এক্সকিউজ মি বাবা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৬/০৬/২০১৩ - ৩:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিন পনের আগের কথা । হঠাত মাথায় ঢুকল একটা নেটবুক লাগবে । হোস্টেলে ডেস্কটপ আছে একটা , কোনরকম ভাবে কাজ চালিয়ে নেয়া যায় ! কিন্তু একটা নেটবুক হলে যে অনেক সুবিধা , টুকটাক অনেক কিছুই করা যাবে ! আবদার টা ছিল আমার আম্মার কাছে ! আম্মা সেটা রেফার করে আব্বার কাছে পাঠিয়ে দিলেন ! আমি কাচুমাচু মুখ নিয়ে আব্বার কাছে নেটবুকের কথা বললাম !আব্বু প্রথমে একটু ভ্রূ কচকালেন, তারপর বললেন
-দুইদিন পর প্রফ, এখন এটার কি দরকার ??
-আব্বু নেটবুকে কিছু দরকারি জিনিস রাখা যাবে পড়ালেখার, কাজে আসবে জিনিসটা ! " আমি মিনমিন করে উত্তর দিই !
উনি আর দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করেন নি ! আমি পরের দিনই নতুন নেটবুক ঘরে তুললাম ! !

কয়েকদিন আগে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম ! দিন যাচ্ছে , বছর যাচ্ছে, কিন্তু আমার বাবার মধ্যে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না ! বাবা যেমন ছিলেন তেমনই রয়ে যাচ্ছেন ! কেমন যেন পুরানোই ! অবশেষে ব্যপারটা বুঝতে পারলাম । আব্বার এই অপরিবর্তিত থাকার রহস্য আর কিছুই না , তার পোশাক । দিনের পর দিন উনি তিন চারটা শার্ট আর প্যান্ট পরেই দিব্বি কাটিয়ে দিচ্ছেন ! ঈদ অথবা অনুষ্ঠানে ঠিকই আমাদের আগ্রহ সহকারে শপিং করে দিচ্ছেন আমাদের কিন্তু নিজে ভুলে অথবা ইচ্ছা কৃত হোক কিছুই নিচ্ছেন না !

দুখানা শার্ট কিনেছিলাম সেবার আমি আব্বুর জন্য ! আহা ! আমার পিতা তার নিজের আয়ের টাকায় ছেলের পছন্দের শার্ট কিনে ঘুরে বেড়াক কিছুদিন !!!

আমি প্রায় দশ হাজার টাকা মূল্যের একটা মোবাইল ব্যবহার করি ! অনেক শখ করে মোবাইলটা কিনেছিলাম আমি ! শুধু আমি না আমার বয়সি অনেক ছেলে মেয়েই এখন শখ করে একটু ভালো মানের এনড্রয়েড সেট কিনি !
সেদিন আব্বুর মোবাইলটা দেখলাম ! ভাঙ্গাচোড়া এক বিদির্ণ সেট ! কোনভাবে মনে হয় কথা চালানো যায় ! আমাকে বিনে পয়সায় এই সেট দিলেও আমি নিব না । উনি পুত্র কে দামি সেট কিনে দিয়ে নিজে চালাচ্ছেন একখানা ভাঙ্গা রেডিও !
আমার মনে হয় ব্যপারটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই ঘটে নি, আপনারা খোজ দিয়ে দেখুন , দেখবেন আপনাদের মমতাময় পিতাও একই কাজ করে বসে আছেন !!

আজকে বাবা দিবস । অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে গদ গদ হয়ে স্ট্যাটাস দিব, অনেকে আবার একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে এটাকে ওয়েস্টার্ন কলচার বলে উড়িয়ে দিব !
এই লোকটা সারাজীবন আমাদের কথা ভেবে শুধু পরিশ্রমই করে গেলেন, আমাদের চাহিদা গুলো পূরণ করে গেলেন । বিনিময়ে কি আমরা কিছু করেছি তার জন্য !! যে যেভাবেই নেই না কেন দিনটাকে আজকের দিনটাকে এক্সকিউজ করে অন্ততা আমরা বাবার হাত ধরে একটু বসি , সম্ভব হলে ছোট একটা উপহার দেই !

দিনটা উইশ করা আর কার্ড দেয়ার উপলক্ষ না , কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটুখানি একস্কিউজ হোক !!

আয়ন


মন্তব্য

হযরত এর ছবি

চলুক

আয়ন এর ছবি

ধন্যবাদ হযরত হাসি

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

প্রবাসে থাকায় বাবাকে অনেক মিস করি।

কয়েকদিন আগে একটা (ইংরেজি) সাইটে একটা আলোচনা শুরু হল দেখলাম। একজন শুরু করেছিল এভাবে যে,

৩ বছর বয়সে সে তার বাবাকে হারিয়েছে, সে তার বাবাকে অনেক মিস করে কাজেই যাদের বাবা কাছে আছে বা ফোন করার মত যায়গায় আছে -তারা যেন বাবাকে শুভেচ্ছা জানায়, তাদের কাছে থাকার চেষ্ট করে। কারণ, এটা করার সুযোগ চিরকাল থাকবে না, তখন সবার আফসোস হবে।

এরকম মর্মস্পর্শী লেখা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক আশা করিনি। অবাক ব্যাপার হলে, অনেকেই তর্ক শুরু করল এই বলে যে, তোমার বাবা যদি ৩ বছর বয়সে মারাই গিয়ে থাকে, তাহলে তোমার কোন স্মৃতি তোমার নেই। আর যেই জিনিসটা তোমার নেই সেটা তুমি কিভাবে মিস করতে পার? সাথে আরও একদল জুটে গেল যারা তাদের বাপের উপর মহাবিরক্ত, তারা তাদের বাপের অস্তিত্ব নিয়ে মোটেই চিন্তা করে না। তাদের বাবা তাদের ঠিকমত খেয়াল করেনি, মারধোর করেছে বা শৈশবে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তারা অনেকেই একমত হল যে এরকম বাবা থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো।

আমি শুধুই দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এত উন্নতি, এত ভোগের আয়োজন চারদিকে -তারমাঝে এত বড় শূণ্য গহ্বর বাস করে সেটা আমার এতদিন চোখেই পড়েনি! আমাদের দেশেও এরকম সন্তান আছে যারা হয়ত তাদের বাবাকে ঘৃণা করবে, তবে এখানে এই ঘৃণার ব্যাপকতা আর প্রাচুর্য আমাকে অবাক করেছে।

আয়ন এর ছবি

আপনার কমেন্টটা মনযোগ দিয়ে পড়লাম ! আপনার সাথে আমারও একটা ব্যাপারে মিল আছে । আমি নিজেও বাবার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকি !
তিন বছরে বাবা হারালে বাবা কে মিস করার মাঝে তো দোষের কিছু দেখছি না ! আমরা মিস শব্দটার বাঙ্গলা করলে দেখব যে কারো জন্য হৃদয়ে শুন্যতা অনুভব করা ! ভদ্রলোক দিন বছ বয়সে বাবা কে হারিয়েছেন, তাই তার মাঝে বাবার স্নেহের শুন্যতা কাজ করেছে সবসময় । এটাকেই উনি বোঝাতে চেয়েছেন । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের ভুল ধরার মানুষের অভাব হয় না । যে বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত একমাত্র সেই তার মর্ম বুঝতে পারে ।আমরা দিন দিন মানবীয় গুনাবলি হারাচ্ছি বোধহয় !
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে , ভালো থাকবেন হাসি

মইনুল আজিজ এর ছবি

বাবারা চিরদিনই সন্তান এবং সংসারের জন্য সব দিয়ে গেছেন এবং এখনও তার কোন পরিবর্তন নেই। আমার মনে হয় সেই আদিকালেও বাবারা এরকমই ছিলো। আপনার লেখায় অনেক দগ্ধ হলো আমার পিতৃহীন অন্তর।

পৃথিবীর সকল বাবাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি!

আয়ন এর ছবি

বাবা রা সবসময় একরকমই হয় ! সকল বাবদের হৃদয়ের গভীর থেকে সৃষতিকর্তার নিকট প্রার্থনা !

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমার আব্বা, একটা ল্যাপটপ অনেক দুর থেকে বয়ে এনেছিলেন। আমাদের দেখা হয়েছিলো প্রায় আড়াই মাস পর। কাছে যেতেই প্রথমে সেটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমার বিচ্ছু ছেলে এটা নিয়ে খোটা দিয়েছে তখন। দাদা তার জন্য কিছু আনেনি, বাবার জন্য এনেছে। পরে অবশ্য তার ভাগের জিসিপত্তর পেয়ে অনেক খুশি।
আপনার বাবাকে শুভেচ্ছা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

আয়ন এর ছবি

ধন্যবাদ

তারেক অণু এর ছবি

লেখা -গুড়- হয়েছে

সুন্দর লেখা, মন খারাপ করিয়ে দেয় --

আয়ন এর ছবি

বাবার জন্য একটু মন খারাপ হওয়াটাও অনেক কিছু !
অনেক ধন্যবাদ তারেক অণু হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।