রঙ্গীন স্বপ্নে বাংলাদেশ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০১/২০১৪ - ১১:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘সোয়ান’ নদীর পার। মাত্র সন্ধ্যা হব হব ভাব। আকাশে সন্ধ্যা-রঙ্গের খেলা চলছে। সেই খেলা সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে ‘সোয়ান’ নদীর স্বচ্ছ জলের টেলিভিশনে। এরমধ্যে আমি আর আদুভাই দুই প্যাকেট চিপস্‌ কিনে নিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য জাঁকিয়ে বসেছি। ভয়াবহ গরম পড়েছে। আশে পাশে অনেকগুলো বিদেশি পরিবার বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে নদীর পারে পিক্‌নিক্‌ করতে এসেছে। বাচ্চা-কাচ্চার হইচই আর আমাদের আড্ডা চলছে।

আদুভাইয়ের সাথে আড্ডাটা পুরাই অন্যরকম। আড্ডার পুরোটা সময় ধরে উনি আমাকে বিনে পয়সায় আজাইরা জ্ঞান বিতরণ করেন, আর আমি “জী ভাইয়া,” “একদম ঠিক্‌ বলসেন ভাইয়া” বলতে থাকি। আমি যতবার উনার কথার সাথে প্রবলভাবে সহমত প্রকাশ করি, উনি ততবার আনন্দে ঝল্‌মল্‌ করে ওঠেন। তাই বেশিরভাগ সময়ই আজগুবি সব ব্যাপার গুলোতেও সহমত প্রকাশ করি। এরকম সহমত প্রকাশ করতে করতে উনি যখন ধরেই নেন যে উনার সমস্ত চাপাবাজিতেই আমি হাত তালি দিব, ঠিক তখন কোন একটা বিষয়ে হঠাত দুইদিকে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলি, “না, না, ভাইয়া, আপনার এই আজগুবি কথাটা আমি কিছুতেই মানতে পারলাম না।” তখন প্রচন্ড রাগে উনার দুই ভুরু কুঁচকে যায়। লম্বা করে দম নেন উনি। তারপর শুরু হয় আমাদের বিতর্ক। এই বিতর্কের প্রলোভনেই আদুভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতে যাওয়া। প্রতিবারই বিতর্ক শুরু হয় আদুভাইয়ের চির-চেনা একটা ডায়ালগ দিয়ে। চোখের মণি গুলো ঘুরাতে ঘুরাতে, হাত জোড়া দুইদিকে ছড়িয়ে উনি বলেন, “আরে ধুর্‌ মিয়া, বুঝো না তো কিছু তাই ‘বিঁচি’ রে বলো লিচু...”

আজকেও এরকমই আমরা আড্ডা দিতে বসেছি। আদুভাই তাঁর স্বভাব মতো নিজের চিপ্সের প্যাকেট খোলেননি এখনও। আপাতত আমারটা থেকেই খাচ্ছেন। আমার প্যাকেট শেষ হলে তারপর নিজেরটা খুলবেন। আড্ডার এক পর্যায়ে আমার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদুভাই বললেন-- “আরে ধুর্‌ মিয়া, বুঝো না তো কিছু, তাই বিচিরে বলো লিচু। সাপ-ব্যাঙ এর ভিতর যেই ভাইটামিন আছে, সেই ভাইটামিন খাইয়া খাইয়াই তো চাঙ্কুগুলা আজকে এতো উন্নতি করছে। আমাদেরও উচিত ভাত-আলুভর্তা বাদ দিয়া ডাইরেক্ট অ্যাকশান এ চলে যাওয়া। আগামীকাল থেকেই বাঙ্গালিদের সাপ-ব্যাঙ খাওয়া শুরু করা উচিত।”
যেকোন বাঙ্গালির পক্ষেই আলুভর্তার বিপক্ষে কোন কথা সহ্য করা কঠিন। তাও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম, - “ভাই ভাত-আলুভর্তা খেয়েও তো আমরা খুব দ্রুত উন্নতি করতেছি। আমাদের অর্থনীতি তো পুরা পৃথিবীর মধ্যে দ্রুততম উন্নয়নশীল অর্থনীতি। এমনে চলতে থাকলে আমাদের কাছে পঞ্চাশ বছর পর অ্যামেরিকা তো ভাতই পাবে না।”

উনি রেগে বললেন, - “ফুহ্‌! ভুইলা যাও, এমন কিছু কোনদিনই হবে না। তোমাগো খালি স্বপ্নে স্বপ্নেই কলা খাইতে হবে।”
আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম, - “ক্যান, ভাই!”
উনি বললেন,- “আমাদের দেশে সিএনজী গ্যাসের যেই মজুত আছে তা মাত্র ছয়-সাত বছর পরেই শেষ হয়ে যাবে। তখন আমাদের রাস্তার ধারে ছিড়া ‘স্যান্ডো-গোঞ্জী’ পইড়া ভিক্ষা করা ছাড়া আর কুনো উপায় থাকবে না। অথচ অ্যামেরিকা এখনও পর্যন্ত ওদের ‘ত্যাল্‌’ এর খনিতে হাতই দেয় নাই। যখন অন্য সবার ত্যাল্‌ এর মজুত শেষ হবে, তখন অ্যামেরিকা মাত্র ত্যাল্‌ বেচা শুরু করবে। অ্যামেরিকারে টেক্কা দিবা ক্যামনে মিয়া। ওরা আজীবন টপ্‌-এই থাকবো।”
আমি তখন বললাম, - “ভাই, ওরা যেই কিপ্টামি শুরু করছে। ওরা আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে খনি থেকে তেল উঠাবে বলে তো মনে হয় না। ততদিনে দেখবেন আলুভর্তা-ভাত খাওয়া বাঙ্গালিরা এমন কিছু একটা বের করে ফেলবে যে তখন আর গাড়ি চালাইতে তেল লাগবে না...”
আমি আমার বাক্য শেষ করার আগেই আমাদের চোখের সামনে দেবদূতের মত ফুটফুটে বিদেশি এক বাচ্চা ছোঁ মেরে আদুভাইয়ের চিপ্সের প্যাকেটটা নিয়ে সোজা সোয়ান নদীতে ফেলে দিলো। কাজ শেষ হওয়া মাত্রই সে আবার এক দৌড়ে বাবা-মা’র কাছে ফিরে গেল। অধিক শোকে আদুভাই পাথর হয়ে গিয়েছেন। ভাঁটার টানে তাঁর চিপ্সের প্যাকেট ভেসে যাচ্ছে। উনি ছলছল চোখে সেই প্যাকেটের ভেসে যাওয়া দেখছেন।

এর মধ্যে ভেসে যাওয়া প্যাকেটের থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই আমি বিরবির করে আদুভাইকে বললাম,- “হুদাহুদি জমা করে না রাইখা তখন খেয়ে ফেললে আপনার চিপস্‌টা কিন্তু আপনেই খাইতে পারতেন!”
আমি জানি না, আমার কথা উনি কিছু বুঝলেন কি না। কারণ উনি তখনও এক দৃষ্টিতে সেই প্যাকেট এর দিকেই তাকিয়ে আছেন।

(বিঃদ্রঃ এটা নিতান্তই একটা রম্যগল্প ছাড়া আর কিছুই না।)

লিখেছেন;
নাঈম অঙ্কন


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

ধুর্মিয়া, সেই আপ্নে পরথম!! দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমরা আমরাই তো দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নাঈম অঙ্কন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

নাঈম অঙ্কন এর ছবি

হাসি

এক লহমা এর ছবি

হো হো হো দুর্দান্ত হয়েছে! হাততালি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নাঈম অঙ্কন এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

দীনহিন এর ছবি

গল্পের মেসেজটি ভালই। অন্তত ভাবিয়েছে। তবে আমেরিকার ক্ষেত্রে এমনটি না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল, তারা কৃপন নয় সম্ভবত, বরং কৌশলী, আর যখন কোন দীর্ঘমেয়াদী প্লান করে, সঙ্গে হাজারটা রিস্ক ফ্যাক্টরও বিবেচনায় রাখে বলেই আমার ধারণা! তাই আমেরিকার সঞ্চিত সম্পদ ছো মেরে নিয়ে নিয়ে যাওয়া বা অন্যের হস্তগত হওয়াটা খুব সহজ নয় মনে হয়।

লেখক খুবই তরুন বলে মনে হচ্ছে। গল্পটিতে এই সময়ের কিশোর-তরুনরা যে ভাষায় কথা বলে তার প্রতিফলন রয়েছে। লেখকের কল্পনাশক্তি ভাল। লেখালেখিটা নিয়মিত করলে এক সময় খুব শক্তিশালী রম্য লেখা পাওয়া যেতে পারে।

মনে হয় এই লেখকের লেখা আগেও পড়েছি। সেটিও মনে হয় কোন আদু ভাইকে নিয়ে ছিল।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ছোট বেলা থেকে এটা শুনেই বড় হয়েছি যে, আমেরিকা তাদের তেল মাটির নিচেই রেখে দেয়, মিডল ইস্টের তেল খরচ করে। পরে আমেরিকা নিজের তেল তুলে তেলেসমাতি কারবার শুরু করবে।

লেখাটা রম্য, কিন্তু তারপরও ভুল ইনফরমেশন থাকলে সেটা মানুষ আরেক জায়গায় বলবে। ভুলটা ছড়িয়েই পড়তে থাকবে।
আমেরিকা শুধুই যে মাটির নিচ থেকে তেল (ক্রুড অয়েল) তোলে তা নয়; এখন যতটা তেল তারা আমদানি করে তার চেয়ে বেশি মাটির নিচ থেকে তোলে।

আমেরিকা নিজের 'ত্যাল' এর খনিতে হাতই দেয় নাই

আশা রাখছি এই ভুল তথ্যটা আর ছড়াবে না।
লেখককে শুভেচ্ছা হাসি

লিংক এম্বেড করতে পারছি না। তাই, শিরোনামগুলো দিয়ে দিচ্ছি।
Big milestone: U.S. producing more oil than it imports (usatoday -2013/11/13)
US crude production continues relentless rise: IEA(cnbc Tuesday, 21 Jan 2014)

আরেকটা মজার তথ‌্য: আমেরিকাতে পেট্রোলের সাথে ১০% পর্যন্ত অ্যালকোহল মিশানো হয়। এতে ইফিশিয়েন্সি কিছুটা কমে যায়, কিন্তু এতে করে ভুট্টা ব্যবহার হয় আর ১০% আমদানি কম করতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৫% পর্যন্ত মিশানো হয়, তবে গাড়ির জন্য এটা কতটা ভালো সেটা নিয়ে অনেক বিতর্কও আছে।

নওশীন এর ছবি

চিপ্স এর প্যাকেটটার জন্য মায়া লাগতেসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাততালি

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের বিষয় বস্তু খুব ভাল লেগেছে।ভাল থাকুন।আরও ভাল লিখুন এই প্রত্যাশা রইল।
(KAMRUL222,p.kobi556@gmail.com)

অতিথি লেখক এর ছবি

নাঈম, ভালো লাগলো গল্পটা। আরো লিখুন। কয়েকটা বানান চোখে পড়লো, নদীর "পার" হবে নাকি নদীর "পাড়" হবে? আরো লিখুন। ভালো থাকবেন।

---এবিএম।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

@লেখক:অনেক ধন‌্যবাদ, জবাব দেবার জন্য। সত্যি বলতে কি আমি নিজেই আদু ভাইয়ের মতই জানতাম।
শুভেচ্ছা

আমি শুভ্র বলছি এর ছবি

ভালো লেগেছে। আরো ভালো লেখা প্রত্যাশা করছি লেখকের কাছে থেকে

আদনান  এর ছবি

ভালো হয়েছে লেখাটা। সয়ান নদীতে তোমাদের সাথে একদিন ঘুরতে যেতে হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।