্বারটা বলতে পারেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।