কাদের মোল্লার চা খাওয়া ও একটি আফসোস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/১২/২০১৩ - ৪:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিখতে বসলাম। জানিনা কি লিখতে বসেছি। লিখতে ইচ্ছা করছে তাই লেখা শুরু করা। লেখা শুরু করাটাও আরেক ঝামেলা। কি দিয়ে শুরু করবো। শুরু করতে যেয়ে আর শুরু করা হচ্ছে না। যাই হোক, শুরু যখন হোলই শুরুই করি। কাদের মোল্লার চা খাওয়া দিয়েই শুরু করি।

কাদের মোল্লার ফাঁসি হইতে যাইতাছে। শুইনাই সামনের চায়ের দোকানে থাকা দোকানদাররে ডাক দিয়া কইলাম, মামা কাদেইরার ফাঁসি যেই দিন হইবো তার পরের দিন সারা দিন তোমার দোকানে যতকাপ চা বিক্রি হইবো তার সব বিল আমি দিমু। সাথে বসা এক মামা ছিলো, হেয় কইলো, মামা আমিও আছি তোমার লগে। টেকা যা যাইবো তা আমিও শেয়ার করুম। তো কথা বার্তা ফাইনাল কইরা ফালাইলাম দোকানদারের সাথে। দিন চুক্তি চা (দোকানদার হের দোকানই খোলে সন্ধ্যার পর)।

যাই হোক, চুক্তি টুক্তি কইরা পকেটে হাত দিয়া দেখি হুদা দশ টা টাকাই আছে পকেটে। থাকুক দশ টাকা। চা খাওয়ামু কইছি তো কইছিই। কিছু মানুষ পাইকারি হারে বাচ্চা পয়দা করে। দশ পনেরোটা পয়দা কইরাও ভাবে কিছুই পয়দা করা হয় নাই, পয়দা করা এখনো ম্যালা বাকি। হেগোর কথা “পেট দিছে আল্লায়, রিজিক দিব আল্লায়”। সেই ভরসায় আমিও ,মনে মনে কইলাম, চা খাওয়ামু এইডা আমারে দিয়া কউয়াইছে আল্লায়, ট্যাকাও ম্যানেজ কইরা দিবো আল্লায়। যা আছে কপালে। ক্যামনে ক্যামনে জানি এলাকায় ছড়াইয়া গ্যালো কাদেইরার ফাঁসি হইলে ভাই চা খাওয়াইবো। এরপর পোলাপাইন খালি দিন গুনে কবে কসাইটার ফাঁসি হয়। অবস্থা এমন দাঁড়াইলো পোলাপাইন চা খাওয়ার জন্যে কাদেরের ফাঁসি কামনা করতে লাগলো।

ফাঁসি হয় তো হয় না হয় তো হয় না করতে করতে বুধবার হইয়া গ্যালো কাম। পোলাপাইনের ফোন, ভাই চা খামু কখন চা খামু কখন। এর মধ্যে অনেকের ফোন পাইলাম যারা খুশিতে কান্নাকাটি শুরু কইরা দিছে ফোনে।কান্নাকাটির মধ্যে আমি নাই। ক্যান জানি কাঁদতে পারি না। কঠিন রকমের খারাপ কিছু ঘটলেও কাঁদতে পারি না। কিন্তু হঠাত খেয়াল করলাম গাল দিয়া কি জানি পরতাছে। আয়নার সামনে যাইয়া দেখি চোখের পানি গড়াইয়া গাল বাইয়া পরতাছে। বহুদিন পর চোখে পানি আসছিলো সেইদিন। চোখে ময়লা যাওয়ার কারনে পানি না। হয়তো আনন্দের তীব্রতা চোখ সহ্য করতে না পাইরা কিছু পানি ঢাইলা সেই তীব্রতা কমাইতে চাইছিলো। অথবা ৩০ লাখ শহীদ আর আড়াই লাখ মা বোনের কথা মনে পইড়া চোখে পানি আসছিলো।

পরের দিন, মন খারাপ ভাব নিয়া গেলাম এক বড় ভাই এর দোকানে। ভাই জান বিম্পি করেন। ভাই জান আমারে দেইখাও না দেখার ভান করলো। পাশের দোকান থেকে একটা মোজো আনাইলাম এক পিচ্চিরে দিয়া। বোতলের মুখা খুইলা ভাইরে দিলাম। ভাইজানও কোন কথা না কইয়া একটা ঢোক দিয়া বোতল ফেরত দিলো। আমি কইলাম খান ভাই, কাদের মোল্লার ফাসিটা যদি আর কয়টা দিন আগে হইতো তাইলে আপনারে মোজোর পুরা ফ্যাক্টরি আইনা ধরাইয়া দিতাম। ভাই জান এমন দৃষ্টিতে তাকাইলেন আমার দিকে উনি যদি মুনি ঋষি হইতেন তাইলে নগদ ছাই হইয়া যাইতাম। কিছুক্ষন খোচাখুচি করার ইচ্ছা ছিলো ভাইজানের সাথে। কিন্তু অবস্থা দেখলাম খারাপ। আসলেই ছাই হইয়া যাইতাম যদি আরও কিছুক্ষন থাকতাম ভাইজানের দোকানে। ঠিক ছাই হওয়ার পুর্ব মুহুর্তে দোকান ত্যাগ করলাম।

কই থেকে কই গেলাম। চা খাওয়ানোতে ফেরত যাই। কোন রকম টানটুন দিয়া কিছু টাকা ম্যানেজ করলাম। সন্ধ্যায় যখন চা খাওয়ানো শুরু হইল দোকানে তখন রমরমা অবস্থা। এমনিতেই ওই দোকানে সব সময় ভিড় লাইগাই থাকে, ওইদিন তো বেসামাল অবস্থা। দোকানদার চা বানাইতে বানাইতে এক পর্যায়ে এমন অবস্থা হইলো, পারলে উনি দোকান থুইয়া দৌড় দেয়। আর এই দিকে আমার আর আমার ওই মামা, যে আমার সাথে চায়ের টাকা শেয়ার করতে চাইছিলো উনার অবস্থাও খারাপ। চা যেই হারে যাইতাছে এই চায়ের বিল আগামি তিন বছর প্রতিদিন এক ব্যাগ কইরা রক্ত বেচলেও শোধ হইবো না।

এলাকায় এক বড় ভাই আছে, বাবু ভাই। অনেক দিল দরিয়া মানুষ। পকেটে যখন টেকা টুকা থাকে না তখন সবাই দল বাইন্ধা ওই ভাইরে খুইজা বাইর করি। ভাই এর কাছ থেকে চা খাইতে খাইতে এমন অবস্থা উনার সামনে যাইয়া দাঁড়াইলেই উনি বুইঝা যায় কি কারনে গেছি। দোকানে ফ্রি চা খাওয়ানোর কারন জানতে পাইরা সেই বাবু ভাই ডাক দিলো। খুব প্রশংসা টসংসা করলো। এমনিতে কেউ যদি পাম মাইরাও প্রশংসা করে আমার ক্যান জানি খুব ভাল্লাগে। কিন্তু ওই দিন টেকার চিন্তায় কিছুই মাথায় ঢুকতাছিলো না। হুট কইরাই ভাইরে কাহিনী কইয়া বইলাম, ভাই সব শুইনা কইলো, তোমরা যা পারো ভরো, বাকিটা আমি দেখতাছি। ভাই এর কথা শুইনা আমারে আর পায় কে। ভাইরে তখন আমার অবতার মনে হইতাছিলো। ইচ্ছা করতাছিল ভাইরে কান্ধে নিয়া এলাকায় একটা চক্কর দেই।

প্রায় পৌনে চারশো কাপ চা বিক্রি হইলো। আমরা কোন রকম ১২০ কাপ চায়ের দাম দিয়া বাকিটা ভাইয়ের ঘারে ফালাইয়া দিয়া বাসায় ফিরলাম। কিন্তু মনে একটা অশান্তি, আফসোস রইয়াই গেলো। পুরা চায়ের বিলটা যদি আমি একা দিতে পারতাম।

=সৌ রভ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ‍উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, সামর্থ্য আজ নেই, কাল হয়ে যাবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না, এমন উদ্যোগ আর মুক্তিযুদ্ধর প্রতি ভালোবাসাটাই বেঁচে থাক সবার মাঝে।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধকে অন্তরে লালন করি দাদা। আর এই বিষয়ে আবেগটা একটু বেশিই কাজ করে।

=সৌ রভ

আয়নামতি এর ছবি

ভাই জান এমন দৃষ্টিতে তাকাইলেন আমার দিকে উনি যদি মুনি ঋষি হইতেন তাইলে নগদ ছাই হইয়া যাইতাম।

হো হো হো

আমি তেমন খুঁচাখুঁচি টাইপ পাবলিক না। তবুও ঐদিন কাচ্চির দাওয়াত দিতে গিয়ে 'সেইরাম' আর্শিবাদ প্রাপ্ত হইছি এক ভাবীর দ্বারা দেঁতো হাসি ব্যাপক মজা পেয়েছি! এই মজার কোনো তুলনা চলে নাকি বলেন? আমাদের এদিকে প্রচুর জামাতঘেষা লোক। আপনার নিকটা সৌরভ না? স্পেস কেনু ওভাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা, আমার কিন্তু ল্যাঞ্জা ওয়ালাদের খুচাইতে ভালাই লাগে দেঁতো হাসি
নাম এইভাবেই লিখি চোখ টিপি

=সৌ রভ

বাউলিয়ানা এর ছবি

চলুক
ঘটনা সত্য হইলেও আমার চোখের সামনে পুরা একটা নাটক দেখলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনা সইত্য জনাব

=সৌ রভ

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

এক লহমা এর ছবি

চলুক আকাঙ্খা করি একদিন যেন পুরা চায়ের দামটাই আপনি দিতে পারেন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

=সৌ রভ

অতিথি লেখক এর ছবি

চা খাওয়ানোর সুযোগ আরো আসবে সামনে, নিশ্চিত! আপনার পকেটের সুস্বাস্থ্য কামনা করি দেঁতো হাসি

গান্ধর্বী

অতিথি লেখক এর ছবি

ওয়েটিং ফর টিয়া পাখি ময়না পাখির সাড়ে সাত ইঞ্চি বাই ওয়ান অ্যান্ড হাফ ইঞ্চি সাইদি মিয়া দেঁতো হাসি

=সৌ রভ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মজা লাগল খুবই। খুব ভালো কাজ করেছেন। চা খাওয়ার চেয়েও মুখ্য জিনিস হল যে, যার ভেতরে সচেতনতা কম, সেও জানবে এটা একটা আনন্দের বিষয় যে কসাই কাদেরের ফাঁসি হয়েছে।
ইশ দেশের বাইরে থাকায় এই ফূর্তিগুলো মিস করলাম এবার! হাসি

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশে আইসা সব খাওয়ানি এক বারে খাওয়াইয়া দিয়েন খাইছে

=সৌ রভ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

=সৌ রভ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।