মুভি রিভিউঃ The Book Thief

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০৮/০২/২০১৪ - ১:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"One small fact: you are going to die. Despite every effort, no one lives forever. Sorry to be such a spoiler.
My advice is when the time comes, don't panic. It doesn't seem to help!"


সিনেমার শুরু এই লাইনগুলো দিয়ে। তাও স্বয়ং মৃত্যুর জবানে! যে সময়ের গল্প তখন মৃত্যু অনেক ব্যাস্ত! মানুষ মানুষকে মৃত্যুর হাতে উঠিয়ে দিতে নিত্য-নতুন উপায় বের করে ফেলছে। এমন সময় একদিন মৃত্যু একটা জীবন নিতে গিয়ে হঠাৎই ছোট্ট এক মেয়েকে দেখে নিজের নিয়ম ভেঙ্গে ভেবেছে, বাঁচতে কেমন লাগে?
আমার মনে আছে এই বইটা আমি আক্ষরিক অর্থেই দেশে-বিদেশে (বাংলাদেশ- মালয়শিয়া) খুঁজে বের করেছিলাম। বই পড়ার মুগ্ধতাটা মুভি দেখলে চলে যাবে কিনা ভয়টা ছিল, বেশ ভালই ছিল (কিছু অতীত অভিজ্ঞতা- আপনি আমি সবাই জানি!), তবুও লোভ সামলাতে পারিনি। ভাগ্যিস পারিনি!

জায়গাটার নাম "After Heaven", দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল বলে- লিসেল মাত্র তার ছোট ভাইকে হারিয়েছে, তারউপর মা তাকে নিয়ে যাচ্ছে ফস্টার হোমে দিয়ে আসতে। ট্রেনলাইনের পাশে ভাইকে কবর দেয়ার পর গোরখোদকের কাছ থেকে পড়ে যাওয়া বইটা নিজের কাছে রেখে দেয় লিসেল, স্মৃতি হিসেবে। নতুন মা খুবি বদরাগি হলেও নতুন বাবা লিসেলের বন্ধু হয় যায় মুহূর্তেই। লিসেল পড়তে জানেনা দেখে বাবা হান্স তাকে শেখানো শুরু করে। এর মাঝে একদিন নাৎসিদের "বই পোড়ানো উৎসবে" লিসেল সাহস করে একটা বই চুরি করে নিয়ে আসে। সেই থেকে শুরু।

নতুন এক পৃথিবী খুলে যায় লিসেলের সামনে, নতুন এক নেশা। এর মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইহুদিদের বিনা কারনে, বিনা বিচারে শেষ করে ফেলতে পাগল হয়ে উঠেছে হিটলার ও এসএস। লিসেল হঠাৎই এক গুপ্তধনের গুহার খবর পেয়ে যায়। লিসেল আর তার বন্ধু রুডির ভাষায় "Burger minister" এর সন্তানহারা স্ত্রী লিসেলের পড়ার আগ্রহ দেখে ছেলের বইগুলো পড়তে দেয়া শুরু করেন। কিন্তু, তার স্বামীর নিষেধের মুখে লিসেলকে মানা করলে লিসেল একটা- দুটো করে বই চুরি করা শুরু করে ওখান থেকে। এক রাতে হান্সের পুরোনো ইহুদি বন্ধুর ছেলে ম্যাক্স এসে আশ্রয় নেয় লিসেলের বাসায়। হান্স আর তার বদরাগী কিন্তু অদ্ভুত কোমল মনের স্ত্রী ম্যাক্সকে যত্ন করে লুকিয়ে রাখে নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে। এই সময়টায় লিসেলের জীবন আরো একটা মোড় নেয়।

ম্যাক্স লিসেলের বই প্রীতিকে নতুন রুপ দেয়। প্রথমবারের মত লিসেল ভাবতে শুরু করে, পাঠকের চোখ দিয়ে না, লেখকের চোখ দিয়ে। ম্যাক্স ঘর থেকে যেহেতু বের হতে পারেনা চোখে পড়ার ভয়ে, লিসেল প্রতিদিন ম্যাক্সকে বাইরের আবহাওয়ার কথা বলে, রাস্তার কথা বলে, দিনের কথা- সূর্যের কথা বলে। আস্তে আস্তে লিসেলের পড়ুয়া সত্বার ভিতর থেকে লেখক স্বত্তা বেরিয়ে আসতে থাকে।
কাহিনী এগিয়ে যায়। যুদ্ধ- নিষ্ঠুরতা- ভালবাসা- মমতা আর সোজাসাপ্টা মানবতার উপর ভর করে কাহিনী এগিয়ে যায়।

হান্স এর ভুমিকায় Geoffrey Rush এর অসাধারন অভিনয়কে সম্পূর্ণ করেছেন তার স্ত্রীর ভুমিকায় অভিনয় করা Emily Watson। লিসেলের ভুমিকায় অভিনয় করা Sophie Nélisse এর কাজের সাবলীলতা চোখে পড়ার মত। সিনেমার শেষে মৃত্যুর কন্ঠে শেষ কথাগুলো শুনে যখন মন খালি হয়ে যাচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল পুরো মুভিটা Markus Zusak এর লেখা অসাধারন উপন্যাসটাকে কমপ্লিমেন্ট করেছে। ভাগ্যিস...

লক্ষীপ্যাঁচা।


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার লাগল রিভিউ।
আরো লিখুন--

শুভেচ্ছা অহর্নিশ

এক লহমা এর ছবি

খুব ভাল লাগল। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

সবটাই জানি, কিন্তু বলে দিলেই অন্যদের মজা নস্টের ভয়'কে দারুণ ভাবে রাশ টেনেছেন আপনি! সেজন্য উত্তম জাঝা!
সত্যিই মন ভরিয়ে দেবার মত একটা বই আর তার চিত্রায়ন দ্যা বুক থিফ্। এর বেশকিছু দৃশ্য যেমন আনন্দে হাসিয়েছে তেমনি কাঁদিয়েছেও। বাইরের তুষারপাতকে ঘরে বয়ে আনা আর স্নোম্যান বানানোর দৃশ্য এবং রাগী চেহারার ফাঁক গলে রোজা/রোসা'র
মমতাময়ী মনটা দেখতে পাওয়ার অনুভূতিগুলো কী চমৎকার! ইহহে! দেখেছেন? আমি রাশ টানতে জানিনা, জানি জানোবোনা কেনু দেঁতো হাসি হেহেহে সেকারণে ইহজীবনে কোন রিভিউ লিখা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। ওহ ভালো কথা, আপনি ছোট্ট একটা ভুল বলেছেন কিন্তু! লিসেল লাইব্রেরি থেকে বই চুরি করতো না তো! ও তো বই ধার নিতো শয়তানী হাসি
আরো লিখুন লক্ষীপ্যাঁচা। শুভকামনা।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক
রিভিউ ভাল লেগেছে। আরও নতুন লেখা আসুক হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।