চোয়ালের হাড্ডির নাম 'মাক্সিলা'

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৪/২০১৩ - ২:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সীমাহীন শান্ত ও ধৈর্য সম্পন্ন মানুষের দেশ বাংলাদেশ। পেটে ভাত নাই, পরনে কাপড় নাই- কিন্তু হৃদয়টা এত কোমল যে পাশের একটা মানুষের কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারি না। বাংলাদেশের মানুষের এত অসীম সহনশক্তি, যে বার বার এক জাতীয় খচ্চরদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনি, প্রতিবার আশায় বুক বাধি- হয়ত এইবার তাদের ঘুম ভাঙবে, তারা গরিব মানুষের মূল্যায়ন করতে শিখবে। তারা আগের বারের রেকর্ড ভেঙ্গে তারা বৃহত্তর খচ্চর হয়, আর দাঁতে দাঁত পিষে বসে থাকে মানুষ, সহ্য করার শেষ সীমা দেখে নিয়েও শেষ টানি না।

স্রেফ কিছু মানুষের খামখেয়ালীপনা আর বিলাসীতার কারণে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটি কতবার রক্তে রেঙ্গেছে? কই আছে এই মৃত মানুষরা ? কেমন আছে ? ১৯৭১ এর পাইকারী হনন, ৭৫ এর মনন্তর, আর তারপর থেকে টুকরো টুকরো এই হত্যাকান্ডগুলো- যাদের মৃত্যু খুব অসময়ে এসে গেছে। অকল্পনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে এই মানুষগুলোকে জীবন থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।

যারা আজ আমার লেখাটা পড়ছেন- একটা মুহুর্তের জন্য পড়া থামিয়ে চোখটা বন্ধ করে ভাবুন! যদি উপলব্ধির চেতনা থেকে থাকে, তাহলে সেই সব মানুষদের জায়গায় নিজেদের রেখে একবার ভাবুন! বেয়নেটের আঘাতে পেটের নাড়িভুড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হতে দেখতে দেখতে মরছেন, কিম্বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর টানে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে বালি, সুরকি, ইট, আগুন - এদের চাপে মরে যাচ্ছেন ! শেষ যাত্রায় এই দুর্ভাগা মানুষদের হয়ে উপলব্ধি করতে পারছেন- শান্তি, তৃপ্তি নিয়ে কলেমা পড়তে পড়তে কয়টা মানুষ দেহত্যাগ করেছে? যেখানে থাকুক, তারা ভালো থাকুক। দোআ করি, অনেক ভালো থাকুক। কিন্তু, অন্যায়ের বিচার না পাওয়া এইসব মানুষগুলোর আত্মা কি শান্তিতে আছে? আমার মনে হয়, এরা স্তব্ধ, স্থির হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার দিকে, আমাদের দিকে। ওই নীরব ভাষার চাউনির শুধু আকুতি একটাই- বিচার চাই।

আমার ভাবনা চিন্তার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। আমি মাথার ভিতরে বারুদের গোলা নিয়ে বসে আছি। একটার পর একটা ভয়াবহ সময় আসছে, আর দেখে যাচ্ছি। যদি পারতাম, একটা একটা করে এই বিলাসভোগী নেড়ি কুকুরেদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করতে চাইতাম- তোরা বৃটিশ ঔপনিবেশিকদের মত কত জনম ধরে বিলাস-প্রমোদে আছিস, যে নিজের মানুষদের আর চিনিস না? কত জনম ধরে সোনার চামচ মুখে নিয়ে বেঁচে আছিস যে কষ্টে খেটে খাওয়া মানুষদের মানুষ মনে হয়না? কত জনমের জরা আর মৃত্যুর রক্ষাকবচ নিয়ে ঘুরিস, যে অন্য মানুষের মৃত্যুর পরোয়ানা নিজের হাত দিয়ে লিখিস? এত বড় সাহস! এত বড় স্পর্ধা!

আমি কাঁদি। সহ্য করতে না পেরে ল্যাপটপের স্ক্রিনের ছবি দেখতে দেখতে কান্দি। ডুকরে ডুকরে কাঁদি, ঘুমের ঘোরে কাঁদি। না জানি কতটা কষ্টে কাঁদে বিশ্বজিতের মা? কতটা ভার নিয়ে বড় হবে সাগর-রুনি আর তারেক মাসুদের সন্তান? কতটা যন্ত্রনায় কাতরায় আমার ভাইয়েরা, আমার বোনরা এনাম হাসপাতালের বেডে, মর্গে, সাভারের ধংসস্তুপের পাশে, বাংলার মাঠ, ঘাট প্রান্তরে? এত লাশ রাখার জায়গা আছে? এত অশ্রু রাখব কোথায়?

বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের অনেক টুর্নামেন্টের চরম উত্তেজনার মুহুর্তে আমার মা সেজদায় এই সোনার সন্তারদের সাফল্য কামনা করে মোনাজাত ধরে, আবার সাভারের হতভাগ্য মানুষদের জন্য রহমত কামনায় জায়নামাজে কাঁদে। মহান প্রতিপালকের ইচ্ছা হয়, তিনি মমতামাখা মায়ের প্রার্থনা নেন অথবা নেন না।

আমার প্রিয় বাংলাদেশের মানুষরা, আপনারা কি বুঝতে পারছেন, খুব শীঘ্র যদি আমরা কিছু না করি- আমাদের মাথার উপর থেকে বাংলা মায়ের সম্ভ্রম আর সন্মান থেকে আমরা চিরতরে বঞ্চিত হয়ে যাব? বাংলাদেশের উঠানে উঠানে লাশের কবর হবে, গণকবর হবে, এরপর আর কবর হবে না, কবর দেয়ার মানুষ থাকবে না। মায়ের জন্য আমরা কাঁদব না, মা সন্তানদের লাশ বুকে নিয়ে হয়ে যাবে নিথর।

বাংলাদেশের পাট শিল্প, চিংড়ি রপ্তানির মত ঘোর বিপদ যদি পোশাকখাতে আসে- এই দেশটা পিছিয়ে যাবে আরো অনেক বছর। দিনমজুর শ্রেনীর মানুষদের নিয়ে চিন্তা করার শক্তি আমাদের সামনের কাতারের মানুষদের কারো নেই। ব্যাঙ্কের ব্যালান্স আর স্বাচ্ছন্দ জীবনযাপনের অভ্যাসে তারা মত্ত, মানবতার রক্তাক্ত ধর্ষিত ছায়া এদের কথার বুলিতেই ফুটে উঠে। আশার কথা, অপরদিকে আছে কোটি কোটি মানুষ, যারা মুহুর্তের মাঝে শাহবাগকে রূপ দিয়েছে মহাজাগরণের। যারা বিবেকের তাড়নায় স্থির হয়ে বসতে পারেনি সাভারের ধংসস্তুপের আশেপাশে। যে যা পারে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পরেছে মানুষদের উদ্ধার করার জন্য।

আমার একজন বন্ধু বলেন - প্রতিপালক সর্বত্রই বিরাজ করেন, বিশ্বের প্রতিটি গাছ, পশু, মানুষের মাঝে তিনি থাকেন। সাভারের মানুষের এই সীমাহীন পরীক্ষা তার কথার সত্যতা পেলাম। আবার এটাও ঠিক- তিনি তাদেরই সাহায্য করেন যিনি নিজেদেরকে সাহায্য করে।

সময় থাকতে জেগে উঠুন। কথা বলুন। গর্জে উঠুন। আমার ভাইরা, আমার বোনরা- আমরা কথা বলি না দেখেই যা না শোনার তাও শুনি। পিলার নাড়া খেয়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়ে সীমাহীন ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথাও চোখের জল ফেলতে ফেলতে হজম করি। বুলি কপচানো, স্তুতিবাক্য আওড়ানো মানুষদের উন্মোচন করতে একেবারেই কষ্ট হচ্ছেনা, নিজেরাই নিজেদের উদাম করে খেমটা দেখাচ্ছে। এদের চিনে রাখুন, ভদ্রতার খাতিরে চোখ নামাবেন না।ভালোমত শুনুন, বুঝুন। গভীরতা উপলব্ধির চেষ্টা করুন। প্রতিবাদ করুন, কথা বলুন। প্রতিবাদ না করলে আমরা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না, সময় খুব কম।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা শহরে সাভাররের এই রানা প্লাজার মত কম সংখ্যক ইমারত নেই। এই নিয়ে বিশদে নাই বা গেলাম। শুধু কথা হলো- কাল আপনার বাড়ির উপর আরেকটা বাড়ি ভেঙ্গে পরবে না এমন নিশ্চয়তা পেয়েছেন? ঠিকমত পেয়েছেন তো? আপনাকে উদ্ধার করতে কে কে আসবে, তাদের ঠিক করেছেন? তাদের কে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনে দিয়েছেন? সন্তান ও পরিবারের নাম ইন্সুরেন্স করেছেন? অথবা, সড়কে বেপরোয়া গাড়িতে চড়ে মারা পরবেন, নাকি রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে লীগ-দল-শিবির নামের মোহাচ্ছন্ন পিশাচদের হাতে কোপ খেয়ে মারা পরবেন, ভেবেছেন? কাজে গিয়ে মারা পরবেন? স্কুলে বাচ্চাটাকে আনতে গিয়ে ঠিকমত ফিরতে পারবেন?

মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার? পাগলের বুলির মত মনে হচ্ছে? হয়ত। ভেবে দেখুন, কোথায় আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি আছে? এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে হৃদয়বিদারক সম্ভাব্য মৃত্যুর কারণ কি কি ও কয়টার প্রতিকার হয়েছে? কয়েকদিন গলা ফেড়ে চিৎকার করে ভুক্তভোগী মানুষ, সরকারপ্রধান ও তার মুখপাত্ররা সহানুভূতি, প্রতিবাদ, কৌতুক ও স্পর্ধা মিশানো কিছু বুলি আওড়ায়, তারপর সব চলে যায় অন্ধকারে। মিডিয়ার লোকদের ডেকে ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে নিয়ে আরেকদফা অপদস্থকরণ চলে, যেটার নাম 'ক্ষতিপূরণ' ওরফে 'ফটোসেশন'.

সৃষ্টিকর্তার কারিগরী অনেক অনেক পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত। চোয়াল বা "jaw" এর হাড়ের নাম মাক্সিলা।এই হাড়টার ওজন অনেক কম, কারণ এতে অন্য হাড়ের তুলনায় মজ্জা নাই বললেই চলে। এই সুবিধার জন্য কিছু মুখচেনাতে ওস্তাদ মানুষজন খুব অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে ও তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। দু:খজনক ভাবে এটা অহরহ বাংলাদেশেই বেশি বেশি ঘটছে।ভোটের আগে এই হাড্ডির অনেক অপব্যবহার হয়। ক্ষমতায় আসার পর "আল্লাহর মাল তত্ত্ব" "বেডরুম তত্ত্ব", "পিলার তত্ত্ব" জাতীয় তত্ত্বগুলো গণমাধ্যমের সামনে ঘটে, কিছু ঘটে ক্লান্ত বাংলাদেশী মানুষদের রাতের খাবার হজম করার পর হজমি হিসেবে চ্যানেলে চ্যানেলে 'টক শো' তে, কিছু চলে সুশীতল হাওয়া ঘেরা দামী হোটেল-মোটেলের মিলনায়তনে।

এদের কথা বুঝুন, ভালো করে বুঝতে গেলে দেখবেন আমরা কিসের মাঝে আছি, এরা আমাদের নিয়ে কি চিন্তা করে এবং আমাদের ভবিষ্যত কোথায়! এইভাবে পাইকারী খুনের-হননের সংস্কৃতি চলতে থাকলে আমাদের সামনে ঘোর থেকে ঘোরতর দু:সময় আসছে।

জাগুন, বাংলাদেশী মানুষরা। অনর্থক এই চোয়াল ব্যবহারের জবাব আমাদেরকে চাইতে শুরু করতে হবে। নির্বাচনের আগে থেকে বলে আসা কথা শুরু করে এখন পর্যন্ত সব কথার ও কাজের জবাবদিহি চাইতে শুরু করতে হবে, নয়তো এই পরিনাম ভুগতে হবে আমাদেরই। আজ হাজার পাঁচেক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা চললো , ভেবে দেখুন আমাদের ১৫ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি চলছে বহুবছর। মাক্সিলার অপব্যবহার করে আসতে থাকা মানুষদের মুখের কথা আর মগজের চিন্তার সামঞ্জস্য ধরতে বেশি বুদ্ধি খাটাতে প্রয়োজন হয় না। আপনার সামনে, আপনার পাশে, আপনার উপরে যে আছে- তাদের চিনুন, বুঝুন। যাচ্ছেতাই করার কোনো ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি, প্রয়োজনে যার যার মাক্সিলা মুঠোহাত লাগিয়ে খুলে তাদেরকে উপহার দেয়ার ক্ষমতা জনগনের আছে। অসৎপথে কামানো সব বিত্ত ওই চোয়াল জোড়া দেয়ার কাজে লাগুক, নাহয় বিদেশী নামী চিকিৎসকদের উপরে একটু বেশি চাপ পরে যাবে। তাদের জন্য ভাববেন না, এখন নিজের কথা ভাবুন। নিজের মানুষদের কথা ভাবুন, আশেপাশের মানুষদের কথা ভাবুন, শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববেন না।

মানবতার জয় হোক।

-সন্ধ্যাতারা


মন্তব্য

তানজিম এর ছবি

চোয়ালের হাঁড়ের নাম ম্যান্ডিবল। ঠিক করে দিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওইটা উপরের চোয়াল।
ম্যান্ডিবল নিচের টা।

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

জাগুন, বাংলাদেশী মানুষরা। অনর্থক এই চোয়াল ব্যবহারের জবাব আমাদেরকে চাইতে শুরু করতে হবে। নির্বাচনের আগে থেকে বলে আসা কথা শুরু করে এখন পর্যন্ত সব কথার ও কাজের জবাবদিহি চাইতে শুরু করতে হবে, নয়তো এই পরিনাম ভুগতে হবে আমাদেরই।

সহমত....

সুবোধ অবোধ

নৈর্ব্যক্তিক এর ছবি

ম্যান্ডিবল বলতে চেয়েছেন বোধহয়।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ওরাল ক্যাভিটির ওপরের অংশ কি চোয়াল?

সৃষ্টিকর্তার কারিগরী অনেক অনেক পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত। চোয়াল বা "jaw" এর হাড়ের নাম মাক্সিলা।এই হাড়টার ওজন অনেক কম, কারণ এতে অন্য হাড়ের তুলনায় মজ্জা নাই বললেই চলে। এই সুবিধার জন্য কিছু মুখচেনাতে ওস্তাদ মানুষজন খুব অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ করে ও তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। দু:খজনক ভাবে এটা অহরহ বাংলাদেশেই বেশি বেশি ঘটছে।ভোটের আগে এই হাড্ডির অনেক অপব্যবহার হয়। ক্ষমতায় আসার পর "আল্লাহর মাল তত্ত্ব" "বেডরুম তত্ত্ব", "পিলার তত্ত্ব" জাতীয় তত্ত্বগুলো গণমাধ্যমের সামনে ঘটে, কিছু ঘটে ক্লান্ত বাংলাদেশী মানুষদের রাতের খাবার হজম করার পর হজমি হিসেবে চ্যানেলে চ্যানেলে 'টক শো' তে, কিছু চলে সুশীতল হাওয়া ঘেরা দামী হোটেল-মোটেলের মিলনায়তনে।

চমৎকার বলেছেন ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ম্যাক্সিলা কে Upper Jaw বলে তাই বলা।

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক কিছু বলার নাই আসলে...

তালেব মাষ্টার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।