প্রথম আলোর জনমত জরিপঃ জামাতের ‘অভিনব’ রক্ষাকবচ...?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৯/০৫/২০১৩ - ১:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় ৯০% মানুষ।’

মে’র ১১ তারিখে এই শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন সপ্তাহজুড়ে ছিলো আলোচনা-সমালোচনা-সন্দেহের বিষয়। যাঁরা লেখাটি পড়ছেন, আমি ধরে নিচ্ছি- ওটি তাঁরা দেখেছেন; জরিপ পরিচালনাকারি সংস্থার নাম জানেন। উপসম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের ভূমিকাও নিশ্চয়ই দেখেছেন সকলে। ৩০০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে; ১৫১২ জন পুরুষ, ১৪৮৮ নারী। এঁদের মোট ৯ টি প্রশ্ন করা হয়েছে।

সাজ্জাদ শরিফের ভূমিকার কিছু বাক্য নজর কাড়ে; প্রসঙ্গক্রমে সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।


আগে একটি লিঙ্ক দিয়ে নিতে চাই-
http://www.prothom-alo.com/imagefiles/Opinion_Poll_April_2013.pdf
১১ তারিখের অনলাইন সংস্করণে মূল প্রতিবেদনের পাশাপাশি এই পিডিএফটিও দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সম্ভবত পরদিন এই লিঙ্কটি অপসারণ করা হয়। পিডিএফ’এর শিরোনাম ‘Opinion Survey on Current National Issues’. ওআরজি-কোয়েস্ট এর পূর্ণাঙ্গ জরিপ রিপোর্ট এটি, যা প্রথম আলোর কাছে পরে পেশ করা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের ৪৪.৮% গৃহিণী, ১৫.৪% কৃষক, ১১.৪% পেশাদার-অপেশাদার শ্রমিক। এই পরিসংখ্যান তাৎপর্যপূর্ণ; জরিপের উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বুঝতে এটি সহায়ক হবে।


জরিপানুসারে, অংশগ্রহণকারীদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি (৭৮.৯% থেকে ৮১% পর্যন্ত), দেশের বর্তমান সময় খারাপ/খুব খারাপ বলে মত দিয়েছেন; ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি’ সরকার যথাযথভাবে সামাল দিতে পারেনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রায় পরবর্তী পরিস্থিতি সরকার মোকাবেলা করতে পারেনি বলে তাঁরা মনে করেছেন।
‘বিদ্যমান পরিস্থিতি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এটা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। শব্দদ্বয় ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যকার রাজনীতিক অস্থিরতা-সহিংসতা-আন্দোলন ইত্যাদিকে নির্দেশ করতে পারে, কিংবা শব্দদ্বয় আক্ষরিকার্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। এখন ১১০০’র বেশি গ্রামীণ গৃহিণী, প্রায় ৪০০ শ্রমিক ও ৪৬২ কৃষকের সকলেই (এবং অন্যান্যরা) যদি আমাদের রপ্তানি-আমদানি-পোশাকশিল্পের পরিস্থিতি-সামাজিক পরিস্থিতি-কৃষি-উৎপাদন-পদ্মাসেতু-হলমার্ক-দুর্নীতি-অর্থনীতি-শিক্ষানীতি-অবকাঠামো ইত্যাদির নাড়ি-নক্ষত্র জানেন এবং ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি’ বলতে বোঝানো হয় এসবকিছু, তাহলে অন্য কথা। জানলে সেটা খুবই ভালো সংবাদ; টেলিভিশন-পত্রিকা-সরকারি প্রচার এবং ‘গুজব’এর যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে বলতে হবে; দেশের পরিস্থিতি বিষয়ক এই তিনটি প্রশ্নের ‘জানি না/নিশ্চিত নই’ উত্তরদাতারা ২.৯% এর বেশি নয়। কিন্তু যদি বিষয়টি সেরকম না হয়, তাহলে জরিপ সংস্থার পেশাদারিত্ব/ দক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠবে। কীভাবে?

আমরা জানি যে, গত দুই-তিন মাসের রাজনীতিক অস্থিরতা-সহিংসতা প্রধানত যুদ্ধাপরাধের রায়- বিশেষত কাদের মোল্লা ও দেইল্লা রাজাকারের রায়- কে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। এমনকি গত নভেম্বরের আগেও এমন সহিংসতা দেখা যায়নি। এ দুই মাসে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় দেশব্যাপী উন্মাদনা ঘটে গেছে; সবকিছু রায়কেন্দ্রিক। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিলের (জরিপে ৯ এপ্রিলের পরবর্তী ঘটনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি) ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি’ নিশ্চয়ই রায়পরবর্তী রাজনীতিক অস্থিরতা-সহিংসতা-আন্দোলন-প্রতিআন্দোলন।

সেক্ষেত্রে ৩ নম্বর প্রশ্নটি- যে যুদ্ধাপরাধের রায়পরবর্তী পরিস্থিতি সরকার মোকাবেলা করতে পেরেছে কি-না- ২ নম্বর প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি নয় কি? জরিপের প্রতিটি প্রশ্ন স্পর্শকাতর/সিরিয়াস; সেখানে এই ধরনের অপেশাদারিত্ব যে জাতির বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে, এটা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?


এই কৌশলি জরিপের প্রাণ ৪ এবং ৫ নম্বর প্রশ্নদুটি।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের অভূতপূর্ব গণজমায়েত সমর্থন করেন না ৫৭.৫% মানুষ। (আপনি পিডিএফটিতে দেখবেন, ‘Issues covered’ এ প্রথমেই রয়েছে শাহবাগ আন্দোলনের প্রসঙ্গ, সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গ তিন নম্বরে।) অর্থাৎ ১৭২৫ জন। সমস্যা হলো, এই আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানেন না অংশগ্রহণকারীর ১৬.৭% , অর্থাৎ ৫০১ জন। আর জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত কি উচিত না, এ প্রশ্নে ৬৪.৮% শতাংশ মানুষ জামাতের পক্ষে বলছেন। এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না মাত্র ৫.৫%।

আমরা জরিপে দেখলাম, ২৯০০ এরও বেশি মানুষ দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন; গ্রামের সরলতম গৃহবধুটিও জানেন, দেশে কোন মাত্রার মহাসেন বয়ে গেছে গত দু-তিন মাসে। এমনকি আওয়ামিলিগ-জাতীয় পার্টি ইস্যুতেও তাঁরা খবর রাখেন (এ প্রসঙ্গে পরে আসছি)। টেলিভিশন-পত্রিকা-অনলাইন-প্রচার-গুজব ইত্যাদি সূত্রে তাঁরা এতোকিছু জেনেছেন (এর বাইরে আর কোন উপায়ে এতো কিছু জানতে পারেন গ্রামের কৃষক-নারী, কেউ সেই রহস্য উদ্ঘাটন করে থাকলে আমাকে অবহিত করবেন)। তাহলে কি ওই ৫০১ জন মানুষ অন্তত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকা-টিভি-রেডিও ইত্যাদি দেখা-শোনা বন্ধ রেখেছিলেন? গুজব ও মুখের কথার কি এসময়ে বাতাসে ভাসা স্থগিত ছিলো? মানুষ কি ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে বিছানায় পড়ে ছিলো ১৬ দিন? দেশের ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি’ কারা-কেনো তৈরি করলো, কোন বিশেষ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এমন খুনোখুনি হয়ে গেলো, কেনো শহীদ মিনারে হামলা হলো, বায়তুল মুকাররমে কারা-কেনো অগ্নিসংযোগ করলো, পুলিশ মারলো কারা- এর কিছুই তাঁরা জানেন না? জামাত নিষিদ্ধের ডাক এলো যেখান থেকে- সেই আন্দোলন সম্পর্কে জানেন না ৫০১ জন, আর জামাত নিষিদ্ধের দাবির কথা জানেন না মাত্র ১৬৫ জন। বাকি ৩৩৬ জন জামাত নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে জানলেন কোথা থেকে? আর যদি কিছুই জেনে না থাকেন, তাহলে অন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার মতো খবরাখবর তাঁরা পেলেন কোন কোন সূত্রে?

কারো যদি এই আন্দোলনের কভারেজ নিয়ে সন্দেহ থেকে থাকে বা ভুলে যান এর মধ্যেই, অন্তত ৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির জাতীয়-স্থানীয় দৈনিকগুলো একটু খুঁজে বের করে নিবেন (আমার দেশ সহ)। দেখবেন।


বিএনপি-জামাত জোট থাকার ঔচিত্যের প্রশ্নে এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের অনেকেই একটু রক্ষণাত্মক ভূমিকা নেন। জামাতের সন্ত্রাসের কথা স্মরণে রেখে (জরিপের মুখবন্ধে ‘জামায়াতে ইসলামি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতায়’ এভাবে বলা আছে) সাধারণ মানুষেরাও ভাবতে পারেন যে, নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে এই দল হয়তো ‘আরো বেপরোয়া’ হয়ে উঠতে পারে (বেপরোয়ামির বাকিটা কী রেখেছে তারা, সেটাও জানার ইচ্ছা আমার)। রক্ষণশীলতার কারণে হয়তো অনেকেই চান না যে, এই অস্থির সময়ে বিএনপি-জামাত জোট ভেঙ্গে যাক এবং নতুন কোনো ‘পরিস্থিতি’র উদ্ভব হোক।

কেউ আমাকে জানাবেন কি, জাতীয় পার্টি কী এমন ‘পাপ’ বা ‘পুণ্য’ সংঘটিত করেছে গত কয়েকমাসে যে, বাঙালি তাকে মহাজোট থেকে তাড়ানোর চিন্তায় চুল পাকিয়ে ফেলেছে? ৭ নম্বর প্রশ্নটি আসলে জরিপটিকে হাস্যকর করে তুলেছে। বিএনপি-জামাত জোট বহালের পক্ষে ৩৬%, অথচ আওয়ামি-জাতীয় পার্টি জোটের পক্ষে ২৬%! কিছক্ষণের জন্য ভুলে যান ‘বিশ্ববেহায়া’, ‘চিনি’দের দল এটা; গত দুই মাসে জাতীয় পার্টি সম্পর্কে জরিপের এই গৃহিণীরা, শ্রমিকেরা, কৃষকেরা কী এমন তথ্য উদ্ঘাটন করলেন? দুর্নীতির তথ্য? কেলেঙ্কারি? লুটপাট? গোপন চুক্তি?

নাকি আওয়ামিলিগ এতোই নষ্টভ্রষ্ট যে, এদের সংস্রব-সঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে জাতীয় পার্টিকে? আওয়মিলিগের ‘নাস্তিক’দের সংস্পর্শে কি সিফিলিস হতে পারে? নাকি জাতীয় পার্টি এখন উপদ্রব, যাকে পরিত্যাগের মাধ্যমে আওয়ামিলিগ স্বাবলম্বি হয়ে উঠবে?

জাতীয় পার্টি গত কয়েকমাসে যদি শিরোনাম হয়ে থাকে, তবে সেটা শাহবাগের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট ধর্মীয় ভন্ডামোতে সময়ে সময়ে গলা মেলানোর এবং ‘হেফাজতে ইসলামি’র সমাবেশে প্রকাশ্য সমর্থন, মানি-পানি-বিরিয়ানি বিতরণের কারণে। তাহলে বিএনপি’র জামাত-সংস্রব এড়ানোর প্রসঙ্গে কেনো এহেন ‘ঔদার্য’? দেশে কি বিএনপি হিতৈষি একজনও নেই, যারা এই দলটির স্বাবলম্বি হবার ব্যাপারে চিন্তা করেছেন?

আরেকটি কথা। সাম্প্রতিককালে জাতীয় পার্টির গোপনতম সংবাদ রেখেছেন ৮৮.৯% মানুষ। আর শাহবাগ সম্পর্কে জানেন না ১৫% এর বেশি। আবার, বিএনপি-জামাতের জোটের প্রশ্নে ‘না’ বলেছেন ৫১.৩%, কিন্তু এই প্রশ্নের উত্থান যেখান থেকে-সেই মঞ্চের বিষয়ে ‘না’ বলেছেন ৫৭%। এগুলো মিলাবো কীভাবে??


দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেনাহস্তক্ষেপের প্রসঙ্গে মত দিয়েছেন জনগণ। কোনো মন্তব্য না করাই ভালো হবে। এই ইস্যুতে দেশের মানুষ সবসময় একধরনের সংশয়, ভীতি, আশঙ্কায় ভুগেন। জরিপের ফলাফল সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান ৯০% মানুষ। এই বিষয়েও কোনো মন্তব্য নেই। শুধু একটা কথা- নির্বাচিত প্রতিনিধিসম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রসঙ্গে জরিপ-প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ উদাসীন; এর উল্লেখ জরিপে নেই কোথাও। কেনো, তাঁরাই বলতে পারবেন।

সবশেষে খুব জরুরি একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। জরিপের পটভূমিতে সাজ্জাদ শরিফ প্রথম লাইনটি লিখেছে, ‘‘নানা দাবিতে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর মুহুর্মুহু হরতাল ও অবরোধ এবং বিভিন্ন পক্ষের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় গত কয়েক মাসে দেশে প্রবল অস্থিরতা ও সংশয় ছড়িয়ে পড়ে।” তাহলে গত কয়েকমাসের হিংসাত্মক হরতাল প্রসঙ্গে জনমত গ্রহণ করা হয়নি কেনো? কেনো?

হেফাজতের ১৩ দফার সমর্থন/বিরোধিতা ও ৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে কোনো জনমত গ্রহণ করা হয়নি কেনো?? জনসাধারণ তো সাম্প্রতিক পরিস্থিতি-ঘটনাপ্রবাহ ভালোই অনুসরণ করেন জরিপানুসারে, তাহলে এসব বিষয়ে- বিশেষত হরতালের সহিংসতা প্রসঙ্গে- কেনো নির্লিপ্তি প্রথম আলোর?


দেশ এখন অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। নির্বাচন অনিশ্চিত, আলোচনা অনিশ্চিত, যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সহিংসতার আশংকা রয়েছে। একদিকে জাগরণ মঞ্চ, অন্যদিকে জামাত-শিবির-হেফাজত-বিএনপি। রয়েছে গুপ্তশক্তির হস্তক্ষেপের শঙ্কা। সামাজিক পরিস্থিতি প্রতিকূল। একটার পর একটা দূর্ঘটনা-দুর্যোগ আসে-যায়। এহেন সময়ে এধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জরিপ সেই পক্ষটিকেই উস্কানি দিবে, যারা বাঙলাদেশেরই আইডেনটিটি হুমকির মুখে ঠেলে দিতে সচেষ্ট।
জাতীয় পার্টি ও জামাত-বিএনপি জোটকেন্দ্রিক প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে একটা উস্কানি দিয়ে রাখা হলো- তারা যেনো মহাজোট ত্যাগ করে আসে এবং ১৮ দলের সাথে জোটভুক্ত হয়। তাদের ভোটব্যাংক গতবারের মতোই এবারো দুপক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি’র জন্য এর গুরুত্ব আরো বেশি, কেননা জামাতের ভোটব্যাংকের উপর এইবার আর নির্ভর করা নাও যেতে পারে। আর নির্বাচনে জামাত-বিএনপি’র জয় নানা কারণেই ‘নানাজনের’ কাঙ্ক্ষিত।

প্রথম আলো শুরু থেকেই কেবল একটি ‘সংবাদপত্র’ থাকেনি; এটি যতটা না পত্রিকা, তার চাইতে বেশি এনজিও/কর্পোরেশন। পত্রিকার সীমালঙ্ঘন করে এটি হাত দিয়েছে এমন সব কর্মকাণ্ডে, যাতে এর পরিচয় সম্পর্কে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সাধারণের মনে, আর সন্দেহ তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের মানুষের। এবং এর সাথে আন্তর্জাতিক স্বার্থ জড়িত, এটা আমরা জানি (একজন আমেরিকায় গলায় মেডেল ঝুলিয়ে বসে আছেন কবে থেকেই!)। অনেকদিন ধরেই এ দেশে বিশেষ কিছু ব্যক্তি ও শক্তিকে-যাদের পরিচয় করানোর চেষ্টা চলছে ‘নিরপেক্ষ’ তৃতীয়শক্তি হিশেবে- রাজনীতির প্রতিপক্ষ হিশেবে দাঁড়া করানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে; এক এগারোতে সেই চেষ্টা আরেকটু হলেই সাফল্যের মুখ দেখছিলো। ওই চেষ্টা এখনো থেমে নেই।

সেজন্য বৈশ্বিক পুঁজিবাদের ধারক-বাহক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্পেস তৈরি করে দেয়ার একটা ব্যপার রয়েছে। এবং বাঙলাদেশে কর্পোরেট জগতে জামাতের প্রতাপ-প্রভাব-আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সবাই জানেন। সুতরাং ওই ধরনের চিন্তা-ভাবনা যাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন, তাদের জামাতের এই কর্পোরেটশক্তির সাথে সখ্য গড়ে তুলতে ও তাদের ইস্পাতদৃঢ় ভিত্তিকে ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। ফলে জামাতে ইসলামিকে রক্ষা করবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করাই বাঞ্ছনীয়। এবং এই কাজটি প্রথম আলো ন্যাক্কারজনকভাবে করার চেষ্টা চালিয়েছে এই জরিপে। দেশের পরিস্থিতির চাইতে জামাতকে আশ্রয় তৈরির ভিত্তি গড়ে দেয়ার মাথাব্যথাই মুখ্য। জরিপে রাজনীতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খুব সহানুভূতি দেখানো হয়নি, নয়তো বিএনপি নেতাদের গণগ্রেপ্তার, পার্টিঅফিসে পুলিশি অভিযান সম্পর্কে জনমত নেয়া হতো, নিয়ে থাকলে প্রকাশ করা হতো।

জামাতের শক্তির উৎস মোটাদাগে দু-ধরনের- ধর্মীয় উস্কানি/অপব্যাখ্যা/ভীতি/ট্যাবু এবং জামাতি কর্পোরেশনগুলোর শক্ত আর্থিক/প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি। প্রথম আলোর স্বার্থের ও এর ব্লাডি সম্পাদকের আদর্শের সাথে সম্পর্কিত দ্বিতীয়টি; এবং যেহেতু প্রজন্ম চত্বরের অভুতপূর্ব গণজাগরণ জামাতকে কোণায় ঠেলে দিয়েছে, তাই কখনো গল্প ছাপিয়ে, কখনো ‘নিরপেক্ষ’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সর্বশেষ এই ম্যানিপুলেটেড জরিপ ছাপিয়ে- অশ্লীলভাবে জামাতকে জায়গা তৈরি করে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর সাথে রয়েছে অনলাইন-অফলাইনে ক্রমাগত মিথ্যাচার। ফলে জামাত গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারুক বা না পারুক , জাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে সংশয়-সন্দেহ-বিরক্তি উদ্রেক হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। একই সাথে আওয়ামিলিগকে হেয় প্রতিপন্ন করে রক্ষণশীল শক্তিগুলোর (যারা ‘দেশের ৯০% মুসলমান’ বলে সারাক্ষণ চিৎকার করতে থাকে) পক্ষে সহানুভূতি জাগ্রত করাও তাদের জন্য আবশ্যক। ফলে অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাজে হাত দিয়েছে পত্রিকার ‘মতিভ্রষ্ট’ সম্পাদক এবং নিশ্চয়ই আরো ‘চমক’ আসছে সামনে।

বাঙালি, সতর্ক হও। খেয়াল করে......

(অ্যাগনেস)


মন্তব্য

সাইদ এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার কী মত--মানুষ তত্তাবধায়ক সরকার চায় না চায় না?

তানিম এহসান এর ছবি

প্রথম আলোর পুরাই সর্বশেষ আঁধার এর ভূমিকা নিয়ে নিয়েছে, প্রথম আলো পড়া বাদ দিসি হাই এর লেখা ছাপা হওয়ার পর।

জামাতের পারপাস সার্ভ করবে সব বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট, স্বাভাবিক, ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেলে ফেরার পথ থাকেনা। আমরা ব্যক্তিগত জায়গা থেকে কতটা করতে পারছি সেটাই ধর্তব্য হওয়া উচিত। সমস্যা নাই, বাঙালী বেকুব না, যতই চিৎকার করুক জামাত তার কাছে জামাত-ই, জামাত-শিবির তার কাছে ধোয়া তুলসী পাতা কোনদিন-ই হবে না।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

ভাই অবস্থা খুব ভালো না। টাকার প্রশ্নে অনেকেই জামাতের কাছে জিম্মি।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

লেখাটা ভালো হয়েছে। মতিভ্রষ্টর কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। তবে কিনা জামাত এসব ব্যাপারে খুব উদারহস্ত আর প্রথম আলো তো আর সমাচার দর্পণ বা বঙ্গদর্শন নয়। এদের কাছে কর্পোরেট বাণিজ্যই সার কথা। শুধু গৃহিনী নয়, মনে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হওয়া নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে ৩০টি আসনে জিতে বি,এন,পি সংসদে না গিয়ে জনগণের টাকায় বেতন ভাতা নিয়ে গলাবাজি ও রাজাকারদের রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে- এ জরিপ সেই আসনগুলোর গৃহিনী, কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের গৃহিনীরা, আমাদের কৃষক ও শ্রমিক ভাইয়েরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধ ও গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে মত দিতে পারেন না। পুরোপুরি ফ্যব্রিকেটেড জরিপ, মালের গন্ধ পাঁউ!

ঘুমকুমার এর ছবি

চলুক

বাঙালি, সতর্ক হও। খেয়াল করে......

PaMaALe এর ছবি

সত্য কথা বলতে কি, দেশের মানুষ তত্বাবধায়ক সরকার চায় না। ক্লিওপেট্রা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী বললে যেমন পৃথিবীর অন্য সব নারীকে কদাকার বলা হয়না। তেমনি মানুষ তত্বাবধায়ক সরাকার চায় না- এ কথার মানে এ নয় যে মানুষ ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। মানুষ আসলে চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন। এক সময় মানুষ তত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের একটা ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহন করেছিল। কিন্তু বিচারকবৃন্দের বয়স কেলেংকারী, সেনাবাহিনীর উপর হস্তক্ষেপ কেলেংকারী, দলীয় প্রেসিডেন্টের তত্বাবধায়ক প্রধান হবার কেলেংকারী, তত্বাবধায়কের দাবীর আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার কেলেংকারী, তত্বাবধায়কের দাবীকারীগণ কর্তৃক গনজাগরণ মঞ্চের মত একটি জেনুইনভাবে যুদ্ধাপরাধীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দাবীকারী উদ্যোগকে নষ্ট সন্তানদের আড্ডা আখ্যায়িত করা- প্রভৃতি অনেক কারণে মানুষ আর তত্ববাধায়ক ব্যবস্থাকে আগের মতো সমর্থন করে না। মানুষ আসলে চায় এমন নির্বাচন ব্যবস্থা যেখানে তারা ভয়-ভীতি আর অন্য যে কোন প্রভাবের উর্ধ্বে থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং তাদের ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে।
তবে তত্বাবধায় ব্যবস্থা যেমন এমনিেএমনি আসেনি, তদ্রুপ, নিরপেক্ষ নির্বাচন সহায়ক আর একটি ব্যবস্থাও এমনি এমনি আসবে না। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কখনই এমনি এমনি তা প্রবর্তন করবে না। আসলে তারা তো কেউই নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। তারা চায় এমন নির্বাচন, যেটিতে সব সময় শুধু তাদের পার্টিই পাশ করবে। আমি মনে করি, নিরপেক্ষ নির্বাচন আনার জন্য গণজাগরণ মঞ্চ পর্যায়ক্রমে একটি বড় শক্তি হতে পারে। তাদের বর্তমান দাবীর ধারাবহিকতাতে ক্রমান্বয়ে সকল ন্যায্য গণদাবী অন্তর্ভূক্ত হবে। তার জন্যই এটি সরকারী এবং বিরোধী উভয়েরই রোষানলে পরে।
প্রথম আলো‘র ষড়যন্ত্র উন্মেচনকারী লেখার বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে ‘প্রকৃতি প্রেমিক‘ কর্তৃক তত্ববধায়ক সকরকার বিষয়টি উত্থাপন করায় উপরের মন্তব্যটুকু করার সুযোগ নিলাম। প্রথম আলোর সমালোচনার পাশাপাশি আসুন আমরা-
- নিজেরা প্রথমত এ পত্রিকার পড়া বন্ধ করি
- আন্তরিকভাবে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অন্যদের এ মতলববাজী পত্রিকা পড়তে নির্রৎসাহিত করি
- সবাই মিলে আলু পত্রিকার বিকল্প পত্রিকা দাঁড় করাতে সচেষ্ট থাকি

পামাআলে

অনিরুদ্ধ বুলবুল এর ছবি

ভাইরে - এ দেখছি এক মহাকাব্য রচনা করেছেন? বুঝতে পারি আপনার অনেক সময় আছে -
অন্যদেরও এত সময় আর ধৈর্য আছে তা ভাবলেন কী করে? উফ্ অসহ্য - ২ ঘন্টায় ও প্যাঁচালের
আগা-মাথা খুঁজে বের করতে পারলাম না।

আব্দুল্লাহ এ.এম এর ছবি

প্রথম আলোর শিশিরের কার্টুন আর বেসিক আলি ছাড়া আর কোন কিছুর প্রতি এখন আর কোন আকর্ষন নাই। শিশিরে কার্টুন অনেকদিন চোখে পড়ে না, বেসিক আলিও অন্য কোথাও চলে গেলে নতুন একটি টয়লেট পেপারের ব্যাবস্থা হয়ে যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেখা হাততালি

বয়াতি এর ছবি

লিখেছেন অনিরুদ্ধ বুলবুল:

ভাইরে - এ দেখছি এক মহাকাব্য রচনা করেছেন? বুঝতে পারি আপনার অনেক সময় আছে -
অন্যদেরও এত সময় আর ধৈর্য আছে তা ভাবলেন কী করে? উফ্ অসহ্য - ২ ঘন্টায় ও প্যাঁচালের
আগা-মাথা খুঁজে বের করতে পারলাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনিরুদ্ধ বুলবুলকে-
আপনার সময় না থাকতেই পারে, আপনি বুঝতে নাও পারেন; অন্য অনেকের সময় ও মাথা দুটোই আছে। লেখাটা তাদের জন্য।

Zahir Raihan এর ছবি

আপনার কী মত--মানুষ তত্তাবধায়ক সরকার চায় না চায় না?

নিরীহ মানুষ    এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।