বাংলাদেশের সরকার আসলে চালায় কে?: কিছু নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং আমলাতান্ত্রিক দুষ্টচক্র।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৬/২০১৩ - ১০:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখার শিরোনামের যে কথাটা সেটা কিন্তু আমাদের অনেকেরই মনে অনেক বার করেই আসে। দেশটা চালায় কে? সরকার, রাজনীতিবিদেরা নাকি পর্দার আড়ালে অন্য কেউ। এ নিয়ে মানুষের মনে জল্পনা-কল্পনার সবচেয়ে বড় আধার হয়েছে ১/১১'র সেনা সমর্থিত সরকারের সময় থেকে। যেহেতু তখন মোটামুটি ওপেন-সিক্রেট ভাবেই সরকারের ভরকেন্দ্র ছিল দুইটি। একটা সেনা সদর এবং অন্যটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। কিন্তু সে'তো অসাংবিধানিক, অভূতপূর্ব(!) সরকার। গনতান্ত্রিক সরকারের আমলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দেশের আম-জনতা একরকম চাচ্ছে, আর দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সাংসদরা চলছে উল্টো রথে। যেমন, আবুল হোসেনের পদত্যাগ চাইল দেশের আপামর জনগণ, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হলো কত মাস পর এবং কত জল ঘোলা করে (তা'ও তো তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে তাই, আমাদের মি. টেন পার্সেন্টের আম্মা ওরফে বেজি ক্ষমতায় থাকলে পার্টি ফান্ডের এত বড় যোগানদাতার কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতাও থাকতো না কারো।)! এর পিছনে কারণ টা কি? আমরা আম-জনতা কি দেশের রাজনীতিকদের থেকে বেশি বুঝি, নাকি দেশের রাজনীতিকেরা, মন্ত্রী, সাংসদেরা দেশকে নিয়ে ভাবেন না বা আমাদের মনের কথা পড়তে পারেন না। নাকি তারা আমলেই নেন না জনগণ কি চায়! স্বল্প পরিসরের জীবনে এমন অনেক ঘটনার'ই চাক্ষুস স্বাক্ষী হতে হয়েছে, যা দেখে একদিকে হয়েছি হতবাক অন্যদিকে কষ্টে হয়েছি বেদনার্ত। বাংলাদেশের মানুষেরা, সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণ কত আস্থা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ভূমিধস পরিমান ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানায়, ক্ষমতার ঝান্ডা হাতে তুলে দেয়; কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সেই নেতা-নেত্রীরা'ই এমন সব কর্মকান্ড করেন যে হতাশার গ্রাসে বন্দী হয় আমাদের বিবেক। এর থেকেই উদ্ভব হয় ক্ষোভ, আর জনগণ অধৈর্য হয়ে (আমার মতে অসহায় হয়ে) পরবর্তী নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসে সদ্য সমাপ্ত সংসদের বিরোধী দলকে। কিন্তু আমাদের এই বিপরীতমুখী ঐতিহ্যের পেছনে কারণ কি? দেশের আপামর জনগনের সাথে কথা বললে তো মনে হয় না যে তারা কিছুই বোঝেনা। আসলে আমরা বুঝি সবই, নেতা-নেত্রীরা'ও বোঝেন অনেক; কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনার ডিম খেয়ে ফেলে আমলাতন্ত্র নামক বাঘডাশে। আবার ক্ষমতার অন্তরালের কুশিলবেরা'ও অনেক কল-কাঠি নাড়েন, একদিকে নিজেদের আখের গুছানোর কারণে অন্যদিকে তাদের কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।

অভিজ্ঞতা-১

কিছুদিন আগে আমার পরিচিত মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে কথা হচ্ছিল। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও এই পরিবারের প্রতি জননেত্রীর অন্য রকম মমতা ভরা দৃষ্টি সবসময়ই ছিল। এর পেছনের কারণ হচ্ছে, জননেত্রী যখন দেশে প্রত্যাবর্তন করেন তখন এই পরিবারের দুই ভাই (যারা আবার সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের ভাই হন) নেত্রীকে আপন বোনের মত আগলে রেখেছিল ওনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে। যখন অনেক নেতা-নেত্রী'রা এখন বঙ্গবন্ধু কন্যার আশেপাশে নানা সুযোগ সুবিধার জন্য ঘোরাঘুরি করে, সেখানে এই দুই ভাই নেত্রীকে নিজেদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল সেই ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়ে কোনো কিছুর পরওয়া না করেই। কিন্তু সে হিসেবে এই পরিবারটি কোনদিন'ই বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকে কোনরকম অন্যায় সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নি। যেখানে সুধা সদনে এই পরিবারের সদস্যদের যাতায়াত ছিল নিয়মিত এবং জননেত্রীর সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছে। যাহোক কথা হচ্ছিল সেই পরিবারেরই এক কনিষ্ঠ সদস্যের সাথে, যার পড়াশোনার খরচ'ও চালান বঙ্গবন্ধু কন্যা। একদিন দেশ নিয়ে রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা হচ্ছিল তার সাথে। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনিতো মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং গণভবনেও আপনাদের পরিবারের যাতায়াত আছে- বলেনতো দেশটা আসলে চালাচ্ছে কে? তখন আমাকে ওনাদের পারিবারিক এক ঘটনার কথা বললেন, যা শুনে আক্ষরিক অর্থেই আমার চোয়াল ঝুলে পরেছিল! আমাকে যে ঘটনার কথা বলেছিলেন তার সারমর্ম কিছুটা এমন - ওনাদের বাড়ির এক অধ্যাপিকা বৌয়ের নাকি বরিশালের এক কলেজে অধ্যক্ষ হওয়ার কথা ডিউ প্রসেসেই। সেটা ছিল বিএনপি'র চারদলীয় জোট সরকারের আমলের কথা, কিন্তু যেহেতু তারা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী) আত্মীয় ছিলেন তাই সেই অধ্যাপিকার ডিউ প্রমোশন আটকে দেয়া হয়। যাহোক, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর'ও নাকি সেই অধ্যাপিকার প্রমোশন হচ্ছিল না! পরে এ বিষয়ে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি ওনার স্পেশাল এসিস্টেন্ট শাকিল ভাইকে বলে দিয়েছিলেন ব্যাপারটা দেখার জন্য। এখানে কোনো ফেভারের ব্যাপার ছিল না, শুধু একজন বঞ্চিত অধ্যাপিকা'র ডিউ প্রমোশনের ব্যাপার ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ থাকার পর'ও সেই অধ্যাপিকার অধ্যক্ষ হওয়া হয় নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের পর'ও কাজ হয় নি, তাই সেই পরিবার থেকে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে আর কোনরূপ তাগাদা দেয়া হয় নি উনি বিব্রত হবেন তা বিবেচনা করে।

এরপর একদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর এক পারিবারিক দাওয়াতে সেই পরিবারের কর্ত্রীও (মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর দূর-সম্পর্কের বোন) আমন্ত্রিত হওয়ায়, প্রধানমন্ত্রী সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা একসাথে খেতে বসেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য পারিবারিক কথার মাঝে নিজে থেকেই জানতে চেয়েছিলেন, সেই অধ্যাপিকার খবর যে উনি অধ্যক্ষ হিসেবে কেমন কাটাচ্ছেন দিন, কোনো সমস্যা আছে কিনা। তখন প্রধানমন্ত্রীর সেই বোন বললেন যে, ওরতো প্রমোশন হয় নি। এই কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সবার সামনে আর কথা বাড়ান নি। কিন্তু পরে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে একদিন কথা প্রসঙ্গে কথা ওঠায়, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শাকিল ভাইকে ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞাসা করেন যে ওনার সুপারিশ থাকার পরও কেন সেই অধ্যাপিকার প্রমোশন হলো না। তখন নাকি শাকিল ভাই কিছুটা বিব্রত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আকারে-ইঙ্গিতে কিছু একটা বোঝান যেটা'র মানে দাড়ায় "অন্য কার'ও" সুপারিশ ছিল ঐ পদে সেই "অন্য কার'ও" পছন্দের প্রার্থীকে অধ্যক্ষ পদে বদলি করার জন্য। চিন্তা করে দেখুন তাহলে, যেখানে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশনা থাকার পর'ও আমাদের দেশে ঠিক মত সুপারিশ তামিল হয় না- সেখানে দেশের প্রশাসন এবং রাষ্ট্রযন্ত্র চালায় কে বা কারা? এই পর্দার অন্তরালের লোকগুলো কে যে তাদের অঙ্গুলি হেলনে উপেক্ষা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ? অবজ্ঞা করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ! তা'ই যারা অতি সরলীকরণ করে দেশে যা'ই ঘটুক না কেন, সব কিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী পরিষদের দোষ ধরেন তাদের জন্য বলছি- দেশ চালানোর ব্যাপারস্যাপার এত সহজ নয়! এ এক মহাযজ্ঞ, এর কুশীলব অনেক। আমাদের সম্মুখে আমরা শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রী পরিষদ'কেই দেখতে পাই, পর্দার অন্তরালে যে আরো কত কুশীলব আছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। এইসব পর্দার অন্তরালের কুশীলবদের আবার এতটাই ক্ষমতা যে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ'ও অগ্রাহ্য হয়ে যায় এদের ইচ্ছার কাছে! এ জন্যই কি বলা হয়েছিল-

অদ্ভুত ঊটের পিঠে চলছে স্বদেশ।

অভিজ্ঞতা-২

এই অভিজ্ঞতাটা আমার ব্যক্তিগত। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময়। লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা দুই জেলার'ই প্রাক্তন জেলাপ্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এক সরকারী কর্মকর্তাকে বদলি করা হলো নির্বাচন কমিশনে। তিনি বদলি হয়ে আসার সাথে সাথে ওনাকে একটি হেলিকপ্টার বরাদ্দ দেয়া হয় নির্বাচনি কাজে ব্যবহারের জন্য, যা ছিল বিধি বহির্ভূত কারণ ওনার পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তার হেলিকপ্টার পাবার কথা না। যা হোক, বদলি হয়ে আসার পর'ই শুরু হয় উনার সারা দেশের জেলা নির্বাচনী অফিস পরিদর্শন। প্রতিটি জেলা নির্বাচনী অফিস পরিদর্শনে গিয়ে উনি বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করতে থাকেন এবং নিরপেক্ষ বা বিএনপি-জামায়াত মনা নয় এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা তৈরী করেন। তার এইরূপ কর্মকান্ডে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরে পুরো নির্বাচন প্রশাসন। যেহেতু তার পদবি তেমন একটা বড় ছিলনা, আর তিনি তার হেলিকপ্টার সফর করে বিভিন্ন জেলায় যেতেন সন্ধ্যার পর, সেজন্য তার এইসব অপতৎপরতা মিডিয়ার সামনে এসেছে কম। আর সে সময়ের খ্যাতিমান মিডিয়া হাউজগুলোও এই খবর উপেক্ষা করে গেছে। জনকন্ঠে হয়ত একবার এসেছিল তার এইসব কর্মকান্ডের কথা। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে, নিজেদের নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচনের সকল ছক কাটা হয়ে গিয়েছিল সেই দুষ্ট চক্রের। এই একজন সরকারী কর্মকর্তা (এবং তার সাথের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা) ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি'র পক্ষে যে পরিমান অবদান রেখেছে, দল হিসেবে বিএনপি'র নেতাকর্মিরাও এতটা অবদান রাখতে পারে নি। আজকের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, বিমানবন্দরে নির্বাচনের রাতেই সেই কর্মকর্তার নামসহ আরো কিছু সরকারী কর্মকর্তার নাম পাঠিয়েছিলেন, যাতে তারা পালাতে না পারে! যাহোক, ২০০১ এর নির্বাচনে এরূপ না না অবৈধ ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ জিতে এসে, তার পুরস্কার স্বরূপ বিএনপি ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে তাকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয় একটি গুরুত্বপূর্ন বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার। পরবর্তীতে দেশের হাওয়া বদল দেখে সেই কর্মকর্তা'ই বিএনপি'র ক্ষমতা ছাড়ার আগে বদলি হয়ে যান পশ্চিমের এক দেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে; যেখানে সেই সরকারী কর্মকর্তা না ছিলেন পররাষ্ট্র ক্যাডারের, না ছিল তার বিদেশে কোন মিশনে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে ১/১১'র উদ্ভট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার চাকরির মেয়াদ'ও চুক্তিভিত্তিক ভাবে বাড়ানো হয়।

তো এই হচ্ছে আমাদের আমলাতান্ত্রিক দুষ্টচক্রের অবস্থা। এরা গাছেরটা'ও খায়, তলারটা'ও কুড়ায়। এই আমলা আবার বিয়ে করেছে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রীর মেয়েকে। আর সেদিক থেকে সুবিধা থাকায় এবারের আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর'ও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা'ই নেয়া হয় নি। যদিও সে ইতোমধ্যেই অবসরে গিয়েছে, আর কোন এক অদৃশ্য/ অলিখিত চুক্তির বদৌলতে আমাদের দেশে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা কখনই নেয়া হয় না। মহা আরামে সেই কর্মকর্তা এখন কক্সবাজারে নিজস্ব জমিতে পাঁচ তারা হোটেল বানাচ্ছে, চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা করছে। মালয়েশিয়াতে নিয়েছে সেকেন্ড হোমের সুযোগ। বেশি সমস্যা হলে চলে যাবেন তিনি সপরিবারে মালয়েশিয়া। উনার স্ত্রী-কন্যা থাকেন পশ্চিমের এক দেশে। দেশে রয়েছে স্ত্রী'র নাম একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, আর কিসের অভাব! মজাই মজা। আজ যে বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এত মরিয়া এর পিছনের কারণ হচ্ছে এসব সূচতুর আমলাগোষ্ঠী। আওয়ামীলীগ সরকার যতই চেষ্টা করুক এদেরকে প্রশাসন থেকে হটানোর জন্য, কিন্তু এদের জর কেঁটে ফেলা এত সহজ না। যেখানে জামায়াতের রোকন একজন ছিলেন ১/১১'র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ জেলার জেলাপ্রশাসক, সেখানে কিভাবে সম্ভব এদের মূলোৎপাটন করা!

আমরা যে উঠতে বসতে সরকার/ রাজনীতিকদের গাল দেই, খুব কাছ থেকে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা অবলোকন করলে কিন্তু মনে হবে যে, সরকারী আমলাদের কাছে রাজনীতিকরা আসলে কতটা অসহায়! আমলারা সব সময় নিজেদের স্বার্থ অথবা গোপন কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নে মত্ত থাকে। দেশের ভালো চিন্তা করার সময় হয় না তাদের, গুটি কয়েক আমলা ব্যতীত। এর চাক্ষুস প্রমান'তো আমরা দেখেছি'ই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন সাহেবের নাতিকে পুলিশের দ্বারা নাজেহাল হতে দেখে। সে যদি আসলেই কোন অপরাধ করতো তাহলে কোন প্রশ্ন উঠতোনা, কিন্তু বিনা অপরাধে তার উপর চড়াও হওয়াটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারগুলোকে হেয় করার সুদূ রপ্রসারী ষড়যন্ত্র। এর উপরতো রয়েছেই পর্দার অন্তরালের কুশীলবেরা। যাদের না পাওয়া যায় কোন পরিচয়, না তাদের রয়েছে জবাবদিহিতার কোন ব্যবস্থা বা অবস্থা। পাতি মন্ত্রী থেকে জাঁদরেল মন্ত্রী, উপদেষ্টারা পর্যন্ত থরহরি কম্প থাকে এসব পর্দার আড়ালের লোকেদের ক্ষমতা'র সম্পর্কে। সেজন্যই আমাদের যতই উপলব্ধি হোক না কেন, যে সরকার বা রাজনীতিবিদরা যা করছে তা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এই যে, তাদের'ও হাত-পা বাঁধা কোন এক অদৃশ্য বন্ধনে যার কারণে ইচ্ছে থাকলেও জনগনের উন্নয়নে সঠিক পথ বেছে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু এই অদৃশ্য কুশীলবদের পর্দার অন্তরাল থেকে নাটাই ঘুরানোর অবস্থাটা কিন্তু তেমন আগের ব্যাপার না। কারণ, আমি নিজের চোখে দেখেছি একজন পুলিশ সুপারের'ও কতটা ক্ষমতা ছিল এক কালে। তার এক ফোনে থানা-পুলিশ থর থর করে কাঁপতো, অনুযোগ করতো- "স্যারকে বলার কি ছিল, আমাদের বললেই তো হতো আপনি স্যারের পরিচিত"। যেখানে এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী'র সুপারিশে'ও পুলিশ নড়ে না। অন্যকোন জায়গা থেকে যদি নির্দেশ আসে, তবেই যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুপারিশ করে তখন পুলিশ হুকুম তামিল করে। এই অবস্থা'র সৃষ্টি হয়েছে ১/১১'র উদ্ভট সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে, যার রেশ রয়ে গেছে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলেও। তখন যেমন উপদেষ্টা পরিষদের কথার কোন দাম ছিল না, সবকিছু নির্ধারিত হত সেনাসদর থেকে। ঠিক তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়, সেই ১/১১'র পেছনের সরকারের প্রেতাত্মা যেন রয়ে গেছে এখনো! আর সেই ক্ষমতার উপর নির্ভর করেই আমাদের বিরোধীদল এখন ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। সেজন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তাদের এত মায়াকান্না! কিন্তু তারা ভুলে গেছে গতবারের পরিনাম! পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে গেলে যে ঘটি-বাটি শুদ্ধ হারানোর উপক্রম হবে সেটা মাথায় নেই। ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। সহজ রাস্তা ছিল আমাদের বিরোধীদলের হাতে। তারা যদি যুদ্ধাপরাধীদের দলকে ত্যাগ করে, জনগনের আশা-আকাংখা'র প্রতি দৃষ্টিপাত করত, অতীতের কৃত অপরাধের জন্য জনগনের কাছে ক্ষমা চাইতো তাহলে তাদের জনপ্রিয়তা উঠে যেত তুঙ্গে। কিন্তু তারা সে পথ মাড়াবেন না। ফলে তাদের করুণ পরিনতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। কেঁদে কুল ভাসালেও কোন কাজ হবে না।

বটতলার উকিল।


মন্তব্য

Uday এর ছবি

ভাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।।।।।।।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।

বটতলার উকিল।

স্বপ্নহীন এর ছবি

আমলারা এত খারাপ হইলে কেন এই সরকারের প্রধানের চারপাশ আমলা বেষ্টিত (উপদেষ্টা) আর মন্তীসভা তো হওয়ার কথা রাজনীতিক দের কিন্তু দিন দিন দেখি এটা আমলা না হলে আর কেউ মন্ত্রী হঔয়ার যোগ্য হবেন না! কেন বলতে পারেন?

এট লিস্ট মন্ত্রী করা তো দল প্রধানের মর্জি। তাহলে এমন ক্যাম্নে হয়?

একটা দল তো পুরাই আমলা নিয়ন্ত্রিত আর একটা দলের মন্ত্রিসভা? ক্যাম্নে কি? এরা এত খারাপ হলে কেনু দল প্রধানেরা এদের দলে ভিড়ায়?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ স্বপ্নহীন! আমলা বেষ্টিত হয়ে থাকার একটাই কারণ, যেন এদেরকে হাতের কাছে রাখা যায় এবং এদের গোত্রভুক্তদের ষড়যন্ত্র থেকে যেন সাবধান থাকা যায়! কিন্তু যে চিন্তা-ভাবনা থেকে এদেরকে উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা দেয়া হয়েছে, বিপদে পরলেই টের পাওয়া যাবে এরা কতটা সরকারকে রক্ষা করতে পারে! আর আমলাদের মাথা থেকে যে পরিমান কুটবুদ্ধি (আমি নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করলেও, আসলেই বাংলাদেশের আমলাদের মাথায় যে সব বুদ্ধির উদ্ভব ঘটে, সেগুলো দেখে ব্রিটিশ এম.পি.'কেও অবাক হতে দেখেছি!) বের হয় তা দেশ চালানোর জন্য মাঝে মাঝে (খুউউপ খেয়াল করে- মাঝে মাঝে, সবসময় না কিন্তু!) জরুরি হয়ে পরে। আপনি মনে হচ্ছে, বিএনপির আমলের মন্ত্রিসভার সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন! বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আর কয়জন? মন্ত্রীরা মোটামোটি সকলেইতো পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ, হয়তবা নতুন কিন্তু রাজনীতি'ই কিন্তু তাদের পেশা ছিল মন্ত্রী হওয়ার পূর্বে।

বিএনপিতে রাজনীতিবিদদের অভাবের কারণে হয়ত আমলারা বেশি সুযোগ পান, অথবা ঐ যে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কন্টক বর্জিত রাখার জন্য। কিন্তু এই আমলারা'ও হাওয়া বুঝে তাওয়া গরম করে। রাজনীতিতে এদের যত কম প্রবেশ হবে, রাজনীতি ততই সুন্দর, সুশৃঙ্খল থাকবে বলে মনে হয়!

বটতলার উকিল।

mamun এর ছবি

দেশ আসলে কারা চালায়, সত্যিই এটা একটা প্রহেলিকা। লতিফুর রহমান সাহেবের সময় অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিল, যা মিডিয়ার ফিল্টার ভেদ করে আলোতে আসেনি। ঐ সময়ে সচিব পর্যায়ের ২ জনের 'আত্মহত্যা'র কথা, বিপুল পরিমাণ সরকারি ফান্ড গায়েব হওয়ার কথা আফছা ভাবে মিডিয়াতে এসেছিল। ভোটের দিন ঢাকার একটা ভোট কেন্দ্রে (আমার কেন্দ্র) বিএনপি ছাড়া আর কোন এজেন্ট ছিল না, আমার বাকী জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।
এবারকার নির্বাচন 'ওহী' নাজিল হওয়া টাইপ কিছু হতে পারে।
আর একটা কথা, সম্পদ পাচার হওয়া দিন দিন বাড়ছেই। নেতাদের সততা, অসততা, নাকি অন্য কিছু?

বটতলার উকিল এর ছবি

ধন্যবাদ জনাব মামুন। লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলেই অনেক রহস্যাবৃত! আমাদের পত্রিকা/ মিডিয়া হাউজগুলো ১/১১ নিয়ে যত উচাটন, ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ঠিক ততটাই নিরব। আর তাদের এই নিরবতা self imposed, কারণ, তারা যে জেনেশুনে মুখ বন্ধ করে রেখেছিল সেই সময়ে সেটা ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে! এক ভয়ঙ্কর অশুভ খেলা খেলা হয়েছিল সে সময়। যার পুরোটা'ই রয়ে গেছে অন্ধকারে। তখনকার সময়ে আমলারা এবং পত্রিকার সম্পাদকেরা জোটবদ্ধ হয়ে যে অশুভ এক নির্বাচন সম্পন্ন করেছিল, তার উদাহরণ হয়ত স্বৈরাচারী আমলেও নেই।

পাচার হওয়া সম্পদ বাড়ছে, কারণ, এরা বাংলাদেশে এই টাকাগুলোকে ব্যবহার করতে পারছেনা এত বেশি এর পরিমান। আর এশিয়ার কিছু দেশে বিনিয়োগ করা এত সহজ যে সেই লোভ ছাড়া দায়! নেতাদের অসততা তো আছেই। দু'নম্বরি পথে টাকা কমানোর সিস্টেম কিন্তু আমাদের নেতাদের এই আমলারা'ই শিখিয়েছিলেন!

হাসান এর ছবি

আমলাদের উপর দোষ চাপিয়ে যদি রাজনীতিবিদদের অসহায় বলা হয় আর যদি এর দ্বারা তাদের দোষমুক্তির ধারণা দেয়া হয় তবে একমত হওয়ার উপায় নেই।

বটতলার উকিল এর ছবি

ধন্যবাদ জনাব হাসান আপনার মূল্যবান বক্তব্যের জন্য। আমলাদের উপর দোষ চাপিয়ে (আসলে দোষ চাপানোর কিছু নেই, বাংলাদেশের আমলাদের একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত খুব কাছ থেকে দেখেছিতো, তাই আসলেও আমি জানি এবং বিশ্বাস করি আমলাদের ধূর্ততার কাছে রাজনীতিবিদরা কতটা অসহায়!) রাজনীতিবিদদের অসহায় বলা হলেও, রাজনীতিবিদদের দোষ মুক্তির কোন উপায় নেই! কারণ, তারা মুখে ডমি দেয়া বাচ্চা নন, যে আমলারা যা বলবে তা'ই শুনতে হবে! অবশ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক সময়ই আমলাদের চাতুরীর কাছে নিজেকে মুখে ডমি দেয়া বাচ্চা বলে মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আমলাদের নাগপাশ থেকে মুক্তি লাভের জন্য সর্বস্তরে সচেতনতা আসা প্রয়োজন, এছাড়া আর কোন গত্যন্তর দেখছি না।

বটতলার উকিল।

আলতাইর এর ছবি

হাততালি হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু ধন্যবাদ!

বটতলার উকিল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।